রংপুরে এক স্কুলছাত্রকে পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকির দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির এক সদস্যসহ দুই যুবকের বিরুদ্ধে। স্থানীয় ছাত্র-জনতা ওই দুই যুবককে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। গতকাল সোমবার রাত আটটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন পার্কের মোড়ে এ ঘটনা ঘটে।

পরে ওই দুজনকে ছাড়াতে নগরের তাজহাট থানায় যান এনসিপির নেতারা। চার ঘণ্টা পর গতকাল রাত ১২টার দিকে রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) তোফায়েল আহমেদ থানায় এসে পিস্তলসহ দুজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই দুজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।  আমরা একটা পিস্তল রিকভার (উদ্ধার) করেছি। এটা ফায়ারিং পিস্তল কি না, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত লাগবে। যদি এটা পিস্তল হয়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দেওয়া হবে।’

গ্রেপ্তার দুজন হলেন এনসিপির রংপুর মহানগর সমন্বয় কমিটির রাগিব হাসনাইন (৩০) ও রাকিবুল ইসলাম ওরফে তুষার (২৮)। রাকিবুল রংপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা মামলার ১ নম্বর আসামি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার সন্ধ্যা আটটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়–সংলগ্ন পার্কের মোড়ের কাওছার একাডেমির সামনে দুই স্কুলছাত্রের মধ্যে বাদানুবাদ হয়। এ সময় এক পক্ষের হয়ে রাগিব ও তুষার ঘটনাস্থলে আসেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, রাকিবুল পিস্তল বের করে এক ছাত্রের মাথায় ঠেকানোর পর এ দৃশ্য দেখে উত্তেজিত ছাত্র-জনতা তাঁদের ঘিরে ফেলে ও মারধর করে পুলিশে দেয়।

ওই ঘটনার পর গতকাল রাতে থানায় গিয়ে দেখা যায়, এনসিপির মহানগর সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আলাল উদ্দিন কাদেরীসহ অন্য নেতারা থানা ও আশপাশে অবস্থান করছেন। তাঁরা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দুই যুবককে ছাড়িয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেন।

এ সময় আলাউদ্দিন কাদেরী সাংবাদিকদের বলেন, রাগিব এনসিপির সদস্য। রাকিবুল এনসিপির সমর্থক। রাকিবুলের ভাগনেকে পার্কের মোড়ে মারধর করা হয়েছে—এ খবর শুনে তাঁরা সেখানে যান। কিন্তু লোকজন মব সৃষ্টি করে খেলনা পিস্তল দিয়ে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এনস প র গতক ল দ জনক

এছাড়াও পড়ুন:

বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক: এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, দুজনেরই অনুপস্থিতিতে এ বিচার করা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাননি। আদালত তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমনমূলক শাসন নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা বিদ্যমান। তবে সব ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক।

মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। আর তা হতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে।

এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ বিক্ষোভেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও দমন–পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি১৫ ঘণ্টা আগে

এইচআরডব্লিউ বলেছে, যাঁরা নির্যাতন ও দমন–পীড়নের জন্য দায়ী, তাঁদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এবং নিজের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী হাজির করেছিল। তাঁদের প্রায় অর্ধেকই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা ছিলেন ভুক্তভোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ছিল। যেখানে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।

এইচআরডব্লিউ বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেও অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেননি।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের হত্যাযজ্ঞের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৯ ঘণ্টা আগে

এইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা অবশ্যই প্রকৃত স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মানে আসামিদের অধিকার রক্ষা করাও। এর মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা, যা স্বভাবগতভাবে নির্মম ও অপরিবর্তনীয়।

আরও পড়ুনএ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল১৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ