কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে এলাকায় প্রভাব বিস্তারের জন্য গুলিভর্তি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার সময় ২২ জনকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী। 

শনিবার (২২ নভেম্বর) রাতে বাজিতপুর উপজেলার নান্দিনা এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। 

নান্দিনা এলাকার মৃত কাশেম মেম্বারের ছেলে গোলাম সারোয়ার ভুবনের (২৭) কাছ থেকে তুরস্কে তৈরী ৬ রাউন্ড গুলিভর্তি একটি পিস্তল জব্দ করে যৌথ বাহিনী। তার সাথে থাকা ২১ জনের কাছ থেকে একটি রামদাসহ কয়েকটি স্টিলের পাইপ জব্দ করা হয়।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আটক সবাই কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) সংসদীয় আসনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী বাংলাদেশ জাতীয় দলের সভাপতি ও ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক সৈয়দ এহসানুল হুদার অনুসারী। কয়েকদিন ধরেই কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল এবং সৈয়দ এহসানুল হুদার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

শনিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের মনোনয়নের দাবিতে তার সমর্থক ও নিকলী-বাজিতপুর দুই উপজেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ মানববন্ধন করেন। 

পরে সন্ধ্যায় গণসংযোগ চালানোর সময় সৈয়দ এহসানুল হুদা প্রতিপক্ষের উদ্দেশে উত্তেজনাকর বক্তব্য দেওয়ার পর হামলা চালিয়ে কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের সমর্থকরা। এ ঘটনার জেরে রাতে অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছিলেন সৈয়দ এহসানুল হুদার লোকজন। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও দেশীয় অস্ত্রসহ তাদেরকে আটক করে বাজিতপুর থানায় হস্তান্তর করে।

রবিবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে বাজিতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.

মুরাদ হোসেন আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্রসহ ২২ জনকে আটকের তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেছেন, ২২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের কাজ চলছে। সবাইকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

ঢাকা/রুমন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ এহস ন ল হ দ ক শ রগঞ জ ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’

শুক্রবারের ভূমিকম্পে তীব্র ঝাঁকুনিতে কেঁপে ওঠে ঢাকা শহর। আতঙ্কে যে যে অবস্থায় ছিলেন সেখান থেকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে ছুটে গেছেন। আবার কেউ কেউ ঘরেই রয়ে গেছেন, কারণ ঢাকায় খোলা জায়গা কোথায়, যেখানে নিরাপদ আশ্রয় নেওয়া যায়! এই ভূমিকম্পের সময়কার ভিডিও ফুটেজের পাশাপাশি নানা মানুষের অনুভূতির কথায় এখন সয়লাব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মধ্যে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে একজন চিকিৎসক ও দুজন নার্স নবজাতকদের পাশে যেভাবে দাঁড়িয়েছিলেন, সেই ভিডিও এখন ভাইরাল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে কাঁপছে চারপাশ। চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এক নবজাতককে দুই হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। আরেকজন নার্সও দৌড়ে গিয়ে আরেক নবজাতককে ধরেন। ঘটনাটি রাজধানীর শ্যামলীর ডক্টরস কেয়ার হাসপাতালের।

শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। এটিকে কম্পনের তীব্রতার দিক থেকে স্মরণকালের নজিরবিহীন বলছেন ভূমিকম্প-বিশেষজ্ঞরা। নরসিংদীর মাধবদীতে ছিল ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। এ ভূমিকম্পকে ঝুঁকির মাত্রা অনুযায়ী কমলা শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস। এর মানে হলো এমন ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। সৌভাগ্যবশত সেই বড় ধরনের প্রাণহানির ঘটনা না ঘটলেও শক্তিশালী কম্পন ঢাকাবাসী কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। সবাই ক্ষণিকের জন্য হলেও মৃত্যুর ভয় পেয়েছেন। এই মানুষদের তালিকায় ছিলেন চিকিৎসক ইব্রাহীমও থাকলেও তিনি নিজের জীবনের চেয়ে দায়িত্বকে এগিয়ে রেখেছেন।

শুক্রবার তিনি নিজে এবং তাঁর সঙ্গে দায়িত্বে থাকা দুই নার্স যে কাজটি করেছিলেন, দায়িত্বরত অবস্থায় বেশির ভাগ চিকিৎসকই এমন করেছেন বা করতেন বলে উল্লেখ করেন ইব্রাহীম সরদার।

গতকাল শনিবার বিকেলে কথা হলো ইব্রাহীম সরদারের সঙ্গে। তিনি হাসপাতাল থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন গতকাল। তারপর থেকে তিনি ফেসবুকে এবং ব্যক্তিগতভাবে মানুষের শুভকামনায় ভাসছেন।

সবাই যখন নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, আপনি তা না করে কেন নবজাতককে জড়িয়ে ধরে ছিলেন—জানতে চাইলে ইব্রাহীম সরদার টেলিফোনে বললেন, ‘আমি হাসপাতালটিতে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউ) মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। অন্য সময়ও চোখের সামনে বাচ্চাদের মৃত্যু দেখি। গতকাল মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’

হাসপাতালটির এনআইসিইউতে তখন তিনটি নবজাতক এবং চার বছরের কম বয়সী চারটি শিশু ভর্তি ছিল। ইব্রাহীম সরদার জানালেন, তিনি যে নবজাতককে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন হাসপাতালের নথিতে মায়ের নাম অনুযায়ী তার নাম ‘বেবি অব সায়মা’। বয়স ছিল মাত্র ৭ দিন। জন্মের পর কান্না না করা, শ্বাসকষ্ট, খিঁচুনিসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার।

ইব্রাহীম বললেন, ‘আমার মোবাইলে অ্যাপের মাধ্যমে ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা হিসেবে অ্যালার্ম সেট করা আছে। ভূমিকম্প শুরুর ২-৩ সেকেন্ড আগে অ্যালার্ম বাজলে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে যাই। কাঁপুনি বাড়লে আমি একজনকে ধরি। দায়িত্বে থাকা নার্স নিপা বিশ্বাস এবং মুক্তা আক্তারও অন্য দুই নবজাতকের পাশে গিয়ে দাঁড়ান। সিসিটিভিতে অবশ্য একজন নার্সকে দেখা যাচ্ছে।’

চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘আমি বা আমার সঙ্গে থাকা নার্সরা সেই সময় নিজেদের মৃত্যুর চিন্তা করি নাই। শুধু মনে হয়েছে, নবজাতকদের মাথা বা শরীরের ওপর কিছু পড়তে পারে। যেকোনোভাবে হোক ওদের নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। ঘটনার পর আমি নিজে দুই নার্সকে এই ভালো কাজের জন্য ট্রিট দিয়েছি।’

ফেসবুকে খুব একটা সরব নন ইব্রাহীম সরদার। তিনি বললেন, ‘আমি ফেসবুকে আলোচিত কেউ না। আমার এ পোস্ট আলোচনার জন্ম দেবে, তা-ও বুঝতে পারিনি। হাসপাতালের ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান সিসিটিভির ফুটেজটি দেন। হাসপাতালের দুজন ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের একজন চিকিৎসক ফজলে রাব্বি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন। তিনি আমার মেডিকেল কলেজের বড় ভাই। ফজলে রাব্বিকে ট্যাগ করে সিসিটিভি ফুটেজটি ফেসবুকে শেয়ার দিয়েছিলাম।’

শুক্রবার এই হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করেন ইব্রাহীম সরদার। শনিবার সকালে বাসায় ফেরেন। বিকেলে কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘ফেসবুকে আমার পোস্টটি আলোচনায় এসেছে, তা এখন বুঝতে পারছি। অনেকেই ফোন দিয়েছেন, ফেসবুকে মন্তব্য করার পাশাপাশি আমার পোস্ট শেয়ার করেছেন। অনেকে ফোন করছেন।’

৪৮তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত ইব্রাহীম সরদার বলেন, ‘ভূমিকম্পের পর আমার বড় বোন ফোন দিয়ে বাসায় চলে যেতে বলেছিলেন। তাঁকেও বলেছি মারা গেলে তো যেকোনো জায়গাতেই মারা যেতে পারি। বাসায় যাওয়ার পথে বা বাসায় গিয়েও মারা যেতে পারি।’

ভূমিকম্পের সময় হাসপাতালে শিশুদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নবজাতকদের ধরে রাখেন চিকিৎসক ইব্রাহীম সরদার এবং নার্স নিপা বিশ্বাস ও মুক্তা আক্তার

সম্পর্কিত নিবন্ধ