চাঁপাইনবাবগঞ্জে স্কুল ফিডিংয়ের প্রথম দিনই বনরুটি বঞ্চিত শিক্ষার্থ
Published: 18th, November 2025 GMT
শিক্ষার্থীদের পুষ্টি ও উপস্থিতির হার বাড়াতে যখন স্কুল ফিডিং কর্মসূচি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা, ঠিক তখনই চাঁপাইনবাবগঞ্জে এর শুরুটা হলো চরম হতাশাজনক। সোমবার (১৭ নভেম্বর) জেলার চারটি উপজেলায় একযোগে এই বহুপ্রতীক্ষিত কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়।
কর্মসূচির প্রথম দিনই উঠেছে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ। এদিন, পূর্বনির্ধারিত খাদ্যতালিকায় কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য বনরুটি ও দুধ দেওয়ার কথা ছিল। তবে, প্রাথমিক স্কুলগুলোতে বনরুটির কোনো খোঁজই মেলেনি।
আরো পড়ুন:
নাফাখুম ঝর্ণায় নিখোঁজ পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
জকসু নির্বাচন: ২ দিনে ৩৫ প্রার্থীর মনোনয়ন সংগ্রহ
প্রাথমিক স্কুলে বনরুটি সরবরাহের দায়িত্ব পাওয়া গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামে প্রতিষ্ঠান থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা অনুযায়ী, তাদের আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে বনরুটিসহ অন্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সোমবার শুধুমাত্র দুধ সরবরাহ করা হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা সরবরাহ করেনি। আগামী সোমবার থেকে তারা বনরুটিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে।
এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তারা বলছেন, এই অব্যবস্থাপনার ফলে একদিকে যেমন শিশুরা তাদের প্রাপ্য খাবার থেকে বঞ্চিত হলো, তেমনি কর্মসূচির সুষ্ঠু ও আন্তরিক বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন উঠল। যে প্রকল্পটি প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন আশার সঞ্চার করেছিল, শুরুতেই এই ঘাটতি সেই আশাকে ম্লান করে দিল।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহের সোমবার ১২০ গ্রামের একটি বনরুটি ও ২০০ গ্রাম দুধ দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের। মঙ্গলবার ফর্টিফাইড বিস্কুট ৭৫ গ্রাম ও স্থানীয় মৌসুমি ফল বা কলা দেওয়া হবে ১০০ গ্রাম। এছাড়া, প্রতি রবিবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার ১২০ গ্রাম ওজনের বনরুটি ও ৬০ গ্রাম ওজনের একটি সিদ্ধ ডিম দেওয়া হবে শিক্ষার্থীদের।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সোমবার শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র ২০০ গ্রাম ওজনের একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। খাদ্যতালিকায় নিয়ম অনুযায়ী ১২০ গ্রাম ওজনের বনরুটি দেওয়ার কথা থাকলেও; তা সরবরাহ করা হয়নি। অভিভাবকদের প্রশ্ন, যে কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্যই হলো শিশুদের পুষ্টি নিশ্চিত করা, সেখানে উদ্বোধনের দিনেই কেন খাদ্যতালিকা থেকে একটি খাবার বাদ গেল?
শিবগঞ্জ পৌর এলাকার জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতে হয়। সামান্য আয় দিয়ে সন্তানদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ সম্ভব না। আশা নিয়ে সোমবার বাচ্চাকে স্কুলে পাঠালাম, ভেবেছিলাম পুষ্টিকর খাবার পাবে। শুরুর দিনই একটি খাবার বাদ পড়ে গেল। শুধুমাত্র একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। প্রথম দিনই যদি এমন হয়, তবে বাকি দিনগুলোতে কী হবে? শিশুদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করা হলো।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার পাঠানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রীর অভিভাবক সাইদুর রহমান বলেন, “আজকে শুধু বাচ্চাদের একটি দুধের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা থাকলেও বাচ্চারা পায়নি।”
গোমস্তাপুর উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষিকা জানান, সোমবার পূর্বনির্ধারিত তালিকা অনুযায়ী দুধ ও বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু শিক্ষার্থীদের শুধু দেওয়া হয়েছে একটি দুধের প্যাকেট। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা।
নাম না প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবগঞ্জ জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষক বলেন, স্কুল ফিডিংকে মিডডে মিল বলা হচ্ছে। শুরুর দিনে শুধু ২০০গ্রাম একটি দুধের প্যাকেট দেওয়ায় বাচ্চাদের পেট ভরেনি। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বনরুটি, কলা ও সিদ্ধ ডিম সরবরাহের কাজটি পেয়েছে।
স্কুলে বনরুটি সরবরাহ না করার কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, “সোমবার থেকে স্কুল ফিডিং চালু হলো। এদিন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নিদের্শনা অনুযায়ী, আমাদের আগামী ২৪ নভেম্বর থেকে বনরুটিসহ অন্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। যে দিনগুলোয় খাবার সরবরাহ করা হয়নি, এসব খাবার পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হবে।”
এই সাতদিন কেন তালিকা অনুযায়ী খাদ্য সরবরাহ করা হবে না- এমন প্রশ্নের তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলম বলেন, “জেলার নাচোল উপজেলা বাদে বাকি চার উপজেলায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে জেলার ৬১৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ের ১ লাখ ২১ হাজার ৪৪৫ জন শিশু শিক্ষার্থীকে মিডডে মিল দেওয়া হবে। আজকে শুধুমাত্র দুধ সরবরাহ করা হয়েছে। বনরুটি দেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তা সরবরাহ করেনি। আগামী সোমবার থেকে তারা বনরুটিসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যগুলো সরবরাহ করবে বলে জানিয়েছে।”
এই অব্যবস্থপনার সম্পর্কে জানতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্কুল ফিডিং কর্মসূচির প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মেহেদী/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ইনব বগঞ জ গ র ম ওজন র স মব র প রক শ অন য য় সরক র উপজ ল র একট
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।