৭১৭ পাস খেলেও পোস্টে শট নেই, ১৫০ কোটি পাউন্ড খরচের এই ফল
Published: 15th, February 2025 GMT
এফএ কাপের চতুর্থ রাউন্ডে গত শনিবার ব্রাইটনের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে চেলসি। কিন্তু অপটার সুপারকম্পিউটার আশার খবর শুনিয়েছিল চেলসি সমর্থকদের। প্রিমিয়ার লিগে গতকাল রাতে একই দলের বিপক্ষে চেলসি প্রতিশোধ নেবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল সুপারকম্পিউটার। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। ব্রাইটনের মাঠে ৩-০ গোলে হেরেছে চেলসি। প্রায় ৭০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৭১৭টি পাস খেলেও ব্রাইটনের পোস্টে চেলসি একটি শটও রাখতে পারেনি!
আরও পড়ুনরিয়ালে অন্য লড়াই: এমবাপ্পের চেয়ে বেশি বেতন চান ভিনিসিয়ুস, বেলিংহাম১ ঘণ্টা আগেনিখাদ স্ট্রাইকারের অভাবে ভুগেছে এনজো মারেসকার দল। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের টড বোয়েলি চেলসি কিনে নেওয়ার পর খেলোয়াড় কেনায় এ পর্যন্ত ১৫০ কোটি পাউন্ডের বেশি খরচ করেছেন, যার মধ্যে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ পাউন্ড ঢেলেছেন ফরোয়ার্ডদের পেছনে। এই অর্থের বেশির ভাগই খরচ হয়েছে ক্রিস্টোফার এনকুকু, রাহিম স্টার্লিং, পেদ্রো নেতো, হোয়াও ফেলিক্স ও কোল পালমারদের জন্য। কিন্তু তাঁরা কেউ নিখাদ স্ট্রাইকার কিংবা নাম্বার নাইন নন, উইঙ্গার থেকে বড়জোর ১০ নম্বর জার্সির ফরোয়ার্ড কিংবা মিডফিল্ডার।
চোটের কারণে মাঠের বাইরে থাকা নিকোলাস জ্যাকসন ছাড়া কেউ স্ট্রাইকার পজিশনে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। পালমারই যা একটু ধারাবাহিক ছিলেন। এ মৌসুমে ২৭ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন। তবে লিগে সর্বশেষ চার ম্যাচে গোল পাননি এই ইংলিশও।
১১ ম্যাচে ১ গোল করা এনকুকুকে আক্রমণভাগে সবার সামনে খেলিয়ে ফল পাননি চেলসি কোচ মারেসকা। পেছনে নেতো, পালমার ও মাদুয়েকোকে নিয়ে অ্যাটাকিং থার্ড। এতে ব্রাইটনের অর্ধে চেলসি বল নিয়ে প্রচুর ঘোরাফেরা করতে পেরেছে বটে, কিন্তু ব্রাইটনের গোলকিপারের পরীক্ষা নিতে পারেনি।
আরও পড়ুনলোভে পড়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে বেশি সময় খেলা চালিয়েছিলেন রেফারি১৪ ঘণ্টা আগেও দিকে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ব্রাইটনের জাপানিজ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার কাউরু মিতোমা। গত শনিবার এফএ কাপে চেলসির বিপক্ষে তাঁর কাছ থেকে জয়সূচক গোল পেয়েছিল ব্রাইটন। গতকাল রাতে মিতোমার কাছ থেকেই প্রথম গোলটি পেয়েছে ব্রাইটন। অন্য দুটি গোল ইয়ানকুবা মিনতের।
হারের পর স্কাই স্পোর্টসকে চেলসি কোচ মারেসকা বলেছেন, ‘সবকিছু নিয়েই আমি হতাশ। সমর্থকদের জন্য খারাপ লাগছে.
প্রিমিয়ার লিগে নিজেদের সর্বশেষ ৯ ম্যাচের মধ্যে মাত্র দুটিতে জিততে পেরেছে চেলসি। ২৫ ম্যাচে ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের চারে মারেসকার দল। শীর্ষে থাকা লিভারপুলের সঙ্গে পিছিয়ে ১৪ পয়েন্ট ব্যবধানে। ম্যানচেস্টার সিটি ও নিউক্যাসল নিজেদের পরবর্তী ম্যাচ জিতলে শীর্ষ চার থেকে ছিটকে পড়বে চেলসি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব র ইটন র
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল