জলদস্যুর সাজে ক্যাম্পাসে হাজির কুয়েটের ৪২ শিক্ষার্থী
Published: 16th, February 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের চমকপ্রদ কিছু ছবি প্রায় প্রতিবছরই আলোচনায় আসে। অভিনব উপায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ক্লাস উদ্যাপন করাটা তাঁদের রীতি। শেষ দিনটা রাঙাতে একেকটি বিভাগ সাজে একেক রঙে-ঢঙে। মজার সাজপোশাকে শিক্ষার্থীদের ছবিগুলোই প্রতিবছর আলোড়ন ফেলে। এবার যেমন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে কুয়েটের ইলেকট্রনিকস ও কমিউনিকেশন প্রকৌশল (ইসিই) বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একটি ছবি। পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান চলচ্চিত্রের মতো করেই ক্যারিবীয় জলদস্যুর সাজে হাজির হয়েছিলেন বিভাগের ৪২ জন শিক্ষার্থী।
১২ ফেব্রুয়ারি ছিল শেষ ক্লাস। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের শেষ দিনে জলদস্যুর সাজ ধারণের ভাবনাটি আসে নাহিন শামসের মাথা থেকে। ইসিই বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শেষ ক্লাস কোন থিম নিয়ে করা যায়, এটা নিয়ে আমরা “ইসিই ১৯” বেশ চিন্তিতই ছিলাম। কোনো কিছুই সবার মনমতো হচ্ছিল না। আকস্মিকভাবে একদিন আমার মনে হলো, ছোটবেলায় পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিনেমা দেখে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো হতে কে না চেয়েছে! জলদস্যুদের মতো জাহাজে চড়ে সাগরের নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ানোর স্বপ্ন আমরা স্কুল-কলেজজীবনে লালন করেছি। এই ভাবনা থেকে আমি ও ইশতিয়াক আহমেদ সবাইকে মানানোর চেষ্টা করি।’
আরও পড়ুনপুষ্টিগুণে সাদা চালের চেয়ে এগিয়ে কালো চাল, বলছেন গবেষকেরা৫৫ মিনিট আগেসাজের জিনিসপত্র কিনতে জনপ্রতি প্রায় আট শ টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকায় কাপড় থেকে শুরু করে হ্যাট, ব্যান্ডেনা, তলোয়ার, দড়ি কিনতে হয়েছে নানা কিছু। সেদিন ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো রূপে হাজির হয়েছিলেন নাহিন শামস। অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন তিনি, ‘জ্যাক স্প্যারো সাজতে গিয়ে, ওর চরিত্র ধারণ করতে গিয়ে সারা দিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। রাতে যখন কস্টিউম খুলছিলাম, তখন আগের দুই দিনের একাডেমিক ঝক্কি, উদ্যাপনের প্রস্তুতি—সবকিছু মিলিয়ে শরীর ভেঙে আসছিল। একই সঙ্গে রোমাঞ্চও হচ্ছিল খুব।’
‘বঙ্গদেশী প্রকৌশলী: জন্ম যদি তব বঙ্গে’ আয়োজনে শিক্ষার্থীদের সাজ–পোশাক ছিল এমনই.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জলদস য
এছাড়াও পড়ুন:
অপহৃত হওয়া জেলেরা কি ফিরবেন না পরিবারের কাছে
তখন করোনার কাল। কুড়িগ্রাম জেলার ২৬ জন জেলে তাঁদের কাজের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভারত থেকে বাংলাদেশের পথে রওনা দেন। কিন্তু করোনার কারণে হঠাৎ বিধিনিষেধ আসে। তাঁরা রাস্তায় আটকা পড়েন। তবু ঝুঁকি নিয়ে কয়েক দিন পর আবার বের হন। আসাম পুলিশ তাঁদের আটকায়।
মানববন্ধন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠনের শরণাপন্ন হয়ে ছাড়িয়ে আনতে আনতে একজন জেলখানায় মারা যান। এরপর বাকিরা বাংলাদেশে ফিরতে পারেন। কিছুদিন আগে সাতজন জেলে ভারতের মেঘালয়ে আটকা পড়েন। তাঁরা এখন ভারতের জেলে। ভারতের আদালত কী রায় দিয়েছেন জানি না। পরিবারগুলোর কান্না থামছে না। এটা গেল চিলমারীর ব্রহ্মপুত্রপারের জেলেপাড়ার ঘটনা।
আগে বঙ্গোপসাগরের ভারত সীমান্তে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার খবর প্রায়ই পত্রিকায় আসত। ভারতীয় কোস্টগার্ডও ধরে, ভারতীয় জলদস্যুরাও ধরে। এগুলো ‘ডাল-ভাত ব্যাপার’। ভারত বড় শক্তি। তারা স্থলে মারবে, পানিতে মারবে—এটাই নিয়তি। দয়া করে লাশ ফেরত দিলে তাতেই আমরা খুশি।
দুই.১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দৈনিক ইত্তেফাক–এর খবর থেকে জানা যায়, ৪০ জেলেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মি, উদ্ধার হননি আগের ৮১ জনও। কক্সবাজারের সেন্ট মার্টিনের অদূরে সাগর থেকে মাছ ধরার পাঁচটি ট্রলারসহ ৪০ বাংলাদেশি জেলেকে ধরে নিয়ে গেছে আরাকান আর্মির সদস্যরা। পাঁচটি ট্রলারের মধ্যে তিনটি টেকনাফ পৌর এলাকার, অন্য দুটির মালিক শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, জেলেদের উদ্ধারে কাজ চলছে। এ বিষয়ে বোট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে বলেও জানান সাজেদ আহমেদ।
কিন্তু বিজিবি, কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশবাসী জানে না। শুধু জানা যাচ্ছে, জেলেরা এখনো উদ্ধার হয়নি। পরিবার–স্বজনদের অপেক্ষা বাড়ছে।
তিন.১৫১৭ সালের কথা। পর্তুগিজরা বাংলার উপকূলে আসে। প্রথম দিকে এরা বাণিজ্য করলেও ধীরে ধীরে দস্যুতা, অপহরণ ও দাস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে।
হুগলি, চট্টগ্রাম ও সুন্দরবন থেকে শুরু করে নোয়াখালী থেকে বরিশাল পর্যন্ত উপকূল এদের ডাকাতির শিকার হয়। গ্রামের পর গ্রাম আক্রমণ করে নারী, শিশু ও পুরুষদের ধরে নিয়ে যেত এবং দাস হিসেবে বিক্রি করত। এদের নিয়ে যেত পর্তুগিজ উপনিবেশে (গোয়া, মালাক্কা), এমনকি ইউরোপ পর্যন্ত। আর মিয়ানমারের রাখাইন অঞ্চল থেকে আসা মগ জলদস্যুরা ডাকাতি চালাত বাংলার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে। অর্থাৎ চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, সীতাকুণ্ড ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের মানুষদের তুলে নিয়ে যেত। বিক্রি করা হতো আরাকানের রাজধানী ম্রাউক উ এবং চট্টগ্রামের কাছে দাসের হাটে।
ফরাসি পর্যটক সেজার ফ্রেডেরিক লিখেছেন, ‘চট্টগ্রাম অঞ্চলে দস্যুর হাতে ধরা পড়লে মুক্তি নেই, তারা মানুষ ধরে নিয়ে বাজারে বিক্রি করে।’ ডাচ পর্যটক ভ্যান ডেন ব্রুক ১৭ শতকে আরাকানিদের দাস ব্যবসার বর্ণনা দিয়েছেন। এই সময়কালে বাংলার উপকূল থেকে অপহৃত মানুষের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে কিছু জায়গা জনশূন্য হয়ে পড়ে। এতে স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে যায়। গ্রামবাসীরা ভয়ে চলে যায় উপকূল ছেড়ে ভেতরের দিকে।
মোগল শাসকেরা জানতেন, তাঁদের সমৃদ্ধি এই জেলে, কৃষক ও কারিগরদের ওপর নির্ভরশীল। শায়েস্তা খাঁ ১৬৬৬ সালে এই পর্তুগিজ ও মগদের দমন করেন। এখন কে করবেন দমন?
চার.মিয়ানমার গৃহযুদ্ধে জেরবার। আগে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীরা মাঝেমধ্যে বাহাদুরি দেখাতেন, আমরা নিরীহ বাঙাল হিসেবে মেনে নিতাম। ইদানীং তাঁদের তাড়িয়ে আরাকানের দখল নিয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। তারা আমাদের জেলেদের সেন্ট মার্টিনে যেতে দেয় না, মাছ ধরতে দেয় না। প্রতি সপ্তাহে জেলে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। সরকার টেরই পায় না।
উজানের ব্রহ্মপুত্র থেকে ভাটির সমুদ্র—সর্বত্রই জেলেদের জীবন কচুপাতার মতো টলমল। তাঁদের শ্রম ছাড়া আমাদের পাতে মাছ ওঠে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলেদের নৌকাই ছিল আমাদের ভরসা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বলে গেছেন, তাঁদের ‘পল্লীতে ঈশ্বর থাকেন না’। রাষ্ট্র থেকে বলা হয়, বঙ্গোপসাগর হলো বাংলাদেশের সদর দরজা; কিন্তু সেই সাগরেই আমাদের জেলেদের নিরাপত্তা নেই।
নাহিদ হাসান লেখক ও সংগঠক
[email protected]