৫ মামলায় খায়রুল হকের জামিন কেন নয়: হাইকোর্ট
Published: 26th, October 2025 GMT
পৃথক পাঁচ মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের জামিন প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাঁচ মামলায় কেন তাঁকে জামিন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
জামিন চেয়ে খায়রুল হকের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এ এস এম আবদুল মোবিন ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ রোববার এ রুল দেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও রাষ্ট্রপক্ষকে ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
তিন মাস ধরে কারাগারে আছেন খায়রুল হক। পাঁচ মামলায় নিম্ন আদালতে বিফল হয়ে তিনি উচ্চ আদালতে জামিন চেয়ে পৃথক আবেদন করেন।
২০ অক্টোবর আবেদনগুলো শুনানির জন্য উত্থাপন করা হয়। আদালত শুনানির জন্য ২৬ অক্টোবর আবেদনগুলো কার্যতালিকায় থাকবে বলে জানান। এর ধারাবাহিকতায় আবেদনগুলো আদালতের আজকের কার্যতালিকার ৯৮২ থেকে ৯৮৬ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ সকালে আবেদনের বিষয়টি আদালতে উল্লেখ করেন খায়রুল হকের আইনজীবীরা। আদালত বেলা সোয়া দুইটায় শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি হয়।
আদালতে খায়রুল হকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এম কামরুল হক সিদ্দিকী ও মোনায়েম নবী শাহীন।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো.
দুদকের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী এম সারোয়ার হোসেন।
খায়রুল হক ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন। এই রায়ের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্রায় এক বছর পর গত ২৪ জুলাই রাজধানীর ধানমন্ডির বাসা থেকে খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাঁকে জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে যুবদলকর্মী আবদুল কাইয়ুম আহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
এরপর বেআইনি রায় দেওয়া ও জাল রায় তৈরির অভিযোগে গত বছরের ২৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জে করা একটি মামলায়ও খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার-সংক্রান্ত রায় জালিয়াতির অভিযোগে গত বছরের ২৭ আগস্ট শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন একটি মামলা করেন। একই অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায় গত ২৫ আগস্ট আরেকটি মামলা করেন নুরুল ইসলাম মোল্লা নামের এক ব্যক্তি।
এ ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে প্লট গ্রহণের অভিযোগে চলতি বছরের আগস্টে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এই পাঁচ মামলায় জামিন চেয়ে আবেদনগুলো গত রোববার আদালতে দাখিল করা হয় বলে জানান আইনজীবী মোনায়েম নবী শাহীন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ রপত আইনজ ব আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
রাবিতে বিচারপতিদের মিলনমেলা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন বিভাগ যেন ফিরে পেয়েছে তার গৌরবময় অতীতের দিনগুলো। প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর প্রথম পুনর্মিলনী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে জড়ো হয়েছেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদসহ ৩৫ জন বিচারপতি।
এর মধ্যে প্রধান বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের ২৯ জন বিচারপতি, আপিল বিভাগের তিনজন ও অবসরপ্রাপ্ত দুইজন বিচারপতি রয়েছেন। এছাড়া উপস্থিত আছেন, শতাধিক জজ ও সহস্রাধিক আইনজীবী।
আরো পড়ুন:
শিল্পকলায় নোবেলজয়ী নাট্যকারের ‘ডিজায়ার আন্ডার দ্য এলমস’
রেজোয়ানের ভাসমান স্কুলের ইউনেস্কোর পুরস্কার অর্জন
এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করেছেন আইন বিভাগের ১৯৬৭-৬৮ সেশন থেকে ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থীরা। প্রিয় ক্যাম্পাসে আবেগঘন একটি দিন পার করতে তাদের অনেকেই নিয়ে এসেছেন পরিবার-পরিজনকে ।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকেই ক্যম্পাসের সর্বত্র দেখা যায় তাদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে জমে আড্ডা। কেউবা ছবি তুলছেন, কেউ জমিয়ে আড্ডায় মেতেছেন।
পুরোনো বন্ধু, শিক্ষক আর সহপাঠীদের সঙ্গে দেখা হওয়ার আনন্দে সবার মুখে ঝলমল করছে হাসি। কেউ স্মৃতিচারণ করছেন টিচার্স লাউঞ্জের আড্ডার কথা, কেউবা স্মৃতি রোমন্থন করছেন আইনের ক্লাসরুম, সিনেট ভবন কিংবা শহীদুল্লাহ কলাভবনের করিডোরের দিনগুলো।
পুনর্মিলনী উপলক্ষে স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিশেষ আলোচনা সভাসহ সারাদিন থাকছে নানা আয়োজন। আইন বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থীরাও এই আয়োজনকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত। কারণ তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সেই সিনিয়ররা, যারা আজ দেশের বিচারব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত।
এ বিষয়ে এক সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, “অনেকদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসে ফিরে মনে হচ্ছে, সময় যেন পেছনে ফিরে গেছে। এখানেই গড়ে উঠেছিল আমাদের চিন্তা, যুক্তি আর ন্যায়বোধের ভিত।”
অনিভুতি প্রকাশ করে ১৯৯২-৯৩ সেশনের শিক্ষার্থী কবির ইকবাল হোসেন বলেন, “আইন বিভাগকে ধন্যবাদ, এত সুন্দর একটা আয়োজন করার জন্য। ৭২ বছর পর প্রথম পুনর্মিলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মতিহারের সবুজ চত্বর আজ একটা মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। অংশগ্রহণ করে আমরা খুবই উজ্জীবিত। আমরা চাই, প্রতি বছর যেন এই আয়োজনটা হয়।”
বাংলাদেশ বিচার বিভাগের জয়েন্ট ডিস্ট্রিক্ট জজ ও রাবি আইন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী বেল্লাল হোসেন বলেন, “আইন বিভাগের এই ৭২ বছর পূর্তিতে এসে আমরা একটি অন্যরকম অনুভূতি অনুভব করছি। এটি নবীন-প্রবীণের একটি আনন্দঘন মুহুর্ত। আমরা প্রাক্তন ছাত্ররা এই আয়োজনে আসতে পেরে অনেক খুশি। এই আয়োজনের জন্য আয়োজকদের আমরা অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
তিনি বলেন, “প্রায় ১৭ বছর পর ক্যাম্পাসে এসে ভৌত ও অবকাঠামোগত কিছু পরিবর্তন দেখছি, এবং অনুভূতিতে আমি ফিরে গিয়েছি ছাত্রজীবনের সেই সময়টাতে। সঙ্গে আমার স্ত্রী-সন্তান এসেছে আমার নিজের ক্যাম্পাসে, তাই অনেক ভালো লাগছে।”
অনুভুতি প্রকাশ করে বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শফিকুজ্জামান রানা বলেন, “আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অনার্স ৪৩তম ব্যাচ ও এমএলএম ১৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এ মিলনমেলার অনুভূতি সত্যিই ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। দীর্ঘ ২০-২৫ বছর পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে, যা অত্যন্ত আবেগময় একটি মুহূর্ত।”
তিনি বলেন, “ছোটভাই, বড়ভাই ও প্রিয় সহপাঠীদের সঙ্গে এই মিলনমেলা উপভোগ করছি প্রাণভরে। আমরা চাই, এমন আয়োজন প্রতি বছরই হোক। এতো সুন্দর ও হৃদয়ছোঁয়া আয়োজনের জন্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী