বিচারে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক: এইচআরডব্লিউ
Published: 18th, November 2025 GMT
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৭ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে ২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। গতকাল সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলেছে, দুজনেরই অনুপস্থিতিতে এ বিচার করা হয়েছে। তাঁরা নিজেদের পছন্দের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিনিধিত্ব পাননি। আদালত তাঁদের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন, যা গুরুতর মানবাধিকার উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন। তিনি প্রসিকিউশনের সাক্ষী (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁকে সাজা কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, হাসিনার দমনমূলক শাসন নিয়ে বাংলাদেশে এখনো ক্ষোভ ও বেদনা বিদ্যমান। তবে সব ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মানের ন্যায়বিচারের মানদণ্ড মেনে চলা আবশ্যক।
মীনাক্ষী গাঙ্গুলি আরও বলেন, হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত ভয়ংকর নির্যাতন-নিপীড়নের জন্য দায়ীদের অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। আর তা হতে হবে নিরপেক্ষ তদন্ত ও গ্রহণযোগ্য বিচারের মাধ্যমে।
এইচআরডব্লিউর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের তিন সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভকালে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। এ বিক্ষোভেই হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিক্ষোভ ও দমন–পীড়নে প্রায় ১ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত বিক্ষোভকারী।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি১৫ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউ বলেছে, যাঁরা নির্যাতন ও দমন–পীড়নের জন্য দায়ী, তাঁদের যথাযথভাবে জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। তবে বিচারকাজ আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। বিশেষ করে আসামিদের আত্মপক্ষ সমর্থনের পূর্ণ সুযোগ, সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ এবং নিজের পছন্দের আইনজীবীর প্রতিনিধিত্ব পাওয়ার অধিকারের ক্ষেত্রে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় বিচারপ্রক্রিয়ার ন্যায্যতা নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, প্রসিকিউশন ৫৪ জন সাক্ষী হাজির করেছিল। তাঁদের প্রায় অর্ধেকই বিশেষজ্ঞ সাক্ষ্য দিয়েছেন। অন্যরা ছিলেন ভুক্তভোগী বা তাঁদের পরিবারের সদস্য। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসেবে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর কথোপকথনের অডিও রেকর্ডিং ছিল। যেখানে তিনি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন বলে মনে করা হয়।
এইচআরডব্লিউ বলেছে, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামানের জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আসামিদের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি। তিনি সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলেও অভিযোগের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষী উপস্থাপন করেননি।
আরও পড়ুনশেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের মধ্য দিয়ে ২০২৪ সালের হত্যাযজ্ঞের ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৯ ঘণ্টা আগেএইচআরডব্লিউর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারের সময় সংঘটিত গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার ও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন, যা অবশ্যই প্রকৃত স্বাধীন ও ন্যায়সংগত বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা মানে আসামিদের অধিকার রক্ষা করাও। এর মধ্যে রয়েছে মৃত্যুদণ্ড বিলোপ করা, যা স্বভাবগতভাবে নির্মম ও অপরিবর্তনীয়।
আরও পড়ুনএ রায় ঘোষণা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভুক্তভোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত: ওএইচসিএইচআর১০ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনআন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খবর কতটা গুরুত্ব পেল১৬ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এইচআরডব ল উ ম নব ধ ক র গ র তর র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
এই রায়ে কষ্ট পেয়েছি: শেখ হাসিনার আইনজীবী
জুলাই গণঅভ্যুত্থান দমানোর চেষ্টায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাণদণ্ড দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই রায়ে কষ্ট পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রনিযুক্ত শেখ হাসিনার আইনজীবী আমির হোসেন।
রায়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, “এই রায়ে আমি কষ্ট পেয়েছি।”
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডে সন্তুষ্ট আইন উপদেষ্টা
শহীদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল
এর আগে সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলার রায় ঘোষণা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায়ে ২ নম্বর অভিযোগে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড আদেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া মামলার অন্য আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায় পড়া শুরু হয়। দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে এ রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।
বিচারিক প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা এটিই প্রথম মামলা, যার রায় ঘোষণা হলো আজ।
ঢাকা/রায়হান/সাইফ