ফরিদপুর থেকে বম্বে, গীতা দত্ত মানে ‘তুমি যে আমার’
Published: 23rd, November 2025 GMT
শিরোনাম আর শুরুর তথ্যের পর তাঁকে নিয়ে লেখার কোনো ভূমিকা দরকার হয় না। এই বাংলার কন্যা গীতা দত্তের নামের আগে জুতসই বিশেষণ পাওয়াও মুশকিল। যেমন মুশকিলে পড়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ‘হারানো সুর’ সিনেমার গান করছেন। ‘তুমি যে আমার’ গানটি রেকর্ড হবে। সুচিত্রা মানেই তো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। সবাই সে কথা বলেছিলেন, কিন্তু সুরকার হেমন্ত ঠিক আস্থা রাখতে পারছিলেন না। অন্য রকম ভাবছেন, এই গান গীতা ছাড়া আর কেউ গাইতে পারবে না! হেমন্তের কথামতোই ঠিক হলো, গীতা দত্তই গাইবেন। মুম্বাই (তৎকালীন বম্বে) গিয়ে গানের রেকর্ডিং করা হলো। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। আজও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে প্রতিবেদন বা গল্প তৈরি করতে গেলে শুরুতে এই গানের উল্লেখ এসেই পড়ে। যেন সুচিত্রাই গাইছেন, গভীর থেকে। কী অদ্ভুত টান, কী দারুণ গায়কি! এই গানের মতোই উজ্জ্বল ছিলেন গীতা দত্ত, আর এমনই ছিল তাঁর গান। ভারতের সংগীতজগতে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল—লতাকণ্ঠী, আশাকণ্ঠী হওয়া যায়, কিন্তু গীতাকণ্ঠী হওয়া যায় না।
ফরিদপুরের কন্যা
১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জীবনের উন্মেষ বাংলাদেশের ফরিদপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রায়চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর ১০ সন্তানের মধ্যে গীতা ছিলেন পঞ্চম৷ তখন তিনি গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। ছোট থেকেই গানের প্রতি কন্যার আগ্রহ আর সুরেলা কণ্ঠ মা-বাবার নজরে আসে। স্থানীয় গুরু হরেন্দ্রনাথ নন্দীর কাছে তালিমের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে কলকাতায় পাড়ি দেয় চৌধুরী পরিবার। কিছুদিন আসাম এবং কলকাতা থাকেন ঘোষ রায়চৌধুরীরা।
পরে ১৯৪২ সালে মুম্বাই পাড়ি দেন তাঁরা। ফরিদপুরের জমিদারি হারানোর পর আসাম, কলকাতা ঘুরে মুম্বাইয়ে থিতু হওয়া অত সহজ ছিল না। আর্থিক টানাপোড়েন পড়ে পরিবার। সেখানে আর কিশোরী গীতার জন্য সংগীতের তালিমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি মা-বাবার। তাতে থেমে যান গীতা। সংগীত তো তাঁর আত্মায়, নিজের মতো করে চর্চা করে যেতেন। পাশাপাশি গানের টিউশনিও করাতেন। এবাড়ি–ওবাড়ি ছুটতেন টিউশনি করতে। বাসের ভাড়ার পয়সা বাঁচাতে হাঁটতেন মাইলের পর মাইল। যে বাড়িতে গান শেখাতেন, সেখানে গরিব বলে তাঁকে মাটিতে বসতে দেওয়া হতো। সংগীতের প্রতি দরদ ছিল বলেই হয়তো নিয়তি তাঁকে কাকতালীয়ভাবে সেদিকেই নিয়ে যায়। একদিন হঠাৎ পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের নজরে পড়ে যান। শোনা যায়, মুম্বাইয়ে তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন পণ্ডিতজি। বারান্দায় বসে চর্চা করছিলেন কিশোরী গীতা। তাঁর কিন্নর কণ্ঠ ভেসে আসে পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের কানে। দাঁড়ালেন, খোঁজ নিলেন। জহুরির মতো চিনে ফেললেন খাঁটি হীরা। ১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গীতার যাত্রা শুরু হয় হনুমান প্রসাদের হাত ধরে ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবিতে। এই ছবিতে গীতা কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গাওয়ার সুযোগ পান।
১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জীবনের উন্মেষ বাংলাদেশের ফরিদপুরে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফরিদপুর থেকে বম্বে, গীতা দত্ত মানে ‘তুমি যে আমার’
শিরোনাম আর শুরুর তথ্যের পর তাঁকে নিয়ে লেখার কোনো ভূমিকা দরকার হয় না। এই বাংলার কন্যা গীতা দত্তের নামের আগে জুতসই বিশেষণ পাওয়াও মুশকিল। যেমন মুশকিলে পড়েছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। ‘হারানো সুর’ সিনেমার গান করছেন। ‘তুমি যে আমার’ গানটি রেকর্ড হবে। সুচিত্রা মানেই তো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠ। সবাই সে কথা বলেছিলেন, কিন্তু সুরকার হেমন্ত ঠিক আস্থা রাখতে পারছিলেন না। অন্য রকম ভাবছেন, এই গান গীতা ছাড়া আর কেউ গাইতে পারবে না! হেমন্তের কথামতোই ঠিক হলো, গীতা দত্তই গাইবেন। মুম্বাই (তৎকালীন বম্বে) গিয়ে গানের রেকর্ডিং করা হলো। এরপর যা হওয়ার তাই হলো। আজও সুচিত্রা সেনকে নিয়ে প্রতিবেদন বা গল্প তৈরি করতে গেলে শুরুতে এই গানের উল্লেখ এসেই পড়ে। যেন সুচিত্রাই গাইছেন, গভীর থেকে। কী অদ্ভুত টান, কী দারুণ গায়কি! এই গানের মতোই উজ্জ্বল ছিলেন গীতা দত্ত, আর এমনই ছিল তাঁর গান। ভারতের সংগীতজগতে একটা কথা খুব প্রচলিত ছিল—লতাকণ্ঠী, আশাকণ্ঠী হওয়া যায়, কিন্তু গীতাকণ্ঠী হওয়া যায় না।
ফরিদপুরের কন্যা
১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জীবনের উন্মেষ বাংলাদেশের ফরিদপুরে। বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রায়চৌধুরী ছিলেন জমিদার। তাঁর ১০ সন্তানের মধ্যে গীতা ছিলেন পঞ্চম৷ তখন তিনি গীতা ঘোষ রায়চৌধুরী। ছোট থেকেই গানের প্রতি কন্যার আগ্রহ আর সুরেলা কণ্ঠ মা-বাবার নজরে আসে। স্থানীয় গুরু হরেন্দ্রনাথ নন্দীর কাছে তালিমের ব্যবস্থা করেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে কলকাতায় পাড়ি দেয় চৌধুরী পরিবার। কিছুদিন আসাম এবং কলকাতা থাকেন ঘোষ রায়চৌধুরীরা।
পরে ১৯৪২ সালে মুম্বাই পাড়ি দেন তাঁরা। ফরিদপুরের জমিদারি হারানোর পর আসাম, কলকাতা ঘুরে মুম্বাইয়ে থিতু হওয়া অত সহজ ছিল না। আর্থিক টানাপোড়েন পড়ে পরিবার। সেখানে আর কিশোরী গীতার জন্য সংগীতের তালিমের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি মা-বাবার। তাতে থেমে যান গীতা। সংগীত তো তাঁর আত্মায়, নিজের মতো করে চর্চা করে যেতেন। পাশাপাশি গানের টিউশনিও করাতেন। এবাড়ি–ওবাড়ি ছুটতেন টিউশনি করতে। বাসের ভাড়ার পয়সা বাঁচাতে হাঁটতেন মাইলের পর মাইল। যে বাড়িতে গান শেখাতেন, সেখানে গরিব বলে তাঁকে মাটিতে বসতে দেওয়া হতো। সংগীতের প্রতি দরদ ছিল বলেই হয়তো নিয়তি তাঁকে কাকতালীয়ভাবে সেদিকেই নিয়ে যায়। একদিন হঠাৎ পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের নজরে পড়ে যান। শোনা যায়, মুম্বাইয়ে তাঁদের বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন পণ্ডিতজি। বারান্দায় বসে চর্চা করছিলেন কিশোরী গীতা। তাঁর কিন্নর কণ্ঠ ভেসে আসে পণ্ডিত হনুমান প্রসাদের কানে। দাঁড়ালেন, খোঁজ নিলেন। জহুরির মতো চিনে ফেললেন খাঁটি হীরা। ১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার কণ্ঠশিল্পী হিসেবে গীতার যাত্রা শুরু হয় হনুমান প্রসাদের হাত ধরে ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবিতে। এই ছবিতে গীতা কোরাসে মাত্র দুই লাইন গান গাওয়ার সুযোগ পান।
১৯৩০ সালের ২৩ নভেম্বর তাঁর জীবনের উন্মেষ বাংলাদেশের ফরিদপুরে