ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশে ১০ কিলোমিটার যানজট
Published: 10th, July 2025 GMT
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশের আশুগঞ্জের গোলচত্বর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পেরিয়ে বাড়িউড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গত বুধবার রাত ১০টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, শান্তিনগর, বিশ্বরোড মোড়, কুট্টাপাড়া মোড়, বাড়িউড়া পর্যন্ত এই যানজটের সৃষ্টি হয়।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট ছিল। সরাইলের বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর, শান্তিনগর ও আশুগঞ্জের খড়িয়ালায় যানজট ছিলো তীব্র। তবে বিকেলে যানজটের তীব্রতা কমে আসে বলে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান জানিয়েছেন।
চলমান আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া স্থলবন্দর রাস্তা চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কারণে এই যানজট তৈরি হয়েছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৬ বছর ধরে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চারলেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে এক পাশের কাজ শেষ হলেও ওই সব অংশের বিপরীত দ্বৈতলেনের কাজ শুরু না হওয়ায় এবং ওই অংশটি সরু হওয়ায় যানচলাচল স্বাভাবিক রাখতে গিয়ে দুপাশের যানবাহ একপাশ দিয়ে চলতে গিয়ে সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় ব্যাপক খানাখন্দের সৃষ্টি হচ্ছে। এর ওপর টানাবৃষ্টিতে এসব অংশে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে তীব্র যানজট দেখা দেয় বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্বরোড খাটিহাতা মোড়ে কথা হয় বসুন্ধরা এলপি গ্যাসসিলিন্ডার বহনকারী ট্রাকচালক মো.
স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কের এসব এলাকায় গর্ত ছিলো। গত তিন মাসে একাধিকবার এসব গর্তে ইটবালু দিয়ে সংস্কার করা হলেও তা টেকেনি। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে গর্তগুলো এখন বড় আকার ধারণ করেছে। মূলত এইসব গর্তের কারনে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
মোটরসাইকেল চালক রাব্বী (২২) জানান, বিশ্বরোড থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত যানজট। গত রাত থেকেই এ যানজট চলছে। রাস্তা খারাপের কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।
ভারতীয় ঋণে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ভারতের এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। নিরাপত্তার অজুহাতে ভারতীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দেশ ছেড়ে চলে যান। প্রায় তিন মাস পর তারা ফিরে এলেও কাজের গতি আর আগের মতো হয়নি।
জানা যায়, সরাইলের বিশ্বরোড গোলচত্বর থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব স্থানে ধীরগতিতে চলছে পণ্যবাহী গাড়ি। মহাসড়কের বড় বড় গর্তে আটকা পড়ছে পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যানসহ দূরপাল্লার অনেক যানবাহন। এসব জায়গায় যান চলাচলের গতি নামিয়ে আনতে হচ্ছে ঘণ্টায় ১ থেকে ৫ কিলোমিটারে। এই যানজট কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কেও প্রভাব ফেলেছে। মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমে গেছে।
বিশ্বরোডের ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষদর্শী জুনায়েদুল হক (৬০) বলে, আজ (বৃহস্পতিবার) সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এখানে একটি গাড়ি একফুটও নড়েনি। যানজট নিয়ন্ত্রণে এখানে পুলিশ অনেকটাই অসহায় । বেপরোয়া চালকরা পুলিশকে খুব একটা পাত্তাই দিতে চায় না। তিনি ভাঙ্গাচুড়া রাস্তা, ‘চালকদের কার আগে কে যাবে’ প্রতিযোগিতাকেই এ যানজটের মূল কারণ বলে মনে করেন।
সরাইলের অরুয়াইল এলাকার আহমেদ মিয়া পরিবার নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিশা পরিবহনের বাসে অপেক্ষারত অবস্থায় বলেন, ছেলে মেয়ে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছি ৩ ঘন্টা ধরে বসে আছি বাসে। কখন ছাড়বে জানি না।
এ ব্যাপারে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রহমান বলেন, টানা বৃষ্টিতে সরাইলের বিশ্বরোড মোড় থেকে আশুগঞ্জ গোলচত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার মহাসড়ক যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। আবার ওভারটেক করতে গিয়েও অনেক সময় রাস্তা ব্লক হয়ে যায়। এ ছাড়া যানজটের কারণে আমরা কোথাও মুভও করতে পারছি না।
এদিকে আশুগঞ্জ নদী বন্দর-সরাইল-ব্রাহ্মণবাড়িয়া-আখাউড়া স্থলবনদর সড়ক চারলেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের একাংশের পিডি শামীম আহমেদ জানান, যানচলাচল অব্যাহত রাখতে সংস্কার নিয়মিতই চলছে। তবে তা অস্থায়ী। ভারী বৃষ্টি হলেই সমস্যাটা বেড়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কিছু সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা চলছে। সমস্যাগুলো মিটে গেলে আগামী ২/৩ মাসের মধ্যে কাজের গতি বেড়ে যাবে আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি কমে আসলে আগামীকাল কিংবা পরশু থেকে কাজ আবার শুরু হয়ে যাবে। এছাড়া বিশ্বরোড মোড়ের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে বলে তিনি জানান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় ব র হ মণব ড় য় ১০ ক ল ম ট র ব শ বর ড ম ড় প রকল প র র য নজট য নজট র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
নানা আয়োজনে মোংলা বন্দরের প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপন
প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা। এ উপলক্ষে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদ্যাপন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আজ সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান।
এর আগে মোংলা বন্দর দিবস উপলক্ষে বন্দর ভবনের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ২৮টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সেরা কর্মীদেরও সম্মানিত করা হয়।
১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনা জেলার চালনা এলাকায় যাত্রা শুরু হলেও ভৌগোলিক কারণে মাত্র তিন বছরের মাথায় বন্দরটির কার্যক্রম সরানো হয় বাগেরহাটের মোংলায়। মূলত ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর ‘দ্য সিটি অব লিয়নস’ নামের ব্রিটিশ বাণিজ্যিক জাহাজের আগমনের মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়। সুন্দরবনের পশুর নদের জয়মনির ঘোল এলাকায় নোঙর করেছিল ওই জাহাজ।
৭৫ বছরের দীর্ঘ যাত্রায় নানা সংকটের মাঝেও দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ভূমিকা রেখে চলেছে মোংলা বন্দর। নৌ, সড়ক ও রেলপথ অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দর ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে মোংলা বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন উপব্যবস্থাপক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, এটি প্রথমে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসেবে যাত্রা শুরু করে। ১৯৭৭ সালের মে মাসে ‘চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই বন্দর। ১৯৮৭ সালের মার্চে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ’।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অর্থবছর শেষে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পাশাপাশি ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন বা ১৭.২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ (টোয়েন্টি-ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিটস)। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ বা ৭.২৮ শতাংশ বেশি হ্যান্ডলিং হয়েছে। ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে গত অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২.৮৩ শতাংশ বেশি আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে বন্দরের নিট মুনাফা হয় ৬২ কোটি ১০ লখ টাকা।
অনুষ্ঠানে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বন্দরে জাহাজ এসেছে ৩৫৬টি। কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৪ টিইইউজ এবং গাড়ি আমদানি ৪ হাজার ১৩৯টি। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হয়েছে ৪৪ লাখ টন। আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘণ্টায় ২৪টির বেশি কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ ও রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন সহজ ও দ্রুততর হয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দর কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে। মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলমান।