সিঙ্গাপুরে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী অঞ্জনী সিনহা তার সিনেটের অনুমোদনের শুনানিতে রীতিমতো নাকানি-চুবানি খেয়েছেন। সিঙ্গাপুর সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাকে ‘অযোগ্য’ বলে আখ্যা দিয়েছেন এক সিনেটর।

বুধবার সিনেটর ট্যামি ডাকওয়ার্থ সিঙ্গাপুরের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় দ্বীপরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ডা.

সিনহাকে প্রশ্ন করেন। এক পর্যায়ে ডাকওয়ার্থ বলতে বাধ্য হন, ডা. সিনহা এই পদের জন্য ‘অযোগ্য’ এবং তাকে ‘কিছু হোমওয়ার্ক’ করতে হবে। এই মতবিনিময় তখন থেকে সিঙ্গাপুরে ভাইরাল হয়ে যায় এবং অনলাইনে সমালোচনামূলক মন্তব্য আসে।

ভারতে জন্মগ্রহণকারী, ডা. সিনহা একজন অর্থোপেডিক এবং স্পোর্টস মেডিসিন সার্জন। তিনি বর্তমানে ফ্লোরিডায় বসবাস করেন এবং নিউ ইয়র্কে বেশ কয়েকটি ক্লিনিক চালু করেছিলেন। ডা, সিনহার মনোনয়নের ঘোষণা প্রথম মার্চ মাসে ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন। ট্রাম্প তাকে ‘অত্যন্ত সম্মানিত উদ্যোক্তা’ হিসেবে প্রশংসা করেছিলেন।

সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির নিশ্চিতকরণ শুনানির সময় রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম ডা. সিনহাকে ‘এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বন্ধু’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।

শুনানিতে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সিনেটর মিসেস ডাকওয়ার্থ ডা. সিনহাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। এর উত্তরে সিনহা প্রথমে ৮০ বিলিয়ন এবং পরে ১৮ বিলিয়ন বলেছিলেন। 

সিনেটর ডাকওয়ার্থ বলেন, সঠিক উত্তর হচ্ছে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার।

এরপর সিনহার কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি সিঙ্গাপুরবাসীকে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কীভাবে রাজি করাবেন। জবাবে সিনহা বিভিন্ন উত্তর দিয়েছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত বলেন, ‘সংলাপ এখনো শেষ হয়নি।’

ডাকওয়ার্থ তাকে সিঙ্গাপুরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান নেশনস অ্যাসোসিয়েশন (আসিয়ান) আঞ্চলিক ব্লকের দেশটির আসন্ন চেয়ারম্যান পদ এবং সিঙ্গাপুরে মার্কিন নৌবাহিনীর উপস্থিতি সম্পর্কেও প্রশ্ন করেছিলেন। এর কোনোটিরই যথাযথ উত্তর দিতে পারেননি সিনহা।

শুনানি শেষে ডাকওয়ার্থ বিরক্ত হয়ে বলেন, “আমার মনে হচ্ছে আপনি এটাকে গুরুত্বের সাথে নিচ্ছেন না। আপনি মনে করেন এটি একটি গ্ল্যামার পোস্টিং, যেখানে আপনি সিঙ্গাপুরে একটি সুন্দর জীবনযাপন করতে যাচ্ছেন। অথচ আমাদের যা দরকার তা হচ্ছে এমন একজন যিনি আসলে কাজটি করতে পারেন। আপনি বর্তমানে এই পোস্টিংয়ের জন্য প্রস্তুত নন এবং আপনাকে কিছু হোমওয়ার্ক করতে হবে।”

শুনানির এই ভিডিও পোস্ট হওয়ার পরে ট্রাম্পের এই পছন্দের ব্যক্তির তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

একজন মন্তব্যকারী লিখেছেন, “কোনটি সবচেয়ে খারাপ অপমান, শুল্ক নাকি তাকে সিঙ্গাপুরে রাষ্ট্রদূত হিসেবে রাখা?”

আরেকজন লিখেছেন, “এই লোকটি রাষ্ট্রদূত হওয়ার জন্য অনেক বেশি বিব্রতকর।”
 

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ল ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে