ঈদুল আজহার ছুটিতে বান্দরবানে পর্যটকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। প্রতিবারের মতো এবারো ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকদের আগমন শুরু হয়েছে। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে ছুটির বাকি দিনগুলো কাটাতে পার্বত্য এ জেলার দিকে আসছেন তারা।

দীর্ঘদিন পর রুমা ও থানচি থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় এই দুই উপজেলায় যেতে বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন ভ্রমণপিপাসুরা বলে জানিয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। 

প্রশাসনের পক্ষ থেকে রুমা ও থানচির যেসব এলাকায় এখন পর্যন্ত ভ্রমণ নিষিদ্ধ রয়েছে; ওইসব এলাকায় না যেতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঈদের তৃতীয় দিন কুয়াকাটা পর্যটকে মুখর

খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয়দের ভিড়

পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানান, বান্দরবানের আবাসিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোর রুম ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত আগাম বুকিং রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল ও রিসোর্টের শতভাগ রুম বুক হয়ে গেছে। এই বুকিংয়ের হার আগামী ১০ জুন পর্যন্ত রয়েছে। 

বান্দরবানের নীলাচল ও মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়ে পর্যটকরা ছুটে এসেছেন পাহাড়ি সৌন্দর্য উপভোগে। তারা নীলাচলের উঁচু থেকে নেমে আসা কুয়াশার চাদরের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্যামেরাবন্দি করছিলেন প্রতিটি মুহূর্ত। অন্যদিকে, মেঘলার স্বচ্ছ লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে অনেকে উপভোগ করছেন জলভ্রমণের আনন্দ। খুশিতে আত্মহারা শিশু ও তরুণ-তরুণীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে আপনজনের সঙ্গে কাটাচ্ছেন সময়।

থানচি বাসস্ট্যান্ডে দেখা হয় ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, “গত রোজার ঈদে আমি বান্দরবানের নীলাচল, মেঘলা, চিম্বুক এবং নীলগিরি ভ্রমণ করেছি। এবার বন্ধুদের নিয়ে থানচির রাজা পাথর দেখতে এসেছি।”

তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আগে থানচি যেতে পারিনি। এবার যেহেতু, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে, তাই রাজা পাথর ঘুরতে যাচ্ছি।"

তানভীর ইসলামসহ নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ২৬ জন বাইকার বগালেক যাচ্ছিলেন। মরুং বাজার এলাকায় কথা হয় তানভীরের সঙ্গে। তিনি বলেন, “দীর্ঘদিন বগালেক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ছিল। এখন যেহেতু প্রশাসন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে, এই সুযোগ মিস করতে চাই না।”

শফিকুল আলম নামে আরেক পর্যটক জানান, তারা ছয় বন্ধু মিলে চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবান এসেছেন। বান্দরবান আশেপাশের নীলাচল, মেঘলা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরে তারা রুমায় বগালেকে ঘুরতে যাবেন। 

থানচি ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মামুনুর রশীদ জানান, থানচি উপজেলায় পর্যটকদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। তারা রাজা পাথর (বড় পাথর), তিন্দু এবং তমা তুঙ্গি পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, কিছু পর্যটক ট্যুর ইভেন্টের আড়ালে প্রশাসনের নজর এড়িয়ে কিছু নিষিদ্ধ এলাকায় প্রবেশ করছেন। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব পুরো উপজেলায় পড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, রুমা ও থানচির নিষিদ্ধ বা সংবেদনশীল এলাকায় পর্যটকদের যাওয়া যেন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কারণ, যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার প্রভাব সরাসরি ওই এলাকার পর্যটন ব্যবসার ওপর পড়তে পারে। তাই পর্যটকদেরকেও নিষিদ্ধ এলাকায় ভ্রমণে যাওয়া থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.

আদনান চৌধুরী বলেন, “ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় পর থেকে থানচি উপজেলায় পর্যটক আসতে শুরু করেছে। খুব বেশি পর্যটক আসছেন, এটি বলা যাবে না। সামনের দিনগুলোতে পর্যটক বাড়বে বলে মনে করছি।” 

তিনি আরো বলেন, “উপজেলায় বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বয়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যে সব এলাকা ভ্রমণ নিষিদ্ধ রয়েছে ওইসব এলাকায় না যেতে পর্যটকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।” 

বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি বলেন, “বান্দরবান যেহেতু পর্যটন এলাকা, সেহেতু পর্যটকদের সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করে থাকি। পর্যটকদের নিরাপত্তা বিষয়ে আমরা দেখভাল করে থাকি। ঈদের ছুটিতে নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। টুরিস্ট পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সবসময় পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্তক অবস্থানে আছেন।”

ঢাকা/চাইমং/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর যটক ব ন দরব ন র ভ রমণ ন ষ উপজ ল য় এল ক য় ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

দর্শণার্থীদের পদভারে মুখর রাঙামাটি

ঈদের টানা ছুটিতে রাঙামাটির বিনোদন কেন্দ্রগুলো এখন দর্শণার্থীদের পদভারে মুখর। ঈদের পরদিন থেকেই প্রকৃতির রূপ দেখতে  হাজারো পর্যটক আসতে শুরু করেছেন পার্বত্য এ জেলায়। এখানকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ঝুলন্ত সেতু, পলওয়েল পার্ক, আরণ্যতে ভ্রমণপিপাসুদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

রবিবার (৮ জুন) সকাল থেকেই রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুতে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে। দলে দলে পর্যটকদের ঝুলন্ত সেতুতে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। তাদের অনেকেই এসেছেন পরিবারের সঙ্গে। পর্যটকদের অনেকে কাপ্তাই হ্রদে নৌবিহার করছেন। হ্রদ-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করে যান্ত্রিক জীবন একঘেয়েমি দূর করছেন তারা।

পলওয়েল পার্কেও ছিল পর্যটকদের সরব পদচারণা। তারা পার্কের ভেতরে থাকা বিভিন্ন সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। শিশুরা টয় ট্রেন ও দোলনাতে চড়ে আনন্দ করে। 

আরো পড়ুন:

কুয়াকাটায় কাঙ্ক্ষিত পর্যটক নেই

পর্যটক বরণে প্রস্তুত রাঙামাটি

রাজশাহী থেকে ঘুরতে আসা নূর হোসেন বলেন, “ঈদের ছুটি কাজে লাগাতে বন্ধুরা মিলে রাঙামাটি ঘুরতে আসলাম। চমৎকার জায়গা। শান্ত প্রকৃতি, হ্রদের জলও শান্ত ও স্বচ্ছ। এমন সৌন্দর্য বাংলাদেশের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে, তা নিজের চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।”

ঢাকা থেকে আসা এক নবদম্পতি বলেন, কয়েকদিন আগেই বিয়ে হয়েছে, ঈদের ছুটিতে তাই রাঙামাটি চলে আসলাম। শান্ত প্রকৃতি দেখে ভালো লাগছে। সুবলং ঘুরতে গিয়ে হ্রদের দুই পাশের পাহাড় খুব ভালো লেগেছে।

প্রিয়াংকা দে নামে এক পর্যটক বলেন, “আরণ্যক, পলওয়েল পার্ক এই জায়গাগুলো ঘোরা শেষ, এবার কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণে যাচ্ছি। হ্রদের সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত করবে এমন আশাই করছি।”

পর্যটন নৌযান ঘাটের ব্যবস্থাপক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, “ঈদের দ্বিতীয় দিন থেকে পর্যটকরা রাঙামাটি আসতে শুরু করেছেন। আশা করছি, পুরো সপ্তাহ ভালো পর্যটক পাব।”

এদিকে, রাঙামাটি শহরের অধিকাংশ হোটেল-মোটেলে বুকিং বেড়েছে। হোটেল হিল পার্কের সত্ত্বাধিকারী স্বপন শীল বলেন, “ঈদের ছুটিতে পর্যটক হবে সেটি আমরা আগেই ধারণা করেছিলাম। ঈদের আগে আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ রুম বুকিং হয়। আগামী কয়েকদিনও ভালো পর্যটক হবে।”

রাঙামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, “পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। আমাদের যে টার্গেট ছিল ঈদকে ঘিরে, আশা করছি, তা পূরণ হবে। সোমবার (৯ জুন) থেকে ১৩ জুন পর্যন্ত আমাদের ৮০ শতাংশ রুম অগ্রিম বুকিং আছে। আশা করছি এই মৌসুমে আমাদের বেশ ভালো ব্যবসা হবে।”

ঢাকা/শংকর/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদের তৃতীয় দিন কুয়াকাটা পর্যটকে মুখর
  • খাগড়াছড়ির বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে স্থানীয়দের ভিড়
  • সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটকের আনাগোনা কম, হতাশ ব্যবসায়ীরা
  • ঈদের ছুটি কাটাতে কক্সবাজার সৈকতে পর্যটকের ভিড় বাড়ছে
  • ফাটল-ধসে বিপর্যস্ত মাধবকুণ্ড, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে লাল পতাকা
  • দর্শণার্থীদের পদভারে মুখর রাঙামাটি
  • খাগড়াছড়িতে হোটেল-মোটেল খালি, ভিড় রেস্তোরাঁ ও পর্যটনকেন্দ্রে
  • কাঙ্ক্ষিত পর্যটক নেই কুয়াকাটায়
  • পাহাড়, নদী ও লেকের অপার সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর