Samakal:
2025-06-16@08:36:05 GMT

ইসলামের জ্ঞানপিপাসু নারী

Published: 7th, February 2025 GMT

ইসলামের জ্ঞানপিপাসু নারী

নব্যুয়ত-পূর্ববর্তী জাহিলিয়াতের সময়ে যে সমাজে কন্যাশিশুকে জীবন্ত কবর দেওয়ার প্রচলন ছিল; কন্যাসন্তান জন্মের সংবাদে পিতারা অসম্মান বোধ করতেন। নব্যুয়ত-পরবর্তী সেই সমাজেই দেখা যায় কন্যাদের হাতে জ্ঞানের চাবিকাঠি তুলে দিচ্ছেন পিতারা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছ থেকে কোরআন এবং ইসলামী জীবনযাপনের পদ্ধতি শিক্ষালাভের জন্য নারীরাও এগিয়ে এসেছেন; প্রশ্ন করে জেনে নিয়েছেন। সত্য প্রকাশে কখনও কাউকে ভয় পাননি। 

হিজরি প্রথম ও দ্বিতীয় শতক ইসলামের সর্বোত্তম ও স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত ছিল। এই সময়টি ছিল সাহাবিদের সময়। নবীজির (সা.

) মুখনিঃসৃত বাণী সাহাবিরা অন্তরের মাঝে গেঁথে নিতেন। রাসুলুল্লাহর (সা.) ওফাতের পর যখন হাদিস সংকলন এবং সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়, তখন সাহাবিদের মধ্য থেকে প্রত্যেকেই নানাভাবে সেই কাজে যুক্ত হয়ে পড়েন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই হাদিস চর্চা করতেন।

প্রথম ও দ্বিতীয় হিজরি শতকে নারীদের বর্ণিত অনেক হাদিস বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থগুলোয় লিপিবদ্ধ হয়, যা থেকে মানুষ এখনও শিক্ষা গ্রহণ করে আসছে। 
হাদিস ও ফিকহ শাস্ত্রে সাহাবিদের (নারী-পুরুষ) মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন আয়েশা (রা.)। তিনি ২ হাজার ২১০টি হাদিস বর্ণনা করেন। এর মধ্যে ২৯৭টি হাদিস বুখারি ও মুসলিমে স্থান পেয়েছে। ছয়টি হাদিস গ্রন্থে বেশিসংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে তাঁর স্থান দ্বিতীয়। আবু হুরায়রার (রা.) পরেই তাঁর স্থান।
আয়েশার (রা.) পর বেশি হাদিস বর্ণনাকারীর মধ্যে ছিলেন উম্মে সালামা (রা.)। তিনি ৩৭৮টি হাদিস বর্ণনা করেন। এ ছাড়া আসমা বিনতে ইয়াজিদ ইবনুস সাকান, উম্মুল মুমিনিন মাইমুনা, উম্মুল মুমিনিন হাফসা, আসমা বিনতে আবু বকর, আসমা বিনতে উমাইস, আমারা বিনতে আব্দুর রহমান (রা.)-সহ অনেক নারী সাহাবি হাদিস বর্ণনা করেছেন।

সাহাবিদের মধ্যে, হোক তিনি পুরুষ কিংবা নারী; সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে শিক্ষার্থীরা সুদূর ইরাক ও সিরিয়া থেকে মদিনা ভ্রমণ করতেন। মুহাদ্দিসাত ফাতিমা আল বাতাইহিয়া সিরিয়া থেকে মদিনায় এসে মসজিদে নববিতে পড়াতেন। তাঁর কাছে বড় বড় আলিম পড়তেন।

সেই সময়ে নারীরা ফতোয়া দিতেন, বিচারকাজ করতেন, সাক্ষ্য দিতেন, হাদিস মুখস্থ ও লেখার কাজ করতেন। প্রায় প্রতিটি ঘরে নারীরা কোরআন মুখস্থ করতেন। কোরআন ও হাদিসের যে কোনো ব্যাপারে ব্যাখ্যা জানতে সাহাবিরা আয়েশার (রা.) কাছে হাজির হতেন। তাঁর ফতোয়ার ওপর সবাই আস্থা রাখতেন।

ওই সময়ে নারী শিক্ষকরা মসজিদ, ফলের বাগান, নিজেদের ঘর, হাদিসের মজলিসে শিক্ষা দিতেন। তাদের কাছ থেকে জ্ঞান লাভ করতেন বিশিষ্ট আলিম থেকে শুরু করে সাধারণ নারী-পুরুষ। যে নারী জ্ঞানের আলোয় নিজেকে রাঙাননি, তিনি কোনো কল্যাণ লাভ করেননি।

হাজার বছর আগে যখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এত বিকশিত হয়নি, সেই সময়ে নারীরা জাগতিক যশ, খ্যাতি, দুনিয়ার প্রাচুর্য কিংবা ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষায় জ্ঞানসমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েননি। বরং আখিরাতের প্রাচুর্যের আকাঙ্ক্ষায় তারা দীনি জ্ঞান অর্জন করেছেন, সেই অনুযায়ী আমল করেছেন এবং অন্যকে শিক্ষা দিয়েছেন। এতে তারা দুনিয়াতেও যেমন সম্মানিত হয়েছেন, আখিরাতেও তারা তাদের প্রতিদান পাবেন ইনশাআল্লাহ। 

নারীর বই পড়া মানে পুরো একটি পরিবারের বই পড়া। তখন নারীর জ্ঞানার্জনে কেউ কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং পিতারা নিজ নিজ কন্যাদের হাদিসের ক্লাসে নিয়ে যেতেন। কেউ পিতার কাছ থেকেই শিক্ষা নিতেন। কেউ পিতাকে জ্ঞানার্জনে সহায়তা করতেন।

অনেক নারী মুহাদ্দিসাত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন তাদের পিতা, তাদের স্বামী, তাদের ভাই। অনেক আলেম কোনো বিষয়ে জটিলতায় পড়লে স্ত্রীর কাছ থেকে সমাধান পেতেন। সেসব স্ত্রী ছিলেন জ্ঞানের আধার। এমন অনেক মুহাদ্দিসাতকে তাদের পিতা ধনাঢ্য কারও কাছে বিয়ে না দিয়ে জ্ঞানী ছাত্রদের কাছে বিয়ে দিতেন, যাতে তাদের কন্যাদের জ্ঞানার্জন অব্যাহত থাকে। 

ইসলামের স্বর্ণযুগের মতো জ্ঞানপিপাসু সেই নারীদের আজ বড় প্রয়োজন। সাজসজ্জার চেয়ে জ্ঞানার্জনে নারীরা গুরুত্ব দিলে পরিবার ও সমাজের পরিবর্তন হতে পারে।

মেহেরুন নেছা রুমা: লেখক 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ঞ ন র জন ই সময় ইসল ম করত ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’

এবারের বাবা দিবস আমার কাছে একটু অন্যরকম। চারপাশ যেন কিছুটা বেশি নিস্তব্ধ, হৃদয়ের ভেতর যেন একটু বেশি শূন্যতা। কারণ এবার প্রথমবারের মতো আমার আব্বাকে ছাড়াই কাটছে দিনটি। আব্বা চলে গেছেন গত জানুয়ারিতে। ফলে বাবা দিবস এখন আর কেবল উদযাপনের দিন নয়– এটি হয়ে উঠেছে স্মরণ, অনুধাবন ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের উপলক্ষ। আব্বা না থেকেও আছেন, তবে এক ভিন্ন অনুভবে– আমার নীরব নিঃশব্দ অভিভাবক হয়ে।    

আমাদের সমাজে কিংবা বলা যায় পারিবারিক সংস্কৃতির বাবারা সবসময় প্রকাশের ভাষায় ভালোবাসা বোঝান না। তাদের স্নেহ, দায়িত্ববোধ ও নিবেদন অনেক সময়েই নীরব থাকে, তবে গভীরভাবে অনুভব করা যায়। আমার আব্বাও ছিলেন তেমনই একজন। আব্বা ছিলেন আমার দিকনির্দেশক, আমার রক্ষাকবচ, আমার জীবনপথের চুপচাপ ভরসা। 

আব্বার অ্যাজমা ছিল, তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্বাস্থ্যসচেতন। নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নিতেন, আমাদের প্রতিও ছিল তাঁর সজাগ দৃষ্টি। আমি কিংবা আমার মেয়ে সামান্য অসুস্থ হলেই তিনি অস্থির হয়ে যেতেন। তাঁর যখন ৭৯ বছর বয়স, তখনও আমি ডাক্তারের কাছে একা যেতে গেলে বলতেন, ‘তুমি একা যাবে কেন? আমি যাচ্ছি।’ এই কথা বলার মানুষটাকে প্রতি পদে পদে আমার মনে পড়ে, যেন দূর থেকে দেখছেন সবই। আর আমিও তাঁর কনুই-আঙুল ধরে হেঁটে যাচ্ছি জীবনের পথে।    

আব্বা ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধার্মিক মানুষ। শৈশব থেকে নামাজের গুরুত্ব তিনি আমার মধ্যে গভীরভাবে বপন করার চেষ্টা করে গেছেন। কখনও নরম সুরে, আবার কখনও খুব জোর গলায়। তখন মনে হতো তিনি চাপ দিচ্ছেন; কিন্তু এখন তাঁর অনুপস্থিতির নিস্তব্ধতায় আমি সেই কণ্ঠস্বরের জন্য আকুল হই।

অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কিংবা আত্মীয়ের বা বন্ধুর বাসায় গেলে বাবার ফোন আসত, ‘কোথায়? কখন ফিরবি?’ সেসব ফোন একসময় মনে হতো আব্বার বাড়াবাড়ি। এখন মনে হয়, একটাবার হলেও যদি ফোনে তাঁর নামটা দেখতাম! ছোট ছোট এসব প্রশ্ন– এই উদ্বেগই তো ছিল নিঃশব্দ ভালোবাসা। এগুলোই ছিল বাবার নিজের মতো করে যত্ন নেওয়ার ভাষা। সেই ভাষাটাই আজ আর শোনা যায় না। আব্বা নেই, এখন জীবনযাপনে এক অদ্ভুত শূন্যতা ঘিরে থাকে।

আব্বা ছিলেন একজন ব্যাংকার। হয়তো চেয়েছিলেন আমি তাঁর পেশার ধারাবাহিকতা বজায় রাখি। কিন্তু কোনোদিন চাপ দেননি। বরং নিজের ইচ্ছেমতো পথ বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছিলেন; ছায়ার মতো পাশে ছিলেন। আব্বাই আমাকে নিজের ওপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছেন। বিয়ে করেছি, বাবা হয়েছি, নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়েছি– তবুও বাবার সেই গাইডেন্স কখনও ফুরায়নি। আব্বা কখনও অর্থ বা অন্য কোনো সহায়তার কথা বলেননি; বরং সবসময় নিজে থেকেই পাশে থেকেছেন। মনে পড়ে, একবার মেয়ের অসুস্থতার সময় আমি অর্থকষ্টে ছিলাম, কিছু বলিনি তাঁকে। কিন্তু তিনি ঠিকই বুঝে গিয়েছিলেন, পাশে থেকেছেন।

এখন অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মনে হয়, ‘বাবা হলে কী করতেন?’ তাঁর শিক্ষা, অভ্যাস, স্নেহ– সবকিছু এখন আমার আচরণে, আমার সিদ্ধান্তে, আমার ভালোবাসায় প্রতিফলিত হয়। তাঁকে ছুঁতে না পারলেও আমি প্রতিদিন তাঁর উপস্থিতি অনুভব করি– স্মৃতিতে, নৈঃশব্দ্যে, নানা রকম ছোট ছোট মুহূর্তে।

এই বাবা দিবসে আব্বার কোনো ফোন আসবে না, থাকবে না কোনো উপহার বা আলিঙ্গনের মুহূর্ত; যা আছে সেটি হলো আব্বার প্রতি একরাশ কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা আর অপার ভালোবাসা। যিনি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানদের শুধু দিয়েছেন, বিনিময়ে কিছু চাননি কখনোই। তাঁর জীবনদর্শন আর মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি– এগুলোই নিজের জীবনে ধারণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি, হয়তো পুরোপুরি পারছি না; কিন্তু আমার মনে হয় এ চেষ্টাটাই আমার জীবনে শৃঙ্খলা এনেছে।

বাবাকে হারানোর শোক যেমন গভীর, তেমনি গভীর তাঁর রেখে যাওয়া ভালোবাসা। নিজের অনুভবকে চাপা না দিয়ে, বরং বাবাকে নিজের ভেতরে জায়গা দিন। বাবার কথা বলুন, তাঁর শেখানো পথে হাঁটুন। কারণ প্রিয় মানুষরা চলে যান বটে, কিন্তু তাঁদের ভালোবাসা থেকে যায় সবসময়।

লেখক: কমিউনিকেশনস প্রফেশনাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ভালোবাসার আসল রূপটাই যেন ছিলেন আব্বা’
  • বর্ষার শুরুতেই সপ্তাহব্যাপী বৃষ্টির বার্তা
  • টানা সাত দিন সারাদেশে বৃষ্টি ঝরবে
  • অর্ধশত বছরের চামড়ার মোকাম রাজারহাট
  • সিদ্ধিরগঞ্জে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোর্স ইকবালের ডাকাতি