সাবেক নেত্রীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর চায় বাংলাদেশ, এই পথে বড় বাধা ভারত
Published: 24th, November 2025 GMT
একসময় তিনি ধর্মনিরপেক্ষ নেত্রী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। একজন বিপ্লবী নেতার কন্যা। ১৯৭০-এর দশকে বাবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডই তাঁর রাজনৈতিক উত্থানের পথ করে দিয়েছিল। তবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষে পৌঁছানোর পর ঘটে ক্ষমতা থেকে এক অবিশ্বাস্য পতন; যেতে হয় ভারতে স্বেচ্ছানির্বাসনে।
শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আর তা কার্যকর হতে পারে, যদি নয়াদিল্লি তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২৪ সালের ছাত্র বিক্ষোভে সহিংস দমন-পীড়ন চালানোয় ক্ষমতাচ্যুত এই নেত্রীকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। ওই বিক্ষোভে তাঁর সরকারের পতন হয়। ক্রমেই কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা ১৫ বছরের শাসনের পর তিনি গত বছরের আগস্টে ভারতে পালিয়ে যান এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ মিত্রদের অন্যতম একটি দেশের রাজধানীতে আশ্রয় নেন।
এখন তিনি দুই দেশের মধ্যে এক উত্তেজনাপূর্ণ অচলাবস্থার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছেন। ঢাকা তাঁর অপরাধের জন্য বিচারের মুখোমুখি করতে তাঁকে প্রত্যর্পণের দাবি জানাচ্ছে। যদিও তিনি জোর দিয়ে বলছেন, তিনি এই অপরাধ করেননি।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মোবাশ্বার হাসান বলেন, ‘গণরোষ থেকে বাঁচতে তাঁকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছিল। তিনি ভারতে লুকিয়ে আছেন আর তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হলো। এটি সত্যিই এক ব্যতিক্রমী গল্প।’
তাঁকে পালাতে হয়েছিল। এটা নিজেই অপরাধের একটি স্বীকারোক্তি। জনগণ, বিভিন্ন বাহিনী—সবাই তাঁর বিরুদ্ধে চলে গিয়েছিল। কারণ, তিনি সীমা অতিক্রম করেছিলেন। তিনি হত্যা করেছেন, তাঁর নির্দেশে এত এত মানুষ হত্যার শিকার হয়েছিল।মোবাশ্বার হাসান, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীএক সহিংস অতীতরাজনীতিতে শেখ হাসিনার যাত্রাপথ শেক্সপিয়রীয় আদলের এক গল্পের মতো—মর্মান্তিক ঘটনা, নির্বাসন ও ক্ষমতার আখ্যান, যা তাঁর নিজ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত।
বাংলাদেশের ক্যারিশম্যাটিক ‘জাতির পিতা’ শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। সে হিসেবে তিনি পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধিকারের সংগ্রাম প্রত্যক্ষ করার মধ্য দিয়ে জীবনের শুরুতেই রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের রক্তক্ষয়ী একটি রাতই সত্যিকার অর্থে তাঁকে এ পথে নিয়ে আসে।
এক নৃশংস সামরিক অভ্যুত্থানে সেনা কর্মকর্তারা ঢাকার বাসভবনে তাঁর বাবা, মা ও তিন ভাইকে হত্যা করেন। ওই সময় শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন পশ্চিম জার্মানি সফরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
সেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির পর ক্ষমতায় আসেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। যিনি ছিলেন শেখ হাসিনার ভবিষ্যতের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার স্বামী। জিয়াউর রহমানের সরকার একটি আইন পাস করে, যে আইনের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের কয়েক দশক ধরে সুরক্ষা দেওয়া হয়।
শেখ হাসিনার জীবন ওই এক রাতেই পাল্টে যায় এবং তিনি ছয় বছর ভারতে নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হন। এ সময়টি ভবিষ্যৎ এই নেত্রীর মনে ভারত রাষ্ট্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা গেঁথে দেয়।
ক্ষমতার ওপর শেখ হাসিনার নিয়ন্ত্রণ আপাতদৃষ্টে অটুট মনে হয়েছিল। জনসমর্থন রয়েছে, এমন বিক্ষোভ মোকাবিলা, গ্রেপ্তার ও হত্যাচেষ্টার মতো ঝড় সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি পারদর্শী প্রমাণিত হয়েছিলেন। কিন্তু গত বছর তরুণদের নেতৃত্বাধীন যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, তা ছিল ভিন্ন।অবশেষে ১৯৮১ সালে যখন তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন, তখন দেশটি তার প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শ ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য সোচ্চার ছিল। তবে তিনিও এমন এক রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশ করেন, যা নির্ধারিত হতে যাচ্ছিল বিয়োগান্ত ঘটনার মধ্যে নিপতিত হওয়া আরেক নারী দ্বারা—খালেদা জিয়া, যাঁর স্বামীও পরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন।
বাধ্যতামূলক নির্বাসন থেকে ফিরে আসার দিনটির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘যখন আমি বিমানবন্দরে নেমেছিলাম, তখন আমার কোনো আত্মীয়কে দেখিনি, কিন্তু লাখ লাখ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছিলাম। সেটাই ছিল আমার একমাত্র শক্তি।’
এভাবেই শুরু হয়েছিল ‘বেগমদের লড়াইয়ের’ যুগ—দুই নারীর মধ্যে এক গভীর ব্যক্তিগত অথচ ধ্বংসাত্মক দ্বন্দ্ব, যার প্রভাব পরবর্তী ৩০ বছর ধরে বাংলাদেশকে গ্রাস করেছিল।
অভূতপূর্ব গণজাগরণে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিজয় উদ্যাপন। ৫ আগস্ট ২০২৪, সংসদ ভবন এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র রহম ন র জন ত অপর ধ ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
ভূমিকম্পে ধামরাইয়ে হেলে পড়া সেই ভবন ভেঙে ফেলা হচ্ছে
ঢাকার ধামরাইয়ে ভূমিকম্পে হেলে পড়া ঝুঁকিপূর্ণ চারতলা ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে। রাইজিংবিডি ডটকমে খবর প্রকাশের পর উপজেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশনা দেয়।
শনিবার (২২ নভেম্বর) সকাল থেকে ভবনটি ভাঙা শুরু হয়।
আরো পড়ুন:
এক সেকেন্ডের ব্যবধানে ২ বার ভূমিকম্প: আবহাওয়া অধিদপ্তর
ভূমিকম্প আতঙ্ক: রবিবার বন্ধ থাকবে ঢাবি
এর আগে, ২০২৪ সালের মে মাসে আংশিক হেলে পড়ে ভবনটি। শুক্রবার ভূমিকম্পের পর আরো বেশি হেলে পড়লে ওই ভবনটি ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে শনিবার দুপুরের দিকে ধামরাই পৌরসভার ঢুলিভিটা এলাকায় গড়ে ওঠা ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরের মো. জিয়াউদ্দিনের বাড়ির চারতলার ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙার কাজ করতে দেখা যায় শ্রমিকদের।
ভবন মালিক ও স্থানীয়রা জানান, ধানসিঁড়ি হাউজিং প্রকল্পের ভেতরে পাশাপাশি দুটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুই ভবনের মধ্যে ১০ ফুট জায়গায় করিডরের মতো আরেকটি চারতলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এটির ভেতর দিয়েই পেছনের দিকে অপর মূল ভবনে ঢুকতে হয়। এই করিডরের মতো অংশটিই পাশের ছয় তলা ভবনের ওপর হেলে পড়ে।
ভবনটিতে ঢুকে দেখা যায়, করিডরের তৃতীয় তলার অংশটি পাশের ছয়তলা ভবনের ওপর হেলে রয়েছে। তিন তলার বারান্দার রেলিংয়ের ইটের গাঁথুনির অংশটি ফেটে গেছে। তবে করিডরের আর কোথাও কোনো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। যদিও করিডর দিয়ে ঢুকে চারতলা ভবনের ভেতরেও কোনো ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখা যায়নি।
ভবনের মালিকপক্ষ জানায়, ওই প্লটটিতে ছয়তলা ভবন করার অনুমতি ছিল। এর মধ্যে সেটি দুটি প্লট আকারে বিক্রি করে মালিক। চার শতাংশের একটি অংশ কিনে নেন মো. রফিক। তিনি সেখানে তিন তলা ভবন নির্মাণ করেন। আর পেছনের দুই শতাংশ জমি কিনে নেন মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন। সেখানে তিনি নির্মাণ করেন চারতলা ভবন।
এছাড়া তিনতলা ভবন ও পাশের অপর ছয়তলা ভবনের মাঝখানে সড়কের মতো থাকা প্রায় ১০ ফুট চওড়া ও প্রায় ৪২ ফুট লম্বা জমি কিনে নিয়ে সেখানে করিডরের মতো বর্ধিত চারতলা সংযুক্ত ভবন নির্মাণ করেন জিয়াউদ্দিন। সেটিই ২০২৪ সালে প্রথম হেলে পড়ে। আর শুক্রবার এটি পুরোপুরি কাৎ হয়ে যায়। প্রশাসনের নির্দেশে সকাল থেকেই ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করে মালিকপক্ষ।
মালিকপক্ষ বলছে, নিজ ইচ্ছাতে কয়েকদিনের মধ্যেই ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে ফেলতেন তারা। কিন্তু গতকাল হঠাৎ ভূমিকম্প হওয়ায় আজই ভাঙার কাজ শুরু করেছেন। অচিরেই ঝুঁকিপূর্ণ অংশ ভেঙ্গে ফেলা হবে বলে জানান তারা।
ভবন মালিক মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিনের ছেলে মোনায়েম বলেন, “আসলে আগেই এটা আমাদের ডাঙার পরিকল্পনা ছিল। প্রশাসন যতটা ভাঙতে বলবে, সেটা ভাঙতাম। কিন্তু গতকাল যে ভূমিকম্প হয়েছে, তাতে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। যেজন্য দ্রুত এটা ভাঙার উদ্যোগ নেই। আজ সকাল থেকে ভাঙার কাজ চলছে। অর্ধেকের বেশি ভাঙা হয়ে গেছে। খুব দ্রুত ভাঙা শেষ হবে।”
সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন ও ভবন মালিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ভাঙ্গা শুরু করায় স্থানীয় বাসিন্দারা স্বস্তি জানান।
ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. মামনুন আহমেদ অনীক বলেন, “শুক্রবার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার পর আমরা ওখানে লোক পাঠাই। পরিদর্শনের পর ভবনটি ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের দিকে অবশ্যই আমরা দায়িত্বশীল থাকব।”
ঢাকা/সাব্বির/মেহেদী