ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের আশুগঞ্জের গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পেরিয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, শান্তিনগর, বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, বাড়িউড়া পর্যন্ত এই যানজটের সৃষ্টি হয়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল। সরাইলের বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর, শান্তিনগর ও আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় যানজট ছিলো তীব্র। তবে বিকেলে যানজটের তীব্রতা কমে আসে বলে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান জানিয়েছেন।

চলমান আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া স্থলবন্দর রাস্তা চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কারণে এই যানজট তৈরি হয়েছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ বছর ধরে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে এক পাশের কাজ শেষ হলেও ওই সব অংশের বিপরীত দ্বৈতলেনের কাজ শুরু না হওয়ায় এবং ওই অংশটি সরু হওয়ায় যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে দুপাশের যানবাহ একপাশ দিয়ে চলতে গিয়ে সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ওপর টানাবৃষ্টিতে এসব অংশে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র যানজট দেখা দেয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্বরোড খাটিহাতা মোড়ে কথা হয় বসুন্ধরা এলপি গ্যাসসিলিন্ডার বহনকারী ট্রাকচালক মো.

রাসেল মিয়ার (৪০) সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সিলেট থেকে আসছি। এখানে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে জ্যামে পড়ে আছি। দেখেন রাস্তার কী অবস্থা। খারাপ রাস্তার কারণেই এখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়।

স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের এসব এলাকায় গর্ত ছিলো। গত তিন মাসে একাধিকবার এসব গর্তে  ইটবালু দিয়ে সংস্কার করা হলেও তা টেকেনি। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গর্তগুলো এখন বড় আকার ধারণ করেছে। মূলত এইসব গর্তের কারনে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

মোটরসাইকেল চালক রাব্বী (২২) জানান, বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত যানজট। গত রাত থেকেই এ যানজট চলছে। রাস্তা খারাপের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

ভারতীয় ঋণে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতের এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার অজুহাতে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এলেও কাজের গতি আর আগের মতো হয়নি।

জানা যায়, সরাইলের বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে ধীরগতিতে চলছে পণ্যবাহী গাড়ি। মহাসড়কের বড় বড় গর্তে আটকা পড়ছে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ দূরপাল্লার অনেক যানবাহন। এসব জায়গায় যান চলাচলের গতি নামিয়ে আনতে হচ্ছে ঘণ্টায় ১ থেকে ৫ কিলোমিটারে। এই যানজট কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কেও প্রভাব ফেলেছে। মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে।

বিশ্বরোডের ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদুল হক (৬০) বলে, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এখানে একটি গাড়ি একফুটও নড়েনি। যানজট নিয়ন্ত্রণে এখানে পুলিশ অনেকটাই অসহায় । বেপরোয়া চালকরা পুলিশকে খুব একটা পাত্তাই দিতে চায় না। তিনি ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা, ‘চালকদের কার  আগে কে যাবে’ প্রতিযোগিতাকেই এ যানজটের মূল কারণ বলে মনে করেন।

সরাইলের অরুয়াইল এলাকার আহমেদ মিয়া পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিশা পরিবহনের বাসে অপেক্ষারত অবস্থায় বলেন, ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি ৩ ঘন্টা ধরে বসে আছি বাসে। কখন ছাড়বে জানি না।

এ ব্যাপারে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার ওভারটেক করতে গিয়েও অনেক সময় রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। এ ছাড়া যানজটের কারণে আমরা কোথাও মুভও করতে পারছি না। 

এদিকে আশুগঞ্জ নদী বন্দর-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া স্থলবনদর সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের একাংশের পিডি শামীম আহমেদ জানান, যানচলাচল অব্যাহত রাখতে সংস্কার নিয়মিতই চলছে। তবে তা অস্থায়ী। ভারী বৃষ্টি হলেই সমস্যাটা বেড়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। সমস্যাগুলো মিটে গেলে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে কাজের গতি বেড়ে যাবে আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি কমে আসলে আগামীকাল কিংবা পরশু থেকে কাজ আবার শুরু হয়ে যাবে। এছাড়া বিশ্বরোড মোড়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব র হ মণব ড় য় ১০ ক ল ম ট র ব শ বর ড ম ড় প রকল প র র য নজট য নজট র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

পলিথিন বন্ধে শুরু হচ্ছে যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান

নি‌ষিদ্ধ পলিথিন বন্ধে যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান চল‌ছে ব‌লে জা‌নি‌য়ে‌ছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

তি‌নি বলেন, “বারবার সতর্ক করার পরও যারা নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে এখন থেকে আর কোনো ছাড় থাকবে না। যৌথবাহিনীকে নিয়ে অচিরেই কঠোর অভিযান শুরু হবে।”

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সভায় নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ ও বাণিজ্যিক পরিবহনের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, “পরিবেশ সংরক্ষণের স্বার্থে সবার সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। এ ব্যাপারে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার এবং সাধারণ জনগণের সমন্বয়ে একটি নিরবচ্ছিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।”

সভায় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, অতিরিক্ত সচিব খন্দকার মাহাবুবুর রহমান, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. ফাহমিদা খানম, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. কামরুজ্জামান, র‍্যাবের এডিজি (অপারেশনস) কর্নেল ইফতেখার আহমেদ, আজিমপুর সেনা ক্যাম্পের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ-উজ-জামান খান, র‍্যাব-১০ এর কমান্ডার মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত কমিশনার ফারুক আহমেদ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদার, ঢাকার জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এবং ডিএমপির ডিসি লালবাগ মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

অন্যদিকে, কিশোরগঞ্জ জেলায় একটি মোবাইল কোর্ট অভিযানে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণের দায়ে একটি মামলার করা হয় এবং পলিথিন জব্দ করা হয়। একই দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় একটি পলিথিন শপিং ব্যাগ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং বৈদ্যুতিক মিটার খুলে জব্দ করা হয়।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পলিথিন বন্ধে শুরু হচ্ছে যৌথ বাহিনীর অভিযান
  • পলিথিন বন্ধে শুরু হচ্ছে যৌথবাহিনীর কঠোর অভিযান
  • দুই জেলায় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় আলোচনা