কায়রোর আল-মানসুরি হাসপাতালের প্রাঙ্গণে এক নারী দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ, হাতে রোগীর চিকিৎসা নথি। তিনি শিহাবুদ্দিন আল-সায়িগের (মৃ. ১৬২৭ খ্রি.) মেয়ে, এই হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক। তাঁর নির্দেশে চিকিৎসক ও ধাত্রীরা ব্যস্তভাবে রোগীদের সেবা করছেন।

উমাইয়া, আব্বাসীয় ও আন্দালুসের যুগে মুসলিম নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা শুধু রোগীদের সেবাই করেননি, বরং চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন। এই পর্বে আমরা দেখব মধ্যযুগে মুসলিমবিশ্বে নারীদের চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভূমিকা এবং সমাজে তাঁদের প্রভাব।

নারীরা শুধু চিকিৎসা দিতেন না, বরং ওষুধ তৈরি ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতেন।মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ

মধ্যযুগে মুসলিম বিশ্ব ছিল চিকিৎসাবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ। আব্বাসীয় খলিফারা গ্রিক, পারসিক ও ভারতীয় চিকিৎসা গ্রন্থ আরবিতে অনুবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। বাগদাদের বায়তুল হিকমা এই জ্ঞানের কেন্দ্র ছিল।

এই সময়ে নারীরাও চিকিৎসা গবেষণা ও সেবায় অংশ নেন। ইমাম তাবারি (৮৩৮-৯২৩ খ্রি.

) উল্লেখ করেন, বাগদাদের বিমারিস্তানে (হাসপাতাল) নারী চিকিৎসকেরা কাজ করতেন। (তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক, ৮/৩২১, বৈরুত: দারুল কুতুব, ১৯৮৫)

নারীরা শুধু চিকিৎসা দিতেন না, বরং ওষুধ তৈরি ও হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় অংশ নিতেন।

ইসলামি শিক্ষা নারীদের জন্য উন্মুক্ত ছিল। কোরআনের আহ্বান, ‘আমার প্রভু, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ (সুরা তাহা: ১১৪) এবং মহানবী (সা.)-এর বাণী, ‘জ্ঞান অন্বেষণ প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফরজ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ: ২২৪) নারীদের চিকিৎসা শিক্ষায় উৎসাহিত করেছিল।

আন্দালুসে আল-জাহরাভির (৯৩৬-১০১৩ খ্রি.) কন্যারা তাঁর কাছ থেকে চিকিৎসা শিখে প্রসূতি ও শিশু চিকিৎসায় কাজ করেন। (আল-জাহরাভি, আত-তাসরিফ, ৩০/৪৫৬, কায়রো: দারুল কুতুব, ১৯০৮)

আরও পড়ুনপ্রথম মুসলিম নৌ-যোদ্ধা নারী২৯ মার্চ ২০২৫নারীদের বৈচিত্র্যময় অবদান

মধ্যযুগে মুসলিম নারীরা চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ও তাঁদের কাজ তুলে ধরা হলো:

আল-হাফিদ ইবনে জুহরের বোন ও কন্যারা (১০৯৪-১১৬২ খ্রি.): আন্দালুসে তাঁরা প্রসূতি ও শিশু চিকিৎসায় দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁরা শাসক আল-মানসুরের স্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। ইবনে জুহরের পরিবার পাঁচ প্রজন্ম ধরে চিকিৎসায় নেতৃত্ব দেয়। (আল-শাত্তি, তারিখুল তিব ওয়া আখলাকিয়াতুহু, পৃ. ২৫৬, দামেস্ক: দারুল ফিকর, ১৯৬০)

মধ্যযুগে মুসলিম নারীরা চিকিৎসার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করেছেন

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিনষ্ট করা বাবুই পাখির বাসা প্রতিস্থাপন 

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় বিনষ্ট করা ৩০টি বাবুই পাখির বাসা এবং ২০টি বাবুই পাখির ডিম প্রতিস্থাপন করেছে বন বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) বিকালে উপজেলার উত্তর আমখোলা গ্রামের তাল গাছে এ সব বাসা প্রতিস্থাপন করা হয়। 

বুধবার (৩০ জুলাই) ওই গ্রামের কৃষক সিদ্দিক মোল্লা এ সব বাসা বিনষ্ট করেন। বাসা প্রতিস্থাপনের সময় গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান, পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক সফিকুল ইসলাম ও এনিমেল লাভারস অফ পটুয়াখালীর সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধার কর্মী আসাদুল্লাহ হাসান মুসা উপস্থিত ছিলেন। 

আসাদুল্লাহ হাসান মুসা বলেন, ‘‘কৃষক সিদ্দিক মোল্লার ধানক্ষেতের পাশের তালগাছে বাবুই পাখি এসব বাসা বুনন করেছিল। কৃষক সিদ্দিক মোল্লা এ সব বাসা বিনষ্ট করেন। আমরা খবর শোনামাত্র বিষয়টি বন বিভাগকে অবহিত করি। পরে আজ বাসাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।’’ 

আরো পড়ুন:

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা

তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যায় ২ মামলা

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের উপ বন সংরক্ষক সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘বাসাগুলো ওই কৃষকের ধানক্ষেত সংলগ্ন তালগাছে বুননের কারণে তিনি বিনষ্ট করেছেন। তার পরিবার হতদরিদ্র। তিনি আর বাবুই পাখির বাসা বিনষ্ট করবেন না মর্মে মুচলেখা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং বাসাগুলো প্রতিস্থাপন করা হয়।’’ 

গত মাসে ঝালকাঠিতে তালগাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস ও ছানা হত্যার ঘটনা নিয়ে সমলোচনা হয় এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
 

ঢাকা/ইমরান/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ