লন্ডনে সরকারকে বেচে দিয়ে এসেছেন প্রধান উপদেষ্টা: হাসনাত
Published: 16th, August 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, “গণঅভ্যুত্থানের পরে যাকে রাষ্ট্রপ্রধান বানানো হয়েছে উনি লন্ডনে গিয়ে সিজদা দিয়ে এসেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা আছে কি না অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান একটি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে প্রেস কনফারেন্স করছেন। ওইদিনই তিনি লন্ডনে সরকারকে বেচে দিয়ে এসেছেন।”
শনিবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বাংলামোটরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণপরিষদ নির্বাচন শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “মিডিয়া এখন রাজনৈতিক দলের কাছে বিক্রি। প্রশাসনে দেখা যায় সচিবালয়ে ৫টায় অফিস শেষ হয়, ৪টা থেকেই গুলশান ও পল্টনে লাইন দেওয়া শুরু হয়। আগে এটা ধানমন্ডি ৩২ আর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসে হতো। এটি যে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে সুখকর বিষয় ব্যাপারটি এমনও নয়।”
আরো পড়ুন:
আ.
জুলাই ঘোষণাপত্রের নীরব প্রতিবাদ জানাতে কক্সবাজার গিয়েছি: হাসনাত
এ সময় চ্যালেঞ্জ করে তিনি বলেন, “একজন রাজনীতিবিদ বলেছেন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নাকি আমরা টাকা নিয়েছি। আমি আপনাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বললাম যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাদের কেউ এসে সাক্ষ্য দিক যে তারা আমাদের কাছ থেকে টাকা দিয়েছে। অথবা এটার নথিপত্র থাকবে। একটা প্রমাণ যদি পাওয়া যায় হাসনাত আব্দুল্লাহ বা তার সহযোদ্ধারা দুর্নীতি করেছে আমরা রাজনীতি থেকে ইস্তফা দিব।”
নির্বাচন নিয়ে হাসনাত বলেন, “আমাদেরকে বলা হয় আমরা নির্বাচন পেছাতে চাই। আরে নির্বাচনের টাইমলাইন নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। নির্বাচন নভেম্বর, ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে হোক আমাদের কোনো সমস্যা নেই কিন্তু রুলস অব গেম চেঞ্জ করে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন যখনই হোক অবশ্যই সেটা গণপরিষদ নির্বাচন হতে হবে।”
পুরোনো সংবিধানকে ফ্যাসিবাদের পাঠ্যবই উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, “আমাদেরকে অবশ্যই একটা নতুন সংবিধান দিতে হবে। আর যারা মনে করছে নতুন রাজনৈতিক দলকে উঠতে দিবে না তাদের বলতে চাই আসন দিয়ে আমাদের কেউ কিনতে পারবে না। আমরা বিক্রি হতে আসিনি।”
এনসিপির এই নেতা বলেন, “জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দলের অনেকেই আমাদেরকে শত্রুজ্ঞান করে। কিন্তু কোনো লাভ নেই। কারণ ৫ আগস্টের পর আপনি যদি মনে করেন এই দিনটি যে কারণে হয়েছে সেই কারণগুলোকে বিদ্যমান রেখে আপনি একটা নতুন রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে যাবেন তাহলে আপনি আরো একটি গণপ্রতিরোধের শিকার হবেন।”
ঢাকা/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প আম দ র ক হ সন ত র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ ১৫ অক্টোবরের মধ্যে
জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ৫ অক্টোবর আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ১০ অক্টোবরের মধ্যে বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করে সরকারকে দিতে চায় কমিশন। তাদের লক্ষ্য ১৫ অক্টোবরের মধ্যে সব দলের স্বাক্ষরের মাধ্যমে সনদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া।
তবে জুলাই সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা কাটেনি। বিএনপি চায় প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন হবে জাতীয় নির্বাচনের পর, সংসদের মাধ্যমে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন এবং এর ভিত্তিতে নির্বাচন চায়। ফলে কমিশনের লক্ষ্য কতটা পূরণ হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
৮৪টি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর খসড়া চূড়ান্ত হলেও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনো ঐকমত্য হয়নি। এ কারণে আটকে আছে জুলাই সনদ।
বাস্তবায়নের উপায় ঠিক করতে ১১ সেপ্টেম্বর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। তিন দিন আলোচনা হলেও এখনো ঐকমত্য হয়নি। আপাতত আলোচনা মুলতবি রয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, ৫ অক্টোবর আবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসবে কমিশন। কমিশনের পরিকল্পনা হলো, ওই দিনই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শেষ করা। এরপর দলগুলোর সঙ্গে আর আলোচনা করা হবে না। সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে মোটাদাগে ছয়টি সুপারিশ পেয়েছিল কমিশন। সেগুলো হলো পূর্ণাঙ্গ সনদ বা তার কিছু অংশ নিয়ে গণভোট, বিশেষ সাংবিধানিক আদেশে বাস্তবায়ন, গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, ত্রয়োদশ সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, সংসদকে সংবিধান সংস্কার সভা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে সনদের বিষয়গুলো সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা এবং সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের কাছে এই মর্মে মতামত চাওয়া যে অন্তর্বর্তী সরকার এই সনদ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না।
অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছিলেন, জুলাই সনদ নিয়ে সংবিধান আদেশ জারি করা যেতে পারে। এটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সংবিধান আদেশ নিয়ে গণভোট করা যেতে পারে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংস্কার প্রস্তাবগুলোর বাস্তবায়ন টেকসই করতে হলে গণভোট বা গণপরিষদ সবচেয়ে ভালো বিকল্প।
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের আগেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। আলী রীয়াজ, সহসভাপতি, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, কমিশন সরকারকে বাস্তবায়নের একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করবে। এখন যে কয়টি পদ্ধতি আলোচনায় আছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে বিকল্প পদ্ধতির সংখ্যা কমিয়ে আনতে চায়। যদি দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না হয়, তাহলে ৫ অক্টোবর দলগুলোর মতামত শোনার পর কমিশন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করবে। ৮-৯ অক্টোবর বাস্তবায়নের সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দিতে চায়। ১৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশনের বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যেই কমিশন জুলাই জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করতে চায়।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব সমন্বয় করে ১০ অক্টোবরের আগেই বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন। সেখানে একাধিক বিকল্প পদ্ধতি সুপারিশ করা হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সমাধানের প্রস্তাবটা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে এলে। কারণ, এখানে কমিশন অনুঘটক মাত্র।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই রাজনৈতিক মতভিন্নতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি মনমতো না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দলের জুলাই সনদে সই না করার আশঙ্কা আছে।রাজনৈতিক মতভিন্নতাসনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান পুরোপুরি ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের একমাত্র বৈধ পথ বা ফোরাম হচ্ছে জাতীয় সংসদ। আগামী সংসদের মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনো উপায়ে সংবিধান সংস্কার করা সম্ভব কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত চাওয়ারও পক্ষে দলটি।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। এর ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন হতে হবে। আগামী সংসদের হাতে বাস্তবায়ন ছেড়ে দেওয়া হলে এসবের বাস্তবায়ন ঝুলে যাবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চায় গণপরিষদের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা হোক। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ গণপরিষদ এবং নিয়মিত সংসদ হিসেবে কাজ করতে পারে বলে মনে করে দলটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই রাজনৈতিক মতভিন্নতার মধ্যে শেষ পর্যন্ত ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদের চূড়ান্ত রূপ দেওয়া সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। কারণ, বাস্তবায়ন পদ্ধতি মনমতো না হলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক দলের জুলাই সনদে সই না করার আশঙ্কা আছে।
১৫ অক্টোবরের মধ্যে জুলাই সনদ চূড়ান্ত রূপ পাবে বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ৫ অক্টোবর ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার আলোচনা করবে। সেখানে কী হয়, সেটা দেখার পর এ বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা লম্বা সময়ের জন্য মুলতবি রাখার একটি উদ্দেশ্য ছিল যেন দলগুলো এ সময়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যে আসতে পারে। ইতিমধ্যে কিছু দল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেও। কিন্তু প্রধান দলগুলোর মধ্যে সে অর্থে কার্যকর আলোচনা হয়নি।
১৫ অক্টোবরের মধ্যে সনদ চূড়ান্ত করা সম্ভব বলে মনে করেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ প্রথম আলোকে বলেন, আরও আগেই এটা করা সম্ভব ছিল। কমিশনের চেষ্টাও ছিল। তবে বিশেষ বিশেষ দলের বিরোধিতার কারণে সেটা হয়নি। যদি আবারও একই কায়দায় দলীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বাধা প্রয়োগ করা হয় আর কমিশন শক্ত অবস্থান নিতে না পারে, তাহলে হবে না। দলগুলোর মতামত থাকবে। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষা সামনে রেখে সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সমঝোতার অগ্রগতি এখনো লক্ষণীয় নয়, তবে এ সুযোগ এখনো আছে।