নৈতিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবকেন্দ্রিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) সম্পন্ন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রস্তুতি মূল্যায়ন (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স রেডিনেস অ্যাসেসমেন্ট—র‌্যাম) প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। এআই গ্রহণের মাধ্যমে অধিকার সুরক্ষা, অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করার পথনির্দেশক হিসেবে এ প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আজ বৃহস্পতিবার অ্যাস্পায়ার টু ইনোভেট—এটুআই এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার আইসিটি টাওয়ারে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের মিলনায়তনে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, এটুআই, জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা (ইউনেসকো) এবং জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে র‌্যাম প্রতিবেদনটি উন্মোচন করা হয়। এতে বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রণালয়, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থা, বেসরকারি খাত এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

প্রতিবেদনটিতে এআই বিষয়ে বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক, আইনগত, সামাজিক ও কারিগরি প্রস্তুতির প্রথম সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল সরকারব্যবস্থায় বাংলাদেশ এরই মধ্যে সুদৃঢ় ভিত্তি গড়ে তুলেছে ও সরকারি ডিজিটাল সেবার প্রতি নাগরিকদের আস্থার মাত্রাও উচ্চমানের। একই সঙ্গে ঢাকার বাইরে অনিয়মিত ইন্টারনেট সংযোগ ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, লিঙ্গভিত্তিক ও শহর-গ্রামের দীর্ঘস্থায়ী ডিজিটাল বৈষম্য, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা এবং তথ্য সুরক্ষা, সাইবার নিরাপত্তা ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-সংক্রান্ত দক্ষতা বৃদ্ধির ঘাটতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘এই মূল্যায়ন প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সময়ে প্রকাশিত হলো। বাংলাদেশ এমন এক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তানির্ভর যুগে প্রবেশ করছে, যেখানে এখন নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো আগামী কয়েক দশক ধরে সমাজকে প্রভাবিত করবে। এই প্রতিবেদন আমাদের স্পষ্টভাবে দেখায় আমরা কোন অবস্থানে আছি এবং কোন বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, যাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের বিচারের বিকল্প না হয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আরও শক্তিশালী করে। আর নাগরিকদের শোষণ না করে তাঁদের অধিকার সুরক্ষিত করে।’

আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী চলমান নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়ায়, বিশেষ করে জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে র‌্যাম প্রতিবেদনের গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নীতি নির্ধারণ হতে হবে অনুমাননির্ভর নয়, প্রমাণনির্ভর।

ইউনেসকোর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত নীতিনির্দেশনা-ভিত্তিক সুপারিশের আলোকে প্রণীত এ মূল্যায়নে জাতীয় পর্যায়ের তথ্য বিশ্লেষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে বিস্তৃত পরামর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে ইউনেসকো কার্যালয়ের প্রধান ও কান্ট্রি প্রতিনিধি সুসান ভাইজ তাঁর বক্তব্যে র‌্যাম প্রতিবেদনকে একই সঙ্গে ‘একটি দর্পণ এবং একটি রূপরেখা’ হিসেবে উল্লেখ করেন। একদিকে শাসনব্যবস্থা, অবকাঠামো, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি ও তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থার অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জের প্রতিফলন এতে রয়েছে, অন্যদিকে অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ নির্ধারণে সহায়ক সুস্পষ্ট রূপরেখা এতে আছে। তিনি তথ্য সুরক্ষা ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা, বাংলা ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় উচ্চমানের তথ্যভান্ডার তৈরি এবং কন্যাশিশু ও নারীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসংক্রান্ত শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে পূর্ণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

ইউএনডিপি বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার বলেন, এআই ব্যবধান কমাবে নাকি বাড়াবে, তা নির্ভর করবে দেশগুলো এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপর। সংযোগ, দক্ষতা, ডেটা এবং কম্পিউটিং অবকাঠামো শক্তিশালী করা, নির্ভরযোগ্য নিয়ন্ত্রক ও শাসনকাঠামো তৈরি করা এবং জাতীয় সক্ষমতার সঙ্গে এআই কৌশলগুলোকে খাপ খাইয়ে নেওয়া—এই সবকিছুই নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নীতিমালার ওপর ইউনেসকোর সুপারিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠাকে গতিশীল করবে।

এটুআই কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক মোহা.

আবদুর রফিক র‌্যাম প্রতিবেদনে উত্থাপিত সুপারিশগুলোকে সেবাদানে দৃশ্যমান উন্নতিতে রূপান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, র‌্যাম প্রতিবেদন নাগরিকমুখী সেবায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কীভাবে সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ করা যায়, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেবে, যাতে মানুষ দ্রুততর, ন্যায্য ও আরও নির্ভরযোগ্য সাড়া পায়, কিন্তু বিদ্যমান ডিজিটাল বৈষম্য যেন কোনোভাবেই না বাড়ে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দপ্তরের উন্নয়ন সহযোগিতা বিভাগের প্রধান মিখাল ক্রেজা বলেন, ‘আমরা আশা করি, এই প্রতিবেদন একটি আস্থাভিত্তিক এআই ইকোসিস্টেম গড়ে তুলতে সহায়তা করবে, যাতে উদ্ভাবনের সুফল সব নাগরিকের কাছে পৌঁছে যায়। বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবস থ স রক ষ ন র ভর র ওপর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ‘যুক্তরাষ্ট্র ও রুশ কর্মকর্তাদের গোপন পরিকল্পনার’ বিষয়ে জানে না মস্কো

প্রায় চার বছর ধরে চলা ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে গোপনে একটি খসড়া পরিকল্পনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তারা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস এ তথ্য সামনে এনেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী কিয়েভকে মস্কোর কাছে তাদের কিছু ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে। কমাতে হবে নিজেদের সামরিক বাহিনীর আকার। তবে এমন পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত না থাকার কথা জানিয়েছে মস্কো।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, খসড়া এই পরিকল্পনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ক্রেমলিনের উপদেষ্টা কিরিল দিমিত্রিয়েভ। মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পর্দার আড়ালে যোগাযোগ করে এই পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছে কি না, তা স্পষ্ট নয়।

অনানুষ্ঠানিক এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে কিয়েভকে। যদিও যুদ্ধ থামাতে এমন কোনো ছাড়ের কথা প্রথম থেকে নাকচ করে আসছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। পরিকল্পনায় কিয়েভকে মার্কিন সামরিক সহায়তা কমানো এবং ইউক্রেন বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের ব্যবহার কমানোর কথা বলা হয়েছে।

ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর পরিকল্পনা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি হোয়াইট হাউস। তবে বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও লিখেছেন, ‘টেকসই শান্তির জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়া—দুই পক্ষকে কঠিন কিন্তু প্রয়োজনীয় কিছু ছাড় দিতে হবে। এ কারণেই যুদ্ধ থামাতে আমাদের সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা তৈরি করে যেতে হবে।’

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এমন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে না বলে জানিয়েছেন ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ। আজ বৃহস্পতিবার রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও বলেছেন, ইউক্রেন নিয়ে খসড়া কোনো পরিকল্পনা ওয়াশিংটনের কাছ থেকে পায়নি মস্কো। যুক্তরাষ্ট্র এমন কোনো পরিকল্পনা করলে তা অবশ্যই কূটনৈতিকভাবে রাশিয়ার কাছে পাঠাতে হবে।

যুদ্ধ বন্ধের পরিকল্পনা ফাঁস হওয়া নিয়ে জল্পনার মধ্যেই গত বুধবার কিয়েভ সফরে গেছেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিরা। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর সচিব ড্যানিয়েল ড্রিসকোল। ইউক্রেনে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুদ্ধ থামাতে জেলেনস্কিসহ দেশটির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন মার্কিন প্রতিনিধিরা।

এদিকে গতকাল বুধবার রাতভর পশ্চিম ইউক্রেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। দেশটির তেরনোপিল শহরের বিভিন্ন বহুতল ভবন ও জ্বালানি স্থাপনা লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, হামলায় ৩ শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৭৩ জন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ