আল্লাহর সুন্দর নামগুলোর মধ্যে ‘আল-ওয়াহিদ’ নামটি তাঁর অতুলনীয় একত্ব ও স্বতন্ত্রতা প্রকাশ করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘বলো, আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা, আর তিনি এক ও অপ্রতিরোধ্য।’ (সুরা রা’দ: ১৬)

এই নাম আমাদের শেখায়, আল্লাহ একক, তাঁর কোনো সমকক্ষ বা শরিক নেই এবং প্রকৃত ভরসার একমাত্র উৎস তিনিই।

আল-ওয়াহিদের অর্থ

‘আল-ওয়াহিদ’ শব্দটি তিনটি মাত্রায় একত্ব বোঝায়:

১.

উলুহিয়্যাহর একত্ব: তিনি একমাত্র উপাস্য। এ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই।

২. রুবুবিয়্যাহর একত্ব: তিনি একমাত্র স্রষ্টা, পালনকর্তা ও রিজিকদাতা।

৩. সিফাতের একত্ব: তাঁর গুণাবলির কোনো তুলনা নেই। পবিত্র কোরআন বলে, ‘তাঁর মতো কিছুই নেই।’ (সুরা শুরা, আয়াত: ১১)

পবিত্র কোরআনে ‘আল-ওয়াহিদ’ নামটি ২২টি আয়াতে এসেছে।

আল্লামা সা’দি (রহ.) বলেন, ‘আল-ওয়াহিদ আল-আহাদ তিনি, যিনি সমস্ত পরিপূর্ণতায় একক। তাঁর জ্ঞান, ক্ষমতা, মহিমা, সৌন্দর্য, প্রশংসা ও হিকমায় কেউ তাঁর সমকক্ষ নয়।’ (আস-সাল্লাবি, কিসসাতু বাদইল খালক, পৃ. ১১৩৬)

কুরতুবি বলেন, ‘আল-ওয়াহিদ নামটি তাঁর স্বতন্ত্রতা প্রকাশ করে। তিনি সৃষ্টির সাথে মিশ্রিত নন, কোনো স্থান বা সময় তাঁকে সীমাবদ্ধ করে না।’ (কারজাভি, আসমা আল্লাহ আল-হুসনা, পৃ. ৭৩)

আরও পড়ুনআল-আজিজ, যিনি ইজ্জত দান করেন২০ জুন ২০২৫কোরআনে আল-ওয়াহিদ

পবিত্র কোরআনে ‘আল-ওয়াহিদ’ নামটি ২২টি আয়াতে এসেছে, যেমন:

‘বলো, আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা, আর তিনি এক ও অপ্রতিরোধ্য’ (সুরা রা’দ: ১৬)। ‘আল্লাহ বলেছেন, দুটি ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনি তো একমাত্র ইলাহ। অতএব, আমাকেই ভয় করো’ (সুরা নাহল: ৫১)। ‘আজ রাজত্ব কার? এক ও অপ্রতিরোধ্য আল্লাহর’ (সুরা গাফির: ১৬)।

এ ছাড়া ‘আল-আহাদ’ নাম এসেছে সুরা ইখলাসে: ‘বলো, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি জন্ম দেননি, জন্মগ্রহণও করেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই’ (সুরা ইখলাস: ১-৪)। আল-ওয়াহিদ ও আল-আহাদ উভয়ই ‘ওহদ’ (একত্ব) শব্দ থেকে উৎপন্ন, যা তাঁর ধাতু, সিফাত ও কার্যক্রমে একত্ব বোঝায়।

বলো, তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি জন্ম দেননি, জন্মগ্রহণও করেননি। তাঁর সমকক্ষ কেউ নেই।সুরা ইখলাস, আয়াত: ১-৪আল-ইখলাসের তাৎপর্য

সুরা ইখলাস তাওহিদের সারাংশ। শায়খ ইবন উসাইমিন বলেন, ‘আল-ওয়াহিদ তিনি, যিনি ধাতু, সিফাত ও কার্যক্রমে একক। তিনি অবিভাজ্য, অমুখাপেক্ষী এবং তাঁর কোনো শরিক বা সমকক্ষ নেই।’ (ইবন উসাইমিন, তাকরিবুত তাদমুরিয়্যাহ, পৃ. ১৩৮)

এই সুরা আল্লাহর নাম ‘আল্লাহ’ প্রমাণ করে, তাঁর একত্ব ও অমুখাপেক্ষিতা স্থাপন করে এবং সন্তান, পিতা বা সমকক্ষের ধারণা বাতিল করে।

নবীজি (সা.) ফজর ও মাগরিবের সুন্নাহ, বিতরের নামাজ এবং তাওয়াফের দুই রাকাতে এই সুরা পড়তেন (মা‘আল্লাহ, সালমান আল-আওদাহ, পৃ. ২৩৫)।

আরও পড়ুনআল্লাহর ‘আল মুমিন’ নামের মহিমা১৮ জুন ২০২৫আল-ওয়াহিদে ইমানের প্রভাব

আল-ওয়াহিদে ইমান বান্দাকে শিখায়: তিনি একমাত্র আশ্রয়। বান্দা তাঁর ওপর নির্ভর করে, অন্য কারও প্রতি নয়। বান্দা চিন্তা, কথা ও কাজে আল্লাহর একত্ব স্বীকার করে এবং তাঁরই ইবাদত করে। আল্লাহর একত্বে বিশ্বাস বান্দাকে মানুষ বা বস্তুর প্রতি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করে।

শায়খ খাত্তাবি বলেন, ‘আল-ওয়াহিদ তিনি, যিনি সর্বদা একক ছিলেন, তাঁর সাথে কেউ ছিল না।’ এটি সৃষ্টি থেকে তাঁর সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রতা বোঝায়।

আল-ওয়াহিদে ইমান বান্দাকে শিখায়: তিনি একমাত্র আশ্রয়। বান্দা তাঁর ওপর নির্ভর করে, অন্য কারও প্রতি নয়।বাস্তব জীবনে আল-ওয়াহিদ

আল-ওয়াহিদ নামটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর ওপর নির্ভর করতে শেখায়। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যিনি দুঃখ বা বিপদে পড়েন, তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে শান্তি পান, কারণ তিনিই একমাত্র সাহায্যকারী।

সুরা ইখলাস নিয়মিত পড়া আমাদের তাওহিদের প্রতি অটল রাখে। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ইখলাস পড়ে, তাকে শিরক থেকে রক্ষা করা হয়।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ১৪,৫২০)

অনুবাদ: মনযূরুল হক

আরও পড়ুনআল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নাম ‘আল্লাহ’০২ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রআন র একত ব একম ত র আল ল হ ইখল স

এছাড়াও পড়ুন:

পেঁয়াজের কেজি ৮০–৮৫ টাকা, সবজিও চড়া

বাজারে পেঁয়াজ ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ বেড়েছে। খুচরা পর্যায়ে ১৫–২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। প্রতি ডজনে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও আগের তুলনায় চড়া।

খুচরা বিক্রেতারা জানান, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কিছুটা কমেছে। আর ডিমের চাহিদা বেড়েছে, সে তুলনায় সরবরাহ বাড়েনি। এ কারণে পণ্য দুটির দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। সরবরাহ ঠিক হলে দাম কমে আসবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল বাজার ও কারওয়ান বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোতে চার–পাঁচ দিন আগেও মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনা যেত ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে হঠাৎ কেজিতে ১৫–২০ টাকা বেড়েছে। তাতে গতকাল বিভিন্ন বাজারে এক কেজি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর কৃষকের ঘরে মজুত থাকা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে পণ্যটির সরবরাহ কমেছে। আবার বৃষ্টির কারণেও সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে। মূলত এই দুই কারণে পেঁয়াজের দাম এখন বাড়তি।

করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

গত দুই–তিন সপ্তাহে মৌসুমি বৃষ্টির কারণে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। যেমন গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৮০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাসখানেক আগে মরিচের দাম ছিল ৮০ থেকে ১২০ টাকা। এ ছাড়া করলা, কাঁকরোল, বরবটিসহ বেশির ভাগ সবজির কেজি এখন ৮০ টাকার আশপাশে। আমদানি করা টমেটোর কেজি ১৪০-১৫০ টাকা। অন্যদিকে বেগুনের দাম ২০–৩০ টাকা বেড়ে ১০০-১২০ টাকা হয়েছে।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে দাম বেড়েছে মুরগির ডিমের। রাজধানীর খুচরা বাজারে গতকাল ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা। এদিকে তিন সপ্তাহ ধরেই বাজারে আগের চেয়ে বাড়তি দামে মুরগি বিক্রি হচ্ছে। গতকাল রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আগে এ দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কম ছিল।

ফার্মের মুরগির এক ডজন বাদামি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। পাড়ামহল্লায় এ দাম আরও কিছুটা বেশি। গত সপ্তাহে ডিমের ডজন ছিল ১২০–১২৫ টাকা।চার মাস পর আবার মূল্যস্ফীতি বাড়ল

মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না। টানা চার মাস কমার পর মূল্যস্ফীতি আবার বেড়েছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ হয়েছে। জুনে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বর্ষা ও বন্যার মৌসুমের কারণে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।

গত জুন মাসে দেশের যে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল, তা বিগত ৩৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিবিএসের হিসাব অনুসারে, জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয় ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। দুই খাতেই আগের মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

রাজধানীতে এক কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় ও সোনালি মুরগি ৩০০ থকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধির কারণ হলো, জুলাইয়ে বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে ৫-৬ টাকা বেড়েছে। শাকসবজির দামও ছিল চড়া।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান প্রথম আলোকে বলেন, বাজারের মৌলিক বিষয়গুলো কাজ করছে না। বিশেষ করে সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। গত মাসে চালের দাম বেড়েছে। এখন চলছে বর্ষা ও বন্যার মৌসুম। এই সময়ে নিত্যপণ্যের ঘাটতি থাকে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দিতে পারে। তাই সরকারের উচিত, এখনই প্রস্তুতি নিয়ে পণ্যের চাহিদা ও জোগানে ভারসাম্য আনা। তিনি মনে করেন, শুধু সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ