পায়রার বুকে শত শত ডুবোচরে ভোগান্তি
Published: 2nd, February 2025 GMT
আমতলীর পায়রা নদীর গুলিশাখালী এলাকাজুড়ে শত শত ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। ওই পথে দেখা দিয়েছে নাব্য সংকট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে মাছ ধরা নৌকা, লঞ্চ ও জাহাজ। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে যাত্রী, চালক ও জেলেদের সময় ও অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ঘেঁষে আমতলী, বরগুনা ও পাথরগাটা উপজেলার অবস্থান। বরগুনা ও আমতলীর মাঝখান দিয়ে এলাকাজুড়ে প্রবাহিত পায়রা নদী। নদীটি পটুয়াখালীর লোহালিয়া ও লেবুখালী নদী হয়ে বরিশালের কীর্তনখোলার সঙ্গে মিশেছে। চলাচলের জন্য এ নদীটির গুরুত্ব অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্যের মালপত্র পরিবহনে এ নদী দিয়ে হাজার হাজার ট্রলার, কার্গো ও জাহাজ চলাচল করে। নদীকে কেন্দ্র করে বরগুনা, আমতলী ও তালতলীতে গড়ে উঠেছে কয়েকশ জেলেপল্লি ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। হাজার হাজার ট্রলার নিয়ে জেলেরা এ নদী পাড়ি দিয়ে সাগর মোহনায় মাছ ধরতে যায়।
পায়রা ছিল এক সময় প্রমত্তা। সিডরের পর থেকেই নদীটি নাব্য হারাতে থাকে। তখন থেকেই পায়রার বুকে জমে ওঠে বিশাল বালুর স্তূপ। বিশাল এলাকাজুড়ে ডুবোচরের সৃষ্টি হয়েছে। চরের কারণে অনেক জায়গায় নৌচলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। গুলিশাখালীর চরে জেলেরা এখন চরগড়া দিয়ে মাছ ধরছেন। পায়রার মোহনায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা শত শত ডুবোচর। ভাটার সময় পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা পর্যন্ত নদীর মাঝখানে জাহাজ এবং ফিশিং বোটগুলোকে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সময়টাতে মাঝেমধ্যেই জলদস্যুদের কবলে পড়তে হয় জেলে, পথচারী ও ব্যবসায়ীদের।
স্থানীয়রা জানান, ভাটার সময় চরে পানি থাকে এক থেকে দেড় ফুট। ওই সময় কোনো ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারে না। নিরুপায় হয়ে নদীর মাঝখানে নোঙর করে থাকতে হয়। এ সুযোগে জলদস্যুরা হামলা চালিয়ে টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। জেলেদের শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয়।
শুক্রবার সকালে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বুকে জেগে ওঠা বিশাল চরে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে ছৈলার বন। পাশেই চরগড়া দিয়ে সকাল-বিকেল মাছ ধরছেন জেলেরা। চারদিকে পানি। মাঝখানে কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চর জেগেছে।
গুলশাখালী জেলেপল্লির রুবেল বলেন, ‘জোয়ারের সময় এই নদীর দিকে তাহাইলে কইলাজা কাঁইপা উঠত। মনডার মধ্যে ডর লাগত। এহন জোয়ার আহে মিনমিনাইয়া। তেমন জোর নাই।’
পায়রা নদীতে তিন যুগ ধরে মাছ ধরেন দুলাল। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘এই নদীতে এক সময় ৮০-৯০ আত পানি ছিল, এহন আর হেই পানি নাই। এহন জোয়ারের সময় ২০-২৫ আত পানি অয়। বাপ দাদা চৌদ্দ পুরুষ এই নদীতে মাছ ধইরা খাইত। এহন আর আগের লাহান মাছ পাওয়া যায় না।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অস্ত্র দিয়ে ডাকাত তকমা, উদ্ধার করল নৌবাহিনী
নোয়াখালীর হাতিয়ায় ডাকাত তকমা দিয়ে দু’জনকে পিটিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় দেশীয় অস্ত্র। ছবি তুলে ও ভিডিও করে ছেড়ে দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। উত্তেজিত জনতা তাদের ঘিরে রাখে। যদিও অনেকেই জানতেন না, ঘটনাটি সাজানো। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল আহত দু’জনকে উদ্ধার করে। সোমবার রাতে উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের আমতলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। রাতেই তাদের হাতিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয়।
উদ্ধার দু’জন হলেন জাহাজমারা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড চরহেয়ার এলাকার মজিবুল হকের ছেলে আরিফ হোসেন এবং একই ইউনিয়নের মোল্লাবাজার এলাকার মো. আশরাফের ছেলে মো. আসিফ। এদের মধ্যে আরিফ পেশায় রিকশাচালক।
স্থানীয়রা জানান, জাহাজমারা আমতলী বাজারের পশ্চিম পাশে রাস্তার চর দখল নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। এক পক্ষের নেতৃত্ব দেন জহির চেরাং, অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন কাউসার। কাউসারপক্ষ অনেক দিন থেকে চরটির দখল নিয়ে আছে। ঘটনার দিন সোমবার বিকেলে জহির চেরাংয়ের লোকজন চরটির দখল নেওয়ার জন্য সংঘবদ্ধ হয়। পরে প্রতিপক্ষের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে গেলেও দু’জনকে ধরে তারা বাজারে নিয়ে আসে। পরে ওই দু’জনকে বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে পরিকল্পিতভাবে ডাকাত নাটক সাজানো হয়।
ছবি তুলে ও ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ায় সেখানে উৎসুক জনতা ভিড় করে। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি দল অবরুদ্ধ দু’জনকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরে নৌবাহিনী ও পুলিশের দুটি গোয়েন্দা দলের তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসে।
আসিফের বাবা আশরাফ জানান, তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি পর্যন্ত নেই। অথচ তাঁকে ডাকাত বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তাঁর ছেলে নিরপরাধ দাবি করেন তিনি।
আমতলী বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. লিটন জানান, চরের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। পরে নৌবাহিনী এসে তাদের নিয়ে যায়। তারা ডাকাতির সঙ্গে জড়িত কিনা, তাঁর জানা নেই।
হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা বলেন, উদ্ধার দু’জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।