আমতলীর পায়রা নদীর গুলিশাখালী এলাকাজুড়ে শত শত ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। ওই পথে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে মাছ ধরা নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজ। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে যাত্রী, চালক ও জেলেদের সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। 
বংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে আমতলী, বরগুনা ও পাথরগাটা উপজেলার অবস্থান। বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে এলাকাজুড়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। নদীটি পটুয়াখালীর লোহালিয়া ও লেবুখালী নদী  হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলার সঙ্গে মিশেছে। চলাচলের জন্য এ নদীটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্যের মালপত্র পরিবহনে এ নদী  দিয়ে হাজার হাজার ট্রলার, কার্গো ও জাহাজ চলাচল করে। নদীকে কেন্দ্র করে বরগুনা, আমতলী ও তালতলীতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ জেলেপল্লি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। হাজার হাজার ট্রলার নিয়ে জেলেরা এ নদী পাড়ি দিয়ে সাগর মোহনায় মাছ ধরতে যায়। 
পায়রা ছিল এক সময় প্রমত্তা। সিডরের পর থেকেই নদীটি নাব্য হারাতে থাকে। তখন থেকেই পায়রার বুকে জমে ওঠে বিশাল বালুর স্তূপ। বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। চরের কারণে অনেক জায়গায় নৌচলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গুলিশাখালীর চরে জেলেরা এখন চরগড়া দিয়ে মাছ ধরছেন। পায়রার মোহনায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা শত শত  ডুবোচর। ভাটার সময়  পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত  নদীর মাঝখানে জাহাজ এবং ফিশিং বোটগুলোকে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সময়টাতে মাঝেমধ্যেই জলদস্যুদের কবলে পড়তে হয় জেলে, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের।  
স্থানীয়রা জানান, ভাটার সময় চরে পানি থাকে এক থেকে দেড় ফুট। ওই সময় কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারে না। নিরুপায় হয়ে নদীর মাঝখানে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সুযোগে জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। জেলেদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়। 
শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ছৈলার বন। পাশেই চরগড়া দিয়ে সকাল-বিকেল মাছ ধরছেন জেলেরা। চারদিকে পানি। মাঝখানে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চর জেগেছে। 
গুলশাখালী জেলেপল্লির রুবেল বলেন, ‘জোয়ারের সময় এই নদীর দিকে তাহাইলে কইলাজা কাঁইপা উঠত। মনডার মধ্যে ডর লাগত। এহন জোয়ার আহে মিনমিনাইয়া। তেমন জোর নাই।’
পায়রা নদীতে তিন যুগ ধরে মাছ ধরেন দুলাল। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই নদীতে এক সময় ৮০-৯০ আত পানি ছিল, এহন আর হেই পানি নাই। এহন জোয়ারের সময় ২০-২৫ আত পানি অয়। বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষ এই নদীতে মাছ ধইরা খাইত। এহন আর আগের লাহান মাছ পাওয়া যায় না।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এল ক জ ড় র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার

বান্দরবানের আলীকদমে নিখোঁজ হওয়া তিন পর্যটকের মধ্যে আরেকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশটি স্মৃতি আক্তারের (২৪) বলে তাঁর সঙ্গী পর্যটকেরা শনাক্ত করেছেন।

আজ শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আলীকদম উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে তৈনখালের আমতলি ঘাট এলাকায় ভাসমান অবস্থায় লাশটি পাওয়া যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এ নিয়ে দুজনের লাশ উদ্ধার করা হলো।

আলীকদম ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানিয়েছেন, সকালে স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে লাশের সংবাদ পাওয়া যায়। আমতলি ঘাট থেকে লাশ উদ্ধার করে থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। বেঁচে ফিরে আসা ১৯ পর্যটককে আলীকদম থানায় রাখা হয়েছে।

পর্যটকদের মধ্যে রাহাত হোসেন নামের একজন জানান, আজকে উদ্ধার হওয়া লাশটি স্মৃতি আক্তারের। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায়। স্মৃতি আক্তার ও মো. হাসান পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংস্থা ট্যুর এক্সপার্টের সহপরিচালক। তাঁদের ব্যবস্থাপনায় এই ভ্রমণ আয়োজিত হয়।

৮ জুন দুটি দলে ৩৩ জন পর্যটক আলীকদম ও থানচি উপজেলার মধ্যবর্তী দুর্গম ক্রিস্টং পাহাড়ে গিয়েছিলেন। পাঁচ দিনের ভ্রমণে এক দলে ১১ জন ও তিন দিনের ভ্রমণের আরেক দলে ২২ জন পর্যটক ছিলেন। গত বুধবার তিন দিনের ভ্রমণ শেষে ২২ জনের দলটি ফিরে আসার পথে প্রবল বৃষ্টিতে হঠাৎ শামুকঝিরি ঝরনায় পাহাড়ি ঢল নামে। তাঁদের মধ্যে ১৯ জন ফিরে এলেও জুবাইরুল, হাসান ও স্মৃতি পেছনের দিকে থাকায় নিখোঁজ হন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, নিখোঁজ তিন পর্যটকের মধ্যে আজ স্মৃতি আক্তার ও গতকাল জুবাইরুল ইসলামের লাশ পাওয়া গেছে। লাশ দুটি বান্দরবান সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। মো. হাসানের লাশ এখনো পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্তের জন্য মানবিক কারণে ১৯ জন পর্যটককে থানায় রাখা হয়েছে। তাঁরা না হলে নিখোঁজ তিনজনকে শনাক্ত করার কেউ থাকবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলীকদমে নিখোঁজ আরেক পর্যটকের লাশ উদ্ধার