অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে বহর থেকে বাদ পড়া দুটি লাইটার জাহাজ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজারে বিবিধ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (বিএসসি)। জাহাজ দুটি হলো—এমটি বাংলার জ্যোতি এবং এমটি বাংলার সৌরভ।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৩তম বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পুঁজিবাজারে সূচকের পতন

পুঁজিবাজার: সূচকের পতনে সপ্তাহ শুরু

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর এবং ৫ অক্টোবর জাহাজ দুটি অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে চার জন নিহত হন। এছাড়া, পুরনো এ দুই জাহাজে শুধু রক্ষণাবেক্ষণ খাতে খরচ হয় বছরে ৩০ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত সাত বছরে এ দুই জাহাজের পেছনে ২১০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকায় একটি নতুন জাহাজ কেনা যেত।

তাই, মঙ্গলবার বিএসসির পরিচালনা পর্ষদের বিশেষ সভায় জাহাজ দুটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান টাকা জমা দিলে দ্রুত জাহাজ দুটি হস্তান্তর করা হবে। 

এর আগে ২০২২ সালে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধে ইউক্রেনে গোলার আঘাতে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ধ্বংস হয়েছিল।

১৯৮৭ সালে ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ এবং ১৯৮৬ সালে ‘এমটি বাংলার সৌরভ’ নির্মাণ করা হয়। এ দুটি লাইটার জাহাজ দিয়ে তেল পরিবহন করা হতো। 

ঢাকা/এনটি/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় ইসলামে নীতি

ইসলাম প্রকৃতির ধর্ম, ইসলামের বিধান মানবিক। মানবাধিকার সুরক্ষা ও মানবসভ্যতার বিকাশ ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। ইসলামি বিধিবিধানের উদ্দেশ্য হলো জীবনের সুরক্ষা, সম্পদের সুরক্ষা, জ্ঞানের সুরক্ষা, বংশধারার পবিত্রতা ও মানব প্রজন্মের সুরক্ষা, ধর্মের সুরক্ষা এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি সাধন (মাকাসিদুশ শরিয়াহ)।

মানুষ সামাজিক জীব। সামাজিক শৃঙ্খলার জন্য প্রয়োজন প্রশাসন ও রাষ্ট্র। মুসলিমরা বিশ্বাসভিত্তিক একটি আদর্শিক জাতি। জাতির উন্নয়ন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষ, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি শক্তিশালী একটি প্রতিরক্ষাব্যবস্থাও জরুরি।

পর্যাপ্ত প্রতিরক্ষা শক্তি ছাড়া কোনো জাতি তাদের স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারে না। তাই প্রতিটি রাষ্ট্র ও জাতির অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার জন্য সময়োপযোগী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।

মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশ দিয়ে মুসলিম জাতির উদ্দেশে বলেছেন, ‘আর তাদের মোকাবিলার জন্য তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি সঞ্চয় করো এবং অশ্ববাহিনী প্রস্তুত রাখো। এর মাধ্যমে তোমরা ভয় দেখাবে আল্লাহর শত্রু, তোমাদের শত্রু এবং এদের বাইরে থাকা আরও শত্রুদের যাদের তোমরা জানো না—আল্লাহ তাদের জানেন। আর তোমরা আল্লাহর পথে যা ব্যয় করবে, তা তোমাদের পূর্ণমাত্রায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে, তোমাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা-৮ আনফাল, আয়াত: ৬০)

ইসলাম যুদ্ধকে কখনো উৎসাহিত করে না। যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্যই প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, যুদ্ধ করার জন্য নয়। যুদ্ধ অপরিহার্য হলে কেবল তখনই রাসুলে করিম (সা.) যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। সে ক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করতেন

রাষ্ট্র সুরক্ষার জন্য জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করা, যুদ্ধোপকরণ ও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহ ও উৎপাদন করা এবং সব সক্ষম নাগরিকের শরীরচর্চা ও যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে অবহেলা করা মানে নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনা।

পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না। আর সুকর্ম করো—নিশ্চয়ই আল্লাহ সুকর্মশীলদের ভালোবাসেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৯৫)

হজরত আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) বলেন, ‘এই আয়াত আমাদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা এর ব্যাখ্যা ভালোভাবেই জানি। আল্লাহ তাআলা ইসলামকে যখন বিজয়ী ও সুপ্রতিষ্ঠিত করলেন, তখন আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করলাম—এখন যুদ্ধ বা প্রতিরক্ষাব্যবস্থার আর কী প্রয়োজন? এখন আমরা ঘরে অবস্থান করে নিজ নিজ সম্পদের দেখাশোনা করি। এ প্রসঙ্গেই উক্ত আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।’ (আবু দাউদ: ২৫১২)

এখানে ‘ধ্বংস’ দ্বারা যুদ্ধ পরিত্যাগ করাকেই বোঝানো হয়েছে। কারণ, কোনো জাতি যখন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দিক থেকে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন তাদের স্বাধীনতা সুরক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে যায়।

প্রতিরক্ষাব্যবস্থা বা জাতীয় শক্তির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সামরিক প্রস্তুতি। সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শক্তির পরিমাপ করা হয়। পৃথিবীর ভারসাম্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে সামরিক ভারসাম্যের ওপর।

হজরত উকবা ইবনে আমির (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মিম্বরের ওপর আসীন অবস্থায় আমি বলতে শুনেছি, “আল্লাহ তাআলার বাণী এবং তোমরা তাদের মোকাবিলায় শক্তি সঞ্চয় করে রাখো। জেনে রাখো, শক্তি হচ্ছে ক্ষেপণশক্তি, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে ক্ষেপণশক্তি, জেনে রাখো শক্তি হচ্ছে ক্ষেপণশক্তি।”’ (মুসলিম: ৪৮৪০)

সে যুগে বর্শা ও তরবারির পাশাপাশি তির-ধনুক ছিল উন্নত অস্ত্র। আর সর্বোচ্চ সমরাস্ত্র ছিল ‘মিনজানিক’ নামে একধরনের কামান, যার আধুনিক সংস্করণ হলো রাইফেল বা বন্দুক।

ইসলাম যুদ্ধকে কখনো উৎসাহিত করে না। যুদ্ধ প্রতিহত করার জন্যই প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি, যুদ্ধ করার জন্য নয়। যুদ্ধ অপরিহার্য হলে কেবল তখনই রাসুলে করিম (সা.) যুদ্ধে অবতীর্ণ হতেন। সে ক্ষেত্রেও তিনি আল্লাহর সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা অনুসরণ করতেন।

রাসুলে আকরাম (সা.)-এর যুদ্ধনীতির মধ্যে কয়েকটি মৌলিক ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা রয়েছে :

১. আক্রমণের শিকার হওয়ার পরই প্রতি–আক্রমণ করা।

২. আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজের যাবতীয় ফেতনা-ফ্যাসাদ দূর করা।

৩. শত্রুপক্ষের নারী, শিশু, রোগী, ধর্মশালা ও ধর্মগুরু, নিরস্ত্র ও নিরীহ সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না করা।

৪. যুদ্ধাহত ও যুদ্ধবন্দীদের সঙ্গে কোনো ধরনের অমানবিক আচরণ না করা।

৫. পানির উৎস, ফলের বাগান, ফসলের খেত, গাছগাছালি ও প্রাণিকুল ধ্বংস না করা।

 অধ্যক্ষ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ