কারাগারে ও বিদেশে ছিলেন আসামিরা, তবু ‘মোবাইলের আলোতে চিনতে’ পেরেছেন বাদী এনসিপি নেতা
Published: 19th, September 2025 GMT
রংপুরের পীরগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) শ্রমিক উইংয়ের এক কেন্দ্রীয় সংগঠকের করা হত্যাচেষ্টার মামলাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
মামলার কয়েকজন আসামি ঘটনার দিন কারাগারে ছিলেন, একজন ছিলেন বিদেশে। তাঁদের অভিযোগ, হয়রানি ও মামলা বাণিজ্যের জন্যই তাঁদের আসামি করা হয়েছে। আর পুলিশ বলছে, বাদীর তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার হয়েছে।
পুলিশ, আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ আগস্ট পীরগঞ্জ থানায় মামলা করেন মিঠিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা হাফিজুর সরকার। তিনি এনসিপির শ্রমিক উইংয়ের কেন্দ্রীয় সংগঠক এবং রংপুর বিভাগীয় সার্চ কমিটির প্রধান বলে এজাহারে উল্লেখ করেন। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাধিক নেতার নাম এসেছে।
এজাহারে বলা হয়, গত ৬ জুলাই রাত ১১টার দিকে শহর থেকে ভ্যানে বাড়ি ফেরার পথে কুতুবপুর মৌজার পাল্লার পাতা এলাকায় হামলার শিকার হন হাফিজুর। তিনি উল্লেখ করেন, আগে থেকে ওত পেতে থাকা আসামিরা ভ্যান থামিয়ে গালিগালাজ করেন। তখন ভ্যান থেকে নেমে আসামিদের ‘মোবাইল ফোনের আলোতে চিনতে পারিয়া’ তাঁদের গালিগালাজ করতে নিষেধ করেন। এরপর ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলামের নির্দেশে আসামিরা লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাঁকে গুরুতর জখম করেন।
হাফিজুর আরও দাবি করেন, এর আগের বছর ৪ আগস্ট মহাসড়কে অনুষ্ঠিত এক দফার আন্দোলনকালে একই আসামিরা তাঁর ওপর হামলা চালায়, যাতে ২০ থেকে ৩০ জন আহত হন।
কারাগারে ছিলেন দুই আসামিমামলায় উল্লেখিত ১ নম্বর আসামি তাজিমুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র। ৬ নম্বর আসামি শহিদুল ইসলাম ওরফে পিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২৭ নম্বর আসামি সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মণ্ডল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় নূর মোহাম্মদ মণ্ডল ও শহিদুল ইসলাম কারাগারে ছিলেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার মো.
মো. মোকাম্মেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুল ইসলাম ১৬ জুন থেকে কারাগারে আছেন। নূর মোহাম্মদ মণ্ডল দুর্নীতি দমন আইনের মামলায় ১৯ জুন কারাগারে যান। ১৩ জুলাই তিনি জামিন পান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদী হাফিজুর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ৬ জুলাই তাঁর ওপর হত্যাচেষ্টা হয়েছে। তবে তিনি মামলার ঘটনায় গত বছরের ৪ আগস্টের ঘটনাও তুলে ধরেছেন। তাঁর ভাষ্য, তখন কেউ জেলে ছিলেন না। হুকুমদাতা হিসেবে যেকোনো জায়গা থেকে হুকুম দিতে পারেন।
বিদেশে থেকেও আসামিমামলার ৫ নম্বর আসামি সিরাজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী। তিনি মামলায় উল্লেখিত ঘটনার সময় থাইল্যান্ডে ছিলেন। সিরাজুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ৪ জুলাই দিবাগত রাত তিনটার সময় থাইল্যান্ডে যাই, দেশে ফিরি ২০ জুলাই। তাহলে আমাকে “মোবাইলের আলোতে” দেখল কীভাবে? মামলা দিয়ে বাণিজ্য করতেই আমার নাম দিয়েছে।’ তিনি জানান, থানায় লিখিতভাবে তাঁর বিদেশে থাকার প্রমাণ দিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই মামলায় স্থানীয় কওমি মাদ্রাসার দুজন হাফেজকে আসামি করা হয়েছে, যাঁরা ওই দিন (৬ জুলাই) পবিত্র ওমরাহ পালনে যেতে ঢাকায় এজেন্সির কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। মামলায় আসামি হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের একজন ব্যবসায়ী ও একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী আছেন, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা ও চট্টগ্রামে থাকছেন।
এ বিষয়ে হাফিজুর বলেন, ‘আমি শুনতে পারছি, আরও একজন (আসামি) নাকি হজে ছিল। এটার ব্যাখ্যা এ মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। যে উকিলের কাছ থেকে এজাহার করেছি, ওনার কাছ থেকে শুনে আপনাকে ব্যাখ্যা দিতে পারব।’
বড় দরগাহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাফিয়া আক্তার অভিযোগ করেন, মামলায় চার ইউপি চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচগাছি ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু মিয়াকে মামলার দিনই গ্রেপ্তার করা হয়। মাফিয়া আক্তারের দাবি, মামলা থেকে নাম বাদ দিতে টাকা দাবি করেছে বাদীপক্ষের লোকজন, তবে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। অবশ্য হাফিজুরের দাবি, তিনি কোনো মামলা বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত নন।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলায় দুটি ঘটনার উল্লেখ আছে। তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তদন্ত শেষ হলে আসামিদের বিষয়ে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ল ইসল ম র আস ম আস ম র উল ল খ আওয় ম ঘটন র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চিমামান্দা এনগোজি আদিচির নারীবাদ
চিমামান্দা এনগোজি আদিচি একজন নাইজেরীয় কবি ও আখ্যান লেখক। আদিচির কবিতা, গল্প ও উপন্যাসগুলোতে সব সময় একটা নারীবাদী দৃষ্টিকোণ প্রয়োগ করতে দেখা যায়। বিশেষ করে আফ্রিকার সমাজে নারী-পুরুষের বৈষম্য, পুরুষতান্ত্রিক ধ্যানধারণা, নারীর ওপর বলপ্রয়োগ ও নিপীড়ন এবং নারী-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যুক্তি ও শক্তি প্রয়োগের বিষয়গুলো। ছোটবেলা থেকে আদিচি দেখেও এসেছেন ‘নারীবাদী’ শব্দটি এবং ‘নারীবাদ’ সম্পর্কে আফ্রিকার ধারণাগুলো নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ। তাই আদিচি স্বভাবগতভাবে নারীবাদ-সংক্রান্ত নিজের বক্তৃতায় ও রচনায় এসব বিষয়কে নারীবাদের অনুষঙ্গ করে গল্পাকারে আফ্রিকার বাস্তবতা তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’ এবং দ্বিতীয় বই ‘ডিয়ার ইজাওয়েলে: আ ফ্যামিনিস্ট ম্যানিফেস্টো ইন ফিফটিন সাজেশনস’ প্রকাশিত হয় ২০১৭ সালে। বলতে গেলে নাইজেরিয়ার বাস্তবতা, ঐতিহ্য ও ইগবো সংস্কৃতির আলোকে আদিচির দুই রচনায়ই নারীবাদ ও নারীবাদী চিন্তার স্বতন্ত্র ধরন প্রকাশ পায়। একইভাবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নারী-পরিপ্রেক্ষিতের সর্বজনীন বিষয়ও তাঁর ভাবনায় ফুটে উঠতে দেখা যায়।
আদিচির চৌদ্দ বছর বয়সে তর্কচ্ছলে তাঁর বড় ভাইয়ের বন্ধু ওকুলোমা তাঁকে নারীবাদী তকমা দেন। তখনো তিনি নারীবাদী শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলেন এবং তার মানেও জানতেন না। আর ওকুলোমা শব্দটাকে এমনভাবে প্রয়োগ করেছিলেন যে আদিচির ধারণা হয়েছিল, বিষয়টার সঙ্গে সন্ত্রাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। পরে অভিধান ঘেঁটে আদিচি শব্দটার অর্থ জেনে নিয়েছিলেন। তার অনেক পরে, ছাব্বিশ বছর বয়সে আদিচির প্রথম উপন্যাস ‘পার্পল হিবিসকাস’ (২০০৩) প্রকাশিত হয়। উপন্যাসের প্রোটাগোনিস্ট লোকটি আর সব নির্যাতনের সঙ্গে স্ত্রীকে শারীরিকভাবেও প্রহার করত, তাই গল্পের পরিণতিটা বেদনাদায়ক হয়। এমন গল্পের জন্য পাঠকেরা আদিচিকে ‘নারীবাদী লেখক’ হিসেবে চিহ্নিত করেন। একজন সুহৃদ সাংবাদিক-পাঠক আদিচিকে প্রথম বিষয়টি অবগত করেন এবং উপদেশ দেন, তিনি যেন নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রকাশ না করেন। একই সঙ্গে ওই সাংবাদিক নারীবাদীদের একটা সংজ্ঞার্থও ছুড়ে দেন আদিচির উদ্দেশে, ‘স্বামী না পেয়ে যেসব মেয়ে অসুখী হয়, তারাই নারীবাদী।’
নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন।পরে আদিচি নাইজেরিয়ার একজন নারী শিক্ষাবিদের কাছ থেকে জানতে পারেন, নারীবাদ নামক জিনিসটা আফ্রিকার সংস্কৃতি নয়। ওই শিক্ষাবিদের ধারণা, পশ্চিমা বিশ্বের বই পড়ে আদিচির মাথা বিগড়ে গেছে এবং তিনি নারীবাদী হয়ে উঠেছেন। অথচ আদিচির কাছে বিষয়টা এমন ছিল না। তবে নারীবাদ যেহেতু আফ্রিকার বিষয় নয়, তাহলে তাঁর আফ্রিকান নারীবাদী হতে আপত্তি নেই। বন্ধুরা বলাবলি করলেন, নারীবাদীরা পুরুষকে ঘৃণা করে। তাই আদিচি ঠিক করলেন, তিনি এমন একজন নারীবাদী হবেন, যিনি পুরুষকে ঘৃণা করেন না। তাই হলেনও একজন সুখী আফ্রিকান নারীবাদী। আদিচি পুরুষকে ঘৃণা করেন না কিংবা তিনি পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য নয়, নিজের আনন্দের জন্য লিপগ্লস ও হাইহিল পরতে পছন্দ করেন। আসলে এর বেশির ভাগই নিছক ব্যঙ্গাত্মক ব্যাপার ছিল।
আদিচির নারীবাদবিষয়ক প্রথম বই ‘উই শুড অল বি ফ্যামিনিস্টস’