শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যে ব্যবধান দূর করার আহ্বান
Published: 22nd, October 2025 GMT
দেশে আরও উৎপাদনশীল কর্মশক্তি গঠন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি জোরদার ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের মধ্যকার ব্যবধান ঘোচাতে হবে। এ জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। আজ বুধবার ‘শ্রেণিকক্ষ থেকে ক্যারিয়ার: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ কথা বলেন। সাজেদা ফাউন্ডেশন রাজধানীর একটি হোটেলে এ আলোচনার আয়োজন করে। প্রতিষ্ঠানটি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
অনুষ্ঠানে সাজেদা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ফারুক সোবহান বলেন, ‘বাংলাদেশ একসময় এশিয়ার বেশ কিছু দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল, কিন্তু এখন পিছিয়ে পড়েছে। তাদের অগ্রগতির মূল কারণ মানসম্মত শিক্ষা।’ তিনি শিক্ষার মানোন্নয়নে একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, বিশ্বের অন্যতম তরুণ জনগোষ্ঠী থাকলেও শিক্ষা যদি বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে জনমিতিক লভ্যাংশ বোঝায় পরিণত হতে পারে।
গোলটেবিল আলোচনায় ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে খান একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাল খান বলেন, প্রযুক্তি শিক্ষা গণতন্ত্রীকরণের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। যখন শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষায় প্রবেশের সুযোগ পায় এবং শিক্ষকেরা উদ্ভাবনী পদ্ধতিতে শেখানোর সুযোগ পান, তখন শিক্ষাক্ষেত্রে প্রকৃত পরিবর্তন ঘটে।
সাজেদা ফাউন্ডেশনের শিক্ষা বিভাগের স্ট্র্যাটেজি লিড আজওয়া নাঈম বলেন, শিক্ষকেরা এখন তথ্যভিত্তিক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করছেন, যা শিক্ষার্থীর শেখার মানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, তরুণ প্রজন্ম যাতে শুধু জ্ঞান নিয়েই নয়, বরং দক্ষতা, সৃজনশীলতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে কর্মজগতে প্রবেশ করতে পারে।
সাজেদা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘শ্রেণিকক্ষ থেকে ক্যারিয়ার: বাংলাদেশের ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধিকরণ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যৎ কী
প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো যখন প্রার্থী ঘোষণা করে মাঠে নেমে গেছে, জাতীয় পার্টি (জাপা) তখনো নিশ্চিত নয় যে তারা আদৌ আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। এ প্রশ্নে অন্তর্বর্তী সরকার শেষ পর্যন্ত কী অবস্থান নেয়, সেটিও দলটির কাছে স্পষ্ট নয়। এর সঙ্গে রয়েছে জি এম কাদের ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে বিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের পরস্পরবিরোধী তৎপরতা। এসব কারণে দলটির ভবিষ্যৎ কী—সে আলোচনাও সামনে এসেছে।
গত ১৪ মাসে জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটাই কোণঠাসা। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের সভা-সমাবেশে পুলিশের বাধা, কার্যালয়ে হামলা এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকার মতো ঘটনাগুলো এতে বড় ভূমিকা রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন দল ইতিমধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করে নির্বাচনী প্রচারে নেমে গেছে।
তিন নির্বাচনের ‘দোসর’–বিতর্কবিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধাভোগী বা ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ হিসেবে সমালোচিত। এ দায় তারা এড়াতে পারছে না। ফলে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’, এই তকমা দলটির রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ সুযোগে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন ও গণ-অধিকার পরিষদ প্রকাশ্যেই চাচ্ছে, জাতীয় পার্টি যেন নির্বাচন করার সুযোগ না পায়।
যদিও তিনটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় জাতীয় পাটিকে ফ্যাসিবাদের ‘দোসর’ বলার বিষয়ে দলটির নেতাদের ভিন্ন ব্যাখ্যা আছে। তাঁদের দাবি, ভোটে গিয়ে জাতীয় পার্টি কোনো অন্যায় করেনি। তাঁরা সংসদের ভেতরে–বাইরে আওয়ামী লীগ সরকারের অন্যায়-অপরাধের যথাযথ সমালোচনা করেছেন। এর মধ্যে জি এম কাদের ‘দোসর’ পরিচয়ের দায় নিতে শুরু থেকেই অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছেন।
এ ছাড়া আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নির্বাহী চেয়ারম্যান মো. মুজিবুল হক (চুন্নু) প্রথম আলোকে বলেন, ‘২০২৪ সালের নির্বাচনে নৈতিকভাবে না যাওয়া উচিত ছিল। তবে নির্বাচনে গিয়ে আমরা আইনগতভাবে কোনো অন্যায় করিনি। এ জন্য আমাদের স্বৈরাচারের দোসর বলা হচ্ছে। আমরা যদি দোসর হই, এর বিচারটা জনগণের হাতে দেওয়াই তো ভালো।’
নির্বাচন করতে প্রস্তুত দুই পক্ষইবিভক্ত জাতীয় পার্টির দুই অংশের উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে যে ধারণা পাওয়া গেছে, সেটি হলো তাঁরা এখন পর্যন্ত মনে করতে পারছেন না যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে।
তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরিস্থিতি অনুকূল বা প্রতিকূল যা-ই হোক, দলটির উভয় অংশই নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন অংশটি এককভাবে আর আনিসুল ইসলামের অংশটি জোটগত ভোটে বেশি আগ্রহী।
এ বিষয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কিছু সমমনা দলের সঙ্গে কথা বলছি। এটা এখনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মতো কিছু হয়নি। দেখা যাক, কী হয়।’
তবে এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির জন্য যে পরিবেশ-পরিস্থিতি, তাতে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ কতটা পাবে, তা নিয়ে নেতাদের মধ্যে বেশ সংশয় আছে।
এ বিষয়ে জি এম কাদের প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরিস্থিতি যা-ই হোক, আমাদের হয় নির্বাচন করতে হবে, না হয় ঠেকানোর চেষ্টা করতে হবে। আমরা এককভাবে নির্বাচন করার চেষ্টা করব। কারও সঙ্গে মৌখিক সমঝোতাও করতে পারি।’
জানা গেছে, পরিস্থিতি নজরে রেখে জাতীয় পার্টির দুই পক্ষই ভোটে থাকার জুতসই উপায় খুঁজছে। নেতাদের ধারণা, জোটের মাধ্যমে ভোটে গেলে তাঁদের আসন-সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তবে এসব সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিবেশ কতটা স্থিতিশীল হয়, তার ওপর।
প্রতীক নিয়ে সংকটজাতীয় পার্টি লোগো