ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে ছাত্রশিবির। আজ রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালন করা হয়। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।

সকাল ৯টার দিকে ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি আবদুল্লাহ রিমনের নেতৃত্বে প্রশাসনিক ভবনে তালা দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বাধাদানকারীদের বিচারকাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন বাস্তবায়ন করা। এ সময় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদ কবীর বলেন, ‘দীর্ঘ ১৫ মাসেও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বাধাদানকারীদের বিচারকার্য শেষ হয়নি। এ ছাড়া ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়েও কোনো আপডেট পাওয়া যাচ্ছিল না। আমাদের কর্মসূচিতে উপাচার্য এসে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন বিষয়ে প্রতি সপ্তাহে আপডেট দেওয়ার আশ্বাসও দেন। এরপর আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করি।’

সাদা দলের শিক্ষকদের ৬ দাবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক–কর্মকর্তারা আজ সকালে উপাচার্যের কাছে ছয় দফা দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন।

সাদা দলের দাবিগুলো হলো জুলাই আন্দোলনে বাধাদানকারীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচন দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারীদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি নিশ্চিত করা এবং বিগত আমলে বঞ্চিতদের মূল্যায়ন ও বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। যেসব শিক্ষক–কর্মকর্তা–কর্মচারী পদোন্নতির জন্য আবেদন করেছেন এবং প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশ পেয়েছেন, আগামী সিন্ডিকেটের আগে তাঁদের আপগ্রেডেশন বোর্ড সম্পন্ন করা। পাশাপাশি উচ্চতর পদের বিপরীতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের আগামী সিন্ডিকেটে স্থায়ী করা। প্রভাষক নিয়োগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবীদের অগ্রাধিকার নিশ্চিত করা, বিজ্ঞপ্তির অতিরিক্ত নিয়োগ বন্ধ করা এবং স্বচ্ছ নিয়োগপ্রক্রিয়া নিশ্চিত করা। সাইবার বুলিং বা মিডিয়া ট্রায়াল বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ ও প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় আইন–বিধি সংস্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া।

এ বিষয়ে উপাচার্য মো.

জাহাঙ্গীর আলমের বক্তব্য জানতে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানবিষয়ক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। ২৭ নভেম্বর সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। শিক্ষার্থীদের সে পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তাদের অন্যান্য দাবিও প্রক্রিয়াধীন। শিক্ষকদের দাবিসংবলিত কাগজ হাতে পেয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’

শুক্রবারের ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। আতঙ্কে যে যে অবস্থায় ছিলেন সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঘরেই রয়ে গেছেন, কারণ ঢাকায় খোলা জায়গা কোথায়, যেখানে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া যায়! এই ভূমিকম্পের সময়কার ভিডিও ফুটেজের পাশাপাশি নানা মানুষের অনুভূতির কথায় এখন সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মধ্যে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্স নবজাতকদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ভিডিও এখন ভাইরাল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে কাঁপছে চারপাশ। চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এক নবজাতককে দুই হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। আরেকজন নার্সও দৌড়ে গিয়ে আরেক নবজাতককে ধরেন। ঘটনাটি রাজধানীর শ্যামলীর ডক্টরস কেয়ার হাসপাতালের।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এটিকে কম্পনের তীব্রতার দিক থেকে স্মরণকালের নজিরবিহীন বলছেন ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা। নরসিংদীর মাধবদীতে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এ ভূমিকম্পকে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী কমলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। এর মানে হলো এমন ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। সৌভাগ্যবশত সেই বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শক্তিশালী কম্পন ঢাকাবাসী কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। সবাই ক্ষণিকের জন্য হলেও মৃত্যুর ভয় পেয়েছেন। এই মানুষদের তালিকায় ছিলেন চিকিৎসক ইব্রাহীমও থাকলেও তিনি নিজের জীবনের চেয়ে দায়িত্বকে এগিয়ে রেখেছেন।

শুক্রবার তিনি নিজে এবং তাঁর সঙ্গে দায়িত্বে থাকা দুই নার্স যে কাজটি করেছিলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় বেশির ভাগ চিকিৎসকই এমন করেছেন বা করতেন বলে উল্লেখ করেন ইব্রাহীম সরদার।

গতকাল শনিবার বিকেলে কথা হলো ইব্রাহীম সরদারের সঙ্গে। তিনি হাসপাতাল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন গতকাল। তারপর থেকে তিনি ফেসবুকে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের শুভকামনায় ভাসছেন।

সবাই যখন নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, আপনি তা না করে কেন নবজাতককে জড়িয়ে ধরে ছিলেন—জানতে চাইলে ইব্রাহীম সরদার টেলিফোনে বললেন, ‘আমি হাসপাতালটিতে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অন্য সময়ও চোখের সামনে বাচ্চাদের মৃত্যু দেখি। গতকাল মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’

হাসপাতালটির এনআইসিইউতে তখন তিনটি নবজাতক এবং চার বছরের কম বয়সী চারটি শিশু ভর্তি ছিল। ইব্রাহীম সরদার জানালেন, তিনি যে নবজাতককে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের নথিতে মায়ের নাম অনুযায়ী তার নাম ‘বেবি অব সায়মা’। বয়স ছিল মাত্র ৭ দিন। জন্মের পর কান্না না করা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনিসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার।

ইব্রাহীম বললেন, ‘আমার মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা হিসেবে অ্যালার্ম সেট করা আছে। ভূমিকম্প শুরুর ২-৩ সেকেন্ড আগে অ্যালার্ম বাজলে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাই। কাঁপুনি বাড়লে আমি একজনকে ধরি। দায়িত্বে থাকা নার্স নিপা বিশ্বাস এবং মুক্তা আক্তারও অন্য দুই নবজাতকের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সিসিটিভিতে অবশ্য একজন নার্সকে দেখা যাচ্ছে।’

চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘আমি বা আমার সঙ্গে থাকা নার্সরা সেই সময় নিজেদের মৃত্যুর চিন্তা করি নাই। শুধু মনে হয়েছে, নবজাতকদের মাথা বা শরীরের ওপর কিছু পড়তে পারে। যেকোনোভাবে হোক ওদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। ঘটনার পর আমি নিজে দুই নার্সকে এই ভালো কাজের জন্য ট্রিট দিয়েছি।’

ফেসবুকে খুব একটা সরব নন ইব্রাহীম সরদার। তিনি বললেন, ‘আমি ফেসবুকে আলোচিত কেউ না। আমার এ পোস্ট আলোচনার জন্ম দেবে, তা-ও বুঝতে পারিনি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান সিসিটিভির ফুটেজটি দেন। হাসপাতালের দুজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একজন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি আমার মেডিকেল কলেজের বড় ভাই। ফজলে রাব্বিকে ট্যাগ করে সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম।’

শুক্রবার এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন ইব্রাহীম সরদার। শনিবার সকালে বাসায় ফেরেন। বিকেলে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ফেসবুকে আমার পোস্টটি আলোচনায় এসেছে, তা এখন বুঝতে পারছি। অনেকেই ফোন দিয়েছেন, ফেসবুকে মন্তব্য করার পাশাপাশি আমার পোস্ট শেয়ার করেছেন। অনেকে ফোন করছেন।’

৪৮তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর আমার বড় বোন ফোন দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেছিলেন। তাঁকেও বলেছি মারা গেলে তো যেকোনো জায়গাতেই মারা যেতে পারি। বাসায় যাওয়ার পথে বা বাসায় গিয়েও মারা যেতে পারি।’

ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নবজাতকদের ধরে রাখেন চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এবং নার্স নিপা বিশ্বাস ও মুক্তা আক্তার

সম্পর্কিত নিবন্ধ