শিবির জুলাইয়ের চুক্তি ভেঙ্গেছে, বাম সংগঠনের সংবাদ সম্মেলন-বিবৃতি
Published: 29th, May 2025 GMT
জুলাই অভ্যুত্থানের পর গঠিত রাজনৈতিক সমঝোতা ভেঙে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। ইসলামী ছাত্র শিবির এসব হামলা চালিয়েছে বলে দাবি সংগঠনটির।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তোলেন ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড।
মশিউর রহমান বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমরা এক অলিখিত রাজনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছেছিলাম, যেখানে মতপার্থক্য থাকলেও তা গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রকাশ করার প্রতিশ্রুতি ছিল। কিন্তু ইসলামী ছাত্র শিবির সেই চুক্তি ভঙ্গ করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে তারা প্রকাশ্যে হামলা চালিয়েছে, যা গভীর উদ্বেগজনক।
তিনি আরও জানান, চট্টগ্রামে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা চালানোর পর একজনকে আটক করা হলেও থানায় গিয়ে শিবিরের নেতাকর্মীরা মব তৈরি করে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে। এটি স্পষ্টভাবে জুলাই-পরবর্তী রাজনীতির গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা,—বলেন তিনি।
হামলাকারীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে মশিউর বলেন, আমরা কোনোভাবেই রাজপথে সন্ত্রাসের পুনরাবৃত্তি চাই না। যারা হামলা করেছে, তাদের বিচার না হলে রাজনৈতিক সহাবস্থানের পরিবেশ নষ্ট হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, অর্থ সম্পাদক ফারহানা মুনা, ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ঢাকা নগর শাখার সভাপতি আল-আমিন রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
সংগঠনটির নেতারা এ সময় শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ, শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন। তারা জানান, দাবিসমূহ বাস্তবায়নে সারা দেশে স্বাক্ষর সংগ্রহ ও শিক্ষা সংলাপ কর্মসূচি চালাচ্ছে ছাত্র ফেডারেশন।
বিচার দাবি ছাত্র ফ্রন্টের
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্র শিবিরের ধারাবাহিক হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিচারের দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। এক যুক্ত বিবৃতিতে সংগঠনটি এসব হামলাকে ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিস্যাৎ’ করার চেষ্টা বলে উল্লেখ করেছে।
সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি সালমান সিদ্দিকী ও সাধারণ সম্পাদক রাফিকুজ্জামান ফরিদের স্বাক্ষরিত এই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৭ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারকে বেকসুর খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের আয়োজিত মশাল মিছিলে ছাত্র শিবির ‘শাহবাগ বিরোধী ঐক্য’র নামে একাধিকবার হামলা চালায়। এতে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
পরদিন ২৮ মে একই দাবিতে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশেও শিবির ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে ফের হামলা চালায়। এতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী আহত হন।
বিশেষ করে নারী আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, একজন নারী আন্দোলনকারীকে লাথি মারার মতো ঘটনা সারা দেশের বিবেকবান মানুষকে গভীরভাবে ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ করেছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত দুই দিনের হামলায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে যাদেরকে রক্তাক্ত করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখ সারির যোদ্ধা ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র শিবির মিছিল চলাকালে ‘উস্কানি ও বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে’ বলেও অভিযোগ করা হয়।
বিবৃতিতে সংগঠনের দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ছাত্র জোটের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে ছাত্র শিবির ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে ধুলিস্যাৎ করেছে। ছাত্র শিবিরের সন্ত্রাসসহ সমস্ত ধরনের সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সারাদেশের ছাত্র-জনতাকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তারা আরও বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে সন্ত্রাস-দখলদারিত্বের রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ উঠেছিল। জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে যেসব সংগঠন নতুন করে সন্ত্রাসের রাজনীতির পথে হাঁটছে তাদের বিরুদ্ধে এদেশের শিক্ষার্থী-জনতার সোচ্চার হওয়া একান্ত জরুরি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট হামলাকারীদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছে।
এ দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে ছাত্রশিবিরের হামলা এবং যুদ্ধাপরাধী এটিএম আজহারের বেকসুর খালাসের প্রতিবাদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ) ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ আয়োজনে বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজু ভাস্কর্যে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ছ ত র জ ট র স গঠন র র জন ত ন র পর ন ত কর
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে
চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ব্র্যাক ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে। এপ্রিল–জুন প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৫৪ পয়সা। গত বছরের একই সময় যা ছিল ১ টাকা ২৫ পয়সা।
এ ছাড়া বছরের প্রথম ছয় মাসেও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি মুনাফা বেড়েছে। বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ৩ টাকা ৫৬ পয়সা। আগের বছর যা ছিল ২ টাকা ৬২ পয়সা, অর্থাৎ বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্র্যাক ব্যাংকের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। মূলত ব্যাংকের বিনিয়োগ ও সুদ আয় বৃদ্ধির কারণে ইপিএস বেড়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক ঘোষণায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, জানুয়ারি-জুন সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) দাঁড়িয়েছে ৪৪ টাকা ২৪ পয়সা, আগের বছর যা ছিল ৩০ টাকা ৯৯ পয়সা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, আমানত সংগ্রহ ও ব্যাংকঋণ বৃদ্ধির কারণে নগদ প্রবাহ বেড়েছে। তবে আগের বছরের তুলনায় ঋণ বিতরণে কিছুটা ধীরগতি দেখা গেছে।
অন্যদিকে ৩০ জুন ২০২৫ তারিখে শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদের মূল্য (এনএভি) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৬০ পয়সা। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর যা ছিল ৩৯ টাকা ৩৮ পয়সা। নিট মুনাফা ও সরকারি সিকিউরিটিজের পুনর্মূল্যায়নের ফলে এ বৃদ্ধি হয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
২০২৪ সালের জন্য ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ২৫ শতাংশ লভ্যাংশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ও ১২ দশমিক ৫ শতাংশ স্টক। ২০২৪ সালে ব্র্যাক ব্যাংক সমন্বিতভাবে আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। ফলে তাদের কর-পরবর্তী নিট মুনাফা (এনপিএটি) হয়েছে ১ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা, ২০২৩ সালে যা ছিল ৮২৮ কোটি টাকা। একক ভিত্তিতে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছরের ৭৩০ কোটি টাকার তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬৬ শতাংশ।