পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ফেরত চায় নির্বাচন কমিশন
Published: 10th, July 2025 GMT
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম প্রতিরোধে কোনো আসনের পুরো নির্বাচন বন্ধের ক্ষমতা ফেরত চায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ বিষয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আগে (অনিয়ম হলে) পুরো আসনের নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা আমাদের ছিল। সেটি পরে বাদ দেওয়া হয়। এখন শুধু কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা যায়। আমরা আবার পুরো আসনের ভোট বন্ধের ক্ষমতা ফেরত চাচ্ছি। এটা ফেরত পাওয়ার জন্য আমরা প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি এটা ফেরত পাব।’
যে ক্ষমতা হারিয়েছে ইসি
ইসিকে নির্বাচন বাতিল করাসংক্রান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৯১ ধারায়। ৯১ (এ) উপধারায় বলা ছিল, ইসি যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে নির্বাচনে বল প্রয়োগ, ভীতি প্রদর্শন, চাপ সৃষ্টিসহ বিভিন্ন বিরাজমান অপকর্মের কারণে যুক্তিযুক্ত, ন্যায়সংগত এবং আইনানুগভাবে নির্বাচন পরিচালনা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে না, তাহলে যেকোনো ভোটকেন্দ্র বা ক্ষেত্রমতো সম্পূর্ণ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচনের যেকোনো পর্যায়ে ভোট গ্রহণসহ নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ করতে পারবে।
আরপিওর এই ধারা পরে সংশোধন করা হয়। ওই সংশোধনী ২০২৩ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে পাস হয়। সংশোধনীতে ‘ইলেকশন’ শব্দের জায়গায় ‘পোলিং’ শব্দ স্থাপন করা হয়। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ইলেকশন’ শব্দ দিয়ে পুরো নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বোঝায়। অর্থাৎ তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়টা হলো ‘ইলেকশন’। আর ‘পোলিং’ হলো শুধু ভোটের দিন। ‘ইলেকশন’ শব্দটা থাকলে ভোটের আগেও পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইসি ভোট বন্ধ করতে পারত। কিন্তু সংশোধনী পাসের কারণে ইসির ক্ষমতা খর্ব হয়। সে শুধু ভোটের দিন ভোট স্থগিত করতে পারবে।
অন্যদিকে আরপিওর ৯১ (এ) ধারা নিয়ে অস্পষ্টতা ছিল। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফল ঘোষণার পর তা ইসির কাছে পাঠানো হয়। ইসি সচিবালয় গেজেট প্রকাশ করে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণা করার পর গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত ইসি ফলাফল স্থগিত বা বাতিল করতে পারবে কি না, সেটি পরিষ্কার ছিল না।
এ কারণে বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন এই বিধানের সঙ্গে আরেকটি উপধারা যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছিল। সেটা হলো, কোনো অনিয়ম, জোরজবরদস্তি, ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ এলে নির্বাচন কমিশন কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এরপর অভিযোগ দ্রুত তদন্ত করে সত্যতা পাওয়া গেলে কোনো ভোটকেন্দ্র বা পুরো আসনের ভোট বাতিল করে নতুন করে নির্বাচন দিতে পারবে।
তবে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভায় ইসির প্রস্তাবিত বিধানটিতে বদল এনে বলেছিল, যেসব ভোটকেন্দ্রে অভিযোগ আসবে, ইসি শুধু সেগুলোতে ভোটের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। সেভাবেই তখন আইনটি সংসদে পাস হয়। ফলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, কোনো ভোটকেন্দ্রের ফলাফল পক্ষপাতদুষ্ট হয়েছে মনে করলে ইসি শুধু নির্দিষ্ট ভোটকেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে নতুন নির্বাচন দিতে পারে।
এমতাবস্থায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের সংশোধনীর কারণে হারানো ক্ষমতা ফিরে পেতে চায় ইসি। আজ বৃহস্পতিবার ইসির সভায় এ নিয়ে আলোচনা হয়। আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে কমিশনের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে সংবাদ ব্রিফিংয়ে সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.
আজীবনের মামলা তথ্য সংযুক্তির চিন্তা
এ নির্বাচন কমিশনার জানান, প্রার্থীর মনোনয়নপত্রে সংযুক্ত হলফনামায় কিছু নতুন সংযুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলার বিবরণ শুধু ২০ বছর নয়, বরং সারা জীবনের তথ্য হলফনামায় যুক্ত করার বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে।
হালনাগাদ ভোটার তালিকার খসড়া শিগগির
গত ২০ জানুয়ারি শুরু হওয়া হালনাগাদ কার্যক্রমে প্রায় ৪৪ লাখ ৬ হাজার নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছেন। মৃত ভোটার শনাক্ত হয়েছে ২১ লাখের বেশি। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের আশা, আগামী সপ্তাহেই হালনাগাদ তালিকার খসড়া প্রকাশ করা সম্ভব হবে। নারী ও পুরুষ ভোটারের ব্যবধান কমে এসেছে। এটি এখন প্রায় ১৮ লাখে দাঁড়িয়েছে।
সীমানা পুনর্বিন্যাস চূড়ান্ত পর্যায়ে
৩০০টি আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ইসি জানিয়েছে, ২২১টি আসনের বিষয়ে কোনো আপত্তি আসেনি। কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর খসড়া প্রকাশ করা হবে। ব্রিফিংয়ে মো. সানাউল্লাহ বলেন, ভোটার সংখ্যা ও জনসংখ্যার ভারসাম্য এনে সীমানা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ঢাকায় খুব বেশি আসনসংখ্যার পরিবর্তন হবে না। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ঐকমত্য কমিশনে বিশেষায়িত কমিটির মাধ্যমে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরামর্শ এসেছে। বাস্তবতার নিরিখে তা কতটুকু করা যাবে, তা বিবেচনায় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
দলের নিবন্ধন যাচাই শুরু
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জমা পড়া আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই শেষে এক খসড়া করা হয়েছে। যাঁদের আবেদন কিছুটা অসম্পূর্ণ, তাঁদের ১৫ দিন সময় দিয়ে তথ্য পূরণ করতে বলা হয়েছে।
তালিকায় ‘শাপলা’ নেই
ইসি আইনজীবী প্যানেল পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। নতুন প্রতীক তালিকায় ‘শাপলা’ রাখা হয়নি। নাগরিক ঐক্য ও এনসিপি এই প্রতীক দাবি করলেও, তা বিবেচনায় আসেনি বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. সানাউল্লাহ।
ইসি সার্ভিস ও এনআইডি সংশোধন প্রসঙ্গে
ব্রিফিংয়ে আরও জানানো হয়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন সংশোধন ও ইসি সার্ভিস নামে একটি আলাদা নিয়োগ কাঠামো গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সচিব ও কর্মকর্তাদের এই কাঠামোতে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি ১৯৯১ সালের নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইনে কিছু সংশোধনের প্রস্তাব উঠেছে।
এ ছাড়া গত ৭ মাসে প্রায় ৯ লাখ এনআইডি সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে, বর্তমানে মাত্র ৭৪ হাজার আবেদন অনিষ্পন্ন রয়েছে। ধর্ম পরিবর্তনসহ অন্যান্য জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভ টক ন দ র স ন উল ল হ র প রস ত ব আসন র ভ ট কর মকর ত ব ত ল কর র ক ষমত র ফল ফল প রক শ আরপ ও ত করত
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রেপ্তারকৃতদের তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ
সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৫ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ আশ্বাস দেন।
শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে তাঁরা এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও তদন্তের ফলাফল বিনিময়ের মাধ্যমে অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন।
এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয়ই বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিথা হেরাথ এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধান পার্ক ইউনজুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।
বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।