আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের ৯৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে মরক্কো গেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম। আজ রোববার সকালে মরক্কোর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন তিনি।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক সূত্র জানায়, আগামীকাল ২৪ নভেম্বর মরক্কোর মারাকেশ শহরে শুরু হবে সম্মেলন। চলবে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত। বাহারুল আলম তিন সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

ইন্টারপোলের এই বৈশ্বিক সভায় বিশ্বের ১৯৬টি সদস্যদেশের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। বাহারুল আলম সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের পুলিশপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে তথ্য আদান–প্রদান, যৌথ কার্যক্রম, সক্ষমতা উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হবে।

ইন্টারপোলের সাধারণ অধিবেশনকে পুলিশি সহযোগিতার বৈশ্বিক অঙ্গনে সবচেয়ে বড় আয়োজন হিসেবে ধরা হয়। এখানে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ, সাইবার অপরাধ দমন, মানব পাচার, সংঘবদ্ধ ও সীমান্তপারের অপরাধ মোকাবিলা, পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, আন্তর্জাতিক সমন্বয়সহ গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী আলোচনায় অংশ নেন সদস্যরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। একই সঙ্গে সংস্থাটির নীতি, কার্যপ্রণালি, বাজেট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়েও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক পরিসরে দেশের ভাবমূর্তি ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা আরও শক্তিশালী করবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। সম্মেলন শেষে ৩০ নভেম্বর দেশে ফেরার কথা রয়েছে আইজিপির।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মরক ক

এছাড়াও পড়ুন:

দুই মাস পর জামিন পেলেন ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম

পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে রাজধানীতে গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিক সখিনা বেগম দুই মাস পর জামিন পেয়েছেন। একই সঙ্গে সখিনাকে বাংলাদেশি আশ্রয়দাতাদের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। এক সপ্তাহ পর পর ভাষানটেক থানার পরিদর্শককে সখিনার বিষয়ে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ৪ মে থেকে ভাষানটেক থানাধীন মিরপুর ১৪ নম্বরের টিনশেড এলাকার বাসিন্দা জাকিয়া আক্তার ও ক্লান্তি আক্তারের আশ্রয়ে ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী সখিনা বেগম। গত ২৫ সেপ্টেম্বর তাঁকে সেখান থেকে আটক করে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আজ আদালত জামিন মঞ্জুর করে সখিনাকে মা–মেয়ে জাকিয়া ও ক্লান্তি আক্তারের জিম্মায় দেন। আদালত বলেছেন, যদি কখনো সখিনাকে ওঁনাদের রাখতে সমস্যা হয়, তাহলে আদালতকে জানাতে। আদালত অন্য কোথাও রাখার ব্যবস্থা করবেন। এ ছাড়া এক সপ্তাহ পরপর ভাষানটেক থানার পরিদর্শককে সখিনার বিষয়ে আদালতকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ রোববার আসামিপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন জামিন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন। এর আগে সখিনাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন জামিন শুনানি হয়। এরপর বিচারক বিরতি দিয়ে আদেশের জন্য রাখেন।

সখিনা বেগমকে আটকের পর ‘দ্য কন্ট্রোল অব এন্ট্রি অ্যাক্ট, ১৯৫২’ আইনে মামলা করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরের দিন তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

উল্লেখ্য, এই আইন অনুযায়ী কোনো ভারতীয় নাগরিক পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না। এর ব্যত্যয় হলে ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, অথবা ১ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।

আজ আসামি সখিনার পক্ষের আইনজীবী রহমাতুল্যাহ সিদ্দিক বলেন, ‘জামিন শুনানির জন্য সখিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিতে আমরা বলেছি, এটা একটা জামিনযোগ্য ধারা। জামিন পেলে আসামি পালাবেন না। বিচারক জানতে চেয়েছেন, কার জিম্মায় জামিন দেবেন। আমরা বলেছি, ওনাকে গত চার–পাঁচ মাস যাঁরা রেখেছেন, ওনাদের অধীনে দেন।’

সখিনার খোঁজ পাওয়ার বিষয়ে ক্লান্তি আক্তার বলেন, সখিনার কাছ থেকে জানতে পেরেছেন ভারতের আসামের বাসিন্দা তিনি। একদিন আসামে তাঁর বাসা থেকে সেখানকার পুলিশ সই করার কথা বলে তাঁকে থানায় নেয়। ওঁনার পরিবার থানায় গেলে তাদের চলে যেতে বলে। বলে, ওঁনার কাজ শেষ হলে বাসায় যাবে। ওই দিন রাতেই ২৫ থেকে ৩০ জনের সঙ্গে ওঁনাকে বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়। সেখান থেকে কয়েক সপ্তাহ এদিক–সেদিক ঘুরতে ঘুরতে ঢাকার ভাষানটেকে আসেন।

ক্লান্তি আক্তার বলেন, ‘মে মাসের চার তারিখ একটা দোকানে ওঁনাকে বসে থাকতে দেখি। ওঁনার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। সেখান থেকে বাসায় আশ্রয় দিই।...আমরা বিষয়টি বিবিসির সাংবাদিককে জানাই। উনি রিপোর্ট করার পর পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। উনি আমাদের কাছে পাঁচ মাসের মতো ছিলেন।’

জামিন পাওয়া সখিনা যত দিন বাংলাদেশে থাকবেন, তত দিন তাঁদের কাছেই থাকবেন বলে জানান ক্লান্তি। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে থাকাকালে ওঁনার প্রতি একটা মায়া জম্মেছে। উনি (সখিনা) ওঁনার দেশকে ভালোবাসেন। ওনার দেশেই যেতে চান। ওঁনার আত্মীয়স্বজন ওঁনাকে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন।’

মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে ভাষানটেক থানার টিনশেড টেকপাড়া গলির মাথায় সখিনা বেগমকে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের জিজ্ঞসাবাদে ওই নারী তাঁর বাড়ি আসামে বলে জানান। তিনি কিছুটা বাংলায় আর কিছুটা অসমীয়া ভাষায় কথা বলতে পারেন। তাঁর কাছে পাসপোর্ট ও ভিসা চাইলে দেখাতে পারেননি। কীভাবে ভাষানটেক এসেছেন, সে–সংক্রান্ত কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আসামের নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বাংলাদেশে প্রবেশের অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ