পরিবার ও নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে বছরের পর বছর প্রবাসে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। কিন্তু অনেক সময়ই কঠোর পরিশ্রম আর অসাবধানতার কারণে তাদের ভাগ্যের চাকা উল্টো পথে ঘুরতে শুরু করে

 শারীরিক অসুস্থতা তাদের জীবনের গতি থামিয়ে দেয়। তখন তাদের সামনে দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।

সম্প্রতি কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টারে এমন করুণ দৃশ্যই দেখা গেছে। একই ফ্লাইটে অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি প্রবাসী হুইল চেয়ারে করে দেশে ফিরছেন। তাদের কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, কেউ স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

আরো পড়ুন:

নীলফামারীতে ৫ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে সম্মাননা

জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা তুলনামূলক কম পারিশ্রমিকে কাজ করেন। অসুস্থ হলে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় অনেকে ছোটখাটো অসুস্থতা এড়িয়ে যান।

জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের সভাপতি আব্দুল হাই মামুন জানান, এই উপেক্ষা একসময় বড় আকার ধারণ করে, যা তাদের একেবারেই কর্মহীন করে দেয়। তখন তাদের দেশে ফেরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া প্রবাসীরা শুধু যে উপার্জনের পথ হারান তা-ই নয়, জমানো টাকাও চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে যায়।

নরসিংদীর হাসান উল্লাহ প্রায় অন্ধ হয়েই কুয়েত ছেড়েছেন। আর টাঙ্গাইলের ইয়ার হোসেন স্ট্রোক করে দেশে ফিরছেন। ১৩ বছর প্রবাসজীবন শেষে অসুস্থ শরীরে দেশে ফিরছেন কুমিল্লার নাহিদ ইসলাম। এই প্রবাসীরা দেশে ফিরে সুস্থ জীবনের স্বপ্ন দেখলেও, তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক।

বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, শারীরিকভাবে অসুস্থ কোনো যাত্রীর সঙ্গে একজন সহযোগী থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে হুইল চেয়ারে ফেরা এসব প্রবাসীর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে কুয়েতে বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহজাহান একজন দৃষ্টিহীন প্রবাসী যাত্রীকে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ করে দেন।

প্রবাসী হাসান উল্লাহ একেবারেই চোখে দেখতে না পাওয়ায় তার ফ্লাইটে ওঠা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বিমান কর্তৃপক্ষের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন কোনো যাত্রীকে একা ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ এতে তার নিরাপত্তা ও ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীদের জন্য কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে।

মোহাম্মদ শাহজাহান এই নিয়ম সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং হাসান উল্লাহকে ফ্লাইটে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। তবে তিনি শুধু নিয়মের গণ্ডিতে আটকে থাকেননি। মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একটি সমাধান খুঁজে বের করেন।

তিনি ঢাকা যাচ্ছেন এমন একজন যাত্রীকে খুঁজে বের করেন। ওই যাত্রী স্বেচ্ছায় হাসান উল্লাহকে সহযোগিতা করতে রাজি হন। এই সহযাত্রীর সহায়তায় হাসান উল্লাহ নিরাপদে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ পান।

মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিয়ম-বহির্ভূত কোনো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু অনেক সময় মানবিক দিক বিবেচনা করে তারা সাধ্যমতো বাংলাদেশি নাগরিকদের সহযোগিতা করে থাকেন।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টারের প্রতিনিধি পলাশ মোহাম্মদ মানবিক কারণে অনেক অসুস্থ প্রবাসীকে অন্য যাত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।

পলাশ মোহাম্মদ জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ জন বাংলাদেশি হুইলচেয়ারে করে কুয়েত ছাড়েন। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দিতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন।

আমিরাত এয়ারলাইন্সের কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বোর্ডিং গেট ও চেক-ইন কাউন্টারের জুনিয়র কর্মকর্তা সেলিম মিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি যাত্রীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আমিরাত এয়ারলাইন্স এর চেক-ইন কাউন্টার দিয়ে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে কুয়েত ত্যাগ করছেন এমন প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে।

সেলিম মিয়া ব্যক্তিগতভাবে অসুস্থ যাত্রীদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকেন। তার মতে, প্রবাসীদের নিজেদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরো সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি এ বিষয়ে সচেতনতা না বাড়ে, তাহলে ভবিষ্যতে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে দেশে ফিরে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে। এই বোর্ডের কাছে অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি উঠেছে।

জনপ্রিয় সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস ছালেহ দাবি করেন, সরকার যেন এই অসুস্থ প্রবাসীদের কমপক্ষে ১ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা দেয়।

সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক মহসিন পারভেজ জানান, তিনি নিজের খরচে অনেক অসুস্থ প্রবাসীকে দেশে পাঠিয়েছেন। অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার সরকারের বহন করা উচিত।

কুয়েত থেকে দেশে ফেরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্তমান চিত্র খুবই উদ্বেগজনক। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার উইং, কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টার এবং বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশি লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন।

এই পরিসংখ্যান আরো করুণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন দেখা যায় প্রতি মাসে গড়ে ১০০ জন প্রবাসী কর্মী কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হাতে দেশে ফিরছেন। শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা, কাজের সময় দুর্ঘটনা অথবা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে তারা তাদের উপার্জনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। তাদের কুয়েতে থাকার কোনো উপায় না থাকায়, নিরুপায় হয়ে শূন্য হাতে তাদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরে আসতে হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স হ স ন উল ল হ প রব স দ র ন প রব স ম হ ম মদ প রব স র ফ ল ইট ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহীর মৃত্যু

নেপালে একটি পর্বতের বেস ক্যাম্পে তুষারধসে তিনজন ইতালীয়সহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দেহাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার এক অভিযান সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে।

সোমবার সকালে ৫ হাজার ৬৩০ মিটার উঁচু ইয়ালুং রি শৃঙ্গের বেস ক্যাম্পে ১২ জনের একটি দল তুষারধসের কবলে পড়ে।

অভিযান সংগঠক ড্রিমার্স ডেস্টিনেশনের ফুরবা তেনজিং শেরপা এএফপিকে জানিয়েছেন, দুই নেপালিসহ একজন জার্মান এবং একজন ফরাসি পর্বতারোহীও মারা গেছেন।

 উদ্ধার অভিযানের জন্য সোমবার তুষারধস স্থানে পৌঁছানো শেরপা বলেন, “আমি সাতজনের মৃতদেহই দেখেছি।”

শেরপার কোম্পানি সাতজনের মধ্যে তিনজনের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছিল।

দোলখা জেলার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জ্ঞান কুমার মাহাতো জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে দুই ফরাসি এবং দুই নেপালিসহ পাঁচজন বেঁচে থাকা পর্বতারোহীকে উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, “আজ ভোরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।”

মাউন্ট এভারেস্টসহ বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মধ্যে আটটি অবস্থিত নেপালে। এখানে প্রতি বছর শত শত পর্বতারোহী এবং ট্রেকাররা ভ্রমণ করেন।

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিউ ইয়র্ক-এর ফাস্ট লেডি ‘রামা দুয়াজি’
  • রোমান সম্রাজ্ঞী মেসালিনাকে যেকারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিলো
  • ডাকসু নেতার প্রবীণ ব্যক্তিকে লাঠি হাতে শাসানো নিয়ে সমালোচনা-বিতর্ক
  • এক কাপ কফি খাও, তারপর লিখতে বসো—মতি ভাই বললেন
  • মেক্সিকোর প্রেসিডেন্টকে চুমু দেওয়ার চেষ্টা মাতাল ব্যক্তির
  • দিনমজুর বাদশা মিয়াকে আমাদের সাধুবাদ
  • প্রেমিককে সামনে আনলেন জেনিফার
  • ‘কাণ্ডজ্ঞান’ নিয়ে কটাক্ষের শিকার মাধুরী
  • ফিফপ্রোর একাদশ: মেসি–রোনালদোর জায়গা হয়নি, ইয়ামাল সর্বকালের সর্বকনিষ্ঠ
  • নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহীর মৃত্যু