আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছিল: শায়েখ মূসা আল হাফিজ
Published: 22nd, October 2025 GMT
পতিত আওয়ামী লীগ সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কওমি সনদের স্বীকৃতি দিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন লেখক, গবেষক ও মাহাদুল ফিকরি ওয়াদদিরাসা মাদ্রাসার পরিচালক শায়েখ মূসা আল হাফিজ। তিনি বলেন, ‘যখন বিগত আওয়ামী সরকার কওমি মাদ্রাসার তথাকথিত স্বীকৃতি দিল, তখন একটি জাতীয় সেমিনার হয়েছিল। ওই সেমিনারে আমি কি–নোট পেপার প্রেজেন্টেশন (মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন) করেছিলাম এবং সেখানে শীর্ষস্থানীয় অনেকেই ছিলেন। আমি বলেছিলাম, এই স্বীকৃতির কোনো কার্যকারিতা নেই। এই স্বীকৃতি একটা মুলা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তা দেওয়া হয়েছে।’
আজ বুধবার বিকেলে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে জাতীয় কওমি শিক্ষা সেমিনার–২০২৫–এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন শায়েখ মূসা আল হাফিজ। কওমি স্বীকৃতির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নসহ পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন উপলক্ষে এই সেমিনারের আয়োজন করে কওমি শিক্ষা অধিকার আন্দোলন।
বিদ্যমান ব্যবস্থার কারণে কওমি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন জানিয়ে শায়েখ মূসা আল হাফিজ বলেন, ‘বর্তমান ব্যবস্থার মধ্যে বৈষম্য আছে, ইনসাফ (ন্যায়) নেই। আমরা ইনসাফ এনসিওর (নিশ্চিত) করতে চাই। এই যে ইনসাফ না থাকা, এই না থাকার পেছনে বিদ্যমান রাষ্ট্রকাঠামো যেমন দায়ী, আমরা নিজেরাও অনেকটা দায়ী।’
সেমিনারে বক্তারা বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দেশের প্রায় এক–চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী এবং কওমি সমাজ আজও প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্যের শিকার। ২০১৮ সালে কওমি সনদের স্বীকৃতি আইন পাস হলেও তা একটি ‘কাগুজে স্বীকৃতি’ হিসেবেই রয়ে গেছে। এর কোনো কার্যকর বাস্তবায়ন না হওয়ায় লাখো কওমি শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, যা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এতে বক্তারা আরও বলেন, তাঁদের সংগ্রাম কোনো বিশেষ সুবিধা আদায়ের জন্য নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের প্রণীত আইনের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি। তাঁরা সংঘাত নয়, সম্মানজনক সংলাপ চান। তাঁরা আর কোনো ফাঁকা আশ্বাস চান না, কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে চান।
সেমিনারে উপস্থাপিত পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে বিদ্যমান আইনের ভিত্তিতে মাস্টার্সের নিচে সব স্তরের সমমান প্রদান। উচ্চশিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে কওমি শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক সব ইসলামি জ্ঞানকেন্দ্রে শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব বাধা অপসারণ। নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র কওমি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন ও অনুমোদন এবং জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে কওমি সমাজের আত্মত্যাগের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।
মুগদা মারকাজুল সুফ্ফা মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা তাফাজ্জুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বেফাকের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ, নয়াদিগন্ত পত্রিকার আন্তর্জাতিক বিভাগের সম্পাদক মাওলানা লিয়াকত আলী, কওমি অধিকার শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক মাওলানা মারুফ বিল্লাহ, মুফতি শামছুদ্দোহা আশ্রাফী, মাওলানা জামালুদ্দীন খালিদ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল হ ফ জ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ জারির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচ
প্রস্তাবিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ-২০২৫ চূড়ান্তভাবে জারি করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুর ১টায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিক্ষা ভবন মোড় থেকে সচিবালয়মুখী রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়েছে পুলিশ। ফলে, উভয় পাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, সাত কলেজের সমন্বয়ে প্রস্তাবিত ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রণীত ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫’ এর খসড়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু, আমাদের লক্ষ্য এখন শুধুই অধ্যাদেশ। ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই আইনের খসড়ার বিষয়ে অনলাইন মাধ্যমে সব অংশীজনের মতামত নিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় খসড়া চূড়ান্ত করার অভিপ্রায়ে গত ২০ ও ২১ অক্টোবর এবং গত ১৭ নভেম্বর যথাক্রমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাই ও সুশীলসমাজের সাথে তিনটি সভা করেছে। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হচ্ছে—বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশের কোনো গতিশীলতা আমাদের চোখে পড়ছে না। পরিচয় সংকট ও একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে নানা অনিশ্চয়তার মুখে প্রস্তাবিত ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীসহ চলমান সকল শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত প্রায় দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন।
শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার বলেন, “আমাদের দাবি, আজকের মধ্যে সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। আমরা সাত কলেজ বলে কিছু মানি না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। সরকারকে বলব, টালবাহানা না করে দ্রুত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন-২০২৫ প্রণয়ন করুন।
শিক্ষা ভবনের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে। যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত আছেন।
ঢাকা/রায়হান/রফিক