ইউক্রেন ও মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার দাবি যুক্তরাষ্ট্রের
Published: 24th, November 2025 GMT
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার জন্য জেনেভায় আলোচনায় ‘অসাধারণ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তবে তিনি বলেন, “এখনও কিছু কাজ বাকি আছে।” আগামী কয়েক দিনের মধ্যে শান্তিচুক্তির সব দফা চূড়ান্ত হয়ে যেতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের স্থানীয় সময় গত রবিবার রাতে ইউক্রেনীয় এবং ইউরোপীয় আলোচকদের বৈঠক শেষে রুবিও সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ইউক্রেনের হামলা
ইউক্রেনের সামনে কঠিন ২৮ দফা অথবা ভয়াবহ শীতকাল: জেলেনস্কি
বৈঠক শেষে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, “এমন ইঙ্গিত রয়েছে যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল আমাদের কথা শুনছে।”
ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে গত সপ্তাহে ফাঁস হওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২৮ দফা পরিকল্পনা নিয়ে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এই পরিকল্পনায় রাশিয়াকে অনেক সুবিধা দেওয়ায় হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল। সেসময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন যে, “ইউক্রেনের সামনে একটি বিকল্প রয়েছে-আমাদের মর্যাদা হারানো অথবা একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানো।”
রবিবার গভীর রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও বলেন, জেনেভার আলোচক দলগুলোর একটি ‘খুব ভালো দিন’ কেটেছে।
তিনি জানান, আলোচনার মূল লক্ষ্য ছিল- ২৮ দফার মার্কিন শান্তি পরিকল্পনায় যেসব ইস্যু খোলা রয়ে গেছে, সেগুলোতে ফারাক কমানো। আলোচনায় জড়িত দলগুলো এতে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ অর্জন করেছে।
তবে তিনি স্পষ্ট করেন, যেকোনো চূড়ান্ত চুক্তি অনুমোদন করতে হবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের, এরপর তা রাশিয়ার কাছে পাঠানো হবে। এখনও কয়েকটি বিষয়ে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।
রবিবার পরে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্র–ইউক্রেনের যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়, দুই পক্ষ একটি ‘হালনাগাদ ও পরিমার্জিত শান্তি কাঠামো’ নিয়ে একমত হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে যৌথ প্রস্তাব নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করবে।
ইউরোপের কয়েকটি দেশ- যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির নেতৃত্বে- বিকল্প একটি শান্তি পরিকল্পনা তৈরি করেছে বলে কিছু গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে বিবিসি তা দেখেনি এবং রুবিওও এমন কোনো পরিকল্পনার অস্তিত্ব অস্বীকার করেন।
এর আগে রবিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ইউক্রেনের নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ-সমাপ্তির প্রচেষ্টার জন্য ‘কোনো কৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছে না’।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ইউক্রেনের মিত্র কিছু ইউরোপীয় দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।
ইউক্রেনে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে মস্কো তেল ও গ্যাস রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে।
জেনেভায় মার্কিন খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। ফাঁস হওয়া ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ইউক্রেনীয় সৈন্যদের পূর্ব দোনেৎস্কের কিছু অংশ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে এবং এই অঞ্চলসহ লুহানস্ক ও ২০১৪ সালে রাশিয়ার সংযুক্ত ক্রিমিয়া উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ রাশিয়ার হাতে থাকবে।
মার্কিন এই শান্তি পরিকল্পনায় ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আকার কমিয়ে ৬ লাখ সদস্যে সীমিত করতে বলা হয়েছে। বর্তমানে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার জন।
পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, এর বিনিময়ে কিয়েভ ‘নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা গ্যারান্টি’ পাবে, যদিও সেটির বিস্তারিত কোনো বিবরণ দেওয়া হয়নি। এতে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়া তার প্রতিবেশীদের আক্রমণ করবে না এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদান স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হবে।
খসড়া প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, রাশিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশগুলোর জোট জি৭-এ যোগদানের জন্য মস্কো আমন্ত্রণ জানানো হবে। এর মাধ্যমে জোটটিকে আবারো জি৮-এ পরিণত করার মাধ্যমে- রাশিয়াকে ‘বিশ্ব অর্থনীতিতে পুনঃএকীভূত’ করা হবে।
ইউক্রেনকে প্রস্তাবগুলোতে একমত হওয়ার জন্য ট্রাম্প আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। তবে ইউক্রেনের যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান ও ইউরোপের মিত্ররা মার্কিন প্রস্তাবগুলো নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পর, শনিবার ট্রাম্প জানান, এটি কিয়েভের জন্য তার ‘চূড়ান্ত প্রস্তাব’ নয়।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রুবিও রবিবার সাংবাদিকদের বলেন, “আমি খুব আশাবাদী যে আমরা খুব শিগগির শান্তিচুক্তির প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে যাচ্ছি, সেটি বৃহস্পতিবার হোক, অন্যান্য দিন হোক বা পরের সপ্তাহের সোমবার হোক।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ য ক তর ষ ট র ইউক র ন য ক তর ষ ট র ইউক র ন র স ইউক র ন য প রস ত ব প রক শ র জন য রব ব র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
কপ-৩০: অস্থায়ী চুক্তির ব্যাপারে একমত আলোচকরা
ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ এ আলোচকরা একটি অস্থায়ী চুক্তির ব্যাপারে একমত হয়েছেন। আলোচকরা গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর পদক্ষেপ এবং জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী অচলাবস্থার সমাধান করার পর এই ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। শনিবার রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় দেশগুলো এখনও একত্রিত হতে পারে সেই বিষয়টি প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে। দুই সপ্তাহব্যাপী এই সম্মেলন শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আলোচকরা অচলাবস্থা সমাধানের জন্য অতিরিক্ত সময় লেগেছে।
সূত্র জানিয়েছে, আয়োজক দেশ ব্রাজিলের নেতৃত্বে সারা রাত ধরে আলোচনার পর অচলাবস্থার সমাধান হয়েছে। অবশ্য চূড়ান্ত চুক্তির পাঠ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি এবং সমঝোতার বিশদ তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
বিষয়টির সাথে পরিচিত দুটি সূত্র শনিবার সকালে রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন কোনো চুক্তির পথে বাধা না হতে সম্মত হয়েছে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট স্থানীয় সময় বেলা ১১ টায় সম্মেলনের সমাপনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের সময়সূচি নির্ধারণ করেছেন।
২০২৩ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে সরে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য উন্নত দেশে থেকে দরিদ্র দেশগুলোতে জলবায়ু অর্থায়নের প্রবাহের ভারসাম্য নিয়ে আলোচনায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার জন্য ভাষাগত চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলোর তীব্র প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল।
এবারের সম্মেলনের সভাপতি আন্দ্রে কোরিয়া দো লাগো শনিবার জানিয়েছেন, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জীবাশ্ম জ্বালানি এবং বন রক্ষার বিষয়ে একটি পার্শ্ব লেখা প্রকাশ করবেন। কারণ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু আলোচনায় এই বিষয়গুলোতে কোনো ঐক্যমত্য হয়নি।
তিনি বলেছেন, “আমি ঘোষণা করব যে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দুটি রোডম্যাপ তৈরি করবেন। কারণ দৃশ্যত আমাদের ঐকমত্য অর্জনের জন্য পরিপক্কতা ছিল না। আমি বিশ্বাস করি যদি আমরা প্রেসিডেন্টের অধীনে এটি করলে আমাদের ভালো ফলাফল থাকবে।”
আলোচনার সাথে পরিচিত একটি সূত্রের মতে, ২০২৫ সালের দ্বিগুণ লক্ষ্যমাত্রার উপর ভিত্তি করে ধনী দেশগুলোকে ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অভিযোজন তহবিল তিনগুণ করার ব্যাপারে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো একমত হয়েছে।
ঢাকা/শাহেদ