আবদুল্লাহপুর ইউনিয়নের আসমা বেগম ঠান্ডায় আক্রান্ত এক দিন বয়সী শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। ব্যবস্থাপত্র নিয়ে নার্সের সন্ধানে গেলে জোসনা বেগম নামে এক নারী তাঁর সন্তানকে ইনজেকশন পুশ করেন। বিনিময়ে ২০০ টাকা দাবি করলে তাঁকে ১০০ টাকা দেওয়া হয়। পরে আসমা জানতে পারেন, নার্স পরিচয় দেওয়া জোসনা হাসপাতালের আয়া।
জাহানপুর ইউনিয়নের আবুল কাশেম ফরাজী এসেছিলেন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত সন্তানকে নিয়ে। তাঁর সন্তানকেও জোসনা বেগম স্যালাইন পুশ করেছেন।
শুধু আসমা বেগম বা কাশেম ফরাজীর ক্ষেত্রে নয়, চরফ্যাসন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা এমন অনেক রোগীকেই স্যালাইন ও ইনজেকশন পুশ করছেন জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগমের মতো আয়া-ঝাড়ুদার। বিষয়টি কয়েকজন চিকিৎসক ও নার্স স্বীকার করে বলেন, জনবল সংকটের সুযোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে এ ধরনের কাজ চলছে।
আয়া জোসনা বেগম ও রোকেয়া বেগম জানান, নার্সদের কাছ থেকে ক্যানোলা ও স্যালাইন পুশ করা শিখেছি। রোগীর চাপ থাকলে তারা কুলিয়ে উঠতে পারেন না। তখন রোগীর স্বজনরাই ডেকে সাহায্য করতে বলেন। এতে তাদের উপকার হয়। তাই বিনিময়ে খুশি হয়ে টাকাও দেন।
উপজেলার সাত লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ২০২৩ সালে হাসপাতালটি ৫০ থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বাড়ানো হয়নি জনবল ও অবকাঠামো। এ সুযোগে হাসপাতালে কর্মরত আয়া ও আউটসোর্সিং কর্মীরা অপকর্ম করে থাকেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ১৭ জন নার্স রয়েছেন। এর পরও আয়া ও ঝাড়ুদার দিয়ে চলছে শিশু, কিশোর ও বয়স্কদের চিকিৎসাসেবা। কর্তব্যরত নার্সদের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই রোগীরা না জেনে বা বাধ্য হয়ে আয়া ও ঝাড়ুদারের কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। নার্সদের দাবি, রোগীর তুলনায় নার্স কম। এ কারণে রোগীর স্বজনরা না বুঝে আয়াদের শরণাপন্ন হন। আয়ারা তাদের না জানিয়ে গোপনে এসব অপকর্ম করছেন। কর্মতর্কাদের বিষয়টি জানালেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.
চরফ্যাসন হাসপাতালে দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স অপরাজিতা রানী জানান, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় আয়াদের সহায়তা নিতে হয়। তবে তারা নিজেরা একা এ কাজ করতে পারেন না। টাকা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকে সেবা পেয়ে নার্সদের খুশি হয়ে টাকা দিয়ে থাকেন। টাকা দিয়ে পরে কেউ অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোভন বসাক বলেন, আয়া বা ঝাড়ুদার এসব কাজ করতে পারেন না। বিষয়টি জানতে পেরে রোকেয়া বেগম নামে আউটসোর্সিংয়ের এক আয়াকে শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাঁর জবাব পেলে সে অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স য ল ইন
এছাড়াও পড়ুন:
জুনে ঢাকায় বিপিও সম্মেলন
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্ট্যাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিংয়ের (বাক্কো) উদ্যোগে এবং বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) স্ট্র্যাটেজিক অংশীজনে রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বিপিও শিল্পের বহুল আলোচিত সম্মেলন বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫।
সামিটের এবারের প্রতিপাদ্য বিপিও ২.০: রেভ্যুলেশন টু ইনোভেশন, যা নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ রূপান্তরের প্রতিচ্ছবি। বৃহস্পতিবার (২২ মে) উদ্যোক্তারা সম্মেলনের সার্বিক দিক উপস্থাপন করেন।
আগামী ২১ ও ২২ জুন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল আয়োজনের অংশীজন হয়ে কাজ হয়ে কাজ করবে।
বাক্কো কার্যনির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুসনাদ-ই-আহমদ বিগত বিপিও সামিটের কার্যক্রম ও প্রাপ্তীর বিষয়ে অবহিত করেন। সামিটের সম্ভাব্য কার্যক্রম ও পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, সামিটে ৩০টি দেশি-বিদেশি তথ্যপ্রযুক্তি/বিপিও প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করবেন। এবারের সামিট হবে গ্রাহকসেবা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক আন্তর্জাতিক মিলনমেলা।
উদ্যোক্তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক ৯টি সেমিনার ও কর্মশালার পরিকল্পনা রয়েছে। যেখানে আইটিইএস ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিদেশি খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন, যা সামিটকে বিশ্বমানের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক সেবা খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে। বিপিও খাত আমাদের তরুণ সমাজের জন্য সুবিশাল কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করছে, যেখানে দক্ষতা ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করার অপার সুযোগ রয়েছে।
সরকার ইতোমধ্যে আইটিইএস খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ইন্ডাস্ট্রির টেকসই উন্নয়নের জন্য নীতিমালা, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করছে। বিপিও সামিটে দেশি-বিদেশি অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করবে। সামিটের মাধ্যমে আমরা শুধু নতুন প্রযুক্তি ও ধারণার সঙ্গে পরিচিত হব না, বরং দেশের তরুণরা কীভাবে বিপিও খাতে যুক্ত হতে পারবে সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জানানো হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার উদ্দিন বলেন, দেশের তরুণদের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প খাতে কয়েক ধরনের কাজের বিষয়ে সচেতন করতে হবে। কারিগরি ও প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে। বিপিও সামিট এমন প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে তরুণরা অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে জানতে পারে। এ শিল্পে ক্যারিয়ার গঠনে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন পাবে। তরুণরা প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও উদ্যমের মাধ্যমে যে সাফল্য অর্জন করছে, যা দেশের অর্থনীতির ভিত মজবুত করছে।
বাক্কোর সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, চার শতাধিক সদস্য নিয়ে বাক্কো ইতোমধ্যে ৮৫ হাজারের বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। প্রতি বছর ৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের আয় অর্জন করছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বাক্কো এক লাখ টেকসই কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঙ্গে শতকোটি মার্কিন ডলার বার্ষিক আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কাজ করছে। তাই এবারের বিপিও সামিট বাক্কোর লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে।
বাক্কোর সাধারণ সম্পাদক ফয়সল আলিম বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও পরিষেবা রপ্তানির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি আয়কে ত্বরান্বিত করতে ফ্রিল্যান্সারদের অবদান অপরিসীম। সামিটে আয়োজিত সেমিনারের মাধ্যমে আমরা ফ্রিল্যান্সারদের সব ধরনের সমস্যা শুনবো এবং সম্ভাব্য সমাধান নিয়ে সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করবে বাক্কো। আউটসোর্সিং শিল্পের একক সংগঠন হিসেবে বাক্কো ফ্রিল্যান্সার ফোরাম এখন থেকে ফ্রিল্যান্সার উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাবে।