যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব ট্রাম্পের, শিগগিরই লাভজনক বাণিজ্য চুক্তির কথা বললেন মোদি
Published: 14th, February 2025 GMT
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। এএফপির খবর বলছে, ট্রাম্প ভারতে যুদ্ধবিমান বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছেন ট্রাম্প। আর মোদি দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হবে বলে জানিয়েছেন।
সাক্ষাতের পর মোদির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘এ বছরের শুরুতে ভারতে আমরা লাখ লাখ ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি বাড়াচ্ছি। আমরা ভারতে এফ-থার্টি ফাইভ যুদ্ধবিমান বিক্রির দিকে এগোচ্ছি।’
ভারত প্রভাবশালী একটি ক্লাবে যুক্ত হবে। এতে ন্যাটোর মিত্রদেশ ইসরায়েল ও জাপানও থাকবে। এই ক্লাব ভুক্ত দেশগুলো এফ-থার্টি ফাইভ বিমান কেনার অনুমতি পাবে। এ ধরনের বিমান সুপারসনিক গতিতে শনাক্তকরণ ছাড়াই কাজ করতে পারে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি বলেন, দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হবে বলে।
এ সময় তিনি তেল ও গ্যাসের ওপর গুরুত্ব দেন। শুল্কে ছাড়, নতুন ব্যবসায়িক চুক্তি এবং চীনের সঙ্গে সহযোগিতার সম্ভাবনা বাণিজ্য যুদ্ধ রুখে দিতে পারে বলে প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন মোদি।
হোয়াইট হাউসে মোদিকে স্বাগত জানান ট্রাম্প। সাক্ষাতের কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি দেশের আমদানি পণ্যে শুল্ক আরোপের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের উষ্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে সে সময় ট্রাম্প ভারতকে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘খুব বড় অপব্যবহারকারী’ বলে অভিহিত করেছিলেন। আর ওই সময় ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর আরোপিত শুল্কের প্রভাব পড়েছিল ভারতে।
ওভাল অফিসে মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ট্রাম্প বলেন, ‘তারা (ভারত) আমাদের কাছ থেকে প্রচুর তেল ও গ্যাস কিনতে যাচ্ছে। আমরা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চমৎকার বাণিজ্য চুক্তি করতে যাচ্ছি।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভারতীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে মোদির প্রতিনিধি দল ট্রাম্পকে সম্ভাব্য কী প্রতিশ্রুতি দেবে, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছিল। এর মধ্যে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি), যুদ্ধযান ও জেট ইঞ্জিন ক্রয় বাড়ানোর বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের পাশে বসে মোদি বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছ থেকে যে ব্যাপারটি শিখেছি এবং গভীরভাবে যেটির প্রশংসা করি তা হলো— তিনি জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখেন। আর তাঁর মতো আমিও ভারতের জাতীয় স্বার্থকে সবকিছুর ওপরে রাখি।’
এই সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে মার্কিন কৃষিপণ্য রপ্তানি , পারমাণবিক শক্তিতে বিনিয়োগের জন্য চুক্তি হবে বলে প্রত্যাশা করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম এবং রাসায়নিকসহ বিভিন্ন খাতে শুল্ক কমানো হতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র বলেছে, এসব কিছুই ট্রাম্পের জন্য মোদির উপহার হবে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতীয় কর্মকর্তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা এই বছরই একটি চুক্তি হবে বলে আশা করছেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘খুব শিগগিরই বড় বাণিজ্য চুক্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছি।’ ট্রাম্পের সহকারী বলেছেন, ভারতে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি বিক্রির মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে চান মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে ভারতের কাছ থেকে আরও সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের অনেক অভিবাসী রয়েছে। ভারতীয়দের বড় একটি অংশ প্রযুক্তি শিল্প খাতে কাজের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমায়। অনেকে অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশ করে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
গলার কাঁটা পানি শোধনাগার
বিয়ানীবাজার পৌরসভার গলার কাঁটায় পরিণত হয়েছে সেখানে স্থাপিত পানি শোধনাগার প্লান্টটি। দুই বছর ধরে পুষতে থাকা এই প্রকল্পকে কীভাবে লাভজনক প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ খুঁজছেন সংশ্লিষ্টরা। পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা এই পানি শোধনাগার প্লান্ট উদ্বোধন করা হয় ২০২৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধনের পর এই প্রকল্প থেকে গত ২৬ মাসে এক টাকাও আয় করতে পারেনি পৌরসভা। উল্টো এই সময়ে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ বিল ও আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করা হচ্ছে এর পেছনে। পৌর সূত্র মতে, ২৬ মাসে এ ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে স্থাপিত পানি শোধনাগারটির পানির প্রতি পৌরবাসীর কোনো আগ্রহই নেই। এখানে প্রাকৃতিকভাবে পানি সহজে আহরণ করা যায় বলে কৃত্রিম উৎসে পরিশোধিত পানির চাহিদা একেবারে নেই বললে চলে। যার কারণে শোধনাগারটি কোনো কাজেই আসছে না। উদ্বোধনের পর থেকে অকার্যকার হয়ে আছে এটি।
স্থানীয় পৌরবাসীর ভাষ্য, প্রাকৃতিকভাবে বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির উৎস থাকায় শোধনাগারের পানির প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই। যারা এসব প্রকল্পের কাজ করেন, তারা নিশ্চয় প্রতিটি স্থানের ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কে জানেন। যেখানে স্বাভবাবিক উৎস থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে সহজে, সেখানে এমন একটি প্রকল্প যে অপরিকল্পিতভাবে করা– তা বোঝাই যায়।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের বোঝায় পরিণত হওয়া এই প্রকল্পটিকে ঘিরে সৃষ্ট সমস্যা উত্তরণে এবং এটিকে আর্থিকভাবে লাভজনক প্রকল্পে পরিণত করার উপায় খুঁজছে পৌরসভা। এর পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে পানি সরবরাহের পাইপলাইন সম্প্রসারণ করা বা পানি শোধনাগারটি লিজ দেওয়ার মতো বিষয় নিয়ে ভাবছে কর্তৃপক্ষ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শোধনাগারটিতে উৎপাদিত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার লক্ষ্যে পৌরসভার আংশিক এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল ২২ কিলোমিটার পাইপলাইন। এ পাইপলাইন থেকে পৌর শহর, শহরতলি ও আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা কোনো সংযোগ নেননি। বাণিজ্যিক সংযোগ না থাকায় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পুরো প্রক্রিয়াটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে, যার কারণে প্রতি মাসে প্রায় ৩০ হাজার টাকার বাড়তি ব্যয়ের চাপ নিতে হচ্ছে পৌরসভাকে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই টানাটানি তার ওপর বাড়তি ব্যয়।
সিলেট বিভাগের ১৯টি পৌরসভার উন্নয়নের লক্ষ্যে বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হয় পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র আব্দুস শুকুরের সময়ে।
২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর এ প্লান্ট স্থাপনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। সে সময় এ প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে পৌর পরিষদের মাসিক আলোচনায় কয়েকজন কাউন্সিলর আপত্তি তুলেছিলেন। সে সময় তাদের আপত্তি আমলেই নেননি তৎক্ষালীন মেয়র আব্দুস শুকুর।
২০২৩ সালে শোধনাগারটিকে কার্যকর করতে পৌরসভার ২০০ পরিবারকে বিনামূল্যে পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন সাবেক মেয়র ফারুকুল হক। তবে পৌরসভার সে উদ্যোগেও আগ্রহ দেখায়নি পৌরবাসী। যার কারণে উন্নয়নের নামে সরকারের ৯ কোটি টাকা গচ্চার পাশাপাশি পৌরসভা প্রতি মাসে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
অকার্যকর হয়ে পড়ে থাকা পানি শোধনাগারটি বন্ধের সুযোগ নেই জানিয়ে পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গোলাম মুস্তফা মুন্না বলেন, এটি স্থাপন করার আগে এর প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, সেটি সেভাবে সার্ভে করা হয়নি, যার ফলে বর্তমান পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং পৌরসভা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এই পানি শোধনাগারটিকে লাভজনক খাতে নিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেতে কাজ করা হচ্ছে। দৈনিক ৪ লাখ লিটার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার মতো প্রয়োজনীয় পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি। পুরো পৌরসভাকে পানি সরবরাহের আওতায় নিয়ে আসতে হলে অবশিষ্ট অংশে পাইপলাইন স্থাপন করতে ব্যয় হবে ৩ কোটি টাকা।
এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরও বলেন, পুরো পৌরসভায় পানির সরবরাহ লাইন স্থাপন করা গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবে গভীর ও অগভীর নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করা সম্ভব।