স্মারক মুদ্রার দাম বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক
Published: 18th, November 2025 GMT
দেশের ইতিহাসে স্বর্ণ ও রূপার দাম এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে; বিশ্ববাজারেও দাম বাড়তি। এমন পরিস্থিতিতে স্মারক স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রার দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিটি স্মারক স্বর্ণ মুদ্রার দাম ১৫ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী প্রতিটি স্মারক স্বর্ণ মুদ্রা এক লাখ ৮৫ হাজার টাকা।
আরো পড়ুন:
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি: ৯০ দিনে অর্থ পরিশোধের সুযোগ
সিএসএমই তহবিল পরিচলনায় ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যোগ্যতায় ছাড়
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এখন থেকে ২২ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে তৈরি ১০ গ্রাম ওজনের স্মারক স্বর্ণমুদ্রা (বাক্সসহ) প্রতিটি বিক্রি হবে ১ লাখ ৮৫ হাজার হাজার টাকা। যা আগে বিক্রি হয়েছিল এক লাখ ৭০ হাজার টাকা।
এছাড়া, বর্তমানে বাজারে ১১টি স্মারক রৌপ্য মুদ্রা (ফাইন সিলভার) রয়েছে। এসব স্মারক মুদ্রার ওজন ২০ গ্রাম থেকে ৩১ দশমিক ৪৭ গ্রাম। এসব মুদ্রার দাম বাড়িয়ে ১৪ হাজার টাকা করা হয়েছে। যা আগে ছিল ৮ হাজার ৫০০ টাকা।
ঢাকা/নাজমুল/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলপিজি আমদানি করবে ভারত, বাণিজ্যচুক্তির প্রথম ধাপ সইয়ের সম্ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি আমদানি বাড়িয়ে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছে ভারত। যেসব কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তি এখনো হয়ে ওঠেনি, তার মধ্যে প্রধান হলো দুই দেশের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যঘাটতি। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি হ্রাস করার বিষয়টি তো ছিলই।
সোমবার ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসবিষয়ক মন্ত্রী হারদ্বীপ সিং পুরি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের নতুন চুক্তির কথা জানিয়েছেন। এ চুক্তি অনুসারে, ভারত যে পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানি করে, তার প্রায় ১০ শতাংশ করবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ বাস্তবতায় ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যচুক্তির প্রথম ধাপ শিগগিরই সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে। খবর সিএনবিসি ও ইকোনমিক টাইমস
ভারতের মন্ত্রী সামাজিক মাধ্যম এক্সে করা এক পোস্টে বলেছেন, ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলো এক বছরের চুক্তি করেছে। এ সময় ২২ লাখ টন এলপিজি আমদানি করা হবে। এ চুক্তিকে তিনি ‘ঐতিহাসিক প্রথম’ চুক্তি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বিষয়টি হলো মার্কিন এলপিজি আমদানির ক্ষেত্রে এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম কাঠামোগত চুক্তি।
জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত মূলত এলপিজি আমদানির উৎস বহুমুখী করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে তাদের এলপিজির মূল উৎস মধ্যপ্রাচ্য। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের যে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, তা হ্রাস করতেও এ উদ্যোগ।
ভারত বর্তমানে প্রতিবছর ২০–২১ মিলিয়ন বা ২ থেকে ২ কোটি ১০ লাখ টন এলপিজি আমদানি করে। এখন বাজারে যে দাম, তাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এর ১০ শতাংশ আমদানি করলে খরচ পড়বে ১০০ কোটি ডলারের মতো। যে বাণিজ্যঘাটতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এত উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা, তাতে অবশ্য সামান্যই হেরফের হবে। কেননা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ ৪০ বিলিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার।
দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প যে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু করেছেন, সেই প্রক্রিয়ায় বর্তমানে ভারতের ওপর মার্কিন শুল্কের হার ৫০ শতাংশ। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক এবং বাকি ২৫ শতাংশ রাশিয়ার তেল কেনার জন্য শাস্তিমূলক শুল্ক।
ট্রাম্পের তোপভারতের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেই ক্ষান্ত দেননি ট্রাম্প, সময়–সময় তোপও দাগছেন। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক ‘সম্পূর্ণ একপক্ষীয় বিপর্যয়’। তখন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযুষ গয়াল যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। তিনি বলেন, ভারত আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জ্বালানি–বাণিজ্য বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও স্বাভাবিক অংশীদার। আমাদের জ্বালানি নিরাপত্তার যেসব ক্ষেত্র আছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বাড়বে।’
এর পর থেকে দুই পক্ষই সুর নরম করেছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ভারতের শেষ সফরের কথা স্মরণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তিনি ‘আমার বন্ধু’ ও ‘মহান মানুষ’ হিসেবে আখ্যা দেন। ৬ নভেম্বর হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এ কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ‘রাশিয়ার তেল কেনা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে’, যদিও তাঁর এ দাবির তথ্যগত ভিত্তি নেই।
বিশ্বজুড়ে তেল ও জ্বালানি–বাণিজ্যের হিসাব রাখে কেবলার। তাদের তথ্যানুসারে, ১৭ নভেম্বর পর্যন্ত রাশিয়া থেকে ভারতের বিপুল পরিমাণে অপরিশোধিত তেল কেনা অব্যাহত ছিল। অক্টোবর মাসে তারা দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে। এখন কিনছে দৈনিক ১৮ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল।
কেপলারের মুখপাত্র মিউ ইউ ঝু বলেন, ক্রেতাদের ২১ নভেম্বর পর্যন্ত রসনেফট ও লুকঅয়েলের সঙ্গে লেনদেন শেষ করার সময় দেওয়া হয়েছে। তাই ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলো আগামী কয়েক দিনে যত বেশি ব্যারেল তেল আনা যায়, সেই চেষ্টা করছে।
মিউ আরও বলেন, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারতের তেল আমদানিও অক্টোবর মাসে দ্রুত হারে বেড়েছে। সে মাসে তারা দৈনিক ৬৮ হাজার ব্যারেল তেল এনেছে। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর যা সর্বোচ্চ।
জাপানি বিনিয়োগ ব্যাংক নোমুরার তথ্যানুযায়ী, ভারত দৈনিক প্রায় ৫০ লাখ ব্যারেল কাঁচা তেল আমদানি করে। একদিকে মার্কিন চাপ, অন্যদিকে রাশিয়ার তেলের ছাড় কমে যাওয়া—এই উভয় কারণে রাশিয়া থেকে ভারতের তেল আমদানির পরিমাণ তার মোট আমদানির ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ১৫ শতাংশে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বর্তমানে রাশিয়া ভারতকে ব্যারেলপ্রতি ৩ ডলার ছাড় দিচ্ছে।
চুক্তি হলো বলেভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তির (বিটিএ) প্রথম ধাপের কার্যক্রম প্রায় শেষ, অর্থাৎ শিগগিরই চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাঁরা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিটিএ নিয়ে আলোচনা চলছে। এর দুটি অংশ—আলোচনার একটি অংশের সমাধান করতে সময় লাগবে। আরেকটি অংশ হলো এক প্যাকেজ—এটি মূলত পারস্পরিক শুল্ক নিয়ে। উভয় দিক নিয়েই কাজ হচ্ছে। পারস্পরিক শুল্কের সমাধানজনিত প্যাকেজটি হলো বলে। শিগগিরই এটা পাওয়া যাবে।
কর্মকর্তারা বলেন, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে ভারতের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক সমস্যার সমাধান হবে। তা না হলে এই চুক্তির অর্থ হয় না। তাঁরা আরও বলেন, বিটিএর একাধিক ধাপ আছে। প্রথম ধাপে শুল্ক সমস্যার সমাধান হবে।