বাল্যবিবাহের ৪ বছর পর রেজিস্ট্রির সময় আবারও যৌতুক দাবি, গৃহবধূর লাশ উদ্ধার
Published: 21st, October 2025 GMT
মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হলে রেজিস্ট্রি করা হবে—এই শর্তে বাল্যবিবাহ হয়েছিল। তখন বরকে দুই লাখ টাকা যৌতুক দিয়েছিলেন মেয়ের বাবা। চার বছর পর মেয়ের বিয়ের বয়স হয়। এখন বিয়ে রেজিস্ট্রি করার সময় ছেলেপক্ষ থেকে আরও দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। এ নিয়ে চলছিল মনোমালিন্য। এরই মধ্যে আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে পুলিশ গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।
ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামে। মারা যাওয়া গৃহবধূর নাম মনিষা খাতুন (১৮)। খবর পেয়ে বাঘা থানার পুলিশ শয়নকক্ষ থেকে মনিষার মরদেহ উদ্ধার করে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
গৃহবধূর স্বামীর নাম আজাদ আলী। তাঁর বাড়ি উপজেলার মনিগ্রাম ইউনিয়নের আটঘরিয়া গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবু জিহাদ আলী। ঘটনার পর থেকে আজাদ আলী পলাতক।
পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে মেয়ে মনিষা খাতুনের সঙ্গে আজাদ আলীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ওই কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। সম্প্রতি কাজিরা অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ে রেজিস্ট্রি করছেন না। এ কারণে মৌখিকভাবে কালেমা পড়িয়ে বিয়ে দেওয়া হয়। মেয়ের বয়স পূর্ণ হলে রেজিস্ট্রি করা হয়। মনিষার বিয়েও সেভাবেই হয়েছিল। ইতিমধ্যে তাঁর একটি কন্যাসন্তান হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছে আড়াই বছর। দেড় মাস আগে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক হন। তবে যৌতুকের দাবি না মেটানোয় এখনো রেজিস্ট্রি হয়নি।
মনিষার বাবা মুনসাদ আলী অভিযোগ করে বলেন, ‘বিয়ের সময় আমার মেয়ের বয়স কম ছিল। তখন ছেলের পরিবারকে দুই লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দিয়েছি। কিন্তু দেড় মাস আগে মেয়ের বিয়ের বয়স হওয়ায় বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে চাইলে আবার ছেলের মামা দুই লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন।’ মনিষাকে নির্যাতনের পর হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মা রুবিনা বেগম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আজাদের মামা শহিদুল ইসলাম যৌতুকের টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘রেজিস্ট্রির সময় টাকা হিসেবে নয়, তাদের জামাইকে উপঢৌকন হিসেবে একটি মোটরসাইকেল দেওয়ার কথা ছিল। টাকা চাওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।’
মনিষার মামা সাদ্দাম হোসেন জানান, রাত আড়াইটার দিকে তাঁর বোন ফোন করে জানান, তাঁর ভাগনি গলায় ফাঁস দিয়ে মারা গেছেন। পরে ভোরে তিনি ওখানে এসে ৯৯৯ কল করে পুলিশকে জানান। তিনি আরও বলেন, ‘শুনেছি ওই ছেলে বেশ কিছুদিন আগে আরেকটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করে বিয়ে করেছে। মাঝেমধ্যেই মনিষাকে (ভাগনিকে) ওই মেয়ে কল করে আজাদের স্ত্রী দাবি করে বলে যে সে বাড়ির বউ হয়ে আসবে।’
আজাদের মা শরিফা বেগমের ভাষ্য, ‘সোমবার সন্ধ্যায় ছেলে আর ছেলের বউয়ের ঝগড়া হয়। বিষ খেয়ে মারা যাব বলে আজাদ (ছেলে) বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। এরপর আমি ছেলেকে খুঁজতে বের হই। পরে রাত ১১টার দিকে ঘরে গিয়ে দেখি (আজাদের স্ত্রী) ছেলের বউ গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে।’ তাঁর ছেলের দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর ছেলে দ্বিতীয় কোনো বিয়ে করেননি।
বাঘা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোজাম্মেল হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র প তবয়স ক গ হবধ র য় র বয়স আজ দ র মন ষ র র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
গজারিয়ায় বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষ, আহত ৭
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশালমিছিলকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বিকেলে উপজেলার জামালদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষের সময় গুলি, গাড়ি ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তাৎক্ষণিকভাবে ছয়জনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন স্বাধীন (২৪), মো. সাইদুল (২৫), দেলোয়ার হোসেন (৪৯), সাহিদা বেগম (৫৫), জাকির হোসেন (৪০) ও সিহাদ (১৭)। তাঁরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থক বলে দাবি এক পক্ষের।
মুন্সিগঞ্জ-৩ (সদর-গজারিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ। বৃহস্পতিবার দলীয় প্রার্থী হিসেবে কামরুজ্জামানের নাম ঘোষণার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন মহিউদ্দিনের সমর্থকেরা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার জামালদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে মশালমিছিলের আয়োজন করেন মহিউদ্দিনের সমর্থকেরা। বিকেলে মশালমিছিলের কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় কামরুজ্জামানের সমর্থকেরা আনন্দ শোভাযাত্রা বের করেন। একপর্যায়ে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলী হোসেনের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও উপজেলার একটি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া উপজেলার হামদর্দ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক আশরাফ হোসেন জানান, ‘এ ঘটনায় আমাদের হাসপাতালে দুজন রোগী এসেছেন। তাঁদের দুজনকেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে স্বাধীন নামে একজনের অবস্থা বেশি খারাপ ছিল। তাঁর দুই হাত ও মাথায় আঘাত রয়েছে।’
গজারিয়া উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব নাদিম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ঝগড়া চাই না। ঝগড়া এড়াতে জামালদী এলাকার একটি ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে ৮-১০ জন আমাদের গুলি করে, ককটেল নিক্ষেপ করে। তাদের গুলিতে আমাদের পাঁচজন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে আমরা ঢাকা পাঠিয়েছি। তাদের মধ্যে স্বাধীনের অবস্থা গুরুতর।’
এ বিষয়ে কামরুজ্জামানের সমর্থক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাসুদ ফারুক বলেন, ‘কামরুজ্জামান গজারিয়া উপজেলার সন্তান। তিনি বিএনপির দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় গজারিয়া উপজেলাবাসীর মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। আজকে যে খবরটি আপনারা পেয়েছেন, সেটি মূলত এলাকাবাসী একজোট হয়ে আওয়ামী লীগের দালালদের প্রতিহত করেছে।’
মুন্সিগঞ্জ–৩ আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন ধরে ঢাকায় রয়েছি। গজারিয়ায় কী হয়েছে, বিষয়টি পুরোপুরি আমার জানা নেই।’
গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আল আজাদ বলেন, জামালদী বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু ভেতরের দিকে একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। কামরুজ্জামানের পক্ষের লোকজন এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। মহিউদ্দিন আহমেদের সমর্থক বেশ কয়েকজন এ ঘটনায় আহত হয়েছেন। এর মধ্যে দুজনকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। একজন স্থানীয় হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।