Samakal:
2025-05-01@02:58:07 GMT

এত বিভাজন কেন?

Published: 11th, April 2025 GMT

এত বিভাজন কেন?

আমরা বিভাজিত হতে হতে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর গোত্রে ভাগ করে ফেলছি নিজেদের। মতাদর্শিক বিভাজন, দলগত বিভাজন, বিশ্বাসকেন্দ্রিক বিভাজন, চর্চাগত বিভাজন, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন, ভৌগোলিক বিভাজন– আর কতভাবে বিভাজিত হবো আমরা! এই বিভাজনে অর্জনই বা কী? ছেলেবেলায় পড়েছি একতার ক্ষমতার কথা। ‘দশের লাঠি, একের বোঝা’, ‘দশে মিলি করি কাজ, হারি-জিতি নাহি লাজ’– এমন সব প্রবচন কখনও লেখা ছিল পাঠ্যবইয়ে, কখনওবা শহরের দেয়াল লিখনে। ঐক্যের বিপরীতে বিভাজন– অন্তর্নিহিত এই ধারণা আমরা হয়তো উপলব্ধি করতাম। অথচ আমরা বিভাজিত হয়েই চলেছি। নিজের ক্যাম্প তৈরি করে চলেছি নিজেকে একটি গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে; বাকিদের অন্য গোষ্ঠীর বলে ট্যাগ দেওয়া মানুষের স্বভাবজাত। 

এই প্রবণতাকে অতিক্রম করার জন্য তাই স্বতঃপ্রণোদিত ব্যক্তিগত চেষ্টার যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন এমন নেতৃত্বের, যা বিভাজিত সমাজকে পুনরায় জুড়ে দেওয়ার মন্ত্রণা দেবে। বিভাজনের দার্শনিক ভিত্তি আর বিভাজন মোচনের ঐতিহাসিক উদাহরণ ব্যবহার করে আমরা কি জাতিগত ঐক্যের দিকে এগোতে পারি না? কী বলেছিলেন হেগেল, নিটশে, তাইফেল আর কান্ট? কী করেছিলেন সম্রাট মেইজি, মার্টিন লুথার কিং ও নেলসন ম্যান্ডেলা?

বিভাজনের সৃষ্টি আমাদের মনোজগতে। ফ্রয়েডের মনস্তত্ত্ব বলছে, মানবমনে ইরোস বা ঐক্যের প্রেষণা এবং থানাটোস বা সংঘর্ষের ইচ্ছা পাশাপাশি অবস্থান করে। সমাজে একটি গোষ্ঠী যখন প্রতারিত বা নিষ্পেষিত হয়, তখন থানাটোস সামনে এসে দাঁড়ায়। তাই বলে যে ইরোস হারিয়ে যায়, এমনটি নয়। সে কেবল পশ্চাদপসরণ করে। ইরোসকে পুনর্জাগ্রত করার জন্য তাই প্রয়োজন ব্যক্তি বা সামষ্টিক নেতৃত্বের।
আমরা যত বেশি সাংঘর্ষিক হবো, ঐক্যের বাসনা ততটাই অবদমিত হবে এবং এর পুনর্জাগরণ হয়ে দাঁড়াবে ততটুকুই জটিল। দর্শনশাস্ত্রে হেগেল এবং নিটশে চিন্তায় দ্বান্দ্বিকতার কথা বলেছেন। চিন্তার দ্বন্দ্ব থেকেই প্রগতি আসে। তাঁরা এও বলেছেন, যদি দ্বন্দ্ব থেকে চরম বিভাজন ও ঘৃণা উৎসারণের দিকে যখন অগ্রসর হয় কোনো জাতি, তা তখন তার ভাঙনের পথকেই অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। এই মত প্লেটোও দিয়েছিলেন তাঁর ‘দ্য রিপাবলিক’ রচনায়। মানুষ কী করে বিভাজনমুখী হয় তা জানা যায় পোলিশ-ব্রিটিশ মনস্তত্ত্ববিদ হেনরি তাইফেলের সত্তরের দশকে দেওয়া ‘সামাজিক পরিচয়’তত্ত্বে। এই তত্ত্বানুসারে একজন ব্যক্তি স্বভাবজাতভাবেই সমাজের কোনো না কোনো গোত্র বা গোষ্ঠীতে নিজেকে শামিল করে। এই বর্গীকরণ সাধারণত হয়ে থাকে ধর্ম-বর্ণ, লিঙ্গ বা জাতির ভিত্তিতে। এই প্রাথমিক শ্রেণীকরণের পরপর সেই গোত্র বা গোষ্ঠীর পরিচয় যেমন– ভাষা, মূল্যবোধ ও চেতনাকে ধারণ করতে শুরু করে সে। গোত্রটির শ্রেষ্ঠত্ব, গোষ্ঠীটির সাফল্যই যেন হয়ে দাঁড়ায় তাঁর ব্যক্তিগত শ্রেষ্ঠত্বের স্মারক। এমনিভাবে একটি সামষ্টিক পরিচয় একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে পড়ে। এই গোত্রের শ্রেষ্ঠত্বকে বজায় রাখতে, সাফল্যকে অর্জন করতে চলতে থাকে অন্য গোত্রের সঙ্গে তুলনা, সে গোত্রের সমালোচনা এবং চরম পর্যায়ে তার অবমাননা। একটি দেশের সীমানার ভেতরেই ‘আমরা’ বনাম ‘ওরা’– এই দ্বন্দ্ব যেন অপরিহার্য হয়ে পড়ে। ‘আদারিং’-এর এই নির্মম চর্চায় এর পর ইন্ধন জোগায় আঞ্চলিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক সুবিধালোভীরা। রুয়ান্ডায় এভাবেই হুতু-তুতসিদের ভেতরকার অহিংস আন্তঃগোত্রীয় মতবিরোধ বৃদ্ধি পেতে পেতে ১৯৯৪-এর গণহত্যায় রূপ নিয়েছিল। বিভাজনকে বাড়তে দিলে এর চরম রূপ হয়ে দাঁড়ায় এমনই অমানবিক।

ভাবলে অবাক হতে হয়, একটি স্বভাবজাত বর্গীকরণ কত সহজেই না রাবণের মতো ধ্বংসের নেশায় মেতে উঠতে পারে! এই রূপান্তর যে অনিবার্য, তা কিন্তু নয়। কান্ট তাঁর ‘মেটাফিজিক্স অ্যান্ড মোরালস’ বা আধিদৈবিকতা ও নীতিশাস্ত্রে বলছেন, মানবমনের ঘৃণা যখন উৎসারিত হতে শুরু করে, তখনই ভাঙনের সূত্রপাত। তিনি বলেছেন, চিন্তার দ্বন্দ্ব তো সমাজে থাকবেই। গোত্রে-গোত্রে পরিচয়গত বিভেদ থাকাটাই তো স্বাভাবিক। তাই বলে আদারিংয়ের চর্চায় কেন পর্যবসিত হতে হবে? আমি এক ধর্ম, এক বর্ণ বা এক চেতনার মানুষ থেকে অন্য ধর্ম-বর্ণ-চেতনার মানুষকে কেন ঘৃণা করব? কান্ট বলেছেন, ক্রোধ সাময়িক, তবে ঘৃণা চলে অবিরত, দীর্ঘকালব্যাপী। কান্টের নীতি দর্শন ‘ইউনিভার্সাল ল’ বা সর্বজনীন বিধানের ওপর দাঁড়িয়ে। ঘৃণার চর্চা কখনও সর্বজনীন হতে পারে না। সেদিকে অগ্রসর হতে গেলেই সমাজে ভাঙনের অবশ্যম্ভাবিতা জেগে ওঠে। কান্ট তাই বলেছেন, এই ঘৃণার উদ্রেক যেন না হয়, তার বীজ যেমন শৈশবে বপন করতে হবে, তেমনি জাতীয় নেতৃত্বের দায়িত্ব হবে আদারিংয়ের চর্চা থেকে বেরিয়ে ঐক্যের পথে জনগণকে নিয়ে যাওয়া। এখানেই নেতৃত্বের সাফল্য।  

একতা অর্জনে বিশ্বের কয়েকজন অবিসংবাদিত নেতার ভূমিকার কথা উল্লেখ করতেই হয়। ১৮ শতক পর্যন্ত জাপান ছিল অসংখ্য সামন্ত গোষ্ঠীতে খণ্ডিত। জাতীয় ঐক্য তখন ছিল কল্পনা মাত্র। সেই শতাব্দীর শেষ দিকে সম্রাট মেইজি ঐক্যের লক্ষ্যে সামন্তবাদী প্রথা বিলুপ্ত করেছিলেন আর সিন্টোবাদকে একটি জাতীয় ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিলেন। ১৮৮৯-তে জাতীয় ঐক্যকে পূর্ণতা দিতে তিনি মেইজি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। বিভাজন থেকে আজকের সমৃদ্ধি দেখেনি জাপান; দেখেছে জাতীয় ঐক্য থেকে। উনিশ শতক পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণ প্রথা ছিল স্পষ্ট। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রশ্নে আন্দোলন হয়েছে বহুবার; ফলপ্রসূ হয়নি। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের ভেতরকার এই বিভাজন জানতেন ঠিক। তিনি এই বিভাজনে ঘৃতাহুতি না দিয়ে সামগ্রিক আমেরিকান মূল্যবোধের কথা বলেছিলেন। মার্কিন সিভিল রাইটস মুভমেন্ট কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল ঠিক, তবে কিং-এর নেতৃত্ব আদারিং-এর চর্চা না করে, শ্বেতাঙ্গদের দোষী সাব্যস্ত না করে ঐক্যের পথে হেঁটেছিলেন। 
দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের কথা আমাদের কারও অজানা নয়। নব্বই দশক পর্যন্ত পদ্ধতিগতভাবে শোষণ করা হয়েছে দেশটির জনগণকে শুধু বর্ণের ভিত্তিতে। কিং-এর মতো ম্যান্ডেলাও গোত্র বা বর্ণভিত্তিক পরিচয় থেকে জাতীয় পরিচয়ের পথে নেতৃত্বকে নিয়ে গিয়েছিলেন। শ্বেতাঙ্গদের অবিচারকে ক্ষমার চোখে দেখতে উৎসাহিত করেছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ জনতাকে। তিনি বলেছিলেন, ‘অসন্তোষ হলো একটি বিষ, যে বিষপানে প্রত্যাশা থাকে শুধু শত্রুর বিনাশ।’ তবে ঘৃণা দিয়ে শত্রুর নিধন হবার আগে নিজকেই যে বধ করি আমরা। ঘৃণাতে তাই ক্ষতিই সাধিত হয়, মঙ্গল নয়। আসুন, আমরা বিভাজনের এই চক্র থেকে বেরিয়ে আসি। আমার ধর্ম শ্রেষ্ঠ আর তোমারটা স্থূল; আমার চেতনা উত্তম আর তোমারটা বোধশূন্য; আমার নেতা মহান আর তোমার নেতা অসুর– এই চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা একই দেশের মানুষ। আমাদের একটিই পতাকা, একটিই মাতৃভাষা। এই দেশটির মঙ্গল আমরা সবাই চাই। শুধু একতা থেকেই তা অর্জন সম্ভব।       
     
নাভিদ সালেহ: যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অ্যাট অস্টিনে পুরকৌশল, স্থাপত্য ও পরিবেশ কৌশল অনুষদের অধ্যাপক

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক ব ভ জন কর ছ ল ন দ বন দ ব বল ছ ন আম দ র তত ত ব

এছাড়াও পড়ুন:

নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি

নিয়োগপত্র নেই। এ কারণে চাকরির নিশ্চয়তাও নেই। দেওয়া হয় না পরিচয়পত্র। নেই কর্ম ঘণ্টার হিসাব। তবে রয়েছে মজুরিবৈষম্য ও জীবনের ঝুঁকি। এ চিত্র খুলনার বরফকলে কর্মরত বরফ শ্রমিকদের।

অবহেলিত ও অধিকার বঞ্চিত বরফকলের শ্রমিকেরা জানেন না মে দিবসের অর্থ। তারা শুধু এটুকু জানেন, কাজ থাকলে মজুরি পাবেন, অন্যথায় জুটবে না কিছু। খুলনার নতুন বাজার, রূপসা, শিপইয়ার্ড ও নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বরফ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে উঠে এসেছে ঝুঁকি ও বৈষম্যের এই চিত্র।

সরেজমিনে জানা গেছে, লবণ পানি এবং অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংমিশ্রণে বরফের প্রতিটি ক্যান তৈরি হয়। এ কাজে প্রচণ্ড ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যুসহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা। এছাড়াও অধিকাংশ সময় হাত-পা ভিজে ঠান্ডা থাকায় ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। এর বাইরে বুকে ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি জ্বরসহ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতায় ভোগেন এখানকার শ্রমিকেরা। পাতলা বরফে অনেক সময় হাত-পা কেটে যায়। কিন্তু মালিক বা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের জন্য কোন ধরনের অ্যাপ্রোন বা নিরাপত্তা সরঞ্জাম সরবরাহ করেন না। তবে দুর্ঘটনায় কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

আরো পড়ুন:

ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত

মহান মে দিবস: শ্রমিকের অধিকার রক্ষায় সংস্কারে জোর সরকারের

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, খুলনা মহানগরীর নতুন বাজার, নিউমার্কেট, শিপইয়ার্ড, রায়েরমহল এবং রূপসা উপজেলার পূর্ব রূপসা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি বরফকল রয়েছে। এর মধ্যে নতুন বাজার ও পূর্ব রূপসায় সর্বাধিক বরফকল রয়েছে। এসব কলে গড়ে দশ জন হিসেবে দেড় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করেন।

রূপসার নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত ‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করেন মোহাম্মদ রাসেল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার আশাশুনি হলেও পরিবার নিয়ে রূপসার জাবুসা এলাকায় বসবাস করেন। দীর্ঘ সাত বছর ধরে এই বরফকলে কাজ করছেন তিনি। রাসেল জানান, তাদের মাসিক বেতন নেই। নেই নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র। মূলত উৎপাদনের উপর প্রতি পিস বরফের ক্যান অনুযায়ী ১২ টাকা হারে মজুরি পান। নামমাত্র এ মজুরিতে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে সংসার ঠিকমতো চলে না।

‘‘তিন বছর আগে নির্ধারণ করা মজুরি এখনো চলছে। লোকসানের অজুহাতে মালিকপক্ষ মজুরি বাড়াতে চান না। তাদের মতো শ্রমিকদের কোন বেতন-বোনাস নেই। নো ওয়ার্ক, নো পে অর্থাৎ কাজ থাকলে মজুরি আছে কাজ না থাকলে নেই। মালিকদের এ সিদ্ধান্ত না মানলে চাকরিও থাকে না।’’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন রাসেল হোসেন।

একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন মোঃ জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘‘গড়ে প্রতিমাসে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা মজুরি পাই। কিন্তু মাসিক খাবার খরচ প্রায় ৩ হাজার টাকা। বাসা ভাড়া বাবদ ৩ হাজার টাকা চলে যায়।’’

তবে জাকির হোসেন ব্যাচেলর হওয়ায় কারখানার মধ্যেই থাকেন। বিয়ের পর এ কাজ করার ইচ্ছা নেই বলে জানান তিনি।

বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১-এ অপারেটর হিসেবে কর্মরত রয়েছেন মোঃ সেলিম শেখ। তার জন্ম নড়াইলের লক্ষ্মীপাশা হলেও কর্মসংস্থানের কারণে রুপসার বাগমারা গ্রামে বসবাস করছেন। তিনি জানান, বর্তমান বয়স ৮৪। ২০ বছর বয়স থেকেই বরফ কারখানার সঙ্গে জড়িত। প্রথমে হেলপার হিসেবে ২৫০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে অপারেটর হিসেবে মাসিক ১৫ হাজার টাকা পান। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে কাজ শুরু করতে হয়। তবে সবসময় উৎপাদন না থাকলেও ২৪ ঘণ্টা কারখানায় থাকতে হয়। ছুটি পান না।

‘অ্যামোনিয়া গ্যাসের অতিরিক্ত চাপের কারণে সিলিন্ডার লিকেজ হলে মৃত্যু ঝুঁকি রয়েছে। তবে তিনি কখনো বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হননি বলে জানান তিনি।

‘মায়ের দোয়া আইস এন্ড কোল্ড স্টোরেজে’র শ্রমিক জাকারিয়া হাওলাদার বলেন, ‘‘চার বছর বরফকলে কাজ করছি। চাকরির ভবিষ্যৎ নেই। শ্রম দিতে পারলে মজুরি হয়, না হলে হয় না। নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র দেন না মালিকপক্ষ। বেতন বাড়ানোর কথা বললে তারা আমলে নেন না।’’

একই এলাকার ‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’ কাজ করছেন মোঃ মুন্না গাজী ও মোঃ হাসান শেখ। তারা নগরীর জিন্নাপাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুজনেই মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতন পান। এর বাইরে তেমন কোন সুযোগ সুবিধা নেই।

‘ব্রাইট অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজে’র ম্যানেজার আশিকুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে জানান, কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সুরক্ষায় উদাসীন। এখানে অ্যামোনিয়া গ্যাসের সিলিন্ডার মাঝেমধ্যেই লিক হয়। তবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিষ্ঠানটিতে ৫৩২টি আইস উৎপাদনের ক্যানের প্লান্ট রয়েছে। তবে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ ক্যান বরফ উৎপাদন হয়। ছয়জন শ্রমিক কাজ করে বলে জানান তিনি।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ- ২'র ম্যানেজার জামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘বরফের মূল ক্রেতা চিংড়ি ও সাদা মাছের ব্যবসায়ীরা। এর বাইরে গ্রীষ্ম মৌসুমে ভ্রাম্যমাণ ও দোকানে শরবত বিক্রেতারাও কারখানা থেকে বরফ কিনে নেন। গ্রীষ্ম মৌসুমের ৬ মাস চাহিদা থাকে এবং কিছুটা লাভের মুখ দেখা যায়। তবে শীত মৌসুমের ছয় মাস বরফের চাহিদা কম থাকে। তখন কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন ও মজুরি দিয়ে লোকসান গুণতে হয়।’’

জামাল উদ্দিন স্বীকার করেন কারখানায় নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা এড়াতে কোন সরঞ্জাম নেই। তবে অপারেটরদের অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঝুঁকি প্রতিরোধে মাক্স সরবরাহ করা হয়।

‘বেঙ্গল আইস অ্যান্ড কোল্ড স্টোরেজ-১'র মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রিয়াদ-উল-জান্নাত সৈকত বলেন, ‘‘ব্যবসা খুব ভালো যাচ্ছে না। কখনো লাভ, কখনো লোকসান এভাবেই চলছে। গত বছর কারখানা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৯ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।’’

তবে লাভ হলে শ্রমিক কর্মচারীদের মজুরি ও অন্যান্য সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

এ বিষয়ে শ্রমিকদের সংগঠন রূপসা বেড়িবাঁধ হ্যান্ডলিং শ্রমজীবী ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রিপন শেখ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘‘নতুন বাজার এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি বরফকলের ৪০ জন শ্রমিক তাদের ইউনিয়নের সদস্য। বিগত দেড় বছর আগে মজুরির সমস্যা নিয়ে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে দুই একজন শ্রমিক অভিযোগ করলে ইউনিয়নের মাধ্যমে সেটির সমাধান করে দেন তারা। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসে না।’’

বরফকলের শ্রমিকদের নিয়ে তারা মে দিবসের কর্মসূচি পালন করেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তারা//

সম্পর্কিত নিবন্ধ