ইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন
Published: 24th, November 2025 GMT
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ-পশ্চিমের শহরতলিতে হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর শীর্ষ কর্মকর্তা হাইথাম আলী তাবতাবাইকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। প্রায় এক বছর আগে লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরায়েলের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি হয়। তারপরও গতকাল রোববার হিজবুল্লাহর অবস্থান লক্ষ্য করে ওই হামলা চালায় ইসরায়েল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী প্রথমে তাবতাবাইকে হত্যার দাবি করে। পরে হিজবুল্লাহ থেকে তাঁর নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করা হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চলা যুদ্ধে ইসরায়েল ইরান–সমর্থিত হিজবুল্লাহর নেতৃত্বের বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহ একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের পর হাইথাম আলী তাবতাবাইকে হিজবুল্লাহর ‘চিফ অব স্টাফ’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
হাইথাম আলী তাবতাবাই কে
তাবতাবাইয়ের জন্ম লেবাননে, ১৯৬৮ সালে। তাঁর বাবা ইরানি বংশোদ্ভূত এবং মা লেবানিজ। লেবাননের একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা সূত্র থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্রটি বলেছে, তিনি (তাবতাবাই) হিজবুল্লাহর প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ছিলেন না, তবে তিনি গোষ্ঠীর ‘দ্বিতীয় প্রজন্মের’ প্রতিনিধি ছিলেন। তিনি সিরিয়া ও ইয়েমেনে হিজবুল্লাহর মিত্রদের সঙ্গে লড়াই করতে এই গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী বলেছে, হাইথাম আলী তাবতাবাই ১৯৮০–এর দশকে হিজবুল্লাহতে যোগ দেন। তিনি হিজবুল্লাহর অভিজাত বাহিনী রাদওয়ান ফোর্সসহ বিভিন্ন বাহিনীতে একাধিক উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ইসরায়েল গত বছর লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়ে রাদওয়ান ফোর্সের বেশির ভাগ সদস্যকে হত্যা করেছিল।
গত বছরের যুদ্ধে তাবতাবাই হিজবুল্লাহর ‘অপারেশনস ডিভিশনের’ নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। যুদ্ধে অন্যান্য শীর্ষ কমান্ডাররা নিহত হলে তাবতাবাই ধাপে ধাপে পদোন্নতি পেয়েছিলেন বলে এক বিবৃতিতে দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী।
বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী আরও দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর হাইথাম আলী তাবতাবাই চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য তাদের প্রস্তুতি পুনর্গঠনের কাজে ব্যাপকভাবে নিযুক্ত ছিলেন।
লেবানিজ নিরাপত্তা সূত্রও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, অন্য শীর্ষ হিজবুল্লাহ কর্মকর্তারা নিহত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাবতাবাইকে দ্রুত পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল এবং গত বছর তিনি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন।
আরও পড়ুনবৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র স ল ব নন
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান শিল্পী–সংস্কৃতিকর্মীদের
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর শিল্প-সংস্কৃতির চর্চায় নতুন করে বাধা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীদের। তাঁরা বলছেন, রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা সাংস্কৃতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে শিল্পীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ শনিবার সকালে রাজধানীর রমনায় বিআইআইএসএস অডিটরিয়ামে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান-পরবর্তী সামাজিক রূপান্তর: সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারে শিল্পী-সংস্কৃতিকর্মীরা এ আহ্বান জানান।
এ সেমিনার আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ। এতে কবি, সাহিত্যিক, অভিনেতা, সংগীতশিল্পী এবং নৃত্যশিল্পীরা অংশ নেন।
এ সময় শিল্পীদের কম পারিশ্রমিক, সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনে বাধা, রাজনীতিকরণসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন বক্তারা। নতুন বাংলাদেশে সংস্কৃতিকর্মীদের যেন কোনো বাধার সম্মুখীন হতে না হয়, সেই প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন তাঁরা।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনেরা চান না যে শিল্পীরা একত্র হোক। শিল্পীরা তাঁদের জায়গা দখল করতে পারেন—এই শঙ্কায় তারা শিল্পীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। উদাহরণ হিসেবে তিনি ১৯৭১ সালের পরে গঠিত কণ্ঠশিল্পী সংস্থার ব্যর্থতার কথা বলেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছুকে স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।—মোহন রায়হান, সভাপতি, জাতীয় কবিতা পরিষদেএকুশে পদকপ্রাপ্ত এই সংগীতশিল্পী বলেন, শিল্পীদের এই বিভাজন সৃষ্টিকারী মহল থেকে দূরে থাকতে হবে এবং একত্র হওয়ার জন্য ওয়াদা করতে হবে। সংগঠনের ব্যর্থতার প্রধান কারণ ঐক্যবদ্ধ না থাকা এবং পদ পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাকেও দায় করেন তিনি। এ সময় একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য জীবিতদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর একটি ধর্মান্ধ, উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটেছে, যারা বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি কখনো চায়নি। তারা এগুলো ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। তারা বিভিন্ন কৌশলে শিল্পীদের কণ্ঠ চেপে ধরতে চায়। মব-সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে সবকিছু স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
কবি মোহন রায়হান আরও বলেন, মূল সমস্যা রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে। যত দিন রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হবে, তত দিন দেশের কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্ব নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত কৃষক-শ্রমিকের ঘরে গিয়ে কথা দিয়ে আসে। নির্বাচনের পরদিন সেই কথা আর কেউ রাখে না।
কণ্ঠশিল্পী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, দেশের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে যা চলছে, তাতে মনে হয় এসব না দেখি। যখনই দেখি তখন বুকের মধ্যে ব্যথা অনুভূত হয়। কী চেয়েছিলাম আর কী পাচ্ছি। তিনি বলেন, পদে পদে বাধা পেতে হচ্ছে। বাধা পেরিয়ে গান করতে হচ্ছে।
সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে, উল্লেখ করে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সমৃদ্ধ এক সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সবাই মিলে এমন একটি সংগঠন দাঁড় করাতে হবে, যেন সংস্কৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
‘একজন শিল্পীর জীবনে আর কী থাকে’সুরকার ও সংগীত পরিচালক মকসুদ জামিল বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরে মুক্ত স্বাধীন দেশে সাংস্কৃতিক চর্চা করা যাবে, এমন প্রত্যাশা থাকলেও এখন পরিস্থিতি একেবারেই অন্য রকম। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি হয়ে গেছে, বাংলাদেশ বেতার এবং টেলিভিশনের সাংস্কৃতিক কর্মীদের সম্মানী ১০ পয়সাও বৃদ্ধি করা হয়নি।
মকসুদ জামিল বলেন, বিভিন্ন অজুহাতে কনসার্ট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, বাউলগানের আসরে ব্যাপকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে, অনেক সময় অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সংগীতকর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিভিন্নভাবে অপদস্থ করা হচ্ছে।
সেমিনারে গত ১৬ বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সংগীতশিল্পী রিজিয়া পারভীন বলেন, গত ১৬ বছর সরকারি কোনো অনুষ্ঠানে কোথাও তাঁকে গান গাইতে দেওয়া হয়নি। অনুষ্ঠানের জন্য চুক্তি করে, অগ্রিম টাকা দিয়ে সেই টাকা ফেরত নেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। একজন শিল্পীর জীবন থেকে এতগুলো বছর চলে গেলে আর কী থাকে, সেই প্রশ্ন তোলেন তিনি।
গুণী শিল্পীদের স্বীকৃতি নেই, উল্লেখ করে রিজিয়া পারভীন আরও বলেন, ‘এমন অনেক শিল্পী একুশে পদক পেয়েছেন, যাঁদের পদকের আশপাশে যাওয়ার যোগ্যতা নেই। এখন টাকা দিলেই জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পায়।’
সংস্কৃতিকর্মীদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা এবং দুর্নীতিকে দায়ী করেন সংগীতশিল্পী মনির খান। তিনি বলেন, যদি কপিরাইট অফিস শিল্পীদের যোগ্য পাওনাটুকু বুঝিয়ে দিত, তাহলে শিল্পীদের কারও কাছে হাত পাতার দরকার হতো না।
সেমিনারে সূচনা বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহমান মৈশান। এ সময় আরও বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী ফেরদৌস আরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রিয়াঙ্কা গোপ, অভিনেতা শাহেদ শরীফ খান, প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান চুন্নু, চিকিৎসক শাকিল আহমেদ, সংগীত পরিচালক জিয়াউল হাসান পিয়াল, সাংবাদিক কাজী জেসিন প্রমুখ। সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত ছিলেন নাট্য অভিনেতা মাসুম বাসার ও জিতু আহসান। সেমিনারটি সঞ্চালনা করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ-আল-মামুন।