ছবি: ফেসবুক

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দুঃসহ দিন পার করল রাজধানীবাসী

যানজটের কবলে পড়ে আরেকটি দুঃসহ দিন পার করল রাজধানীবাসী। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে গত ১৪ মে থেকে চলছে এই অবস্থা। সেই সঙ্গে নানা দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আন্দোলন তো আছেই।

গতকাল বৃহস্পতিবার দিনের প্রথম ভাগে হওয়া ভারী বৃষ্টিপাত ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে নিয়ে যায়। ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে লাগে দুই ঘণ্টারও বেশি। কর্মসূচি-বৃষ্টি-জলাবদ্ধতার সঙ্গে যানজটে কার্যত অচল হয়ে যায় রাজধানী।

আন্দোলন শুরুর পর বিকেল ৫টা থেকে প্রতিদিন রাস্তা ছেড়ে দিলেও গত বুধবার থেকে আর রাস্তা থেকে সরেনি আন্দোলনকারীরা। ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা গুলিস্তান থেকে শুরু করে হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন-সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল। এক পর্যায়ে তারা যমুনার পাশে স্থায়ীভাবে অবস্থান নেয়। গতকাল সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে জমায়েত হতে থাকে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী-সমর্থকরা। ফলে সকাল থেকেই পুরো এলাকায় যান চলাচল ছিল বন্ধ। সেই সঙ্গে শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে শাহবাগে সড়কে অবস্থান নেয় ছাত্রদল। এর প্রভাব পড়তে শুরু করে প্রায় পুরো রাজধানীতে। 

এদিকে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ছিল অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ সমাবেশ। পাশাপাশি যাত্রাবাড়ীতে সমাবেশ করে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এ ছাড়া বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন জায়গায় তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। সড়কগুলোতে পানি জমে কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে যাওয়ায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে। বাড়তি হিসেবে ছিল সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস ও ভিভিআইপি মুভমেন্ট। সব মিলিয়ে গত ক’দিনের চেয়ে গতকাল যানজটের ভয়াবহতা ছিল বেশি। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ যাত্রী ও গাড়িচালকরা।

তেজকুনিপাড়ার বাসিন্দা নিগার সুলতানা ১০ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মালিবাগে যাওয়ার জন্য ফার্মগেট থেকে রিকশায় ওঠেন। যানজটের কারণে বিভিন্ন পথ ঘুরে যখন তিনি ইস্কাটনের মগবাজার ফ্লাইওভারে ওঠার পয়েন্টে পৌঁছান, তখন দুপুর আড়াইটা। ক্ষোভ প্রকাশ করে নিগার সুলতানা বলেন, ‘দেশে যে কী এক অবস্থা শুরু হয়েছে, কিছুই বুঝতে পারি না! যেভাবে রিকশা এগোচ্ছে, তাতে কয়টায় গিয়ে পৌঁছাব, জানি না। আবার ব্যাগবোঁচকা নিয়ে হেঁটে যে যাব, সে অবস্থাও নেই। কী যে বিপদে পড়েছি!’

দুপুরে গাজীপুর থেকে গুলিস্তানগামী বনশ্রী পরিবহনের বাসচালক ইসমাইল মোল্লা বলেন, ‘সকাল ৯টায় গাজীপুর থেকে রওনা হয়েছি। এখন দুপুর আড়াইটা বাজে। মগবাজার সিগন্যালও পার হতে পারিনি। অন্যদিন দুটি করে রাউন্ড ট্রিপ দিতাম। আজকে এক ট্রিপই মনে হয় দিতে পারব না।’

গুগল ম্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অন্যতম গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টের মাধ্যমে জানা যায়, অবরোধ আর বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট যানজট মগবাজার, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, এয়ারপোর্ট রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, হাতিরঝিল, মহাখালীসহ আরও অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। সবচেয়ে বিপাকে পড়েন রোগীরা।

অ্যাম্বুলেন্সগুলোও ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকে। পুরান ঢাকার সদরঘাট, বাবুবাজার, সায়েদাবাদ থেকে শুরু করে মতিঝিল, গুলিস্তান, বিজয়নগর, নীলক্ষেত, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকায় যানজট পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। 

মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরাগামী রমজান পরিবহনের যাত্রী ইকবাল ইসলাম বলেন, ‘সংসদ ভবনের সামনে থেকেই যানজট শুরু হয়েছে। বাস আর এগোয় না। ফার্মগেট থেকে বাংলামটর হয়ে মগবাজার পর্যন্ত পৌঁছাতে লেগেছে দুই ঘণ্টা। ফ্লাইওভারের ওপরেও একই অবস্থা।’

যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা অটোরিকশাচালক ইশারফ হোসেন বলেন, ‘গত কয়দিন ধরে এত যানজট, দৈনিক জমার টাকা তোলাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। একেক দল তাদের স্বার্থে রাস্তা বন্ধ করে। আর আমাদের সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। এ দেশে সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবে না।’

সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অবরোধ তুলে নেওয়ার পর পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বৃষ্টির কারণে খারাপ অবস্থা হয়েছিল। মগবাজার ফ্লাইওভারের যেসব পয়েন্টে দোতলা আছে, বৃষ্টির সময় সব মোটরসাইকেল চালক তার নিচে আশ্রয় নেন। কেউ বৃষ্টিতে ভিজতে চান না। ফলে ফ্লাইওভারও ব্লক হয়ে যাওয়ায় অন্য যানবাহনগুলো যেতে পারছিল না। এতে অবস্থার বেশি অবনতি হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ