চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে আজ শনিবার এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। তারা উপদেষ্টার বক্তব্যকে চিকিৎসকদের জন্য ‘অবমাননাকর’ বলে আখ্যায়িত করেছে।

প্রসঙ্গত, আজ সকালে রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে বিপিএইচসিডিওএ আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসিফ নজরুল চিকিৎসকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘পৃথিবীতে কোন জায়গায় হসপিটালে, প্রাইভেট ক্লিনিকে সব সময় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধির জন্য নির্দিষ্ট টাইম থাকে ডাক্তারের?.

..আপনারা ওষুধ কোম্পানির দালাল? এ দেশে বড় বড় হসপিটালের ডাক্তাররা কি ওষুধ কোম্পানির মধ্যস্বত্বভোগী? কোন জায়গায় নামান আপনারা নিজেদের?।’

ড্যাবের সভাপতি ডা. হারুন আল রশীদ এবং মহাসচিব ডা. মো. জহিরুল ইসলাম শাকিল স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আইন উপদেষ্টাকে জনস্বার্থে তাঁর বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানানো হয়।

বিবৃতিতে ড্যাবের নেতারা বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হয়েও চিকিৎসকদের নিয়ে এমন অবমাননাকর বক্তব্য চিকিৎসকদের নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগকে হেয়প্রতিপন্ন করেছে। এমন বক্তব্য স্বাস্থ্যসেবার প্রতি জনসাধারণের আস্থাকে সংকুচিত করে। ন্যায্য বেতন-ভাতা না পাওয়া সত্ত্বেও প্রত্যন্ত গ্রামীণ ক্লিনিক থেকে শহরের ব্যস্ততম হাসপাতালসমূহে বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা নিরলসভাবে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে শুরু করে ডেঙ্গুর প্রকোপ পর্যন্ত নানা স্বাস্থ্য সংকটে বহু চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন। কেউ কেউ প্রাণও হারিয়েছেন। তবুও চিকিৎসকরা তাঁদের সেবা ও মানবিকতার পথ থেকে পিছপা হননি।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে চিকিৎসকেরা আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। গণ-অভ্যুত্থানে চিকিৎসকদের এক বিশাল অবদান থাকার পরও সরকারের একজন উপদেষ্টা কর্তৃক চিকিৎসকদেরকে ‘অপমান করা এক বিরাট অন্যায়।’

গঠনমূলক সমালোচনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সৌন্দর্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে ড্যাব নেতারা বলেন, ‘তবে সেটি হতে হবে তথ্যনির্ভর ও সম্মানজনক। পুরো চিকিৎসক সমাজকে নিয়ে অযথা বদনাম করা হাজারো সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের আত্মত্যাগকে অপমানিত করে, চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করে। সর্বোপরি, মেধাবী তরুণদেরকে চিকিৎসাসেবার মতো মহান পেশায় আসার আগ্রহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।’

এ বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা জনাব আসিফ নজরুলকে তাঁর বক্তব্য পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই এবং জনস্বার্থে একটি ব্যাখ্যা বা দুঃখ প্রকাশ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসকদ র চ ক ৎসক র উপদ ষ ট র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আঁকিবুঁকি আর নয়: ভারতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত

কি–বোর্ডে লেখালেখির যুগে এসে হাতের লেখার গুরুত্ব কি এখনো আছে? ভারতের আদালতের মতে, হ্যাঁ, যদি লেখক হন একজন চিকিৎসক।

ভারতসহ সারা বিশ্বেই চিকিৎসকদের হাতের লেখা নিয়ে রসিকতা চলে। বলা হয়, তাঁদের লেখা শুধু ফার্মেসির কর্মীরাই বুঝতে পারেন। তবে সম্প্রতি পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তাঁদের আদেশে চিকিৎসকদের হাতের লেখা স্পষ্ট করার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

তবে অবাক হলেও সত্য, হাতের লেখার কোনো সম্পর্ক ছিল না, এমনই একটি মামলায় এ রায় দিয়েছেন আদালত। একজন নারী এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ষণ, প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছিলেন। বিচারপতি জশগুরপ্রীত সিং পুরি ওই ব্যক্তির জামিন আবেদনের শুনানি করছিলেন।

নারীর অভিযোগ ছিল, আসামি সরকারি চাকরি দেওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। ভুয়া সাক্ষাৎকারও নেন এবং তাঁর ওপর যৌন নির্যাতন চালান।
আসামি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, তাঁদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে সম্পর্ক হয় এবং অর্থ নিয়ে বিবাদ থেকে এ মামলা করা হয়েছে।

বিচারপতি পুরি জানান, তিনি যখন ওই নারীর চিকিৎসা–সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেখেন, তখন সেটি একেবারেই দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও প্রতিবেদনটি তৈরি করেছিলেন একজন সরকারি চিকিৎসক।

রায়ে আদালত বলেছেন, পাঠযোগ্য চিকিৎসা–নির্দেশনা একটি মৌলিক অধিকার। কারণ, এটি অনেক সময় জীবন-মৃত্যুর পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

‘এমনকি একটি শব্দ বা অক্ষরও পাঠযোগ্য ছিল না। বিষয়টি আদালতের বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছে’, রায়ে লিখেছেন বিচারপতি।

বিবিসি যে রায়ের অনুলিপি দেখেছে, তাতে সেই প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের দুই পাতার প্রেসক্রিপশন রয়েছে। প্রেসক্রিপশনের লেখা এতটাই অস্পষ্ট যে কিছুই বোঝা যায় না।

আরও পড়ুনপ্রেসক্রিপশন পড়ার উপযোগী করার বিষয়ে নির্দেশ০৯ জানুয়ারি ২০১৭

বিচারপতি পুরি লিখেছেন, ‘প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।’

আদালত সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন, মেডিকেল কলেজের পাঠ্যক্রমে হাতের লেখা উন্নত করার পাঠ যুক্ত করতে। সঙ্গে দুই বছরের মধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন চালুর সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। তত দিন সব চিকিৎসককে বড় হাতের অক্ষরে স্পষ্টভাবে প্রেসক্রিপশন লিখতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রযুক্তি ও কম্পিউটার এত সহজলভ্য হওয়ার সময়ে এসে সরকারি চিকিৎসকেরা এখনো এমন প্রেসক্রিপশন হাতে লিখছেন, যা হয়তো শুধু কিছু ফার্মাসিস্টই পড়তে পারেন—এটি বিস্ময়কর।জশগুরপ্রীত সিং পুরি, ভারতের হাইকোর্টের বিচারপতি

ভারতীয় মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) সভাপতি দিলীপ ভানুশালী বিবিসিকে বলেন, সমস্যার সমাধানে তাঁরা সহায়তা করতে ইচ্ছুক। আইএমএর সদস্যসংখ্যা ৩ লাখ ৩০ হাজারের বেশি।

ভানুশালী বলেন, শহর ও বড় নগরে অনেক চিকিৎসক ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশনে চলে গেছেন। তবে ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে এখনো স্পষ্ট করে লেখা প্রেসক্রিপশন পাওয়া খুবই কঠিন।

আরও পড়ুন'প্রেসক্রিপশন লিখুন বড় হাতের অক্ষরে'১৩ জুন ২০১৫

‘সবাই জানেন, অনেক চিকিৎসকের হাতের লেখা খারাপ। এর প্রধান কারণ, তাঁরা অতিরিক্ত ব্যস্ত থাকেন, বিশেষ করে ভিড়ে ঠাসা সরকারি হাসপাতালে’, বলেন ভানুশালী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, অস্পষ্ট প্রেসক্রিপশন ভুল–বোঝাবুঝির সুযোগ তৈরি করে এবং এর ফল ভয়াবহ হতে পারে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আঁকিবুঁকি আর নয়: ভারতে চিকিৎসকদের হাতের লেখা ঠিক করতে বললেন আদালত