ছেলে ও নাতির মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না আবুল কালাম
Published: 10th, June 2025 GMT
কক্সবাজার সৈকতে পানিতে ডুবে ছেলে এবং নাতির মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না আবুল কালাম। ৮০ বছরের এই বৃদ্ধ জানেন তার ছেলে শাহানুর আলম (৫৩) এবং নাতি ইফতেশাম আলম সিফাত (২০) গুরুতর অসুস্ত। তাদের রাজশাহীতে আনা হচ্ছে।
স্বজন, প্রতিবেশী, এমনকি মিডিয়ার কল্যাণে দেশবাসীর অজানা নয় এমন শোকাতুর ঘটনার কথা। এ কারণে অনেকেই বাড়ি আসছেন। সবাইকে সাবধান করে দেওয়া হচ্ছে, ছেলে ও নাতির মৃত্যুর কথা আবুল কালামকে যেন জানানো না হয়। বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুশোক সইতে পারবেন না বলেই এই সতকর্তা।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীর মহিষবাথান পূর্বপাড়া আবুল কালামের বাড়ি গিয়ে এমন করুণ দৃশ্য দেখা যায়। এর আগে, সোমবার বেলা ৩টার দিকে কক্সবাজারের কলাতলী সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে সাগরের পানিতে ডুবে মারা যান আবুল কালামের ছেলে এবং নাতি।
শাহানুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) মোহনপুর জোন কার্যালয়ের সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সিফাত অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।
শাহানুর আলমের স্ত্রী ইয়াসমিন আরা ঢাকায় চাকরি করেন। তাদের দুই ছেলে। ছোট ছেলে ইফতেখার আলম রাহাত (১৬) রাজশাহীতে স্কুলশিক্ষার্থী। স্ত্রী ঢাকা থাকলেও শাহানুর দুই ছেলেকে নিয়ে রাজশাহীতে বাস করতেন।
শাহানুরের ভাতিজা রাকিবুল আলম জানান, গত ঈদুল ফিতরের ছুটিতেও স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলেন শাহানুর। সেবার ফিরে এলেও এবার ফিরলেন লাশ হয়ে। ঈদের আগে ৪ জুন স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় যান তিনি। পরদিন তারা যান কক্সবাজার। সোমবার (৯ জুন) সন্ধ্যায় তাদের ঢাকা ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই সাগরের ঢেউ কেড়ে নেয় বাবা ও ছেলেকে।
সেদিন দুপুরে কলাতলী সৈকতের সায়মন বিচ পয়েন্টে গোসল করতে গিয়ে সাগরে তলিয়ে যেতে থাকেন সিফাত। তাকে বাঁচাতে ঝাঁপ দেন শাহানুর, কিন্তু তিনিও স্রোতের টানে ডুবে যান। পরে লাইফগার্ডের সদস্যরা দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
রাকিবুল জানান, সোমবার সন্ধ্যায় শাহানুর ও সিফাতের লাশ নিয়ে রাজশাহীর পথে রওনা হওয়ার কথা ছিল ইয়াসমিন আরা ও ছোট ছেলে রাহাতের। কিন্তু তারা লাশ নিয়ে ফিরতে পারেননি। মঙ্গলবার (১০ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে তারা কক্সবাজার থেকে রওনা হন। অন্তত ১৩ ঘণ্টার পথ। তাই আশা করা হচ্ছে, বুধবার ভোররাতে লাশ দুটি রাজশাহী পৌঁছাবে। এরপর সকালে মহিষবাথান গোরস্থানে পাশাপাশি কবরে দাফন করা হবে বাবা ও ছেলেকে।
শাহানুর আলমের ছোট ভাই একটি বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশনের ভিডিও এডিটর মনসুর আলম জানান, বাবা আবুল কালাম কোলন ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন। সাতটি কেমো দেওয়া হয়েছে, শরীরে রয়েছে নানা জটিলতা। এর মধ্যেই গত বছরের ১৫ আগস্ট মারা গেছেন মা আলিয়া খাতুন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ভেঙে পড়েছেন আবুল কালাম।
মনসুর আলম বলেন, ‘‘বাড়িতে দুটি লাশ আসছে। বাবাকে কীভাবে বলব, আমার ভাই আর ভাতিজা নেই, তা আমরা কেউই বুঝে উঠতে পারছি না।’’
শিরিন//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ