নিজ দল আওয়ামী লীগের (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) এক কর্মীর করা চাঁদাবাজির মামলায় শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আদালত তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের পৃথক আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কামাল উদ্দিন আজ বুধবার এ আদেশ দেন।

আজ সকালে মোজাম্মেল হককে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। এরপর বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে তাঁকে লিফটে চড়িয়ে আদালত ভবনের নবম তলায় ওঠানো হয়। এ সময় তাঁর দুই হাত পেছনে নিয়ে হাতকড়া পরানো ছিল। দুই পাশে ছিল ১৫ থেকে ২০ জন পুলিশ সদস্যের বেষ্টনী। সামনে লাঠি, ঢালসহ ছিলেন ৫ জন পুলিশ সদস্য।

আদালতকক্ষে কাঠগড়ায় ওঠানোর আগে মোজাম্মেল হকের হেলমেট খুলে রাখা হয়। ঘড়িতে তখন ১১টা ৩৫ মিনিট। বাদীপক্ষের করা গ্রেপ্তার আবেদনের শুনানি শুরু হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী মোরশেদ হোসেনসহ অন্যরা জামিনের আবেদন করেন। তখন কাঠগড়ার সামনের অংশে সরে আসেন মোজাম্মেল হক। মনোযোগ দিয়ে শুনানি শোনেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সেটা মিথ্যা। হয়রানি করার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ২০১৪ সালের ঘটনায় মামলা করা হয়েছে ২০২৪ সালে এসে। এ মামলার বাদী আর আসামি একই দলের, একই এলাকার। কমিটিতে পদ না দেওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে।

মোজাম্মেল হকের আইনজীবীরা আরও বলেন, মোজাম্মেল হক ৩০ বছর ধরে আওয়ামী লীগের নেতা। ঢাকা শহরে তাঁর কোনো ফ্ল্যাট-প্লট কিছুই নেই। কোনো আমলেই তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই। তাঁর বয়স ৬৮ বছর। তিনি অসুস্থ। তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য।

আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন।

এ মামলার বাদী বাংলাদেশ অক্সাইড–বেজ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মো.

খলিলুর রহমান। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলাটি হয়। আজ আদালতে শুনানি চলার সময় খলিলুরকে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে উল্লেখ করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী।

আরও পড়ুনসাবেক সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হক গ্রেপ্তার০৫ অক্টোবর ২০২৫

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতা বি এম মোজাম্মেল হক ভুক্তভোগী খলিলুর রহমানকে রাজধানীর ধানমন্ডির অফিসে ডেকে নেন। নির্বাচনের খরচ হিসেবে তাঁর কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা পরিশোধের জন্য তাঁকে তিন দিনের সময় দেওয়া হয়। পরিশোধ করা না হলে খলিলুরকে গুম করার হুমকিও দেওয়া হয়।

পরে নির্বাচনের সময় নিজ এলাকা শরীয়তপুরে খলিলুরের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক সমিতির কাছে নানা অভিযোগ ও হুমকি দেওয়া হয়। এসব করে তাঁর ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য করা হয় বলেও এজাহারে উল্লেখ করেছেন খলিলুর।

রাজধানীর নিকেতন থেকে বি এম মোজাম্মেল হককে গত ৫ অক্টোবর গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তখন থেকে তিনি কারাগারে আছেন।

তখন ডিএমপি জানিয়েছিল, বি এম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন–সংক্রান্ত একটি হত্যা মামলা ছাড়াও ঢাকা মহানগর এলাকায় আরও আটটি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুনগণ–অভ্যুত্থানে হত্যার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল কারাগারে০৬ অক্টোবর ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ম ম ল হক র

এছাড়াও পড়ুন:

জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান প্রশ্নে রুল

নির্বাচনে নিবন্ধিত একাধিক দল জোটভুক্ত হলেও নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধিত এমন বিধান প্রশ্নে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি ফাতেমা আনোয়ারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রুল দেন।

গণপ্রতিনিধিত্ব (সংশোধন) অধ্যাদেশের ওই বিধান–সংবলিত ৯ অনুচ্ছেদ সংবিধানের কয়েকটি অনুচ্ছেদের (২৮, ৩৮ ও ৩৯ অনুচ্ছেদ) সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না—রুলে সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। আইনসচিব, নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) বিবাদীদের ১০ দিনের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

নতুন ওই বিধান যুক্ত করে ৩ নভেম্বর আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করেছিল অন্তর্বর্তী সরকার। আগে কোনো রাজনৈতিক দল জোটভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে জোটের শরিক যেকোনো দলের প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পেত।

ওই বিধান–সংবলিত অধ্যাদেশের ৯ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) মহাসচিব মোমিনুল আমিন গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। আজ রিটের ওপর শুনানি হয়।

আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাহেদুল আজম। নির্বাচন কমিশনের পক্ষে আইনজীবী কামাল হোসেন মিয়াজী ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, জোট করলেও দলীয় প্রতীকেই নির্বাচন করা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বিএনপি। দলটি নির্বাচন কমিশন ও আইন মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে তাদের আপত্তির কথা তুলে ধরে। বিএনপি মনে করে, জোটগত নির্বাচন করলেও নিজস্ব প্রতীকে ভোট করে ছোট দলগুলোর নেতাদের জয় সহজ হবে না। এর ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুফল পেয়ে যেতে পারে।

তবে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এই সংশোধনের পক্ষে। শেষ পর্যন্ত জোট করলেও নির্বাচনে অংশ নিতে হবে নিজ দলের প্রতীকে, শেষ পর্যন্ত এমন বিধান যুক্ত করেই ৩ নভেম্বর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার।

আরও পড়ুনজোটেও নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচনের বিধান রেখে আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি ০৪ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী হিসেবে আমির হোসেনকে নিয়োগ
  • নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট
  • ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের সব কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে রিট
  • রেফারেন্স–মতামতপ্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের শুনানি শেষ, আদেশ কাল
  • হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে পক্ষভুক্ত হলেন মির্জা ফখরুল ও সুব্রত চৌধুরী
  • বাংলাদেশে টিউলিপের কারাদণ্ডের রায়ে যুক্তরাজ্যে কী প্রভাব পড়তে পারে
  • কুমিল্লায় ছাত্রলীগ ‘সন্দেহে’ গ্রেপ্তার অষ্টম শ্রেণির সেই শিক্ষার্থীর জামিন
  • জুলাইয়ে কুষ্টিয়ায় হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ইনু
  • জোটে গেলেও নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান প্রশ্নে রুল