ক্ষতিগ্রস্ত দুই জাহাজ বিক্রি করবে বিএসসি
Published: 15th, January 2025 GMT
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহর থেকে বাদ পড়া দুটি লাইটার জাহাজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। জাহাজ দুটি হলো—এমটি বাংলার জ্যোতি এবং এমটি বাংলার সৌরভ।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৩তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
পুঁজিবাজারে সূচকের পতন
পুঁজিবাজার: সূচকের পতনে সপ্তাহ শুরু
গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৫ অক্টোবর জাহাজ দুটি অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে চার জন নিহত হন। এছাড়া, পুরনো এ দুই জাহাজে শুধু রক্ষণাবেক্ষণ খাতে খরচ হয় বছরে ৩০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত সাত বছরে এ দুই জাহাজের পেছনে ২১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকায় একটি নতুন জাহাজ কেনা যেত।
তাই, মঙ্গলবার বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সভায় জাহাজ দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান টাকা জমা দিলে দ্রুত জাহাজ দুটি হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে ২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ইউক্রেনে গোলার আঘাতে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ধ্বংস হয়েছিল।
১৯৮৭ সালে ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ এবং ১৯৮৬ সালে ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ নির্মাণ করা হয়। এ দুটি লাইটার জাহাজ দিয়ে তেল পরিবহন করা হতো।
ঢাকা/এনটি/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কড়াইল বস্তিতে আগুন যে বার্তা দিয়ে গেল
আগুন লাগা নিছক দুর্ঘটনা হলেও তা মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে যতটা জ্বালিয়ে দেয়, তার দাগ থাকে আরও বহুদিন।
সম্প্রতি রাজধানীর কড়াইল বস্তির ভয়াবহ আগুন শহরটিকে আবার স্মরণ করিয়ে দিল একটি পুরোনো সত্য। তা হলো মানুষ যত আধুনিক হোক, যত নগরায়ণই হোক, অসাবধানতার আগুন একবার ছড়িয়ে পড়লে সভ্যতার পর্দা মুহূর্তেই খুলে যায়।
হাজার হাজার মানুষের এই ঘনবসতিতে আগুন শুরু হয়েছিল একটি ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকে। আর তার লেলিহান শিখা রাতারাতি পুরো এলাকা গিলে খেয়েছে।
ঢাকার বস্তিগুলো এমনিতেই ঝুঁকির ওপর দাঁড়ানো ছোট ঘরগুলোর ভেতর দাহ্য উপকরণ টিন–কাঠ–প্লাস্টিক –ফোম মিলে তৈরি হয় আগুন ছড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ।
সংকীর্ণ গলি, বিদ্যুতের জটলা পাকানো তার, বাতাসে শুকনা কাঠের গন্ধ সব মিলিয়ে একটি স্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট বড় বিপর্যয় ঘটাতে। কড়াইলের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি মানুষ দৌড়ে পালাতে পালাতে হারিয়েছে স্বপ্ন, হারিয়েছে শেষ অবলম্বন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের সংকটে পড়তে হয়েছে। সংকীর্ণ গলি দিয়ে পানি আনার লাইন স্থাপন করতেও লেগেছে অনেক বেশি সময়। আর প্রতিটি মিনিটই তখন কারও ঘর, কারও জীবন, কারও স্মৃতিকে আগুনের কাছে সমর্পণ করে দিচ্ছে।
ধারণা করা হয় এই আগুনের সূচনা হয়েছিল গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ থেকে। রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে চলা গ্যাস–সংকটের কারণে বস্তিবাসী বাধ্য হয় নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহার করতে, আর সেই সুযোগে অবৈধ সিলিন্ডার সিন্ডিকেটগুলো স্বল্পশিক্ষিত দরিদ্র মানুষের কাছে নিম্ন মানের সিলিন্ডার সরবরাহ করে।
কড়াইল বস্তির আগুন শুধু কয়েক শ ঘর পোড়ায়নি, এটি নগর-পরিকল্পনার ব্যর্থতা, নিরাপত্তাহীনতার নগ্ন সত্য এবং আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকেও সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আগুনের উৎস রহস্য হতে পারে; কিন্তু এর শিক্ষাটি কখনোই রহস্য হয়ে থাকা উচিত নয়।এসব সিলিন্ডার শুধু প্রাণঘাতীই নয়; বরং বস্তির মতো জনবহুল ও ঘিঞ্জি পরিবেশে তা হয়ে ওঠে জীবন্ত বিস্ফোরক। একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণের চাপেই কয়েক শ ঘর মুহূর্তে আগুনে পুড়ে যেতে পারে। কড়াইলের আগুন সেই সম্ভাবনাকেই নির্মমভাবে বাস্তবে পরিণত করেছে।
এখন প্রশ্ন দাঁড়ায়, কেন এমন এলাকাগুলো আজও এতটা অপরিকল্পিত রয়ে গেল? কেন হাজারখানেক মানুষের জীবন ভর করে থাকে কিছু জীর্ণ তার ও কিছু নিম্নমানের সিলিন্ডারের ওপর। কেন দেশে প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপন্ন হওয়ার পরও তারা গ্যাস পায় না। আর উৎসহীন নজরদারির ওপর কেন আগুন নেভানোর মৌলিক জ্ঞান থেকেও মানুষ বঞ্চিত থাকে।
এই পরিস্থিতির প্রতিকার শুরু করতে হলে প্রথমত ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগগুলো চিহ্নিত করে প্রযুক্তিগতভাবে সংস্কার করা অপরিহার্য। বস্তি এলাকাকে বৈধ বিদ্যুৎ–সংযোগের আওতায় আনলে তারের জট, অতিরিক্ত লোড আর শর্টসার্কিটের মতো বিপদ অনেকটাই কমবে।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নিম্নমানের ও অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডারের বাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা। সরকারি সংস্থা, সিটি করপোরেশন ও তদন্ত দলকে যৌথভাবে এই এলাকায় সিলিন্ডারের মান পরীক্ষা, বিতরণব্যবস্থার পর্যবেক্ষণ এবং অপরাধী সিন্ডিকেটগুলোকে আইনের আওতায় আনা এখন জরুরি।
এর পাশাপাশি বস্তি এলাকার সংকীর্ণ গলি পুনর্বিন্যাস করে জরুরি সড়ক তৈরি করাও অপরিহার্য; কারণ ফায়ার সার্ভিস যদি আগুনের কাছে পৌঁছাতেই না পারে, তবে আগুন নেভানো আর প্রতিরোধ দুটিই অর্থহীন হয়ে যায়।
কমিউনিটি-ভিত্তিক ফায়ার সেফটি প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত মহড়া বস্তিবাসীদের দক্ষ করে তুলতে পারে, যাতে ছোট আগুনকে বড় হতে না দেওয়ার সক্ষমতা তাদের মধে৵ গড়ে ওঠে; কিন্তু এসবের বাইরে আরও বড় একটি বিষয় আছে পুনর্বাসন। আগুন নিভলেও মানুষের জীবনে আগুনের ক্ষত বহুদিন জ্বলতে থাকে।
তাই প্রতিবার আগুন লাগার পর তাদের আবার সেই একই জায়গায় ফিরে যেতে দেওয়া মানে নতুন একটি আগুনের অপেক্ষা করা। দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পিত বহুতল আবাসনই একমাত্র স্থায়ী সমাধান যেখানে থাকবে নিরাপদ বিদ্যুৎ, নিয়মিত গ্যাস, অগ্নিনিরোধী নির্মাণসামগ্রী ও পানির উৎস।
কড়াইল বস্তির আগুন শুধু কয়েক শ ঘর পোড়ায়নি, এটি নগর-পরিকল্পনার ব্যর্থতা, নিরাপত্তাহীনতার নগ্ন সত্য এবং আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতার অভাবকেও সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে। আগুনের উৎস রহস্য হতে পারে; কিন্তু এর শিক্ষাটি কখনোই রহস্য হয়ে থাকা উচিত নয়।
শহরকে নিরাপদ করার জন্য আমাদের সবারই উচিত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে অসাবধানতায় আগুন না লাগে, সে বিষয়ে দৃষ্টি রাখা।
ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ মিডিয়া কমিউনিকেশন অ্যান্ড জার্নালিজম বিষয়ের শিক্ষার্থী