জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য
Published: 31st, July 2025 GMT
জর্ডানের ওয়াদি রাম অঞ্চলের জাওয়াইদেহ উপজাতি, যারা ঐতিহ্যবাহী বেদুইন জীবনধারার ধারক, তাদের সমৃদ্ধ মৌখিক সাহিত্যের জন্য পরিচিত। গল্প, কবিতা এবং গানের মাধ্যমে তারা তাদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ধারা রক্ষা করে। তবে আধুনিকতার প্রভাবে তাদের যাযাবর জীবনধারা পরিবর্তিত হওয়ায়, এই মৌখিক ঐতিহ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
জাওয়াইদেহদের মৌখিক সাহিত্য তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আগে, যখন তারা যাযাবর জীবনযাপন করত, তখন রাতের বেলায় আগুনের চারপাশে একত্র হয়ে গল্প বলা, কবিতা আবৃত্তি করা এবং গান গাওয়া তাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। এই সাহিত্য রূপগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এর বৈচিত্র্য, অভিযোজন ক্ষমতা এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রকৃতি। এর ফলে আধুনিক বিষয়বস্তু, ধারণা ও ভাষাকে ঐতিহ্যবাহী কাঠামোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়, যা এর দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
জাওয়াইদেহদের মৌখিক সাহিত্যে সম্মান একটি কেন্দ্রীয় থিম। যুদ্ধক্ষেত্রের সাহস, পারিবারিক বাধ্যবাধকতা এবং রোমান্টিক প্রেমসহ বিভিন্ন থিমের মধ্যে সম্মানের অনুভূতি বারবার প্রকাশিত হয়। এটি বেদুইন সমাজে সম্মানের ব্যাপকতা ও কর্তৃত্বের একটি ইঙ্গিত, যা কেবল দৈনন্দিন জীবনে নয়, বরং সাহিত্যিক বিষয়বস্তু, চিত্রকল্প ও সৃজনশীল ভাষাতেও প্রতিফলিত।
জাওয়াইদেহদের মৌখিক সাহিত্যে লিঙ্গভেদে কাজের প্রকৃতি ও শৈলীতে একটি স্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নারীরা সাধারণত গান আবৃত্তি করেন, যার মধ্যে অনেক গানই মহিলাদের গার্হস্থ্য দায়িত্ব বা বিভিন্ন উদ্যাপনের (যেমন খতনা ও বিবাহ) সঙ্গে সম্পর্কিত। এই অনুষ্ঠানগুলো প্রায়ই লিঙ্গ-বিভাজিত হওয়ায়, এই গানগুলো মূলত অন্য নারীদের দ্বারাই শোনা হয়। অন্যদিকে পুরুষেরা সাধারণত গল্প ও কবিতা আবৃত্তি করেন। এই ভিন্নতা ইঙ্গিত করে যে বেদুইন সমাজে মৌখিক ঐতিহ্য লিঙ্গভিত্তিক ভূমিকা এবং সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে সম্পর্কিত।
জাওয়াইদেহদের মৌখিক ঐতিহ্য বর্তমানে আধুনিকতার প্রভাবে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তারা স্থায়ীভাবে সিমেন্টের ছোট ছোট বাড়িতে বসবাস করছে, যদিও তারা এখনো তাঁবু ব্যবহার করে। শিক্ষাব্যবস্থার বিস্তার, উচ্চশিক্ষার সহজলভ্যতা, বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং যাযাবর জীবন থেকে দূরে সরে আসার এই কারণগুলো গল্প, কবিতা ও গানগুলোর স্থানান্তরের জন্য ব্যবহৃত পুরোনো প্রথাগুলোর বিলুপ্তিতে অবদান রাখছে।
যদিও জাওয়াইদেহ পরিবার, এমনকি ২০০৬ সালেও, আধুনিকতার সঙ্গে পরিচিত ছিল, তবু তারা তাদের মধ্যে গল্প, কবিতা এবং গানের একটি বিশাল ভান্ডার ধারণ করত। পরিবারের প্রবীণ সদস্যরা, যেমন একজন সালাম সাবাহ জাওয়াইদেহ, যিনি পরিবারের সাহিত্যিক ঐতিহ্যের অটল কর্তৃপক্ষ হিসেবে বিবেচিত, এই ঐতিহ্যের ধারক। সালাম সাবাহের মতো ব্যক্তিরা ব্যক্তিগতভাবে গভীর অনুরণনকারী গল্প ও কবিতা রচনা করলেও, বেশির ভাগ কাজই আরও সাধারণ বা প্রমিত বর্ণনামূলক ভাষা ব্যবহার করে। এর কারণ সম্ভবত এই যে আবৃত্তিকারী ব্যক্তি এবং শ্রোতারা প্রায়ই একই বর্ধিত পরিবার বা উপজাতির সদস্য হওয়ায়, গল্পের ব্যক্তিগত তাৎপর্য বিদ্যমান প্রেক্ষাপটের মধ্যেই নিহিত থাকত।
প্রাচীন বেদুইন জীবনের ছন্দ মৌখিক সাহিত্যকে বলা ও পুনরায় বলার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করত, কিন্তু আধুনিক জীবনযাত্রার কারণে এই চর্চা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তরুণ প্রজন্ম এই সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হলেও, তারা এর গভীর জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। মৌখিক সাহিত্যের সংস্কৃতি জাওয়াইদেহ পরিবারের মধ্যে এখনো বিদ্যমান, তবে এর সংক্রমণ প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এই সাহিত্যের টিকে থাকার জন্য নথিভুক্তকরণ অপরিহার্য বলে মনে করা হয়। যদিও মৌখিক রূপান্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, লেখার মাধ্যমে রেকর্ড করা হলে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। তবে মৌখিক সাহিত্যকে লিখিত রূপে সংরক্ষণ করার প্রক্রিয়াটি তার সহজাত মৌখিকতাকে ব্যাহত করতে পারে, কারণ এতে কাজের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকৃতি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। আদর্শগতভাবে, অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং এই সাহিত্যের মৌখিক প্রকৃতি বজায় রাখতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে অনেক বেদুইন, বিশেষ করে নারীরা, রেকর্ড করতে আপত্তি করেন।
জাওয়াইদেহ বেদুইনদের মৌখিক সাহিত্য তাদের পরিচয়ের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। আধুনিকতার চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, তারা তাদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। এটি কেবল তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি নয়, বরং একটি প্রাচীন মানবসভ্যতার মূল্যবান অংশ, যা সংরক্ষণের যোগ্য।
জাওয়াইদেহদের মৌখিক সাহিত্যের কয়েকটি নমুনা:
১.ও আমার পরিবার, তোমাদের জন্য আমার মন কাঁদে
যদি আমার হৃদয় পাথর হতো, তবে তোমাদের সাথে দেখা করার জন্য নিচে নেমে যেত।
ওহে পাহাড়ের চূড়ার গাছ,
দিনের গরমক্ষণে ঘুমিয়ে আছে হরিণ, বৃষ্টির শব্দ গাছে আছড়ে পড়ছে।
ওহে পাহাড়ের চূড়ার বন,
সে খুব সুন্দরী, সব পুরুষ নেকড়ের মতো ছাগলকে অনুসরণ করার মতো করে তার পদচিহ্ন অনুসরণ করে।
২.[দামেস্কের (বর্তমান সিরিয়া) এক তরুণ রাজপুত্র মরুভূমি দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি এক অসাধারণ সুন্দরী বেদুইন মেয়েকে দেখে তার প্রেমে পড়েন। রাজপুত্র মেয়েটির বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব দিলেন এবং মেয়েটির বাবা রাজি হলেন। এরপর রাজপুত্র তাকে নিজের সঙ্গে দামেস্কে নিয়ে গেলেন।
তাঁরা এক জমকালো প্রাসাদে বসবাস করতে লাগলেন। রাজপুত্র তাঁকে সুন্দর পোশাক এবং দামি গয়না দিতেন। কিছুকাল পর, একদিন রাজপুত্র প্রাসাদের বাইরে হাঁটছিলেন, তখন তিনি মেয়েটিকে গুনগুন করে গাইতে শুনলেন—]
যে ঘরে বাতাস বয়
সেই ঘরই আমার কাছে প্রাসাদের চেয়ে প্রিয়।
রাস্তার ধারে ঘেউ ঘেউ করা কুকুরের দল—
তারা আমার কাছে পোষা বিড়ালের চেয়ে আপন।
আবায়া পরে শান্তিতে ঘুমানো—
আমার কাছে রেশমি শাড়ির চেয়েও আরামদায়ক।
এক টুকরা রুটি খাওয়া—
তা আমার কাছে গোটা এক রুটির চেয়েও তৃপ্তিকর।
[রাজপুত্র বুঝতে পারলেন যে মেয়েটি দামেস্কে, তার জীবনে সত্যিই সুখী ছিল না। তিনি তাকে ভালোবাসতেন এবং তাকে সুখী দেখতে চাইতেন, তাই তিনি তাকে মরুভূমিতে তার বাবার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন। রাজপুত্র তাকে আরও সুন্দর পোশাক, উট এবং অন্যান্য সম্পদ উপহার দিলেন এবং তারা শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নিলেন। বেদুইন মেয়েটি মরুভূমিতে তার আগের জীবনে ফিরে গেল এবং রাজপুত্র প্রাসাদে তার জীবনে ফিরে এলেন, কারণ, তিনি তাকে এতটাই ভালোবাসতেন যে তাকে যেতে দেওয়ার মতো মানসিক শক্তিও রেখেছিলেন।]
৩.[বেদুইনরা পানি আর ঘাসের খোঁজে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। এক সময়ে, দুটি পরিবার ছিল, যাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ছিল। বেদুইনরা এ ধরনের সম্পর্ক, বিশেষ করে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক, খুব শ্রদ্ধার চোখে দেখে।
এই দুটি পরিবারের একটির নাম ছিল আল-মাহাদি। এই পরিবারের পিতার তিন কন্যা ছিল, আর তার প্রতিবেশীর তিন পুত্র। সেই তিন মেয়ের একজন ছিল খুবই সুন্দরী এবং প্রতিবেশীর ছেলেদের একজন তার প্রেমে পড়েছিল এবং তার ভালোবাসা পাওয়ার চেষ্টা করছিল। যদিও এটা প্রচলিত রীতিনীতির মধ্যে পড়ত না, তবু সে ভালোবাসার সুযোগ নিতে চেয়েছিল।
মেয়েটি নিজের মাকে সবকিছু জানায়, কারণ সে চায়নি তার পরিবার লজ্জিত হোক। মা বিষয়টি জানায় আল-মাহাদিকে। আল-মাহাদি পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝতে পারেন, এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে ‘সেজাহ’ নামক একধরনের খেলা খেলার অজুহাতে তার তাঁবুতে যান। খেলার সময় তিনি প্রতিবেশীকে বলেন, ‘তুমি চলে যাও, নয়তো আমি চলে যাব।’
এই কথা শুনে প্রতিবেশী বুঝলেন খারাপ কিছু একটা ঘটেছে, যদিও বিস্তারিত জানতেন না। তিনি সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিলেন—তাঁবু ও পশুপাল নিয়ে রাতের আঁধারে অন্য স্থানে চলে যাবেন।
পরদিন সকালে আল-মাহাদি জানতে পারেন যে প্রতিবেশী চলে গেছেন।
নতুন জায়গায় পৌঁছানোর পর প্রতিবেশী একে একে তার তিন ছেলেকে ডেকে বলেন: ‘আমার প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যার কারণ কী? সত্যি কথা বলো।’
যে ছেলে আল-মাহাদির মেয়েকে ভালোবাসত, সে স্বীকার করে নেয়, ‘হে পিতা, আমি তার এক মেয়েকে ভালোবাসি।’
বিষয়টি শুনে বাবা ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, ‘আজ থেকে আমি আর তোমার বাবা নই; তুমি আর আমার ছেলে নও। তুমি আমাদের সম্মান ধূলিসাৎ করেছ। তুমি এখানে আর থাকতে পারবে না। এখনই চলে যাও।’
ছেলেটি বাধ্য হয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর আল-মাহাদি জানতে পারেন, প্রতিবেশী তার ছেলেকে নির্বাসনে পাঠিয়েছেন—এটা তিনি বুঝলেন, তার প্রতি একধরনের গভীর সম্মান দেখানো হয়েছে।
কারণ, প্রতিবেশী তাদের সম্মান ও পারিবারিক সম্পর্ককে এতটা গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ছেলেটি ও মেয়েটি একে অপরকে ভালোবাসত—এই কথা বিবেচনা করে, আল-মাহাদি শেষ পর্যন্ত তার মেয়েকে সেই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেন।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি আরও গভীর সম্মান প্রদর্শন করেন তার প্রতিবেশীর প্রতি—যিনি আগেই তাকে সম্মান দেখিয়েছিলেন।
এই মহৎ সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রতিবেশী একটি কবিতা রচনা করেন, যাতে বলা হয়—]
আমি ধৈর্য ধরেছি, কিন্তু আল-মাহাদি আমার থেকেও বেশি ধৈর্যশীল,
কারণ তিনি আমার পুত্রকে বহু বছরের গ্লানির হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
তিনি যখন বুঝলেন যে তার প্রতিবেশীর ছেলের সঙ্গে মেয়ের অনুচিত সম্পর্ক হচ্ছে,
তখন তিনি তার স্ত্রীদেরও বলেছিলেন, যেন কেউ এটা নিয়ে আলোচনা না করে।
যদি পাহাড় থেকে নেমে আসা বৃষ্টির জল উপত্যকায় নামে,
তাহলে সেই সমৃদ্ধি তোমাদের, আমাদের নয়।
তোমাদেরই জল, আমাদের নয়।
বৃষ্টির পর সমতলভূমি ঘাসে ভরে যায়, তোমাদের উটরা সেখানে চরে বেড়াতে পারে,
কেউ তাদের ধরবে না—কারণ তুমি একজন শেখের (নেতার) মতো শক্তিশালী।
সবাই জানে, তুমি একজন সম্মানিত শেখের মতো; তোমার সুনাম অতুলনীয়,
এবং আমাদের পরিবার বহু বছর একসাথে শান্তিতে বসবাস করবে।
৪.[বেদুইন কবিতাগুলো প্রায় সব সময়ই শুরু হয় উট, মরুভূমি আর প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা দিয়ে। তবে একবার, এক বেদুইন ব্যক্তি তার বন্ধুকে চ্যালেঞ্জ দিলেন—এমন একটি কবিতা লিখতে হবে, যেখানে এসব সাধারণ বিষয় থাকবে না। তিনি কবিকে বললেন, ‘তুমি শুধু কফি নিয়ে একটি কবিতা লিখো, অন্য কিছু নয়।’
ঘরের মালিকের এক অপূর্ব সুন্দরী বোন ছিল, যে তার সঙ্গেই বসবাস করত। তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তুমি এটা করতে পারো তাহলে আমি তোমাকে আমার বোনের সঙ্গে বিয়ে দেব।’
কবি তো বোনটির প্রেমে পড়েই ছিলেন, তাই সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল। তার কবিতা শুরু হলো এভাবে—]
প্রতিটি অতিথির জন্য তিনবার করে কফি ঢালো, আর দয়া করে উদার হও।
কফির বীজ যখন আগুনে ভাজবে, ধীরে করো—তবে পুড়িয়ে ফেলো না,
কারণ সেই গন্ধে চারপাশ মাতোয়ারা হয়ে উঠবে।
তারপর সেই বীজ ‘নিগির’-এ দাও আর পিষে নাও;
সকলে ভালোবাসে সেই শব্দ—যখন মুসলে কফি গুঁড়ো হয়।
কফির পাত্রটি সাদা, ঠিক যেন একখানা মাশরুম,
আর যখন কফি ঢালা হয়, তার ধারটি যেন এক মিষ্টি হাসির বাঁক।
কফির রং হতে হবে লালচে-বাদামি, ঠিক যেন ক্ষত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তের ধারা।
[ঘরের মালিক বুঝলেন কবি খুবই বুদ্ধিমান এবং সে এই চ্যালেঞ্জে জিতে যাবে নিশ্চিত। তাই তিনি নিজের বোনকে ডাকলেন এবং বললেন, ‘তোমার সবচেয়ে সুন্দর পোশাক পরে এসো।’ ভেবেছিলেন, কবি যখন তার বোনকে দেখবে, তখন প্রেমে এতটা বিভোর হয়ে যাবে যে কফির বিষয়ে মনোযোগ হারাবে, আর কবিতাটি চ্যালেঞ্জের সীমানা ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু যখন কবি বোনটিকে দেখল, সে ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠল—তবুও সে কবিতা চালিয়ে গেল—]
আমার প্রেয়সীকে আমি অনুভব করি,
এই মুহূর্তে যদি তার সঙ্গে কফি খেতে পারতাম, কতই না ভালো হতো।
যখন আমরা পাশাপাশি বসি,
সেই মুহূর্ত যেন বাগান থেকে গোলাপ ছিঁড়ে নেওয়ার মতো মিষ্টি।
[এবার ঘরের মালিক অভিযোগ করলেন, ‘তুমি তো কেবল কফি নিয়ে লিখলে না—তুমি প্রেমিকের কথা বলেছ। এই চ্যালেঞ্জের নিয়ম ভেঙেছ!’ কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন—কবি সত্যিই তার বোনকে ভালোবাসে। অবশেষে, সেই কবির সঙ্গে তার বোনের বিয়ে দেন।]
৫.সালাম এই কথাগুলো হৃদয় থেকে বলে,
যা উত্তাল সমুদ্রের মতো অশান্ত।
কারণ আমার হৃদয়ের গভীরে অনেক কিছু তোলপাড় করছে,
সে কারণেই আমার চুল পেকে যাচ্ছে।
আমি সেই মেয়েটির কাছে পৌঁছানোর পথ খুঁজছি,
যে তার চোখ দিয়ে আমাকে মোহিত করেছে।
সে যেন আমাকে ছুরি দিয়ে খুন করে,
আর বন্দুক দিয়ে গুলি ছোড়ে—
আমার হাড় ভেঙে চুরমার করে দেয়,
যাতে আমি আর দাঁড়াতে না পারি।
আমার লালা শুকিয়ে গিয়েছে, মুখ টক স্বাদ,
এবং আমার ঠোঁট ফেটে গেছে।
যদি আমি তোমাকে আমার হৃদয়ের গোপন কথা বলি,
হয়তো তুমি আমার মুখেই দেখতে পাবে সেসব কথা লেখা।
আমি সেই তরুণী মেয়েটিকে ভালোবাসি,
যার স্তন ছোট—
সে যেন একটানা দৌড়ানো বাদামি ঘোড়া,
যে পালের সামনে ছুটে চলে।
আমি যাকে ভালোবাসি
তার মতো কেউ নেই—
সে হলো আকাশের সবচেয়ে উঁচু, উজ্জ্বলতম তারা।
৬.শস্য সংগ্রহ করো, ডাঁটাগুলো লম্বা বলে চিন্তা করো না।
অনেক আঁটি বাঁধো, মনে রেখো এই শস্য তুমি মিষ্টি মেয়েদের জন্য জড়ো করছ।
আমরা শস্যের শত্রু, আর আমরা তাদের জয় করব।
আমার কাঁচি চমৎকার, পরিষ্কার করলে তা ঝলমল করে,
এর নাম আবু রুজা, আমি গাজা থেকে এনেছি।
ডাঁটাগুলো খুব লম্বা।
আমাদের পা তুলে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
এই সুন্দরী মেয়েটি রাখালের জন্য, তোমার জন্য নয়,
তাই তুমি নিজের কাজে মন দাও।
৭.একজন মানুষ জন্ম থেকেই অন্ধ,
সে কখনো কিছুই দেখেনি।
তার নাম সুলাইমান,
জাওয়াইদেহ গোত্রের মানুষ।
সে একজন কবি,
এবং সে সাদা মানুষ আর কালো মানুষকে চিনতে পারে।
এটা ঈশ্বরপ্রদত্ত এক উপহার।
সে সৌন্দর্য ভালোবাসে,
আর এই কবিতায় সে তার প্রেমিকাকে বর্ণনা করে—
প্রতিটি কবিতা শেষ করার পর,
আমি আমার অনুভব আর হৃদয় দিয়ে আরেকটি কবিতা রচনা করি।
আমার উটটি অসাধারণ, সে কখনো ক্লান্ত হয় না,
চলার পথ যতই সহজ বা কঠিন হোক।
এই শক্তিশালী উটে চড়ে আমি গর্বিত,
যদি কেউ সাহায্যের জন্য কাঁদে, আমি দ্রুত সেখানে পৌঁছাতে পারি।
আমার প্রেমিকার বাহু চমৎকার আর সরু,
আমি আশা করি সে আমার প্রতি সদয় হবে।
তার কাঁধ পর্যন্ত চুল, তার কালো চোখ এত সুন্দর যে
যে দেখে তারই মনকে আঘাত করে।
তার ট্যাটুগুলো দক্ষ হাতে লেখা,
সাদা চামড়ার কাগজে লেখা অক্ষরের মতো।
তার স্তনজোড়া গোলাকার,
ঠিক যেন কফির কাপ।
তার দাঁত সাদা,
মেঘ থেকে পড়া শিলার মতো।
আমি শপথ করে বলছি, আমি এখানে যা বর্ণনা করেছি,
তার কিছুই আমি দেখিনি।
সে ভালো, দয়ালু এবং কোমল
আর সে বুদ্ধিমতী।
তার ঘ্রাণ যেন বৃষ্টির পর ভেসে আসা বাতাসের মতো,
সে ঘ্রাণ আমাকে ব্যাকুল করে তোলে।
তার নাম সেই সময়ের মতোই,
যা প্রতি মাসে আসে—বিচারের দ্বিতীয় দিন।
আমিই একমাত্র নই যে তাকে ভালোবাসি,
সবাই তার ভালোবাসায় ভুগছে, এমনকি অন্ধ মানুষটিও।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এই স হ ত য র আম র প র আম র ক ছ পর ব র র আল ম হ দ আম র হ র জ বন স ন দর ন জ বন র প রক র জন য আম দ র ব দ ইন প রক ত র একট বসব স
এছাড়াও পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।
আরো পড়ুন:
ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০
বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী
প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন।
দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।
হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী।
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”
শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।
লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।
স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, “হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”
রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?”
থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”
বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/মাসুদ