সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে বাদ যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রের সুদ
Published: 15th, May 2025 GMT
সামাজিক নিরাপত্তা খাত থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদ, আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু কর্মসূচি বাদ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তাসহ নতুন কিছু প্রকল্প অন্তর্ভুক্তও হবে। সার্বিকভাবে এ খাত নিয়ে নতুন বাজেটে বেশ সংস্কারের ঘোষণা থাকছে। তাই সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতা ও কিছু ক্ষেত্রে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়লেও আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সার্বিকভাবে এ খাতে বরাদ্দ কমছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের আওতায় থাকা ২১টি কর্মসূচিকে দরিদ্র মানুষের সুরক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে মত দেওয়া হয়েছে। সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, কিন্তু সামাজিক নিরাপত্তার অন্তর্ভুক্ত খাতগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর পেনশন, কৃষি খাতে ভর্তুকি ও সঞ্চয়পত্রের সুদ পরিশোধ। এ ধরনের কর্মসূচিতে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৭২ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা, যা এ খাতে মোট বরাদ্দের ৫৩ শতাংশ।
সরকারের জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের (এনএসএসএস) সঙ্গে এই কর্মসূচিগুলোর মিলও নেই। তাই সামঞ্জস্যহীন কর্মসূচি বাদ দিয়ে প্রকৃত অর্থে সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে টাস্কফোর্স। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত বৈষম্যহীন টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণবিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করা হয়। শুধু টাস্কফোর্সই নয়, বিভিন্ন দাতা সংস্থা, দেশি-বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতিবিদরা বহুদিন থেকেই সামাজিক সুরক্ষা খাতকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে আসছেন।
জানতে চাইলে বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সম্প্রতি সচিবালয়ে উপদেষ্টা ড.
তিনি আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তাসহ এ খাতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এ খাত থেকে আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাদ যাবে। তবে এখন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত হয়নি। তাই কতগুলো প্রকল্প বাদ যাবে আর কতগুলো অন্তর্ভুক্ত হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। নতুন করে অন্তর্ভুক্ত আর বাদ দেওয়ার পর সার্বিকভাবে এ খাতে মোট বরাদ্দ কিছুটা কমবে।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের চলমান আটটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণ ও ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ছে। মা ও শিশু, বয়স্ক, বিধবা, প্রতিবন্ধী, বেদে এবং অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতার পরিমাণ ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বেশি দেখানোর জন্য বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রতি অর্থবছরেই এ খাতের বরাদ্দ ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখিয়ে আসছিল। বর্তমানে ২৬টি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৪০টি কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এ জন্য চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের ১৭ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। এর মধ্যে সঞ্চয়পত্রে সুদ বাবদ ব্যয় খাতে বরাদ্দ রয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। এটিসহ আরও কিছু কর্মসূচি বাদ যাওয়ায় আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ কমে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বর দ দ র প রকল প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বেড়েছে
গুলশানের ওয়েস্টিন ও বনানীর শেরাটন হোটেলের ব্যবসা বেড়েছে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ওয়েস্টিন হোটেলের ব্যবসা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৪ শতাংশ বেড়েছে। আর বনানীর শেরাটন হোটেলের ব্যবসা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ওয়েস্টিন হোটেল ব্যবসা করেছে সোয়া ৪৭ কোটি টাকার। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ৩১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ওয়েস্টিনের ব্যবসা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ কোটি টাকার বা ৫৪ শতাংশ।
একইভাবে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বনানীর শেরাটন হোটেল ব্যবসা করেছে সাড়ে ২১ কোটি টাকার। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে শেরাটন হোটেলের ব্যবসা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১১ কোটি টাকার বা ১১৪ শতাংশ।
ঢাকার গুলশানের ওয়েস্টিন ও বনানীর শেরাটন হোটেলের এ দেশীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও মালিকানার সঙ্গে রয়েছে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস। সেই সূত্রে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসার এই তথ্য পাওয়া গেছে। এই দুটি তারকা হোটেলের পাশাপাশি ইউনিক হোটেলের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় রয়েছে হানসা নামের আবাসিক হোটেলও। এই তিন হোটেল ব্যবসা মিলে পরিচালিত হয় ইউনিক হোটেলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম। পাশাপাশি বেশ কিছু খাতেও কোম্পানিটির বিনিয়োগ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, গতকাল রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি।
ব্যবসা কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে; কারণ, গত বছর ব্যবসা খুব খারাপ ছিল। শাখাওয়াত হোসেন, সিইও, ইউনিক হোটেলইউনিক হোটেলের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওয়েস্টিন ও শেরাটনের ব্যবসা বৃদ্ধির ফলে ইউনিক হোটেলের সামগ্রিক ব্যবসাও বেড়েছে। গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইউনিক হোটেলের ব্যবসা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ কোটি টাকায়। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৪৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটির ব্যবসা গত বছরের চেয়ে ২৯ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসা যতটা বেড়েছে, মুনাফা বেড়েছে তার চেয়েও বেশি। কারণ, বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ করা শেয়ার বিক্রি থেকে এই প্রান্তিকে ভালো আয় যোগ হয়েছে কোম্পানিটিতে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ইউনিক হোটেল মুনাফা করেছে ৪০ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের একই প্রান্তিকে কোম্পানিটির মুনাফা বেড়েছে ২৭ কোটি টাকা বা প্রায় ২০৮ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে হোটেল ব্যবসার বাইরে বিদ্যুৎ খাতের কোম্পানির শেয়ার বিক্রি বাবদ প্রায় পৌনে ৪ কোটি টাকা বাড়তি আয় যুক্ত হয়েছে, যার কারণে মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
কোম্পানিটি জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা ছিল। ওই সময় বিদেশি অতিথি প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছিল। সেই কারণে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যবসা বেশ খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে স্বাভাবিক ব্যবসা হয়েছে। তারপরও গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে বেশি খারাপ ব্যবসা হওয়ায় এ বছরের একই সময়ের ব্যবসায় অনেক বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
জানতে চাইলে ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের ব্যবসা কিছুটা ভালো হয়েছে। তবে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি বছরের একই সময়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে; কারণ, গত বছর ব্যবসা খুব খারাপ ছিল। এ ছাড়া চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ খাতের বিনিয়োগ থেকে উল্লেখযোগ্য একটি আয় কোম্পানির হিসাবে যুক্ত হয়েছে। তাতে মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।’