দীর্ঘ ২৮ বছরের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) তিতুমীর কলেজের বরকত মিলনায়তনের সামনে বিকেল ৪টায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই বিপ্লবের পর থেকে আমরা পর্যায়ক্রমে গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, ডেথ অফ এডুকেশন, ব্ল্যাক ফেস র‍্যালি, বারাসাত ব্যারিকেড টু মহাখালী, ক্লোজডাউন তিতুমীরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। কিন্তু আমাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন করেনি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছে।

সর্বশেষ, গত ২৯ জানুয়ারি বিকেল ৫টা থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীর নেতৃত্বে আমরণ অনশন শুরু হয়। একইসঙ্গে ‘বারাসাত ব্যারিকেড টু নর্থ সিটি’ কর্মসূচি চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকার ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেয়। সাতদিনের মধ্যে এসব প্রতিশ্রুতির লিখিত নথিপত্র দেওয়ার কথা বললেও সরকার তা বাস্তবায়ন করেনি। বরং সরকারের শিক্ষা সংস্কার প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়োগের সুপারিশ থাকলেও ১৫১ জন শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

তাদের ওই দাবিগুলোর ছিল— ছাত্র-শিক্ষক ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে তিতুমীর কলেজের জন্য স্বতন্ত্র কাঠামো গঠন; ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা এবং অন্তত দুটি আন্তর্জাতিক বিষয় (আইন ও সাংবাদিকতা) সংযোজন; সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদানকারী অভিজ্ঞ শিক্ষকদের নিয়োগ এবং সংকট নিরসনে অস্থায়ীভাবে ১৫১ জন শিক্ষা ক্যাডার নিয়োগ; আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার ও শতভাগ আবাসন নিশ্চিত করতে টিএন্ডটি মাঠ, রাজউকের জমি ও অন্যান্য সরকারি জমি বরাদ্দ; পরিবহন সংকট নিরসনে অন্তত ২০টি লাল বাস বরাদ্দ; পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি স্থাপন।

সংবাদ সম্মেলন শিক্ষার্থীরা দাবি করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাদানের মানোন্নয়নে কমপক্ষে ১৫ জন পিএইচডি-ধারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকার যদি আগামী সাতদিনের মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দৃশ্যমান অগ্রগতি না দেখায়, তাহলে ‘তিতুমীর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি’ দাবিতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, কিছু গণমাধ্যম মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচার করছে, যা আন্দোলনকে দুর্বল করতে পারে। আপনারা তথ্যের সত্যতা যাচাই ছাড়া কোন খবর প্রচার করবেন না।

গত ২৯ জানুয়ারি তিতুমীর কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় রুপান্তরের জন্য কলেজের শিক্ষার্থীরা সাত দফা দাবিসহ আমরণ অনশন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

পরে ৩ ফেব্রুয়ারিত সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবির মধ্যে ছয় দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে তিতুমীর কলেজকে একটি স্বতন্ত্র কলেজে রুপান্তরের আশ্বাস এবং সাতদিনের মধ্যে রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারির প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমরন অনশন প্রত্যাহারে রাজি করানো হয়।

ঢাকা/হাফছা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত ত ম র কল জ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ

সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) চাকরি প্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীদের অনশন তীব্র আন্দোলনের মুখে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত করেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার মধ্যস্থতায় পিএসসি প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত নেয় পিএসসি। তবে দেশের একটি গণমধ্যমের প্রতিবেদনে পিএসসির এমন সিদ্ধান্তে ‘উপদেষ্টা আসিফের বলপ্রয়োগ রয়েছে’ বলে অভিযোগ করা হয়। 

এ অভিযোগের বিষয়ে এবার নিজের বক্তব্য জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ওই রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা।

মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাসে তিনি একথা বলেন।

ফেসবুক পোস্টে উপদেষ্টা বলেন, পিএসসি সংস্কারের দাবিতে প্রায় ৮০ ঘণ্টা অনশন করে চার জন চাকরিপ্রার্থী ঝুকিপূর্ণ শারীরিক অবস্থায় পৌঁছালে পিএসসি এবং তাদের মধ্যে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিই। রাজু ভাস্কর্যে বসেও বারবার বলেছি- পিএসসি সাংবিধানিক, স্বাধীন ও স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। আমি পিএসসি এবং আপনাদের মধ্যে ব্রিজ হতে পারি, সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার আমার নেই’। প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি সুরাহা না করে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন আন্দোলনকারীরা।

তিনি বলেন, পিএসসি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে রাজুতে বসেই ফোনে কথা বলেছি। পিএসসির চেয়ারম্যান মোবাশ্বের মোনেম স্যার তিনজন সদস্য পাঠান আলোচনার জন্য। টিএসসিতে সাংবাদিক সমিতির অফিসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং পিএসসির সদস্যদের মধ্যকার দীর্ঘ আলোচনার পর পিএসসি লিখিত পরীক্ষা আপাত স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তা ঘোষণা করেন পিএসসির একজন সদস্য। এই প্রক্রিয়ার কোনো অংশেই পিএসসিকে আমি কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি। পিএসসি এবং ছাত্রদের মধ্যে ব্রিজ হিসেবে সমস্যার সমাধান করাই ছিল আমার লক্ষ্য। তাছাড়া অনশনরত চাকরি প্রার্থীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছিল দ্রুত।

ওই রিপোর্ট প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আসিফ বলেন, রিপোর্টে আমার বিরুদ্ধে পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। তারপর সেটাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে টার্গেটেড প্রোপাগান্ডা। গণ-অভ্যুত্থানের একজন ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে দায়িত্ব পালন করছি। ফলে শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক দাবি কিংবা সমস্যায় এগিয়ে যাওয়াটা আমার দায়িত্ব। আমি সে দায়িত্ব পালন করছি এবং ভবিষ্যতেও করবো। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া প্রার্থীরা গেজেটভুক্ত করার দাবিতে অনশনে
  • পিএসসিকে চাপ দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে: উপদেষ্টা আসিফ