বর্তমান সংবিধানে একজন প্রধানমন্ত্রী স্বৈরাচারী হয়ে ওঠার সুযোগ পান উল্লেখ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, সামনের যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।

আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এনসিপির রংপুর জেলা ও মহানগর শাখা আয়োজিত ইফতার ও দোয়া মাহফিলে আখতার হোসেন এ কথা বলেন। রংপুর জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতিবিদ, ছাত্র-শ্রমিক, পেশাজীবী, অ্যাকটিভিস্ট, ওলামায়ে কেরাম ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়।

আখতার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে একটি নতুন সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে। নতুন সংবিধান যদি আমাদের করতে হয়, তাহলে অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নতুন সংবিধান করতে হবে। এই কারণে সামনের যে নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচন গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে। গণপরিষদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশকে একটি নতুন সংবিধান উপহার দেবে। একই সঙ্গে তাঁরা সংসদ সদস্যের যে ভূমিকা, সেই ভূমিকা পালন করবেন। অতএব সংসদ নির্বাচন ও গণপরিষদ নির্বাচনকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘আমরা তরুণেরা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সামনের দিনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ তাঁদের পরামর্শ ও ভালোবাসা দিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়াবেন। এনসিপিকে আমরা সারা দেশে বিস্তৃত করার কার্যক্রম শুরু করেছি।’

গ্রামেগঞ্জে, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় জাতীয় নাগরিক পার্টির বার্তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের মানুষের মাঝে হাজির হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আখতার হোসেন বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টির নতুন বন্দোবস্তের বার্তা নিয়ে প্রতিটি ঘরে আমাদের যেতে হবে। জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট করা গেলে বাংলাদেশের ভাগ্য বিনির্মাণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশকে গড়তে হলে এ দেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও শিল্পকে স্বনির্ভর হতে হবে। এ দেশের প্রতিটি সেক্টরকে আমরা যদি স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের প্রকৃত যে মুক্তি, সেই মুক্তি অর্জন করা সম্ভব।’

দীর্ঘ সময় ধরে রংপুর অঞ্চলের মানুষেরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছেন উল্লেখ করে আক্তার হোসেন বলেন, ‘রংপুরের মানুষ রেলপথে যাতায়াত করলে দীর্ঘ পথ ঘুরে তাদের ঢাকায় পৌঁছাতে হয়। আমরা দাবি জানাই, অন্তর্বর্তী সরকার সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত রেললাইনের ব্যবস্থা করে দিয়ে রংপুরের মানুষের যাতায়াতের সুবিধা নিশ্চিত করবে। রংপুর অঞ্চলে শিল্পায়ন করা হলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে গিয়ে এই অঞ্চলের মানুষের শ্রম দিতে হবে না। রংপুর অঞ্চলে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি। এখানে অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হলে রংপুর অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নতি করা সম্ভব।’

আখতার হোসেন আরও বলেন, ‘রংপুর সিটি করপোরেশনকে গত বছর এক পয়সাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এই বিভাগের আটটি জেলাকে উন্নয়ন বরাদ্দের নামে ১ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি জেলাকে যদি ১ শতাংশ করে বরাদ্দ দেওয়া হতো, তাহলে রংপুর বিভাগের আট জেলা মিলে ৮ শতাংশ বরাদ্দ পেত। এই চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়ে রংপুরের মানুষকে যেতে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় নাগরিক পার্টির যে নেতৃত্ব তৈরি হয়েছে, তাঁরা পুরো দেশে সমানভাবে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ করবেন। বাংলাদেশের স্বার্থে যেমন জাতীয়ভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য থাকতে হবে, তেমনি রংপুরের স্বার্থে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে একত্রে আওয়াজ ওঠাতে হবে।’

এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা থাকার কথা থাকলেও তিনি উপস্থিত ছিলেন না। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা, আসাদুল্লাহ আল গালিব, সদস্য আবদুল মুনাঈম, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র হ স ন বল নত ন স ব ধ ন আখত র হ স ন এনস প র স মন র বর দ দ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

যৌথ বিবৃতি প্রত্যাখান করে বাহা’কে বয়কট ঘোষণা শিক্ষার্থীদের

বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন (বাহা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি অনুষদের যৌথ বিবৃতি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন অনুষদটির শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিয়ে চলমান যৌক্তিক আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি অনুষদের শিক্ষার্থীদের কতিপয় বিপথগামী বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিকেলে অনুষদীয় চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বাহা’কে বয়কট ঘোষণা করেন।

এর আগে, বেলা ১১টার দিকে বাকৃবি শিক্ষক কমপ্লেক্সে বাহা’র নেতৃবৃন্দ ও অনুষদের ডিনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ক্লাস-পরীক্ষাসহ অনুষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ তুলে মতামত দেন।

আরো পড়ুন:

গোবিপ্রবিতে ২ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, প্রক্টর-প্রাধ্যক্ষসহ আহত ১৫

ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শিক্ষক ও অফিস সহায়ককে বিদায়

আলোচনা সভা শেষে বাহা ও ওই অনুষদ একটি যৌথ বিবৃতি প্রদান করেন। যেখানে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের এহেন কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইন ও শান্তি-শৃঙ্খলা পরিপন্থি। এই কার্যক্রমে অনুষদের সব শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নেই। অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি প্রফেশনকে নিশ্চিহ্ন ও হেয় করতে একটি বিশেষ মহলের প্ররোচনায় কতিপয় বিপথগামী শিক্ষার্থী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপচেষ্টায় লিপ্ত।

বিবৃতিতে এ ধরনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানানো হয় এবং প্রফেশনের বিরাজমান সমস্যাগুলো সমাধানে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্বান্ত গৃহীত হয়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এই বিবৃতির তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকের সমাবেশে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা সর্বসম্মতভাবে বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল হাসবেন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনকে বয়কটের ঘোষণা দিচ্ছে। আমাদের যৌক্তিক দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

এ বিষয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শিবলী বলেন, “আমরা পশুপালন অনুষদের বিভিন্ন লেভেলের কয়েক’শ গত ১ সপ্তাহ ধরে আমাদের যৌক্তিক দাবি কম্বাইন্ড ডিগ্রি নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে যাচ্ছি। যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করলে যারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিপদগামী বলে সম্বোধন করছেন, তাদের আমরা এ অনুষদ চত্বর থেকে লালকার্ড দেখাই। কোনো বিবৃতি বা হুমকি দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনকে থামানো যাবে না।”

আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী হিমেল বলেন, “বাকৃবিতে চলমান যৌক্তিক কম্বাইন্ড ডিগ্রি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে বাহা’র মহাসচিব ক্যাম্পাসে উপস্থিত হন। আলোচনার প্রস্তাব গ্রহণ করা হলেও, তার পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর সাড়া পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিপথগামী বলা হয়। এছাড়া আমাদের সম্মিলিত আন্দোলনকে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থীর আন্দোলন হিসেবে দেখানোর অপচেষ্টা করা হয়, যা মিথ্যা, অপমানজনক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ