হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা ও মব সন্ত্রাসকে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা বলে মনে করেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তবে মিথ্যা মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দিতে ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা এ কথা বলেন। গত এক বছরে আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে যেসব কাজ হয়েছে, সংবাদ সম্মেলনে সেসব তুলে ধরেন তিনি।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘মিথ্যা মামলা নিয়ে আমার বিরক্তি ও আপত্তি বহুবার প্রকাশ করেছি। বারবার আপনাদের বলি, আমাদের সরকারের আমলে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক যে দুটি ঘটনা ঘটেছে, একটা হচ্ছে মিথ্যা মামলা, মামলা হতে পারে, কিন্তু মিথ্যাভাবে লোককে ফাঁসানো, মানে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা; আরেকটা হচ্ছে জব জাস্টিস। মব সন্ত্রাস আমি বলি। এই দুইটা আমাদের খুবই পীড়িত করে।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, মিথ্যা মামলা ঠেকানোর জন্য বা এই মামলা থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির সংশোধন করা হয়েছে। পুলিশ চূড়ান্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা না করে একটা প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করে আদালতে দেবেন। আদালত যদি দেখেন, এখানে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, কিন্তু ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য সাক্ষ্য আছে, বাকিদের বিরুদ্ধে নেই, তাহলে আদালত তখনই ছাড় করে দিতে পারবেন। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের কাজের জন্যও আইন মন্ত্রণালয়কে দোষারোপ করা হয় উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্য কারও ব্যর্থতার জন্য আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমরা টিম হিসেবে কাজ করি এটা সত্যি, কিন্তু এক মন্ত্রণালয় অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারে না।’

নির্বাচন কবে হবে, সে বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, জাস্ট অপেক্ষা করেন, কিছুদিনের মধ্যে ঘোষণা করা হবে।

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার

হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে আইন উপদেষ্টা বলেন, পর্যালোচনার পর ১৫ হাজারের বেশি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সাইবার আইনের অধীনে ৪০৮টি ‘স্পিচ অফেন্স’–সংক্রান্ত মামলা এবং জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে করা ৭৫২টি হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব মামলা প্রত্যাহারের কারণে কয়েক লাখ রাজনৈতিক নেতা, কর্মী ও স্বাধীন মতের মানুষ হয়রানি থেকে রেহাই পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আইন উপদেষ্টা তাঁর মন্ত্রণালয়ের এক বছরের কাজের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে আইনটিকে ন্যায়বিচারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হয়েছে। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগ অধ্যাদেশ জারি, দেওয়ানি কার্যবিধি সংশোধন, ফৌজদারি বিধি সংশোধন, মামলাপূর্ব বাধ্যতামূলক মধ্যস্থতার বিধান সংযোজন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালায় সংশোধন, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ জারি, বিবাহ নিবন্ধন বিধিমালা সংশোধন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস গঠন বিধিমালা, ২০২৫ এবং জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের আইন ও বিচার বিভাগে পদায়নে বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরেন উপদেষ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইন উপদ ষ ট ন উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ