গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে গত সোমবার অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ; যদিও নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করা পাকিস্তান এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি।

সেদিন পাকিস্তানের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতেখার আহমেদ। প্রস্তাবটি উপস্থাপনের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান এবং সেটির পক্ষে ভোট দেওয়ার কথাও বলেন।

তবে আসিম ইফতেখার এ–ও বলেন, প্রস্তাবে যেসব বিষয় রাখা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তান কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে সেগুলো প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিল, চূড়ান্ত খসড়ায় সে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী। গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সীমান্তের সুরক্ষা দেওয়া, উপত্যকাটিকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক কার্যক্রম চালানোসহ নানা দায়িত্ব পালন করবে তারা।

নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে কথা বলার সময় আসিম ইফতেখার আহমেদ বলেন, যদিও প্রস্তাবটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেই পথের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সেনাদের নিয়ে আইএসএফ গঠন করা হবে। এই বাহিনী গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকঠাক বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করবে। এ বাহিনীতে কারা সেনা পাঠাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এ ছাড়া জাতিসংঘের ভূমিকা কী হবে, গাজার প্রশাসন তদারকির জন্য প্রস্তাবিত বোর্ড অব পিস (বিওপি) এবং আইএসএফ কীভাবে গঠিত হবে ও কীভাবে তারা কাজ করবে, সে বিষয়ও স্পষ্ট করা হয়নি।

আসিম ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এই উদ্যোগ সফল করতে এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, আগামী সপ্তাহগুলোয় আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা আসবে।’

আইএসএফ কী

আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী। গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সীমান্তের সুরক্ষা দেওয়া, উপত্যকাটিকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক কার্যক্রম চালানোসহ নানা দায়িত্ব পালন করবে তারা। এ ছাড়া সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে এই বাহিনী।

গাজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত অনেক দায়িত্বও নিজেদের হাতে তুলে নেবে আইএসএফ। ১৯ বছর ধরে এসব দায়িত্ব পালন করে আসছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ২০০৬ সাল থেকে গাজা শাসন করছে সংগঠনটি। উপত্যকাটির সামাজিক ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেবা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও রয়েছে তারা।

‘রেজল্যুশনে যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তান কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে সেগুলো রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিল, চূড়ান্ত খসড়ায় সে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

ভূরাজনীতিতে পাকিস্তানের গুরুত্ব বাড়ছে

গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের কূটনৈতিক সংযোগ জোরালো হয়েছে।

গত সপ্তাহান্তে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ পাকিস্তান সফরে আসেন এবং ইসলামাবাদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত অক্টোবরে আসিম মুনির আম্মান সফরে যান এবং সেখান থেকে মিসরের কায়রোতে যান।

ঐতিহ্যগতভাবেই পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সে সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যার সীমান্ত নির্ধারিত হবে ১৯৬৭ সাল–পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে এবং রাজধানী হবে আল-কুদস আল-শরিফ (জেরুজালেম)।

মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক হিসাব-নিকাশে ইদানীং গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্ররা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। পাকিস্তান বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ, যাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে।

গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষাচুক্তি (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করে। ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় আক্রমণের কয়েক দিন পর ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তারপর গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল মুনির মিসরের শার্ম-এল-শেখে ট্রাম্পসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প এরই মধ্যে আসিম মুনিরকে তাঁর ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের ঠিক পরের মাসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর সম্মানে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান নন—এমন একজন পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের জন্য যা নজিরবিহীন সম্মান।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যার সীমান্ত নির্ধারিত হবে ১৯৬৭ সাল পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে এবং রাজধানী হবে আল-কুদস আল-শরিফ (জেরুজালেম)।

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আসিম মুনির আবারও ওয়াশিংটনে যান, এবার প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পাকিস্তানে সম্ভাব্য মার্কিন বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কথা বলেন, যার মধ্যে পাকিস্তানের বিরল খনিজও অন্তর্ভুক্ত।

এখন পাকিস্তানের সরকার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আইএসএফে অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। যদিও সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ ধারণার বিষয়ে প্রকাশ্যে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

গত ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘যদি পাকিস্তানকে এতে অংশগ্রহণ করতে হয়, তাহলে আমি মনে করি, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হবে। এটা করতে পারলে আমরা গর্ব বোধ করব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আস ম ম ন র প রস ত ব স রক ষ র জন য গঠন র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে খুশি করতে গাজায় সেনা পাঠিয়ে কী বিপদ হতে পারে পাকিস্তানের

গাজায় সংঘাত বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি প্রস্তাবে গত সোমবার অনুমোদন দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ; যদিও নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করা পাকিস্তান এ বিষয়ে নিজেদের অবস্থান এখনো স্পষ্ট করেনি।

সেদিন পাকিস্তানের পক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করেন জাতিসংঘে দেশটির স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতেখার আহমেদ। প্রস্তাবটি উপস্থাপনের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানান এবং সেটির পক্ষে ভোট দেওয়ার কথাও বলেন।

তবে আসিম ইফতেখার এ–ও বলেন, প্রস্তাবে যেসব বিষয় রাখা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তান কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে সেগুলো প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিল, চূড়ান্ত খসড়ায় সে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী। গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সীমান্তের সুরক্ষা দেওয়া, উপত্যকাটিকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক কার্যক্রম চালানোসহ নানা দায়িত্ব পালন করবে তারা।

নিরাপত্তা পরিষদে এ নিয়ে কথা বলার সময় আসিম ইফতেখার আহমেদ বলেন, যদিও প্রস্তাবটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু সেই পথের বিষয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।

ট্রাম্পের ওই প্রস্তাবে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠনের কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সেনাদের নিয়ে আইএসএফ গঠন করা হবে। এই বাহিনী গাজার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সেখানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঠিকঠাক বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তা দেখভাল করবে। এ বাহিনীতে কারা সেনা পাঠাবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

এ ছাড়া জাতিসংঘের ভূমিকা কী হবে, গাজার প্রশাসন তদারকির জন্য প্রস্তাবিত বোর্ড অব পিস (বিওপি) এবং আইএসএফ কীভাবে গঠিত হবে ও কীভাবে তারা কাজ করবে, সে বিষয়ও স্পষ্ট করা হয়নি।

আসিম ইফতেখার আহমেদ বলেন, ‘এই উদ্যোগ সফল করতে এসব বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি, আগামী সপ্তাহগুলোয় আরও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হলে এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় স্পষ্টতা আসবে।’

আইএসএফ কী

আইএসএফ একটি বহুজাতিক বাহিনী। গাজায় পুলিশকে প্রশিক্ষণ দেওয়া, সীমান্তের সুরক্ষা দেওয়া, উপত্যকাটিকে অস্ত্রমুক্ত করে নিরাপত্তা বজায় রাখা, বেসামরিক লোকজনকে সুরক্ষা দেওয়া, মানবিক কার্যক্রম চালানোসহ নানা দায়িত্ব পালন করবে তারা। এ ছাড়া সমন্বিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে পারবে এই বাহিনী।

গাজার নিরাপত্তাসংক্রান্ত অনেক দায়িত্বও নিজেদের হাতে তুলে নেবে আইএসএফ। ১৯ বছর ধরে এসব দায়িত্ব পালন করে আসছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ২০০৬ সাল থেকে গাজা শাসন করছে সংগঠনটি। উপত্যকাটির সামাজিক ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত সেবা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও রয়েছে তারা।

‘রেজল্যুশনে যেসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তাতে পাকিস্তান সম্পূর্ণরূপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। পাকিস্তান কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে সেগুলো রেজল্যুশনে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিল, চূড়ান্ত খসড়ায় সে পরামর্শ অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।’

ভূরাজনীতিতে পাকিস্তানের গুরুত্ব বাড়ছে

গত কয়েক সপ্তাহে মধ্যপ্রাচ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের সঙ্গে পাকিস্তানের শীর্ষ নেতাদের কূটনৈতিক সংযোগ জোরালো হয়েছে।

গত সপ্তাহান্তে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ পাকিস্তান সফরে আসেন এবং ইসলামাবাদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে গত অক্টোবরে আসিম মুনির আম্মান সফরে যান এবং সেখান থেকে মিসরের কায়রোতে যান।

ঐতিহ্যগতভাবেই পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর সে সম্পর্ক আরও জোরালো হয়েছে।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যার সীমান্ত নির্ধারিত হবে ১৯৬৭ সাল–পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে এবং রাজধানী হবে আল-কুদস আল-শরিফ (জেরুজালেম)।

মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তাবিষয়ক হিসাব-নিকাশে ইদানীং গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে পাকিস্তান। যুক্তরাষ্ট্র ও গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্ররা পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইছে। পাকিস্তান বিশ্বের একমাত্র মুসলিম দেশ, যাদের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে।

গত সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সৌদি আরবের সঙ্গে একটি কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষাচুক্তি (এসএমডিএ) স্বাক্ষর করে। ইসরায়েল কাতারের রাজধানী দোহায় আক্রমণের কয়েক দিন পর ওই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

তারপর গত অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রী শরিফ ও সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল মুনির মিসরের শার্ম-এল-শেখে ট্রাম্পসহ আরও বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তির আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শরিফ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প এরই মধ্যে আসিম মুনিরকে তাঁর ‘প্রিয় ফিল্ড মার্শাল’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গত মে মাসে ভারতের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের ঠিক পরের মাসে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁর সম্মানে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান নন—এমন একজন পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের জন্য যা নজিরবিহীন সম্মান।

পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরেই একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের আহ্বান জানিয়ে আসছে, যার সীমান্ত নির্ধারিত হবে ১৯৬৭ সাল পূর্ববর্তী সীমান্তের ভিত্তিতে এবং রাজধানী হবে আল-কুদস আল-শরিফ (জেরুজালেম)।

গত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে আসিম মুনির আবারও ওয়াশিংটনে যান, এবার প্রধানমন্ত্রী শরিফের সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধান ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পাকিস্তানে সম্ভাব্য মার্কিন বিনিয়োগের সুযোগ নিয়ে কথা বলেন, যার মধ্যে পাকিস্তানের বিরল খনিজও অন্তর্ভুক্ত।

এখন পাকিস্তানের সরকার ট্রাম্পের প্রস্তাবিত আইএসএফে অংশগ্রহণ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছে। যদিও সরকার এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি, তবে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এ ধারণার বিষয়ে প্রকাশ্যে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন।

গত ২৮ অক্টোবর পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেন, ‘যদি পাকিস্তানকে এতে অংশগ্রহণ করতে হয়, তাহলে আমি মনে করি, এটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয় হবে। এটা করতে পারলে আমরা গর্ব বোধ করব।’

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে গাজায় একটি আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) মোতায়েনের কথা বলা হয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ