দীর্ঘ বৈঠকের পর অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান। কাতারে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর রবিবার সকালে এই যুদ্ধবিরতির খবর জানিয়েছে পাকিস্তানের সরকারি সংবাদমাধ্যম পিটিআই।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের পাকিস্তানি প্রতিনিধিদল শনিবার আফগান তালেবান কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য দোহায় যান। দুই দেশের প্রতিনিধিদের এই বৈঠকের লক্ষ্য ছিল সীমান্তে পারস্পরিক শত্রুতা বন্ধ করা এবং পাকিস্তানের নিরাপত্তা উদ্বেগ মোকাবেলা করা। 

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিরোধী নিস্পত্তিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে তুরস্ক ও কাতার। ১৩ ঘন্টা আলোচনার পরে প্রতিবেশী দুই দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের মধ্যে দোহায় সমঝোতা হয়েছে। তার মধ্যস্থতা করেছে কাতার ও তুরস্ক। সমঝোতার আলোচনার সময়ে দুই পক্ষই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং অঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছে। আগামী দিনে এই যুদ্ধবিরতিকে স্থায়ী করতে দুই পক্ষ আলোচনায় বসবে। দুই দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা যাতে নিশ্চিত হয়, তা দেখবে।” 

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলাকালে পাকিস্তান পুনর্ব্যক্ত করেছে যে তারা উত্তেজনা বৃদ্ধি করতে চায় না। তবে, তারা আফগান তালেবান কর্তৃপক্ষকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি সম্মান করার এবং সন্ত্রাসী সত্তাগুলোর বিরুদ্ধে যাচাইযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পাকিস্তানের বৈধ নিরাপত্তা উদ্বেগগুলো সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে। 

এতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তান কাতারের মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এবং আশা করে যে এই আলোচনাগুলি এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতায় অবদান রাখবে।”

প্রসঙ্গত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। গত সপ্তাহে আফগানিস্তানে হামলা চালায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। এর প্রতিক্রিয়ায় গত রবিবার আফগানিস্তানের উত্তর সীমান্তের একাধিক পাহাড়ি স্থানে পাকিস্তানি সেনাদের উপর আক্রমণ করেছিল তালেবান। এই হামলায় পাকিস্তানের ৫৮ সেনা নিহত হয়। বুধবার পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সীমান্তে আবারও সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর হামলায় অন্তত ১২ জন আফগান বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছে কাবুলের তালেবান প্রশাসন। 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ক স ত ন ও আফগ ন স ত ন

এছাড়াও পড়ুন:

ক্ষতবিক্ষত সড়ক, কালভার্টে সাঁকো বানিয়ে চলাচল

ইটের খোয়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে চারদিকে। বিধ্বস্ত সড়কে পিচ ঢালাইয়ের কোনো চিহ্ন নেই। সড়কের বহু স্থান ভেঙে মিশে গেছে পাশের জমির সঙ্গে। পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৩০ ফুট দীর্ঘ একটি কালভার্ট। সেখানে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপার করছেন মানুষজন।

চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা সদর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে মদুনা জঙ্গল সড়কের এমন দশা। গত জুলাই মাসের শুরুর দিকে তীব্র বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢল ও হালদা নদীর স্রোতে সাড়ে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাকা সড়ক পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। তিন মাস আগেও ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার মানুষ যাতায়াত করতেন। চলত ট্রাক, ব্যক্তিগত গাড়ি, বাস, অটোরিকশা সবই।

সড়কটি চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া এবং উড়কিরচর ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। নোয়াপাড়া, উড়কিরচর ও হাটহাজারীর মদুনাঘাটের মানুষজন এই সড়ক ব্যবহার করতেন। সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পার হলেও সংস্কার হয়নি। কালভার্টটিও পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভাঙা সড়ক দিয়ে কোনো রকমে হেঁটে চলাচল করেন গ্রামের শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষজন। তবে কালভার্ট ভাঙা থাকায় ওই পথে গাছ ফেলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হতো। গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার টানা দুদিন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করে ভাঙা কালভার্টে বাঁশের সাঁকো বানিয়ে পারাপারের উপযোগী করেছেন স্থানীয় গাউসিয়া কমিটির সদস্যরা।

নোয়াপাড়া, উড়কিরচর ও হাটহাজারীর মদুনাঘাটের মানুষজন এই সড়ক ব্যবহার করতেন। সড়কটি বিধ্বস্ত হওয়ার তিন মাস পার হলেও সংস্কার হয়নি। কালভার্টটিও পুনর্নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক দিয়ে শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী মানুষসহ গ্রামবাসী যাতায়াত করছেন। অসমান খোয়া ছড়ানো সড়কে হেঁটে চলাচলও কষ্টকর। সড়কে কথা হয় মুহাম্মদ ইব্রাহিম নামের স্থানীয় একজনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিশু, নারী ও বয়স্করা চলাচল করতে ভয় পান। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। একরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসবাস করছি আমরা।’

স্বেচ্ছাশ্রমে কালভার্টে বাঁশের সাঁকো বানানোর কাজে অংশ নেন গাউসিয়া কমিটির তানভীর আলম ও মুহাম্মদ জাবেদ। তাঁরা  প্রথম আলোকে বলেন, গাউসিয়া কমিটির ২৫ সদস্য দুই দিন কাজ করে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। দীর্ঘ তিন মাস এই সড়কে চলাচল বন্ধ ছিল। নিরুপায় হয়ে নিজেরাই সাঁকো তৈরির কাজে হাত দেন। তাঁদের কাজে গ্রামের মানুষও বাঁশ, গাছ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন।

সড়কের এই দশা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী একাধিকবার বিক্ষোভও করেছেন। গত ৩ অক্টোবর দুপুরে কয়েক শ গ্রামবাসী সড়ক সংস্কার ও ভাঙা কালভার্টে সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেন। তাঁরা বলেছেন, সরকার ১৫ বছরে সড়ক ও সেতুর উন্নয়নে তাঁদের এলাকায় কিছু করেনি।

আমরা ভীষণ কষ্টে আছি। বাঁশের সাঁকো দিয়ে শিশু, নারী ও বয়স্করা চলাচল করতে ভয় পান। রোগীদের হাসপাতালে নেওয়া যাচ্ছে না। একরকম অবরুদ্ধ হয়ে বসবাস করছি আমরা।মুহাম্মদ ইব্রাহিম, স্থানীয় বাসিন্দা

নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মাসুদ পারভেজ প্রথম আলোকে বলেন, মদুনা জঙ্গল উপজেলার সবচেয়ে সুবিধাবঞ্চিত এলাকা। এখানকার সড়কটি উড়কিরচর ইউনিয়ন ও নোয়াপাড়া ইউনিয়নকে যুক্ত করেছে। এটি দ্রুত সংস্কার হওয়া জরুরি।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সড়কে আরসিসি ঢালাইসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়েছি। তবে বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই মদুনা জঙ্গল সড়কও সংস্কার হয়নি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ