রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বড় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের কাছে থেকে ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিসের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর, এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

২০৩৫ সালের মধ্যে রাফাল এফ-৪ বিমানগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার আগে চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন।

আর্থিক বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে ইউক্রেনকে অর্থায়নের চেষ্টা করবে ফ্রান্স। এছাড়া জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদও ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে; এটি এমন একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা নিয়ে ২৭ সদস্যের জোটের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

সোমবার ম্যাখোঁর সঙ্গে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, “এটি একটি কৌশলগত চুক্তি যা আগামী বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে চলবে।

তিনি আরো বলেন, “ইউক্রেন খুব শক্তিশালী ফরাসি রাডার, আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র পাবে।”

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, “এই ধরনের উন্নত ব্যবস্থা ব্যবহার করার অর্থ ‘কারও জীবন রক্ষা করা.

..এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও রেল অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছে এবং এসব ঘটনায় কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের বালাক্লিয়া শহরে তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জেলেনস্কির সাথে কথা বলতে গিয়ে ম্যাখোঁ বলেন, “আমরা রাফাল, ১০০টি রাফালের পরিকল্পনা করছি- এটি বিশাল ব্যাপার। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পুনর্জন্মের জন্য এটাই প্রয়োজন।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন যে, তিনি ইউক্রেনকে পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে চান।

রাফাল যুদ্ধবিমানগুলোকে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ দেশটি তার সীমান্তবর্তী ছোটো-বড় শহরগুলোয় দূরপাল্লার বিমান হামলা মোকাবিলায় প্রায় অক্ষম।

ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সের্হি কুজান বিবিসিকে বলেন, “রাশিয়ানরা প্রতি মাসে ছয় হাজার গ্লাইড বোমা ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের জন্য ২০০ কিলোমিটার পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ফরাসি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাশিয়ানদের নিজস্ব ২৩০ কিলোমিটার পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।”

কিয়েভ এবং প্যারিসের মধ্যে এই ঘোষণাটি বিশাল হলেও, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) জাস্টিন ব্রঙ্ক উল্লেখ করেন, “তারা যে পার্থক্য তৈরি করবে সেটি নির্ভর করবে সময়সীমা এবং তাদের সঙ্গে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর”।

তার মতে, বিস্তারিত ক্রয় আদেশের পরিবর্তে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক চুক্তি। তাই খুব কম লোকই আশা করছেন যে, এই ঘোষণা রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের গতিশীলতায় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেন।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো এবং বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া সত্ত্বেও, রুশ সেনারা বিশাল ফ্রন্ট লাইন ধরে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র ব যবস থ র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফ্রান্স থেকে ১০০ রাফাল যুদ্ধবিমান পাচ্ছে ইউক্রেন

রাশিয়ার ভয়াবহ আক্রমণ থেকে নিজেদের আত্মরক্ষার ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একটি বড় চুক্তির আওতায় ফ্রান্সের কাছে থেকে ১০০টি রাফাল এফ-৪ যুদ্ধবিমান এবং উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পাচ্ছে ইউক্রেন।

মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

আরো পড়ুন:

গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্যারিসের কাছে একটি বিমান ঘাঁটিতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করার পর, এই পদক্ষেপকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।

২০৩৫ সালের মধ্যে রাফাল এফ-৪ বিমানগুলো সরবরাহের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তার আগে চলতি বছরেই শুরু হচ্ছে ইন্টারসেপ্টর ড্রোনের যৌথ উৎপাদন।

আর্থিক বিষয়গুলো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাধ্যমে ইউক্রেনকে অর্থায়নের চেষ্টা করবে ফ্রান্স। এছাড়া জব্দ করা রাশিয়ান সম্পদও ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে; এটি এমন একটি বিতর্কিত পদক্ষেপ যা নিয়ে ২৭ সদস্যের জোটের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

সোমবার ম্যাখোঁর সঙ্গে এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জেলেনস্কি বলেন, “এটি একটি কৌশলগত চুক্তি যা আগামী বছর থেকে শুরু করে ১০ বছর ধরে চলবে।

তিনি আরো বলেন, “ইউক্রেন খুব শক্তিশালী ফরাসি রাডার, আটটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্র পাবে।”

জেলেনস্কি জোর দিয়ে বলেন, “এই ধরনের উন্নত ব্যবস্থা ব্যবহার করার অর্থ ‘কারও জীবন রক্ষা করা...এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

রাশিয়া সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বাড়িয়েছে, বিশেষ করে জ্বালানি ও রেল অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলায় দেশজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

কিয়েভ এবং তার পশ্চিমা মিত্ররা এই হামলাগুলোকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছে এবং এসব ঘটনায় কয়েক ডজন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন।

স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় উত্তর-পূর্ব ইউক্রেনের বালাক্লিয়া শহরে তিনজন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন।

জেলেনস্কির সাথে কথা বলতে গিয়ে ম্যাখোঁ বলেন, “আমরা রাফাল, ১০০টি রাফালের পরিকল্পনা করছি- এটি বিশাল ব্যাপার। ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনীর পুনর্জন্মের জন্য এটাই প্রয়োজন।”

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট আরো বলেন যে, তিনি ইউক্রেনকে পরবর্তী যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হতে সাহায্য করতে চান।

রাফাল যুদ্ধবিমানগুলোকে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, কারণ দেশটি তার সীমান্তবর্তী ছোটো-বড় শহরগুলোয় দূরপাল্লার বিমান হামলা মোকাবিলায় প্রায় অক্ষম।

ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক সের্হি কুজান বিবিসিকে বলেন, “রাশিয়ানরা প্রতি মাসে ছয় হাজার গ্লাইড বোমা ব্যবহার করছে। ইউক্রেনের জন্য ২০০ কিলোমিটার পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য একটি ফরাসি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রাশিয়ানদের নিজস্ব ২৩০ কিলোমিটার পাল্লার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।”

কিয়েভ এবং প্যারিসের মধ্যে এই ঘোষণাটি বিশাল হলেও, রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের (আরইউএসআই) জাস্টিন ব্রঙ্ক উল্লেখ করেন, “তারা যে পার্থক্য তৈরি করবে সেটি নির্ভর করবে সময়সীমা এবং তাদের সঙ্গে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের ওপর”।

তার মতে, বিস্তারিত ক্রয় আদেশের পরিবর্তে এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক চুক্তি। তাই খুব কম লোকই আশা করছেন যে, এই ঘোষণা রাশিয়ার তীব্র আক্রমণের গতিশীলতায় নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আক্রমণ শুরু করেন।

বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে মস্কো এবং বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া সত্ত্বেও, রুশ সেনারা বিশাল ফ্রন্ট লাইন ধরে ধীরগতিতে অগ্রসর হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ