ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম নগরের বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তির নাম ফরিদ আহমেদ (৩৯)। আজ সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিহত ফরিদ নগরের বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা। ১৫ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। ডেঙ্গুর পাশাপাশি তাঁর শ্বাসকষ্ট ও কিডনি জটিলতাও ছিল। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২৫–এ। এর আগে গত শনিবার একই হাসপাতালে নাহিদা আক্তার (২৭) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়। তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ জন পুরুষ, ৪ জন শিশু ও ৫ জন নারী। এ নিয়ে পুরো বছরে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৩৬০। নভেম্বরে ২৪ দিনে আক্রান্ত ৮৫৫ জন। এ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন পাঁচজন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘রাজসাক্ষী’কে কি সাজা দেওয়া যায়


জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি)-১ সম্প্রতি প্রথম রায় ঘোষণা করেছেন। সেখানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মামলায় আরেক অভিযুক্ত এবং পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুসারে, রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে বিবেচিত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে একই অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া সত্ত্বেও পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মামুনের সাজার বিষয়টি দেশে নানা প্রশ্ন ও আলোচনা তৈরি করেছে।

এ-সংক্রান্ত প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই শহীদদের পরিবারের সদস্যরা মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড মেনে নিতে পারেননি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো আবদুল্লাহ আল-মামুনকে কমপক্ষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার দাবি করেছে। অন্যদিকে আইন অঙ্গনের কেউ কেউ মনে করছেন, আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে তাঁকে খালাস দেওয়া উচিত ছিল।

আইসিটি আইনের ১৫ ধারায় অ্যাপ্রুভার বা অনুমোদনকারী শব্দটি রয়েছে; যদিও আইনের কোথাও এর সংজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। শব্দটি উল্লিখিত ধারার মূল অংশেও নেই; শুধু ধারার শিরোনাম/প্রান্তিক নোটে রয়েছে। দেশে প্রচলিত ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধিতেও (সিআরপিসি) শব্দটির কোনো উল্লেখ বা সংজ্ঞা দেওয়া নেই।

সাধারণত অ্যাপ্রুভার বা বহুল প্রচলিত রাজসাক্ষী বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত বা জড়িত বলে মনে করা হয়; যিনি ক্ষমা পাওয়ার শর্তে নিজের দোষ স্বীকার করে ওই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অন্য সব দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে তাঁর জ্ঞানত পূর্ণাঙ্গ ও সত্য সাক্ষ্য প্রদান করতে রাজি হন।

এসব ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি প্রতিশ্রুতি দেন, অপরাধের ব্যাপারে তাঁর যতটুকু জ্ঞান আছে, ততটুকু তিনি পুরোপুরি সততার সঙ্গে প্রকাশ করবেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা অপরাধে জড়িত ছিলেন, তাঁদের কথাও তিনি অকুণ্ঠভাবে বলবেন। বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেই ব্যক্তিকে আইনানুসারে আটক রাখা হয়। সাধারণত গুরুতর ও জটিল প্রকৃতির অপরাধের ক্ষেত্রে প্রমাণের অভাবে যেন বিচার অনিষ্পন্ন থেকে না যায়, সে জন্য আইনে এ ধরনের বিধান রাখা হয়।

ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৩৭, ৩৩৮ ও ৩৩৯ ধারায় রাজসাক্ষী কে হবেন, রাজসাক্ষীকে ক্ষমা করা ও বিচারপদ্ধতির বিষয় বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদিকে অ্যাপ্রুভার–সংক্রান্ত বিধান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের ১৫ ধারায় দেওয়া হয়েছে। যেসব ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন বিচার শেষে ক্ষমা প্রদান করা হয়, সেসব ক্ষেত্রে তাঁকে সর্বদা ক্ষমা প্রদানের শর্তগুলো স্পষ্টভাবে জানাতে হয়। পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী মামুন হলেন আইসিটি আইনের অধীন অ্যাপ্রুভার হিসেবে ঘোষিত প্রথম ব্যক্তি এবং সম্ভবত সে কারণেই তাঁর নমনীয় শাস্তির উপযুক্ততা নিয়ে এখন বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযোগ শুনানির সময় ট্রাইব্যুনাল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি দোষী নাকি নির্দোষ। সেই মুহূর্তে পুলিশের সাবেক প্রধান নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছিলেন, ‘আমি দোষ স্বীকার করছি। আমি স্বেচ্ছায় মামলার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ঘটনার সম্পূর্ণ ও সত্য বিবরণ প্রকাশ করতে ইচ্ছুক।’

ফলে ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করেন এবং তাঁকে মামলার একজন অ্যাপ্রুভার হিসেবে গণ্য করেন। তার পর থেকে তিনি রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হিসেবে পরিগণিত হচ্ছেন এবং এ মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। এখন গুরুত্বপূর্ণ আইনি প্রশ্ন উঠেছে যে মামলার অভিযুক্ত একজন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীকে কি শাস্তি প্রদান করা উচিত, নাকি শর্ত পূরণ করলে খালাস পাওয়া উচিত?

গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর আগেই রাজসাক্ষী চৌধুরী মামুনের ভাগ্য সম্পর্কে বলেছিলেন যে এটি পুরোপুরিভাবে ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। ট্রাইব্যুনাল উপযুক্ত মনে করলে তাঁকে ক্ষমা করতে পারেন; যদি তাঁর সাক্ষ্যের মাধ্যমে অপরাধের পূর্ণ ও সত্য প্রকাশ পায় অথবা ট্রাইব্যুনাল চাইলে অন্য কোনো আদেশও দিতে পারেন।

আইসিটি আইনে বর্ণিত এই ক্ষমার শর্তগুলো হলো অ্যাপ্রুভার কর্তৃক ১. পরিপূর্ণ (আংশিক নয়) ২. সত্য (বানোয়াট নয়) ও ৩. সম্পূর্ণ ঘটনার প্রকাশ। এই মামলায় ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছেন যে সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে সাক্ষী হিসেবে অভিযোগ প্রমাণে সাবেক আইজিপির ভূমিকা/ অবদান/ স্বীকারোক্তি/ সহযোগিতা বিবেচনা করা হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে তিনি শর্ত পূরণ করেছেন। এ কারণে তাঁকে তাঁর সহ-অভিযুক্ত ব্যক্তিদের তুলনায় কম শাস্তি দেওয়া হয়েছে; যদিও ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে একসঙ্গে ঘটনায় উসকানি, গণহত্যার আদেশ প্রদান, উচ্চপদস্থ দায়িত্বের অধীন অপরাধ ও যৌথ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দোষী সাব্যস্ত করেছেন।

এখন প্রশ্ন হলো, অ্যাপ্রুভার বা রাজসাক্ষীকে খালাস না দিয়ে সাজা দেওয়ার সুযোগ কখন থাকে। এই প্রশ্নের উত্তর হলো, যদি সাক্ষী উপরিউক্ত শর্ত পূরণ না করেন, তাহলে আইন অনুযায়ী ক্ষমা না করে তাঁকে শাস্তি দেওয়া যাবে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে যার জন্য ক্ষমা করা হয়েছিল, সেই মূল অপরাধের জন্য বিচার করা যেতে পারে এবং ক্ষমাপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে দেওয়া তাঁর নিজের স্বীকারোক্তি/বিবৃতি সেই বিচারে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যেতে পারে। তা ছাড়া যদি সাক্ষী ক্ষমার আওতায় পড়েন না—এমন কোনো ভিন্ন অপরাধ করেছেন বলে বিচারে প্রমাণিত হয়, তবে তাঁকে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। অতএব আইসিটি আইনের ১৫ ধারার অধীন উল্লিখিত ক্ষমা অ্যাপ্রুভারের সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সম্পূর্ণ দায়মুক্তি প্রদান করে না।

তবে জটিলতা এখানেই শেষ হচ্ছে না। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আইসিটি আইনে ব্যবহৃত ক্ষমা শব্দটির অর্থ কী? এর অর্থ কি খালাস, নাকি যা দেওয়া উচিত ছিল, তার চেয়ে কম শাস্তি? বিভ্রান্তি এড়াতে আদালতের কাছ থেকে এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন। যদিও প্রচলিত ফৌজদারি মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির অধীন বিচার করা হলে শর্ত ভঙ্গ না করলে সাধারণত খালাস দেওয়া হয়। তবে আইসিটি আইনের ২৬ ধারা অনুসারে, এই বিচারের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি বা দেশে প্রচলিত সাক্ষ্য আইন কার্যকর হবে না।

এই আইনি জটিলতা নিরসনে আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, জুরিস্প্রুডেন্স ও এরই মধ্যে সংঘটিত বিচারব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে পারি। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের রোম সংবিধির ৬৫ অনুচ্ছেদে অপরাধ স্বীকারের ওপর একটি আইনি কাঠামো ও বিধান রয়েছে। তবে সেখানে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি আমলে নিতে বাধ্য নন এবং আদালতকে সন্তুষ্ট করতে হবে যে ১. অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁর দ্বারা প্রদেয় স্বীকারোক্তির প্রকৃতি ও পরিণতি বোঝেন, ২. আইনজীবীর সঙ্গে পর্যাপ্ত পরামর্শের পর অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দিতে ইচ্ছুক এবং স্বীকারোক্তি মামলার অন্যান্য তথ্য দ্বারা সমর্থিত।

তবে রোম সংবিধিতে স্পষ্ট যে অভিযুক্ত ব্যক্তি স্বীকারোক্তি দিলেও তিনি অভিযুক্তই থাকেন; আমাদের আইসিটি আইনের মতো রাষ্ট্রপক্ষ বা প্রসিকিউশনের সাক্ষীতে রূপান্তরিত হন না। আবার অভিযুক্ত ব্যক্তি উপর্যুক্ত প্রয়োজনীয় শর্তাবলি পূরণ করলেও আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত হলে উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারেন।

অতএব, রোম সংবিধির ৭৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে স্বীকারোক্তি দেবেন—এই শর্তে অভিযুক্তের জন্য পূর্বনির্ধারিত বা নমনীয় শাস্তির প্রদানের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়া আইসিসি (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত) কর্তৃক গৃহীত অপরাধ স্বীকারোক্তি-সংক্রান্ত চুক্তির নির্দেশিকা অনুসারে সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তির চেয়ে আদালতের স্বাধীন কর্তব্যের ওপর সব সময় জোর দেয়। বিচারকদের কেবল পক্ষগুলোর মধ্যে চুক্তি নয়; বরং প্রসিকিউটরের দ্বারা উপস্থাপিত অন্যান্য প্রমাণ, যার মধ্যে ভুক্তভোগীর প্রতিনিধিত্ব এবং অন্যান্য উৎস অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে; তা-ও পরীক্ষা করতে হবে যেন মামলা-সংক্রান্ত তথ্য সম্পূর্ণ হয় এবং ন্যায়বিচার করা যায়।

তিনি কি ন্যায়বিচারের পরিপূর্ণ সুযোগ না পেয়ে শাস্তি পেয়েছেন? শর্ত লঙ্ঘন না করে একজন প্রসিকিউশন সাক্ষীকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে? তিনি কি বিচার চলাকালে তাঁর পক্ষে সাফাই সাক্ষী আনার সুযোগ পেয়েছিলেন? কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পেয়েছিলেন?

এ ছাড়া নির্দেশিকায় স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তির দ্বারা অপরাধ স্বীকার সম্পর্কে অভিযোগকারী/ ক্ষতিগ্রস্ত/ ভুক্তভোগীদের পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত করতে হবে এবং তাঁদের মতামত এবং উদ্বেগ উপস্থাপন করার সুযোগ দিতে হবে যেন বিচারিক প্রক্রিয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তি তাঁদের স্বার্থকে উপেক্ষা করতে না পারেন। অথচ আমাদের আইসিটি আইনে এ-সম্পর্কিত কোনো বিধানই নেই!

আবার সাবেক যুগোস্লাভিয়া (আইসিটিওয়াই) এবং রুয়ান্ডায় (আইসিটিআর) ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন আইসিটিওয়াইয়ের বিধি ৬২ টিইআর এবং আইসিটিআরের ৬২ বিআইএসের অধীন স্বীকারোক্তি-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক আবেদনের বিধান রয়েছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট অভিযোগের জন্য দোষ স্বীকার করতে পারেন, তবে সাধারণত তা প্রসিকিউটরের সঙ্গে আলোচনার পর করা হয়ে থাকে। যেখানে প্রসিকিউটর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে স্বীকারোক্তির বিনিময়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনা অন্যান্য অভিযোগ প্রত্যাহার বা শাস্তি কমাতে সুপারিশ করতে সম্মত হন।

তবে ট্রায়াল চেম্বার প্রসিকিউটর ও অভিযুক্তের মধ্যকার এই চুক্তি মানতে বাধ্য নন। বিচারকদের যাচাই করতে হয় যে আবেদনটি স্বেচ্ছায় করা হয়েছে, এর পরিণতি সম্পর্কে তিনি অবহিত ও দ্ব্যর্থহীন ছিলেন এবং অপরাধের জন্য যথেষ্ট তথ্যগত ভিত্তি বিদ্যমান ছিল। এসব ক্ষেত্রে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে বিচারক তাঁকে যথোপযুক্ত সাজা দিতে পারেন। তবে দোষ স্বীকার করে নেওয়ার জন্য অনেক ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ হ্রাস করা হয়ে থাকে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনশাস্ত্রে কোনো অপরাধীকে ক্ষমা বা খালাস দেওয়ার বিষয়টি বোঝার জন্য আমাদের প্রথমে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের লক্ষ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ বিচারের উদ্দেশ্য কেবল অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া নয়; বরং বিচারের মাধ্যমে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করা, পুনর্মিলনকে উৎসাহিত করা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ করা।

অন্যদিকে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে শুধু অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় একতরফাভাবে ক্ষমা করে দিলে এই উদ্দেশ্যগুলো দুর্বল হয়ে যাবে। শাস্তি ব্যক্তির অপরাধ ও অপরাধের গুরুত্ব প্রতিফলিত করার জন্য দেওয়া হয়; অপর পক্ষে ক্ষমা কৌশলে বিচারিক প্রক্রিয়াকে এড়িয়ে যায়।

সুতরাং চৌধুরী মামুনের মতো একজন অপরাধী, যিনি পুলিশের প্রধান হিসেবে ঘটনার সময় উচ্চপদস্থ দায়িত্বে ছিলেন, তাঁর নির্দেশে ও সহায়তায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে এবং যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় আদালতে স্বীকার করেছেন, তাঁকে খালাস দিলে ন্যায়বিচার পরাহত হয়। তাই তাঁকে শাস্তি না দিয়ে ক্ষমা বা খালাস দিলে তা আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য ব্যক্তিগত ফৌজদারি দায়বদ্ধতার মূল নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

এখন প্রশ্ন হলো, তিনি কি ন্যায়বিচারের পরিপূর্ণ সুযোগ না পেয়ে শাস্তি পেয়েছেন? শর্ত লঙ্ঘন না করে একজন প্রসিকিউশন সাক্ষীকে কীভাবে শাস্তি দেওয়া যেতে পারে? তিনি কি বিচার চলাকালে তাঁর পক্ষে সাফাই সাক্ষী আনার সুযোগ পেয়েছিলেন? কিংবা তাঁর বিরুদ্ধে আনা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পেয়েছিলেন? নাকি বিচারের শুরুতে তাঁর অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সময়ে আর বিচার না করে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো?

এসব বিষয়ে এখন ধোঁয়াশা থাকলেও এ কথা স্পষ্ট যে বারবার সংশোধন করা সত্ত্বেও আমাদের আইসিটি আইনে এখনো অনেক অস্পষ্টতা ও আইনি ফাঁকফোকর রয়ে গেছে এবং আইনটি এখনো আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পৌঁছাতে পারেনি। আইনি এসব অস্পষ্টতা ও দুর্বলতার কারণে এখন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিচারপ্রক্রিয়া ও শাস্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিশেষত অ্যাপ্রুভার–সংক্রান্ত বিধানে দেশে প্রচলিত আইন বা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড কোনোটিই অনুসরণ করা হয়নি।

রাইসুল সৌরভ আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি গলওয়েতে আইনবিষয়ক ডক্টরাল গবেষক

*মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের হামলায় নিহত তাবতাবাই কে, কীভাবে হিজবুল্লাহতে যোগ দিলেন
  • বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহর একজন শীর্ষ কর্মকর্তা নিহত
  • ‘মনে হয়েছে, আমি মারা গেলে তো মারা গেলাম, বাচ্চাগুলো তো বাঁচবে।’
  • ‘এক টাকায়’ ৫০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছেন যিনি
  • টাইটানিক যাত্রীর সোনার ঘড়ি বিক্রি হলো সাড়ে ২৮ কোটি টাকায়
  • পাবনা-৩: ‌‘বহিরাগত হওয়ার প্রশ্নই আসে না, যারা বলছেন ভুল বলছেন’
  • ভূমিকম্পে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত, আগামীকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
  • রেজাউদ্দিন স্টালিনের কবিতা: দশক ছাড়িয়ে সমগ্রতার ঘণ্টাধ্বনি
  • ‘রাজসাক্ষী’কে কি সাজা দেওয়া যায়