গাজায় যুদ্ধবিরতি নেতানিয়াহুর জন্য ডেকে এনেছে ৬টি বড় বিপদ
Published: 18th, October 2025 GMT
গাজায় ইসরায়েলের হামলায় গত দুই বছরে অগণিত প্রাণহানি ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে। তবু দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য এ উপত্যকায় শান্তি যেন অকালেই এসেছে। এমনটাই মনে হচ্ছে কিছু পর্যবেক্ষকের চোখে।
সমালোচকেরা বলছেন, এ যুদ্ধকে নেতানিয়াহু নিজ রাজনৈতিক অবস্থান ও এমনকি তাঁর স্বাধীনতার (বিভিন্ন মামলা থেকে মুক্তি) চ্যালেঞ্জগুলো থেকে মনোযোগ সরানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এখন যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও, এসব সমস্যার একটিও মুছে যায়নি।
যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসসহ অনেকের মতে, এ যুদ্ধবিরতি ছিল মূলত সাজানো নাটক; যা হোয়াইট হাউসের চাপে নেতানিয়াহু মানতে রাজি হয়েছেন। কারণ, ওয়াশিংটন গাজা যুদ্ধের আর্থিক ও কূটনৈতিক বোঝা বইতে আর রাজি ছিল না।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে, যদি নেতানিয়াহু নতুন কোনো যুদ্ধ শুরু করতে না পারেন, তবে আগামী বছরের ইসরায়েলি নির্বাচনের আগে–পরে নেতানিয়াহুর সামনে কী কী চ্যালেঞ্জ আছে? আর সেগুলো কতটা ভয়ানক হতে পারে?
চলুন, একে একে দেখে নেওয়া যাক।
১.আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতানিয়াহু কি আরও একা হয়ে পড়বেন
বর্তমানে ইসরায়েল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যতটা নিঃসঙ্গ, অতীতে কখনো এতটা ছিল না। আর অনেকের কাছেই সেই নিঃসঙ্গতার প্রতীক এখন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
গত দুই বছরে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৬৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খাদ্য অবরোধে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। স্বল্প মেয়াদে, যদি না নেতানিয়াহু সরকার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের স্থায়ীভাবে গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়, তবে বিশ্বের গণমাধ্যমে এ হত্যাযজ্ঞের চিত্র আরও স্পষ্টভাবে প্রকাশ পাবে। এটি ইসরায়েলের একঘরে অবস্থানকে আরও দীর্ঘস্থায়ী করবে।
যুদ্ধবিরতিকে নেতানিয়াহু বিজয় হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সাবেক ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত আলন পিনকাসসহ অনেকের মতে, এ যুদ্ধবিরতি ছিল মূলত সাজানো নাটক; যা হোয়াইট হাউসের চাপে নেতানিয়াহু মানতে রাজি হয়েছেন। কারণ, ওয়াশিংটন গাজা যুদ্ধের আর্থিক ও কূটনৈতিক বোঝা বইতে আর রাজি ছিল না।তবে ইসরায়েলের জন্য ক্রমবর্ধমাণ এ কূটনৈতিক নিঃসঙ্গতা নতুন নয়। গত সেপ্টেম্বরেই নেতানিয়াহু যেন এ অবস্থাকে স্থায়ী করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন একটি ‘সুপার স্পার্টা’ তৈরির স্বপ্ন। সেটি প্রাচীন যুদ্ধবাজ গ্রিক নগররাষ্ট্র স্পার্টার আদলে এমন এক রাষ্ট্র, যা অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন, কূটনৈতিকভাবে আলাদা এবং যুদ্ধকেই জীবনধারা হিসেবে গ্রহণ করবে।
এ বক্তব্য ইসরায়েলি বিনিয়োগকারীরা ভালোভাবে নেননি। ঘোষণার পরই তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে সূচক ধসে পড়ে এবং শেকেলের মান অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় কমে যায়। দেশের ২০০ বড় প্রতিষ্ঠানের সংগঠন ‘ইসরায়েল বিজনেস ফোরাম’ এক বাক্যে বলেছিল, ‘আমরা স্পার্টা নই।’
জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে বক্তৃতা দিচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালে অধিবেশনকক্ষ ছেড়ে যান অনেক দেশের প্রতিনিধি। এ সময় চারপাশে খালি আসন পড়ে থাকতে দেখা যায়। নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেন শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎ পথ অস্পষ্ট: ট্রাম্প
ইউক্রেন শান্তি আলোচনার ভবিষ্যৎ পথ অস্পষ্ট বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং মার্কিন দূতদের মধ্যে ‘যথেষ্ট ভালো’ আলোচনার পরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার ক্রেমলিনে পুতিনের সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের পর, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার বৃহস্পতিবার ফ্লোরিডায় শীর্ষ ইউক্রেনীয় আলোচক রুস্তেম উমেরভের সাথে দেখা করার কথা রয়েছে।
বুধবার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় ট্রাম্প জানান, পুতিন একটি চুক্তি করতে চান, কিন্তু “সেই বৈঠক থেকে কী বেরিয়ে আসবে তা আমি আপনাকে বলতে পারছি না কারণ এটি করতে দুইজনের সময় প্রয়োজন।” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘(ইউক্রেনের সাথে) বেশ ভালোভাবে কিছু সমাধান করেছে।’
বুধবার ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ইউক্রেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে কিছু মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন এবং একটি সমঝোতা খুঁজে বের করার জন্য কাজ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু ‘এখনো সমঝোতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।’
উভয় পক্ষই ক্রেমলিনে তাদের আলোচনার সারমর্ম প্রকাশ না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। তবে একটি মীমাংসার পথে অন্তত একটি বড় বাধা রয়ে গেছে; রাশিয়ার আংশিকভাবে দখল করা চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলের ভাগ্য।
একজন রাশিয়ান কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভূখণ্ডের ইস্যুতে ‘এখনো পর্যন্ত কোনো সমঝোতা খুঁজে পাওয়া যায়নি’, যা ছাড়া ক্রেমলিন ‘সঙ্কটের কোনো সমাধান’ দেখতে পাচ্ছে না।
ঢাকা/শাহেদ