চবির ডাস্টবিনগুলোর নাম এখন ‘হাসিনাবিন’
Published: 4th, February 2025 GMT
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ডাস্টবিনগুলোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাঙ্গাত্মক ছবি সাঁটিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীরা সেগুলোর নাম দিয়েছেন ‘হাসিনাবিন’।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এ পর্যন্ত ক্যাম্পাসের আটটি ডাস্টবিনে শেখ হাসিনার এ ব্যাঙ্গাত্মক ছবি লাগানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিনে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ফুয়াদ হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা গত ১৭ বছরে মাফিয়া চক্রের মাধ্যমে দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়ে ফ্যাসিজম কায়েম করেছেন। তিনি হাজারো ছাত্র-জনতাকে খুন করেছেন। তার প্রতি আমাদের কোনো সহানুভূতি নেই। তাই আমরা পুরো ক্যাম্পাসের ডাস্টবিনে তার ছবি সংযুক্ত করেছি।”
আরবি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওয়ালিদ হোসেন বলেন, “হাসিনা জুলাই অভ্যুত্থানসহ বিগত সময়ে হত্যা, খুন-গুমের মহারাজত্ব কায়েম করেছিল। তার প্রতি ঘৃণা ছাড়া দেশের মানুষ আর কিছুই দিতে পারবে না। তাই ঘৃণার প্রতীক হিসেবে তার ছবি আমরা ডাস্টবিনগুলোতে লাগিয়ে হাসিনাবিন নাম দিয়েছি।”
ঢাকা/মিজান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশের নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা: বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত ও করণীয়
আলোচনা
সাইদ রুবায়েত
কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইপাস বাংলাদেশ
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে নগর জনসংখ্যা দ্রুত বেড়েছে। প্রথম আদমশুমারিতে নগরবাসী ছিল ৬৭ লাখ, ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ২০ লাখে। ২০৩০ সালে ৮.৬৫ কোটি এবং ২০৫০ সালে ১০ কোটির বেশি নগরবাসীর পূর্বাভাস রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নগরস্বাস্থ্য নিয়ে এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ ভয়াবহ হতে পারে।
কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভঙ্গুর। মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয়, সরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপির তুলনায় জনস্বাস্থ্য ব্যয় কমেছে। এর মধ্যে আরবান হেলথ আরও বেশি বঞ্চিত। নগর স্বাস্থ্যসেবা অনেকটা দাতা প্রকল্প, এনজিও, জেনারেল প্র্যাকটিশনার ও অনিয়ন্ত্রিত বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরশীল, স্বাস্থ্যসেবায় সাধারণ মানুষের খরচ বেড়েছে এবং অনেকেই দরিদ্র হয়ে পড়ছেন। প্রকল্পভিত্তিক ব্যবস্থায় স্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী বাহিনী গড়ে ওঠেনি, বড় প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে, অবকাঠামো ও স্বাস্থ্যতথ্য ব্যবস্থাও দুর্বল।
বাজেটেও আরবান হেলথ প্রায় অনুপস্থিত। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর বাজেটে স্বাস্থ্য বা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের জন্য আলাদা ও স্পষ্ট বরাদ্দ দেখা যায় না। খুলনা সিটি করপোরেশন কিছুটা ব্যতিক্রম হলেও সেখানে বরাদ্দ খুবই কম। এর ফলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব স্পষ্ট।
এই প্রেক্ষাপটে ‘ইমপ্রুভিং সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস ইন ঢাকা’ প্রকল্পের অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের উদ্যোগে ‘ঢাকা ডিক্লারেশন’ ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে প্রস্তাব করা হয়েছে—প্রতি ওয়ার্ডে ২৪ ঘণ্টা খোলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রতিটি জোনে ১০০-২০০ শয্যার হাসপাতাল, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা, বিনা মূল্যে মানসম্মত এসআরএইচআর সেবা, নগরস্বাস্থ্য খাতে বাড়তি বাজেট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিশোরী ও নারীবান্ধব সেবা, ওষুধ ও পরীক্ষার খরচ কমানো, নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্যবিমা এবং শক্তিশালী প্রশাসন ও সমন্বয়।
এসব বাস্তবায়নের জন্য সবচেয়ে জরুরি হলো রাজনৈতিক অঙ্গীকার। স্বাস্থ্য যেন দোষারোপের বিষয় না হয়ে রাজনৈতিক এজেন্ডা হয়। রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব। না হলে ভবিষ্যতেও আরবান হেলথ সেই একই জায়গাতেই আটকে থাকবে।
মোহাম্মাদ আবদুস সালাম খান
অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ,
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
সুষম নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার আগে গ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। গ্রামে শক্ত ভিত্তি না গড়ে নগরে কার্যকর স্বাস্থ্যব্যবস্থা দাঁড় করানো যাবে না। গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন সাবসেন্টার এবং রুরাল ডিসপেনসারি এবং প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র (এফডব্লিউসি) আছে। কিন্তু মানুষ ছোটখাটো চিকিৎসার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ের ফ্যাসিলিটিতে না গিয়ে জেলা হাসপাতাল বা রাজধানীর হাসপাতালে ভিড় করছে; কারণ, গ্রামে এসব প্রতিষ্ঠানে গুণগত সেবা ও প্রয়োজনীয় জনবল নেই, অবকাঠামো প্রস্তুত নয় আর সরবরাহও অনিয়মিত।
এই বাস্তবতায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে শক্তিশালী করার ওপর জোর দেওয়া সমীচীন। এফডব্লিউসিগুলোকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার হাব হিসেবে ব্যবহার করে ও তার নিচের স্তরের ফ্যাসিলিটিগুলোকে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম, প্রশাসনিক কাঠামো ও গভর্ন্যান্সের আওতায় এনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব। প্রাইমারি হেলথকেয়ার শক্তিশালী হলে মানুষ আর সরাসরি জেলা বা রাজধানীমুখী হবে না ফলে নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় চাপ কমবে। এ ছাড়া একটি শক্তিশালী রেফারেল ব্যবস্থা নিশ্চিত করা অতীব জরুরি।
নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় স্থানীয় সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কাজ করছে, কিন্তু বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের জনবল-সংকট, সরবরাহের অভাব ও জীর্ণ অবকাঠামোর কারণে কার্যত অকার্যকর। শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাইমারি হেলথকেয়ার সেন্টার, জিওডিগুলোর শক্তিশালীকরণ এবং জিপি সিস্টেম চালুর কথাও ভাবা হচ্ছে। আইপাসের জিপি সিস্টেম ও ইউনিসেফের আলো ক্লিনিক থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সমন্বিত নগর প্রাইমারি হেলথকেয়ার ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি পর্যায়ের ওপর চাপ কমবে। আশা করা যায় এর ফলে সুষম নগর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে।
মো. এনামুল হক
মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট,
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়
নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার প্রশ্নটি এখন বাংলাদেশে সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর একটি। স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটে কাজ করতে গিয়ে আমি দেখেছি, শহরভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যয় ও সেবা গ্রহণের প্রবণতা ক্রমেই বদলাচ্ছে, কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের ব্যবস্থাপনা এগোচ্ছে না। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টসের ছয়টি রাউন্ডে আমরা দেখেছি, আউট অব পকেট এক্সপেনডিচার ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। শহরে এই ব্যয়ের চাপ তুলনামূলক বেশি।
আমাদের সার্ভিল্যান্স স্টাডিতে দেখা গেছে, ৯৩ শতাংশ মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান না। তাঁরা তখনই চিকিৎসা নিতে যান, যখন অসুস্থতা চরমে পৌঁছে যায়। শহরে এর পেছনে বড় কারণ হলো খরচ এবং ‘অপরচুনিটি কস্ট’। সরকারি ও এনজিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো যখন খোলা থাকে, তখন মানুষ কাজে থাকে। ফলে কাজে থাকায় চিকিৎসা নেওয়া তাদের জন্য প্রায়ই সম্ভব হয় না। এই বাস্তবতায় নগরের স্বাস্থ্যসেবাকে সময় ও কাঠামোর দিক থেকে আরও মানুষের উপযোগী করে তুলতে হবে।
শহরে মানুষ মূলত আউটডোর সেবার জন্য ফার্মেসি বা কোয়াকের ওপর নির্ভরশীল। আবার ইনডোর সেবার জন্য সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ সবচেয়ে বেশি। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের আইপিডি সেবায় সরকারি হাসপাতালের ওপর নির্ভরতা অত্যধিক, আর ওপিডি খরচ বছরে গড়ে প্রায় ৯ হাজার টাকা, আইপিডিতে যা ১ লাখ ৩ হাজার টাকার বেশি। এখানে ওষুধ ও ডায়াগনস্টিক ব্যয় বড় চালিকা শক্তি।
আমি মনে করি, নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া টেকসই পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ জন্য গবেষক, গণমাধ্যম ও নীতিনির্ধারকদের সমন্বয় প্রয়োজন। অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগ একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। নিরাপদ খাদ্য, স্বাস্থ্যশিক্ষা, নগরে হাঁটার জায়গা—এসব বিষয় একসঙ্গে নিয়ে কাজ না করলে নগর স্বাস্থ্যসংকট দূর হবে না।
ইমরুল কায়েস চৌধুরী
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন
সিটি করপোরেশন আইন ২০০৯ ও ২০১০-এর মিউনিসিপ্যালিটি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত আমরা এই দায়িত্বটা দিয়ে রেখেছিলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইউপিএইচসিএসডিপি প্রজেক্টের অধীনে। ২০২৫ সালের জুলাই থেকে এই দায়িত্ব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বুঝে নিয়েছে।
নগর স্বাস্থ্য খাতের বাজেট দুভাবে আসে—সিটি করপোরেশনের নিজস্ব রাজস্ব ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ। জনস্বাস্থ্য খাতের প্রধান ফোকাস ভেক্টর নিয়ন্ত্রণ, যেখানে প্রতিবছর বরাদ্দ হয় প্রায় ১৭৭ কোটি টাকা। প্রাইমারি হেলথকেয়ার, শিক্ষা ও প্রচারণা, মেশিনারিজ ও অ্যাম্বুলেন্স খাতে বরাদ্দ এ বছর ৪ কোটি ৫০ লাখ এবং উন্নয়ন সহায়তায় ১৩ কোটি রাখা হয়েছে।
সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নেওয়ার পর মূলত দুটি গাইডলাইন ফলো করছে: এক, নিজ ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা; দুই, পিপিপি মডেলে এনজিও বা প্রজেক্টের সিস্টেম অব্যাহত রাখা। বাজেটের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ নগরবাসীর কাছ থেকে, ২৫ শতাংশ সিটি করপোরেশনের রাজস্ব থেকে এবং ২৫ শতাংশ মন্ত্রণালয় থেকে আসে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পাঁচটি এলাকায় এখন প্রজেক্ট চলছে, যেখানে বছরে খরচ হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাজেট বাধা নয়, তবে মানবসম্পদ সংকট আছে। সিটি করপোরেশনের নিজস্ব নিয়োগের কোনো প্রভিশন না থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিসপেনসারি এবং এনজিওর সঙ্গে সমন্বয় অপরিহার্য।
পিপিপি মডেলে নগরবাসীর কাছে মানসম্মত সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য টার্গেট পপুলেশন নির্ধারণ, অর্থনৈতিক সমীক্ষা ও অতি দরিদ্রদের ফ্রি ট্রিটমেন্ট (‘রেড কার্ড’) নিশ্চিত করা হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মনিটরিং ও কার্যকর ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নগরবাসী সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত সেবা পাবেন।
নিশাত পারভীন
প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন
ঢাকার নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় গত বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। জুন ২০২৫ পর্যন্ত আরবান প্রাইমারি হেলথকেয়ার সার্ভিস ডেলিভারি প্রজেক্ট নগরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিত, তবে প্রজেক্ট শেষ হওয়ায় নগরের রোগীরা সরাসরি টারশিয়ারি লেভেলের হাসপাতালগুলোর দিকে ঝুঁকছে। এতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড মেডিকেল কলেজসহ বড় সরকারি হাসপাতালের ওপর চাপ বেড়েছে এবং সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
জুলাই থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রজেক্টের চলমান এনজিওদের সঙ্গে এমওইউ করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালু করেছে। বাজেটের কাঠামো অনুযায়ী নগরবাসীর কাছ থেকে ৫০%, সিটি করপোরেশন থেকে ২৫% এবং মন্ত্রণালয় থেকে ২৫% বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩৮টি ওয়ার্ডে সম্পূর্ণ প্রাইমারি হেলথকেয়ার সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।
৭৫টি ওয়ার্ডে কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য আমরা এনজিও, সরকার, এলজিআরডি এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করছি। ডিজিএনএমের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষর করে তিনটি হাসপাতালে মিডওয়াইফারি ও নরমাল ডেলিভারি ফ্রি দেওয়া হচ্ছে। ফ্যামিলি প্ল্যানিং ও এনসিডি কার্যক্রমও সমন্বিতভাবে চালু হয়েছে।
আমরা আশা করি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রাইমারি হেলথকেয়ারকে আমরা উন্নত করতে পারব। আমাদের বাজেটের ১ শতাংশ দিয়ে আমাদের একটা সাসটেইনেবল ফান্ড করার কথা ছিল, আমরা করেছি। সেখানে আমাদের প্রায় ৫ কোটি টাকা আছে। এ ছাড়া আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৫০ জন প্রাইমারি হেলথকেয়ার ওয়ার্কার এবং ২০ জন ইপিআই সুপারভাইজার নিয়োগ দিয়েছি। এই কার্যক্রম চলমান আছে। সামনের দিকে আরও লোক নিয়োগ করা হবে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে পুরো ঢাকা দক্ষিণে কার্যক্রম সম্প্রসারণ সম্ভব। আমরা হয়তো একবারে পুরোটা করতে পারব না। সবার সঙ্গে সমন্বয় করে পুরো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারব।
আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন
চেয়ারম্যান, ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট;
সদস্য, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন
স্বাস্থ্য সুরক্ষা বলতে আমরা শুধু শারীরিক সুস্থতাকেই বুঝি। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৪৮ সালে যে সংজ্ঞা দিয়েছে, সেখানে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক দিকের সমন্বয় প্রয়োজন। বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে ১৩ থেকে ১৮ শতাংশ মানুষ।
সামাজিক স্বাস্থ্য মানে সমাজের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ, সহায়তামূলক এবং সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় রাখা। ফুটপাত, যানজট, বালুর সিমেন্টের মতো দৈনন্দিন ব্যাঘাতও মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। জনগণ যতক্ষণ স্বাস্থ্যসেবা ও রোগ প্রতিরোধে দায়িত্ব নেবে না, ততক্ষণ স্বাস্থ্য উন্নয়ন অসম্ভব। আত্মার স্বাস্থ্যও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ; সত্য, শান্তি, সহিষ্ণুতা ও পরোপকারের চর্চা স্বাস্থ্যকর সমাজ গঠনে অপরিহার্য।
নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় ও পরিকল্পনা অপরিহার্য। আরবান প্রাইমারি হেলথকেয়ার সার্ভিস প্রজেক্টের অন্তর্গত ৬৩টি ওয়ার্ডে সেবা প্রদানের মাধ্যমে দেখা গেছে, ফ্রন্টাল লেবেল, চিকিৎসক, মিডওয়াইফ, নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ানসহ সুষম জনবল এবং বিনা মূল্যের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা মানুষের বিশ্বাস ও সেবা গ্রহণ বৃদ্ধি করে।
ফান্ডিং ও পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট জরুরি। জনগণকে সচেতন করা, সোশ্যাল হেলথ ইনস্যুরেন্স চালু করা এবং রাজস্ব বরাদ্দ ও মন্ত্রণালয়ের সহায়তা মিলিয়ে ১ শতাংশের সাসটেইনেবল ফান্ড তৈরি করা যেতে পারে। অবকাঠামো শক্তিশালী করে, প্রাইমারি হেলথকেয়ার ইউনিটে পর্যাপ্ত ডাক্তার ও মিডওয়াইফ নিয়োগে নগর স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে স্থিতিশীল ও কার্যকর করা সম্ভব।
সাবিনা পারভীন
পরিচালক (পরিকল্পনা), পরিকল্পনা ইউনিট,
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর
নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অনানুষ্ঠানিক বসতি ও খণ্ডিত স্বাস্থ্য অবকাঠামো নগর এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ সবার জন্য ধারাবাহিক সেবা নিশ্চিত করতে বাধা সৃষ্টি করছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন ও নিবন্ধিত এনজিওর মাধ্যমে নগরে পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও ওয়ার্ডভিত্তিক রেজিস্ট্রেশন ও অবকাঠামোর সীমাবদ্ধতা সেবার সম্প্রসারণে ঘাটতি তৈরি করছে।
ঢাকায় তিনটি বিশেষায়িত মাতৃ-শিশু হাসপাতাল—আজিমপুর; লালকুঠি, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও ইনফার্টিলিটি সেবাসহ সমস্ত মাতৃ-শিশু স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। তবে নগরের ওয়ার্ডভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণের জন্য নতুন আরবান হেলথ প্রকল্পের পিএসসি বা জোনাল অফিসগুলো প্রয়োজন। এতে বিশেষায়িত হাসপাতালের সঙ্গে রেফারেল লিংকেজ তৈরি এবং অনিরাপদ গর্ভধারণের ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলো হলো: সিটি করপোরেশন ও সংশ্লিষ্ট অংশীদারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে ওয়ার্ডভিত্তিক ওয়ান স্টপ সেবা পয়েন্ট স্থাপন, এসডিজি টার্গেট অর্জনে নগরের সব অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা বিস্তৃত করা, সেবা প্রদানকারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মান পর্যবেক্ষণ, গণমাধ্যম ও কমিউনিটি লিডারদের মাধ্যমে নগরবাসীকে সচেতন করা এবং ডিজিটাল তথ্য বিনিময় ও হেলথ ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সেবা ট্র্যাকিং ও মনিটরিং নিশ্চিত করা। ফলে নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থা আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, কার্যকর ও টেকসই হয়ে উঠবে।
অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী
সাবেক প্রেসিডেন্ট, ওজিএসবি
নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ। ওজিএসবি ১৯৭২ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩ হাজারের বেশি সদস্যের মাধ্যমে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। মাতৃমৃত্যু হ্রাস এবং প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা সম্প্রসারণে তারা ট্রায়ো মডেলে কাজ করছে, যেখানে সরকার, দাতা সংস্থা ও পেশাদার সংস্থা একসঙ্গে অংশ নেয়।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে আইপাস বাংলাদেশ ২০২২ সাল থেকে ঢাকায় যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এতে নির্বাচিত ১০০ জন নারী জিপি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তাঁরা যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সেবা ফ্যামিলি প্ল্যানিং এবং জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতার শনাক্তকরণ ও সহায়তা দিচ্ছেন। এই সেবা কম খরচে প্রদান হওয়ায় নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য তা টেকসই হচ্ছে।
তবে নগরের স্বাস্থ্য সমস্যা কেবল প্রেগনেন্সি সম্পর্কিত নয়; এন্ডোমেট্রিওসিস, পিসিও, মাসিকসংক্রান্ত সমস্যা এবং পুরুষদের প্রজননস্বাস্থ্যও গুরুত্বপূর্ণ।
অতএব নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কারিকুলাম আপগ্রেড, ডিজিটাল ট্র্যাকিং, ওয়ার্ডভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ, বিশেষায়িত হাসপাতালের সঙ্গে রেফারেল লিংকেজ, প্রশিক্ষণ ও মান পর্যবেক্ষণ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সমন্বিত তথ্য বিনিময় অপরিহার্য। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়ন করলে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাতৃ ও প্রজননস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই হবে।
গীতা দাস
প্রেসিডেন্ট, নারীপক্ষ
বাংলাদেশে নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা এখনও স্বপ্নের মতো। নাগরিক সমাজ, যাকে আমরা সুশীল সমাজ বলি, জনগণের পক্ষে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পারে, কিন্তু নিজেদের জনগণের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ তা গুরুত্বপূর্ণ। যদি নাগরিক সমাজ নিজেই জনগণের মধ্যে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা না করে, তাহলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় অন্যদের জবাবদিহিতা আশা করা যায় না।
নারী স্বাস্থ্য নগর স্বাস্থ্য পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু হওয়া উচিত। দরিদ্র নারীদের স্বাস্থ্য সমস্যা সবথেকে বেশি, কিন্তু পরিবারে তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা অনেক সময় রান্না বা অন্যান্য দায়িত্বের পেছনে পিছিয়ে থাকে। নারীর মানসিক স্বাস্থ্যও উপেক্ষিত থাকে; স্কুল, যানজট, খরচ—এগুলো নগর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত। তাই নাগরিক সমাজের ভূমিকা হলো চাপ সৃষ্টি করা, এডভোকেসি করা এবং বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করা।
নগর এলাকায় স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের খরচ গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় বেশি। নগর নাগরিকদের জন্য সেবা পৌঁছে দিতে স্থানীয় সরকারের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক, ওয়ার্ডভিত্তিক সভা এবং পরিকল্পনায় জনগণের অংশগ্রহণ অপরিহার্য। নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় নাগরিক সমাজের কাজ হলো জনগণ ও প্রশাসন, স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও সেবা প্রদানকারীদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করা।
কেবল সমালোচনা নয়, প্রশংসা, অংশগ্রহণ এবং জবাবদিহির মাধ্যমে নগরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক, কার্যকর ও টেকসই করা সম্ভব।
মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম
অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় জনঘনত্ব বিবেচনা করা অপরিহার্য। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধের সরবরাহ সীমিত থাকলে গুণগত সেবা প্রদান সম্ভব হবে না। দ্রুত আরবানাইজেশনের সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে রোগের ঝুঁকি—সংক্রামক ও অসংক্রামক রোগের সংমিশ্রণ, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ ও ক্যানসার। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য সংকট, শব্দ ও বায়ুদূষণ, জীবনযাত্রার চাপ তরুণ প্রজন্মকে প্রভাবিত করছে।
দরিদ্র, স্থানান্তরিত এবং বস্তিবাসী জনগোষ্ঠী বিশেষভাবে সুরক্ষাহীন। স্বাস্থ্যসেবার অভাব সামাজিক অসাম্য ও বৈষম্য আরও বাড়াচ্ছে। নগর–পরিকল্পনায় বয়সভিত্তিক প্রজন্ম শিশু–কিশোর, যুবক–যুবতী ও বয়স্ক—সব ধরনের মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
নাগরিক সমাজের দায়িত্ব শুধু সমালোচনা নয়, ভালো প্র্যাকটিসও তুলে ধরা। তারা জনগণ ও প্রশাসন, সেবা প্রদানকারী ও স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে। নগরস্বাস্থ্য পরিকল্পনা এককভাবে স্বাস্থ্য খাতের দায়িত্ব নয়; শিক্ষা, পরিবহন, পরিবেশ, প্রশাসনসহ বহু সেক্টর সমন্বয় অপরিহার্য। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে দুর্বল না হতে দিতে হলে নাগরিক সমাজকে সক্রিয় অংশগ্রহণ, চাপ প্রয়োগ এবং সুনির্দিষ্ট ডেটা ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই ও জনমুখী করার জন্য এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
এডওয়ার্ড কেব্রেইরা
ফার্স্ট সেক্রেটারি, ডেভেলপমেন্ট (স্বাস্থ্য), কানাডিয়ান হাই কমিশন, ঢাকা
প্রথমে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই আইপাস বাংলাদেশ ও প্রথম আলোকে এই গোলটেবিল বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এখানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, যেমন সরকারি, বেসরকারি, স্থানীয় সরকার প্রতিনীধি, পেশাজিবী ও শিক্ষাবিদেরা উপস্থিত আছেন। সবার বক্তব্য শুনে বাংলাদেশের নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেক আশার পথ দেখা যাচ্ছে।
‘ইমপ্রুভিং সেক্সুয়াল রিপ্রোডাকটিভ হেলথ অ্যান্ড রাইটস ইন ঢাকা’ প্রকল্পটি সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবার চাহিদা মেটাতে কাজ করছে। বিভিন্ন সুবিধা, বিশেষত গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে এমন সুবিধা তৈরি করা হয়েছে, যাতে নারী ও মেয়েরা যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সেবা পেতে পারে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে উপরিউক্ত সুবিধাগুলো গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিগুলোতে সহজলভ্য এবং নিশ্চিত করা হয়েছে।
এই ক্লিনিকগুলো এবং কর্মীরা যারা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে, তারা কর্মক্ষেত্রে প্রচুর সহায়তা ও সুযোগ পাচ্ছে। প্রকল্পটি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন; স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিরবচ্ছিন্ন সহায়তা প্রয়োজন। এই নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য আরও অনেক বেশি জায়গায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম
হেলথ অ্যাডভাইজার, সুইডেন দূতাবাস, ঢাকা
এসডিজি-৩ অনুযায়ী ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ নিশ্চিত করা এবং ফিন্যান্সিয়াল রিস্ক প্রটেকশন দেওয়া হলো প্রধান লক্ষ্য। নগরস্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি কেয়ার, পাশাপাশি প্রিভেন্টিভ সেবা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। তবে বর্তমানে পরিকল্পনা ও বরাদ্দে এই দিকগুলোর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
অপর্যাপ্ত নীতিগত কাঠামো ও লিগ্যাল সেফগার্ড না থাকায় সরকারি, স্থানীয় ও প্রাইভেট সেবা প্রদানকারী এককভাবে কার্যকর হতে পারছে না। প্রাইমারি হেলথকেয়ার নগরের জনসংখ্যার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং টার্গেটেড হওয়া দরকার। দুর্বল ও সুরক্ষাহীন জনগোষ্ঠী, যেমন দরিদ্র, স্থানান্তরিত বা বস্তিবাসীদের প্রাধান্য দিয়ে সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
সমন্বিত নেটওয়ার্ক ও ড্যাশবোর্ডের মাধ্যমে সরকারি, এনজিও ও প্রাইভেট সেবা একত্র করা সম্ভব। এতে ডুপ্লিকেশন কমবে এবং সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সেন্টার কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে। এ ছাড়া নগরের ওয়াকঅ্যাবিলিটি, বাইসাইকেলঅ্যাবিলিটি, সবুজ ও নীল স্থান তৈরি করা জরুরি, যা সামাজিক যোগাযোগ, মানসিক স্বাস্থ্য এবং নন-কমিউনিকেবল রোগের প্রতিরোধে সহায়ক।
মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম
হেলথ অ্যাডভাইজার, ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা
নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সময়মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব বণ্টন না থাকায় আমরা দুই দশক ধরে জটিলতায় আটকে আছি। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি স্ট্র্যাটেজি না থাকায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, অবকাঠামো, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও ডিজিটালাইজেশন যথাযথভাবে কাজ করছে না।
গত দুই দশকে আরবান হেলথের দায়িত্ব নিয়ে এলজিইডি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্পষ্ট সমন্বয় হয়নি। মিউনিসিপ্যালিটি অ্যাক্ট এবং রুল অব বিজনেসে দায়িত্ব স্পষ্ট না থাকার কারণে নীতি বাস্তবায়নে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সরকার বলছে এটা তাদের দায়িত্ব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে পাবলিক হেলথের মধ্যে; ফলে নগরবাসী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বাজেটের সীমাবদ্ধতা, পুরোনো মডেল এবং জনসংখ্যার পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের কারণে প্রাইমারি হেলথকেয়ার কার্যকরভাবে পৌঁছাতে পারছে না। ২০ বছর আগে প্রস্তাবিত সাসটেইনেবল ফান্ড বাস্তবায়িত না হওয়ায় নগরস্বাস্থ্য পরিষেবার সম্প্রসারণ বাধাগ্রস্ত। বর্তমানে প্রাইভেট-পিপিপি মডেল যথেষ্ট নয়; জনগণের বিস্তৃত অংশকে সেবা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব নিশ্চিত করা জরুরি।
জিয়াউল আহসান
প্রজেক্ট ডিরেক্টর, আইপাস বাংলাদেশ
ইমপ্রুভিং এসআরএইচআর ইন ঢাকা প্রকল্প ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে কাজ করছে। প্রাথমিকভাবে মনোনীত এক হাজার জন জিপির মধ্য থেকে সরকারি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত এমবিবিএস চিকিৎসক, যাঁরা স্থানীয় কমিউনিটিতে দুই-তিন বছর অবস্থানকারী এবং এসআরএইচআর সেবা দিতে ইচ্ছুক, এমন ১০০ জন জেনারেল প্র্যাকটিশনারকে (জিপি) চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। তাঁদের নিজ এলাকায় পরিচিত করানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে গঠিত কমিউনিটি অ্যাকশন গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
কমিউনিটি অ্যাকশন গ্রুপে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবী যুবক-যুবতীরা অন্তর্ভুক্ত, যাঁরা কমিউনিটিতে এসআরএইচআর সেবা প্রচার, সচেতনতা সৃষ্টি ও জিপিকে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার কাজ করছেন। এই প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীরা স্কুলের কিশোর-কিশোরীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সেবার সঙ্গে পরিচিত করানোর কাজ করছেন, যাতে জিপির কাছ থেকে কিশোর-কিশোরীরা প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণ করতে পারে। এই প্রকল্পের জিপিদের মাধ্যমে গত তিন বছরে প্রায় ১১ হাজার পরিবার পরিকল্পনা সেবাসহ ১২ হাজারের অধিক যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়েছে। আশা করা যায়, ঢাকা শহরের সুবিধাবঞ্চিত ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে জিপিদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সুপারিশশহরে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রাইমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জোনভিত্তিক ১০০ থেকে ২০০ শয্যার হাসপাতাল গড়ে তোলা জরুরি।
শহর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে জিপি নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও পরিচিতি নিশ্চিত করা।
কমিউনিটি অ্যাকশন গ্রুপ, স্বেচ্ছাসেবী ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে নগরবাসীর স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি।
নগরস্বাস্থ্য খাতে বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি করা।
স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অবকাঠামো শক্তিশালী করা, পর্যাপ্ত ডাক্তার, মিডওয়াইফ ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা।
অংশগ্রহণকারী: মোহাম্মাদ আবদুস সালাম খান, অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মো. এনামুল হক, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইমরুল কায়েস চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। নিশাত পারভীন, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। আবু মুহাম্মদ জাকির হোসেন, চেয়ারম্যান, ক্লিনিক হেলথ সাপোর্ট ট্রাস্ট; সদস্য, স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন। সাবিনা পারভীন, পরিচালক (পরিকল্পনা), পরিকল্পনা ইউনিট, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। অধ্যাপক সামিনা চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডেন্ট, ওজিএসবি। গীতা দাস, প্রেসিডেন্ট, নারীপক্ষ। মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সাইদ রুবায়েত, কান্ট্রি ডিরেক্টর, আইপাস বাংলাদেশ। এডওয়ার্ড কেব্রেইরা, ফার্স্ট সেক্রেটারি, ডেভেলপমেন্ট (স্বাস্থ্য), কানাডিয়ান হাইকমিশন, ঢাকা। মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, হেলথ অ্যাডভাইজার, সুইডেন দূতাবাস, ঢাকা। মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, হেলথ অ্যাডভাইজার, ব্রিটিশ হাইকমিশন, ঢাকা। জিয়াউল আহসান, প্রজেক্ট ডিরেক্টর, আইপাস বাংলাদেশ। ফারহানা জেসমিন হাসান, সিনিয়র অ্যাডভাইজার, এসজিবিভি, আইপাস বাংলাদেশ। সুস্মিতা আহমেদ, সিনিয়র অ্যাডভাইজার, পার্টনারশিপ কো-অর্ডিনেশন, আইপাস বাংলাদেশ। মোহাম্মদ মামুন-উর-রশিদ, অ্যাডভাইজার, আর এইচ সাপ্লাইচেইন, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড গভর্নমেন্ট কো-অর্ডিনেশন, আইপাস বাংলাদেশ। সঞ্চালনা: ফিরোজ চৌধুরী, সহকারী সম্পাদক, প্রথম আলো।