স্কাউটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবী রচনায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

সোমবার (২৩ জুন) প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বাংলাদেশ স্কাউটস এর দেশব্যাপী আয়োজিত কাব কার্ণিভালের উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, “আজকে স্কাউটিং ইতিহাসে একটা বিশেষ দিন। শুধু বাংলাদেশের স্কাউটিংয়ের ক্ষেত্রে না, পুরো বিশ্বের স্কাউটিংয়ের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা বিশেষ গৌরবের। যে আটজন স্কাউট আত্মাহুতি দিল দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, নতুন বাংলাদেশ সৃষ্টি করার জন্য সেটা দিয়েই এই ইতিহাসের সৃষ্টি। স্কাউটিংয়ের ইতিহাসে এরকম নজির আর কোথাও নাই। বাংলাদেশের স্কাউটরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলে আমরা সারা বিশ্বের পক্ষ থেকে তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।”

আরো পড়ুন:

বিবিসিকে অধ্যাপক ইউনূস
আওয়ামী লীগ ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে যা বললেন প্রধান উপদেষ্টা 

উন্নয়ন প্রকল্প যেন প্রকৃতির ক্ষতি না করে: প্রধান উপদেষ্টা

পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা পুরস্কার পেলে এবং যারা আজ উপস্থিত আছ, তোমাদের সবার দায়িত্ব হলো দরজা খোলা। দরজা বন্ধ বলে আক্ষেপের দিকে থেকে গেলে হবে না। দরজা তোমাকেই খুলতে হবে। যেহেতু তুমি অনেক দূর এগিয়ে এসছো, এগিয়ে এসছো বলেই তুমি স্কাউট হয়েছ। তোমার স্কুলের বাকিরা হয় নাই। কাজেই তোমার দায়িত্ব হলো অন্যদের জন্যও দরজা খুলে দেওয়া। তুমি যদি না খোলো এ দরজা বন্ধ থেকেই যাবে।”

তিনি নিজেও একজন স্কাউট পরিবারের গর্বিত সদস্য উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা তার ছাত্রজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। ১৯৫৫ সালে ১৫ বছর বয়সে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বয় স্কাউট দলের সঙ্গে কানাডায় অনুষ্ঠিত দশম বিশ্ব বয় স্কাউট জাম্বুরিতে অংশ নেন। সে সময় তিনি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলেন।

তিনি বলেন, “এ এক মস্ত বড় সুযোগ; পৃথিবীকে আবিষ্কার করার, তার চাইতে বড় নিজেকে আবিষ্কার করার। নাহলে গৎবাঁধা জীবনে নিজের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার আর কোনো সুযোগ নাই। তোমরা যাতে স্কাউটিংয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে ভবিষ্যতের পৃথিবী রচনা করতে পারো সে কথাটা মনে রাখতে হবে।”

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে বাংলাদেশ স্কাউটস প্রোগ্রাম বিভাগের পরিচালনায় বাংলাদেশের সব উপজেলা ও বাংলাদেশ স্কাউটসের বিশেষ জেলায় একযোগে কাব কার্নিভাল বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সারা দেশে ৪৯৫টি উপজেলা, ৫টি মেট্রোপলিটন, ৫টি উপএলাকা ও ২২টি বিশেষ স্কাউট জেলা মিলিয়ে মোট ৫২৭টি স্থানে একযোগে কাব কার্নিভাল উদ্বোধন ও শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড বিতরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টা কাব স্কাউটদের সর্বোচ্চ অ্যাওয়ার্ড ‘শাপলা কাব অ্যাওয়ার্ড’ এবং জুলাই আন্দোলনে শহীদ আট জন স্কাউটের সাহসিকতাপূর্ণ কাজের জন্য তাদের পরিবারের সদস্যদের হাতে বাংলাদেশ স্কাউটস এর ‘গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন।

স্কাউটার মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ, রোভার রোহান আহমেদ খান, রোভার তাঞ্জির খান মুন্না, স্কাউট শরিফ উদ্দিন আহমেদ আহনাফ, স্কাউট মাহবুব আলম, স্কাউট গোলাম নাফিজ, স্কাউট তাহির জামান প্রিয়, স্কাউট আরিফুল ইসলাম সাদ-এর পরিবারের সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টার হাত থেকে এ পুরস্কার গ্রহণ করেন।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল দ শ স ক উটস অন ষ ঠ ন র জন য ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজু ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজের জন্য পবিত্রতার পূর্বশর্ত। কোরআনে আল্লাহ ওজুর ফরজ কাজগুলো স্পষ্ট বর্ণনা করেছেন। তবে ওজু শুধু শারীরিক পবিত্রতাই নিশ্চিত করে না, বরং এটি মানুষের মনকে আধ্যাত্মিকভাবে আল্লাহর সান্নিধ্যের জন্য প্রস্তুত করে।

নবীজি (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ওজু করে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তার গুনাহ তার শরীর থেকে ঝরে পড়ে, এমনকি তার নখের নিচ থেকেও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৪৫) আরেকটি হাদিসে আছে, ‘ওজু হলো ইমানের অর্ধেক।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩,৪৮৯)

ওজুর ফরজ কয়টি

ওজুর ফরজ চারটি, যা কোরআন (সুরা মায়িদা, আয়াত: ৬) এবং হাদিসে সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত। এগুলো হলো—

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: পুরো মুখ, অর্থাৎ কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত ধুয়ে ফেলা। এটি ওজুর প্রথম ফরজ।

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাতের হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া, যাতে কোনো অংশ বাদ না যায়।

৩. মাথায় মাসেহ করা: মাথার সামনের অংশে ভেজা হাত দিয়ে মাসেহ করা। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই যথেষ্ট।

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পায়ের পাতা থেকে টাখনু পর্যন্ত ধোয়া, যাতে আঙুলের ফাঁকসহ পুরো অংশ ভিজে।

আরও পড়ুনপবিত্রতায় অজু ও গোসলের বিকল্প তায়াম্মুম২৪ ডিসেম্বর ২০২১ওজুর ফরজের বিস্তারিত ব্যাখ্যা

ফরজগুলো সম্পর্কে আরেকটু বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক, কেননা, স্পষ্ট বিধান জানা না থাকায় অনেকের ভুল হয়ে যায়।

১. মুখমণ্ডল ধোয়া: মুখ ধোয়ার সময় কপালের চুলের রেখা থেকে চিবুক এবং দুই কানের মাঝখান পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। এর মধ্যে মুখের ভেতরে কুলি করা বা নাকের ভেতরে পানি দেওয়া ফরজ নয়, তবে এগুলো সুন্নত। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় পুরো মুখমণ্ডল ধুয়েছেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৮৫)

২. দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধোয়া: দুই হাত ধোয়ার সময় হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো অংশ ধুয়ে ফেলতে হবে। হানাফি মাজহাবে কনুই পর্যন্ত ধোয়া ফরজ এবং কনুইয়ের ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত, নবীজি (সা.) ওজু করার সময় হাত কনুই পর্যন্ত তিনবার ধুয়েছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২২৬)

৩. মাথা মাসেহ করা: মাথায় মাসেহ করার জন্য ভেজা হাত দিয়ে মাথার সামনের অংশে মাসেহ করতে হবে। হানাফি মাজহাবে মাথার এক-চতুর্থাংশ মাসেহ করলেই ফরজ আদায় হয়। শাফিই মাজহাবে পুরো মাথা মাসেহ করা ফরজ। নবীজি (সা.) ওজু করার সময় দুই হাত ভিজিয়ে মাথায় মাসেহ করতেন। (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ১১১)

৪. দুই পা টাখনু পর্যন্ত ধোয়া: দুই পা ধোয়ার সময় পায়ের আঙুলের ফাঁক থেকে টাখনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলতে হবে। টাখনুর ওপরের অংশ ধোয়া সুন্নত। হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘যারা ওজুতে পা টাখনু পর্যন্ত না ধুয়ে বাদ দেয়, তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৬৫)

আরও পড়ুনঅজু করার নিয়ম কানুন১৯ ডিসেম্বর ২০২৩কয়েকটি পরামর্শ

ওজু পালন করার জন্য ব্যবহারিক কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো:

সময় ব্যবস্থাপনা: ওজুতে সাধারণত দুই থেকে তিন মিনিট সময় লাগে। নামাজের আগে পরিকল্পনা করে ওজুর জন্য সময় রাখা যায়।

পানি সংরক্ষণ: নবীজি (সা.) অল্প পানি দিয়ে ওজু করতেন। আধুনিক সময়ে পানির অপচয় এড়িয়ে ওজু করা পরিবেশের জন্যও উপকারী। একটি হাদিসে আছে, নবীজি (সা.) এক মুদ (প্রায় ৬২৫ মিলিলিটার) পানি দিয়ে ওজু করতেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ২০০)

কর্মক্ষেত্রে ওজু: অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ওজুর জন্য ওয়াশরুম বা নির্দিষ্ট স্থান ব্যবহার করা যায়। অনেক মসজিদ ও প্রতিষ্ঠানে ওজুর ব্যবস্থা থাকে।

ওজুর ক্ষেত্রে সতর্কতা

পূর্ণতা নিশ্চিত করা: ফরজ অংশগুলোর কোনোটি বাদ দেওয়া যাবে না। যেমন পায়ের আঙুলের ফাঁক বা কনুইয়ের কিছু অংশ বাদ দেওয়া হলে ওজু পূর্ণ হবে না।

ক্রম বজায় রাখা: হানাফি মাজহাবে ফরজ কাজগুলো ক্রমানুসারে করা ওয়াজিব।

পানির ব্যবহার: পানি অপচয় না করে সুন্নত অনুযায়ী অল্প পানি ব্যবহার করা।

নিয়ত: মনে মনে ওজুর নিয়ত করা সুন্নত, যা ওজুকে ইবাদত হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে।

(আল-ফিকহুল মুয়াসসার, মুহাম্মদ ইবনে সালিহ, পৃষ্ঠা: ৮৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, ঢাকা: ২০১৫)

ওজুর ফরজগুলো পালনের মাধ্যমে মুমিন নামাজের জন্য পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। প্রযুক্তি ও পরিকল্পনার মাধ্যমে ওজু পালন করা সহজ হয়েছে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নত অনুসরণ করে ওজু করার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইবাদতকে আরও পরিপূর্ণ করতে পারি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

আরও পড়ুনঅজু ভাঙার কারণ: পবিত্রতা অর্জনে সতর্কতা১০ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ