কুয়েত থেকে হুইলচেয়ারে ফিরছেন কর্মক্ষমতা হারানো প্রবাসীরা
Published: 7th, August 2025 GMT
পরিবার ও নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে বছরের পর বছর প্রবাসে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন অসংখ্য বাংলাদেশি। কিন্তু অনেক সময়ই কঠোর পরিশ্রম আর অসাবধানতার কারণে তাদের ভাগ্যের চাকা উল্টো পথে ঘুরতে শুরু করে
শারীরিক অসুস্থতা তাদের জীবনের গতি থামিয়ে দেয়। তখন তাদের সামনে দেশে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না।
সম্প্রতি কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টারে এমন করুণ দৃশ্যই দেখা গেছে। একই ফ্লাইটে অন্তত ১০ জন বাংলাদেশি প্রবাসী হুইল চেয়ারে করে দেশে ফিরছেন। তাদের কেউ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন, কেউ স্ট্রোকের শিকার হয়েছেন, আবার কেউ দীর্ঘদিনের অসুস্থতায় একেবারেই দুর্বল হয়ে পড়েছেন।
আরো পড়ুন:
নীলফামারীতে ৫ রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে সম্মাননা
জুলাইয়ের ৩০ দিনে রেমিট্যান্স ২৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে
কুয়েতে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীরা তুলনামূলক কম পারিশ্রমিকে কাজ করেন। অসুস্থ হলে স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি হওয়ায় অনেকে ছোটখাটো অসুস্থতা এড়িয়ে যান।
জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কুয়েতের সভাপতি আব্দুল হাই মামুন জানান, এই উপেক্ষা একসময় বড় আকার ধারণ করে, যা তাদের একেবারেই কর্মহীন করে দেয়। তখন তাদের দেশে ফেরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। এই অসুস্থতার কারণে দেশে ফিরতে বাধ্য হওয়া প্রবাসীরা শুধু যে উপার্জনের পথ হারান তা-ই নয়, জমানো টাকাও চিকিৎসার পেছনে খরচ হয়ে যায়।
নরসিংদীর হাসান উল্লাহ প্রায় অন্ধ হয়েই কুয়েত ছেড়েছেন। আর টাঙ্গাইলের ইয়ার হোসেন স্ট্রোক করে দেশে ফিরছেন। ১৩ বছর প্রবাসজীবন শেষে অসুস্থ শরীরে দেশে ফিরছেন কুমিল্লার নাহিদ ইসলাম। এই প্রবাসীরা দেশে ফিরে সুস্থ জীবনের স্বপ্ন দেখলেও, তাদের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক।
বিমানবন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, শারীরিকভাবে অসুস্থ কোনো যাত্রীর সঙ্গে একজন সহযোগী থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে হুইল চেয়ারে ফেরা এসব প্রবাসীর পক্ষে তা সম্ভব হয় না। এমন পরিস্থিতিতে কুয়েতে বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ম্যানেজার মোহাম্মদ শাহজাহান একজন দৃষ্টিহীন প্রবাসী যাত্রীকে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ করে দেন।
প্রবাসী হাসান উল্লাহ একেবারেই চোখে দেখতে না পাওয়ায় তার ফ্লাইটে ওঠা নিয়ে একটি জটিলতা তৈরি হয়েছিল। বিমান কর্তৃপক্ষের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, সম্পূর্ণ দৃষ্টিহীন কোনো যাত্রীকে একা ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হয় না। কারণ এতে তার নিরাপত্তা ও ফ্লাইটের অন্যান্য যাত্রীদের জন্য কিছু ঝুঁকি থাকতে পারে।
মোহাম্মদ শাহজাহান এই নিয়ম সম্পর্কে সচেতন ছিলেন এবং হাসান উল্লাহকে ফ্লাইটে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়। তবে তিনি শুধু নিয়মের গণ্ডিতে আটকে থাকেননি। মানবিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি একটি সমাধান খুঁজে বের করেন।
তিনি ঢাকা যাচ্ছেন এমন একজন যাত্রীকে খুঁজে বের করেন। ওই যাত্রী স্বেচ্ছায় হাসান উল্লাহকে সহযোগিতা করতে রাজি হন। এই সহযাত্রীর সহায়তায় হাসান উল্লাহ নিরাপদে ঢাকা যাওয়ার সুযোগ পান।
মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, তারা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান এবং সিভিল অ্যাভিয়েশনের নিয়ম-বহির্ভূত কোনো কাজ করতে পারেন না। কিন্তু অনেক সময় মানবিক দিক বিবেচনা করে তারা সাধ্যমতো বাংলাদেশি নাগরিকদের সহযোগিতা করে থাকেন।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টারের প্রতিনিধি পলাশ মোহাম্মদ মানবিক কারণে অনেক অসুস্থ প্রবাসীকে অন্য যাত্রীর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করছেন।
পলাশ মোহাম্মদ জানান, প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ৭ জন বাংলাদেশি হুইলচেয়ারে করে কুয়েত ছাড়েন। এই রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের সেবা দিতে পেরে তিনি নিজেকে গর্বিত মনে করেন।
আমিরাত এয়ারলাইন্সের কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বোর্ডিং গেট ও চেক-ইন কাউন্টারের জুনিয়র কর্মকর্তা সেলিম মিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি যাত্রীদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আমিরাত এয়ারলাইন্স এর চেক-ইন কাউন্টার দিয়ে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে কুয়েত ত্যাগ করছেন এমন প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা বাড়ছে।
সেলিম মিয়া ব্যক্তিগতভাবে অসুস্থ যাত্রীদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়ে থাকেন। তার মতে, প্রবাসীদের নিজেদের শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি আরো সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি এ বিষয়ে সচেতনতা না বাড়ে, তাহলে ভবিষ্যতে হুইল চেয়ার ব্যবহার করে দেশে ফিরে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে। এই বোর্ডের কাছে অসুস্থ হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের জন্য আর্থিক সহায়তার দাবি উঠেছে।
জনপ্রিয় সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস ছালেহ দাবি করেন, সরকার যেন এই অসুস্থ প্রবাসীদের কমপক্ষে ১ লাখ টাকা চিকিৎসা সহায়তা দেয়।
সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক মহসিন পারভেজ জানান, তিনি নিজের খরচে অনেক অসুস্থ প্রবাসীকে দেশে পাঠিয়েছেন। অসুস্থ প্রবাসীদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যয়ভার সরকারের বহন করা উচিত।
কুয়েত থেকে দেশে ফেরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের বর্তমান চিত্র খুবই উদ্বেগজনক। কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের লেবার উইং, কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের চেক-ইন কাউন্টার এবং বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব কুয়েতের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১৩ জন প্রবাসী বাংলাদেশি লাশ হয়ে দেশে ফিরছেন।
এই পরিসংখ্যান আরো করুণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন দেখা যায় প্রতি মাসে গড়ে ১০০ জন প্রবাসী কর্মী কাজ করার সক্ষমতা হারিয়ে নিঃস্ব হাতে দেশে ফিরছেন। শারীরিক বা মানসিক অসুস্থতা, কাজের সময় দুর্ঘটনা অথবা অন্যান্য অপ্রত্যাশিত ঘটনার কারণে তারা তাদের উপার্জনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছেন। তাদের কুয়েতে থাকার কোনো উপায় না থাকায়, নিরুপায় হয়ে শূন্য হাতে তাদের প্রিয়জনদের কাছে ফিরে আসতে হচ্ছে।
ঢাকা/হাসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স হ স ন উল ল হ প রব স দ র ন প রব স ম হ ম মদ প রব স র ফ ল ইট ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির
দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আর মাত্র চারদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। রাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তেমনি নির্বাচনী মাঠে বেশ জোরালো উপস্থিতি নিয়ে নামছে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির।
ডাকসু ও জাকসুর ৫৩টি পদে একটিতেও জয় না পাওয়ার দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল। অন্যদিকে, ডাকসু-জাকসুতে বড় জয় পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী ছাত্রশিবির এবার রাবিতেও তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে চায়।
আরো পড়ুন:
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পোষ্য কোটা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতি
রাকসু নির্বাচন: আলোচিত ভিপি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রাকসুতে ভিন্নধর্মী কৌশল ও প্রচার গ্রহণ করেছে এ দুই শক্তি।
চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর এবং ১১ সেপ্টেম্বর নানা অভিযোগ আর নাটকীয়তার মধ্যে শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। দুইটি সংসদের মোট ৫৩টি পদেই পরাজিত হয়েছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল। কোথাও কোনো অবস্থানই তৈরি করতে পারেনি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল। ডাকসুর ২৩টি ও জাকসুর ২০টি পদে বিজয়ী হয়েছে তারা। ডাকসুর বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবং একটি পদে জয় পেয়েছেন বামপন্থি প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এর একজন প্রার্থী।
অন্যদিকে, জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে একটি (ভিপি পদ) গেছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের হাতে, দুটি পদ পেয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), আর দুটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বাকি সব পদে জয়ী হয় শিবির সমর্থিতরা।
এছাড়া জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই আন্দোলনের কয়েকজন নেতাও অংশ নিয়েছিলেন ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে। কিন্তু তারাও ভোটে জিততে পারেননি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাকসুর ২৩টি পদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল। এবারের প্যানেলে তারা ক্লিন ইমেজধারী, নির্যাতিত এবং বহুমাত্রিক পরিচয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছে। এতে রয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, রাজশাহী ফুটবল দলের গোলকিপার, ব্যান্ড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ডিনস পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও জনপ্রিয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
প্যানেলে শীর্ষ তিন পদের মধ্যে একটিসহ মোট চারটি পদে নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর তার নম্র স্বভাব, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং ইতিবাচক ছাত্র নেতৃত্বের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছেন।
জিএস পদে আছেন নাফিউল জীবন, যিনি ছাত্রলীগের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষা একজন বলিষ্ঠ নারী কণ্ঠ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ, যিনি নারী ভোটারদের মনোযোগ কৌশলে টানছেন।
বছরের পর বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলার পর গত ১৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের শীর্ষ অন্তত ২০ নেতার ছাত্রত্ব নেই। তাই তারা প্রার্থী হতে পারেননি। বাকি যাদের ছাত্রত্ব আছে, তাদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি যেমন কম, তেমনি অভিজ্ঞতার দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রদলের প্যানেলে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও ‘অনভিজ্ঞ’ যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কতটুকু জায়গা নিতে পারবেন!
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন বলেন, “ডাকসু ও জাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এবার আমরা নতুন উদ্যম, শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে রাকসুতে ইতিবাচক ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী। নতুন মুখ মানেই নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা এবং নতুন ভাবনা। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে উদ্যম ও সততাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
তিনি বলেন, “আমরা সহিংসতা নয়, শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করছি। শান্তিপূর্ণ প্রচার ও সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনাই আমাদের বিজয়ী হওয়ার প্রধান বিষয়।”
ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, “ডাকসু কিংবা জাকসুর সঙ্গে রাকসুর তুলনা করা যথার্থ হবে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবেশ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরা এবং ক্যাম্পাস সংস্কৃতিও অন্যদের থেকে ভিন্ন। তাই রাকসুর প্রেক্ষাপটকে ঢাবি বা জাহাঙ্গীরনগরের নির্বাচনের সাথে এক কাতারে ফেলা সঠিক হবে না।”
তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক সময় ‘শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট’ বলা হয়, তবুও শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল রাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হবে।”
অপরদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রশিবিরের প্রভাবাধীন বলে পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবির ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করে তারা চমক দিয়েছে। এখানে শুধু ভিপি পদে রয়েছেন রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। বাকি পদগুলোতে নানা সংগঠন, শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।
জিএস পদে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা, এজিএস পদে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর সভাপতি সালমান সাব্বির। প্যানেলে আছেন তিনজন নারী শিক্ষার্থী-ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী সাইয়্যেদা হাফসাসহ দুজন। সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদেও নারী প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাহী সদস্য পদে আছেন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুবকেও প্যানেলে রেখেছে শিবির।
এ বৈচিত্র্যকে শিবির নেতৃত্বের অন্যতম কৌশল বলা হচ্ছে। তারা প্রচারে ছাত্রদলের মতো আক্রমণাত্মক না হয়ে শিবিরের স্বভাবসুলভ বিনয়ী আচরণ, কুশল বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক উপায়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।
শিবির প্যানেলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসান জোহা এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রচারে। গম্ভীরা গানের সুরে কখনো কৃষক, কখনো শিক্ষক, কখনো গায়ক সেজে ক্যাম্পাস মাতিয়ে তুলছেন তিনি। গানে গানে শিবিরের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন, এটি শিবিরের অন্যতম সৃজনশীল প্রচার হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অনুমিত ‘নিজস্ব ভোট’ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। তাছাড়া ছাত্রী সংস্থার কারণে ছয়টি নারী হলের ভোটারদের বড় একটি অংশ শিবিরের দিকে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ হাজার ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ আবাসিক হলে থাকেন, বাকি ৬০ শতাংশ আশপাশে, যেখানে শিবিরের সামাজিক প্রভাব দীর্ঘদিনের।
রাবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর জাহিদ বলেন, “ডাকসু, জাকসু এবং রাকসু—প্রতিটি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনী ধারা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্বতন্ত্র। তাই প্রতিটি নির্বাচনকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তবে ডাকসু ও জাকসুতে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেটি আসলে শিক্ষার্থীদের একটি বার্তা। তারা পরিবর্তন চান, তারা সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব চান।”
তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, আর সেই ধারাবাহিকতাই আমরা রাকসুতেও বজায় রাখতে চাই। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরের ঘাটি বলে কিন্তু আমরা এভাবে কখনো বলি না। কারণ এখানে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাদের মনে আঘাত লাগতে পারে। আমরা নারী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সবাইকে সম্মান-শ্রদ্ধা করি। সব মতাদর্শ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”
তিনি আরো বলেন, “রাকসুতে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সমস্যাগুলো সরাসরি শুনে সেগুলোর সমাধানকে আমাদের ইশতেহারে রাখছি। আমরা চাই একটি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন, যেখানে ভিন্নমত দমন নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি চর্চা হবে। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
“আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য একটাই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আমরা বিশ্বাস করি, রাকসুতেও শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন,” যোগ করেন শিবির সভাপতি।
ঢাকা/মেহেদী